বাংলা নিউজ ২৪ এর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর আবিদ রহমান " শরিয়া আইনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই" নামক কলামটি লিখেছেন। লেখাটির ভিতরে বেশ চটকদারীতা আছে নিসঃন্দেহে। তিনি সৌদি সরকারকে এক হাত নিয়েছেন তাঁর লেখার মাধ্যমে তাতে সন্দেহ নাই। সেকারনে বাহবা তিনি... পেতেই পারেন। কিন্তু তিনি যে হেড লাইনে লেখাটি লিখেছেন এবং রাগান্বিত হয়ে জামায়াতিদের যেভাবে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে চেয়েছেন, আবেগের বশবর্তি হয়ে লিখলেও তথ্য বিচার ভেদে তা আখেরে জামাতীদের পক্ষেই সাফাই গাওয়ার মত হয়ে গিয়েছে।
একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অপরাধীরা এই বিচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেমন চেয়েছে জাতীসংঘের হস্তক্ষেপে বিচার পেতে, আবিদ সাহেবের এই লেখায় জামাতীদের সেই রক্ষা পাওয়ার আকাঙ্খাই পূর্নতা পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
আবিদ সাহেব লিখেছেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল মানি না, শরীয়া আইনের বাস্তবায়ন চাই এবং খুব দ্রুত।" অবাক হয়েছি তাঁর লেখার সারমর্ম দেখে, শেষের লাইনে তিনি লিখেছেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল মানি না...শরিয়া আইনের বাস্তবায়ন চাই। অর্থাৎ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের শরিয়া আইনে বিচার চেয়েছেন। তাহলে একটু দেখা দরকার বাংলাদেশের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারের নিমিত্তে সৌদি সরকারের শরিয়া আইন কি ব্যবস্থা রেখেছে।
শরিয়া আইনে লেখা আছেঃ
"হিরাবা'র অপরাধ ব্যতিত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী তওবা করিলেও শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না। হিরাবা'র অপরাধের শাস্তি ব্যতিত তওবা অন্য কোন শাস্তি বাতিল করেনা।"-
~শরিয়া আইন নং ১৩, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২১৮ ও ২২২।~
সুস্পষ্ট আইন। কোন ঝামেলা নাই। অর্থাৎ হিরাবা'র অপরাধীরা তওবা করিলে "শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে।" স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, "হিরাবা" কি? দেখা যাক তাহলে হিরাবা'র ব্যাপারে শরিয়া কেতাবে কিভাবে ব্যাখ্যা দেয়া আছে। "হিরাবা বলিতে সংঘবদ্ধ শক্তির জোরে আক্রমন চালাইয়া আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাইয়া জননিরাপত্তার বিঘ্নিত করা বোঝায়। যেমন সম্পদ লুন্ঠন, শ্লিলতাহানী, হত্যা ও রক্তপাত ইহাতে অন্তর্ভূক্ত।"
~শরিয়া আইন নং ১৩, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২২২~
জামাতীরা হরহামেশাই বলছে যে, আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল মানি না, যেমনটি বলেছেন অষ্ট্রিলিয়া প্রবাসী এবং সাবেক দৈনিক আমাদের সময়ের কলামিষ্ট আবিদ সাহেব। জামাতিরাতো তবু জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেতে চেয়েছে, কিন্তু শরিয়া আইনের বিচারে কি আবিদ সাহেব তাঁদের একেবারে "ইমিউনিটি" দিতে চাননি? খুব সুক্ষভাবে তিনি আমাদের গর্বের ১৯৭৩ সালের স্পেশিয়াল ট্রাইব্যুনাল এক্টের বিরুদ্ধে তাঁর অসম্মতি জানালেন। জামাত-বিএনপি যা অহরহ জানাচ্ছে। মোদ্দাকথায়, আবিদ সাহেবের এই লেখায় তিনি জামাতিদের বিরুদ্ধে যত হম্বিতম্বিই করেন না কেন, মূলত তিনি তাদের মনের ইচ্ছাটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং আমাদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে দেশী-বিদেশী সব চক্রেরই মনে রাখা উচিত, বাঙ্গালীকে বোকা বানানো এতো সহজ নয়।
সাব্বির খান।