ঢাকা টু জেদ্দা
বিমান বন্দরের বর্ণনা বেশী দেবনা। কারণ যারা নিয়মিত বিমানে নিয়মিত আসা যাওয়া করেন তারা এগুলো জানেন। শুধু যেটুকু হজ্বের জন্য প্রযোজ্য সেটুকুই লিখব।
হাজ্বীদের বিমানে ওঠা- সে এক অসাধারণ দৃশ্য। সারি বেঁধে সবাই একসাথে গভীর আবেগে বলতে থাকে 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক', পরনে সাদা এহরামের কাপড়। সেই আবেগের ঢেউ সবচেয়ে বেশী মনে লাগে যদি আপনি হন সেই কাফেলারই একজন।
বিমানে জানলাম ফ্রী সিটিং সিস্টেম, অর্থ 'যে যেখানে পার বস'। আমাদের এজেন্সীর ম্যানেজমেন্টের লোকজন- তারা পুরনো লোক, আগেই গিয়ে প্রথম দিকের ফার্স্ট ক্লাস সীট গুলো দখল করে নিল। আমরা যারা আনাড়ী তারা তো আর জানিনা যে বাসের মত প্লেনেও পেছন দিকে ঝাঁকি লাগে তারা গিয়ে বেকুবের মত পেছনে বসলাম। সত্যি কথা বলতে প্লেনে বাসের চেয়েও অনেক বেশী ঝাঁকি লাগে বিশেষ করে যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে।
প্লেন আকাশে উঠার আগে চোখ বন্ধ করে ছিলাম। এটাই প্রথম আকাশে ওঠা, মাঝে মাঝে মনে হতো, মানব সভ্যতার অগ্রগতির এই নিদর্শণ যদি না দেখেই কি মরে যাবো? আল্লাহ অবশেষে মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
প্লেনে থাকা অবস্থায় ভোর হল। মনটা ছটফট করছিল জানালার পাশে বসার জন্য। শেষে গেষ্ট হাউসে পরিচয় হওযা প্রবাসীকে বললাম তার সিট টা আমাকে দিতে। ও সাথে সাথে রাজী, এই পথে একাধিক বার যাওয়া আসা হয়েছে তার। এই ফাঁকে একটা কথা বলে রাখি, প্লেনে উঠার আগে ভাল করে বাথরুম টয়লেট করে নেয়া ভাল। এহরামের কাপড় পরে প্লেনের 'খুবই ছোট' টয়লেটে বাথরুম সারলে কাপড় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমপক্ষে ৯০%।
জানালা দিয়ে আরবের মরুভূমি দেখলাম প্রায় এক ঘন্টা। মনে হচ্ছিল জাহান্নাম দেখছি। যতদূর দৃস্টি যায় শুধু বালু, জন মানবের কোন চিহ্ন নাই। যত পশ্চিম দিকে যাচ্ছিলাম মরুভূমি আস্তে আস্তে বালু থেকে পাথুড়ে হচ্ছিল, আর পাহাড়ের সংখ্যা বাড়ছিল। কত শত রকমের, কত ডিজাইনের পাহাড়.....প্রকৃতির এই রুক্ষ রূপ সুজলা সুফলা বাংলায় কখনো দেখিনি। বিমান নামার আগে দেখলাম বন্দর নগরী জেদ্দার এক ঝলক। ছবির মত সাজানো, না না ভুল হলো জ্যামিতির নক্সায় সাজানো জেদ্দার 'এরিয়াল ভিউ' এককথায় শ্বাসরুদ্ধকর। সুযোগ পেলে এই দৃশ্য কোনভাবেই মিস না করার অনুরোধ থাকলো।