নিজামীর ফাঁসি নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে ৷ কেউ পক্ষে বলছে এবং কেউ বিপক্ষে বলছে ৷ এরকম হওয়াটাই স্বাভাবীক ৷ কারও কাছে নিজামী হিরো আবার কারও কাছে ভিলেন ৷ কিন্তু কিছু কিছু অতি উৎসাহী কর্মকান্ড আমাকে সত্যিই চিন্তিত করেছে ৷ পাকিস্তান বরাবরই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নিন্দা জানিয়ে আসছে ৷ এটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও নিজামীর ফাঁসির পর পাকিস্তানের প্রতিবাদটা স্বাভাবীক নয় ৷ এই প্রতিবাদের দ্বারা তারা পরিস্কার প্রমাণ করেছে তৎকালীন জামায়াত যুদ্ধাপরাধী ছিল ৷ তাদের মতে,পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র সমুন্নত রাখাই ছিল নিজামীর অপরাধ ৷ আমারা বাংলাদেশীরাও তাই মনে করি এবং একারণেই নিজামীকে শাস্তি পেতে হয়েছে ৷ মূলত এই কথার দ্বারাই নিজামীর অপরাধ উঠে এসেছে ৷ যখন পাকিস্তান এই দেশকে শাসনের নামে শোষণ করছিল তখন পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা অবশ্যই অপরাধ ৷ গনহত্যার কথা নাইবা বললাম ৷ পাকিস্তান কূটনৈতীক দিক থেকে এতোটা জ্ঞান-বুদ্ধিহীন সেটা এইবার জানলাম ৷ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসবে জানতাম,কিন্তু এরকম মূর্খ প্রতিবাদ আসবে সেটা বুঝতে পারি নাই ৷ এবার আসি তুরষ্কের ব্যাপারে ৷ এরদোগান প্রতিবাদ জানাবে এটা আমার কল্পণার অতীত ছিল ৷ শুধু তুরষ্ক নয়,পাকিস্তান বাদে অন্য কোথাও থেকে প্রতিবাদ জানানো হবে সেটা আমি কখনই কল্পনা করিনি ৷ তুরষ্ক যদি সত্য না জেনে প্রতিবাদ করে থাকে তাহলে প্রতিবাদের সম্ভাব্য দুটি কারণ থাকতে পারে ৷ প্রথম কারণ,পাকিস্তান তাদের বুঝিয়েছে যে বাংলাদেশ একজন ইসলামী নেতাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছে ৷ দ্বিতীয় কারণ,তাদের নিজেদেরই মনে হয়েছে এই বিচার অন্যায় হয়েছে ৷ অবশ্য এইরকম মনে হওয়ারও কারণ আছে ৷ কেননা আন্তর্জাতিক মহলও দেশে চলমান এই বিচারের নিন্দা জানিয়েছে ৷ হিউম্যান রাইটস বলেন বা জাতিসংঘ বলেন,এরা কিন্তু কখনই বলে নাই যে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা নিরাপরাধ ৷ তারা চায় সারা বিশ্বে মৃত্যুদন্ড বন্ধ হোক ৷ একারণে ফাঁসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে ৷ আরেক বিষয় তারা উল্লেখ করেছে ৷ সেটা হলো বিচারের স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মানের বিচার না হওয়া ৷ এখানে আন্তর্জাতিক মানের বিচার করতে হবে এমন কোনও কথা নেই ৷ আমার দেশের অপরাধী,আমার দেশে অপরাধ করেছে এবং বিচারও হবে আমার দেশের আইনের দ্বারাই ৷ তবে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আমারও আছে ৷ একজন সাধারণ মানুষও জানে বিচারে স্বচ্ছতা নেই এবং বিচার হচ্ছে প্রতিহিংসা থেকে ৷ নিজের পাছার ময়লা পরিস্কার না করে অন্যজনের পাছার ময়লা পরিস্কার করাটা ভন্ডামী ৷ এই কথাটা বলার কারণেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকী নব্য রাজাকার খেতাবে ভূষিত ৷ অবশ্য আমাদের দেশের রাজনৈতীক পদ্ধতিটাই এরকম ৷ প্রতিহিংসা ছাড়া রাজনীতি পূর্ণতা পায় না ৷ জামাত যদি আ'লীগের সঙ্গ না ছাড়তো তাহলে বোধহয় জাতি কোনওদিন এসকল ধর্মীয় নেতা নামের কলংকদের বিচার দেখতে পেতনা ৷ যদিও যাদের সবার বিচার করা হচ্ছে এরা সবাই রাজাকার ছিল কিনা সেটা আমি নিশ্চিত নই ৷ তবে সাঈদী বাদে সবাই রাজাকার এটা নিশ্চিত ৷ সাঈদীর ব্যাপারে এখনও আমি নিশ্চিত হতে পারিনি ৷ ড.জাফর ইকবাল স্যার আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব ৷ তাঁর ছাত্র হতে পেরে আমি গর্বিত ৷ তারপরেও তার প্রতি আমার সম্মান কিছুটা হলেও কমে গেছে যখন তিনি রাজাকার হিসেবে শুধুমাত্র জামাতকেই দোষী করেছেন ৷ অন্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি ৷ অন্তত তাঁর থেকে এরকম আশা করিনি ৷ এবার আসি শাহবাগীদের কথায় ৷ মাত্র দুইদিন গিয়েছিলাম শাহবাগে ৷ এরকম একটা আন্দোলনের সাথ না দিলে দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবীক ৷ কিন্তু তারাও আমার মনের মত হতে পারলোনা ৷ ঐ দুই দিনেই তাদের আন্দোলন আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয় ৷ এজন্য আর যাইনি ৷ আমার বড় ভাই এজন্য রাগ করে আমাকে বলেছিল,সবকিছুতেই নেগেটিভ বেড় করা তোর স্বভাব হয়ে গেছে ৷ কয়েকদিন পর দেখি ভাইয়াও আর যায় না ৷ কারণ জিজ্ঞেস করায় সে আস্তে করে বলল,সব শালাই চোর ৷ আমি অবশ্য সবাইকে চোর বলছি না ৷ অনেকেই সেখানে গিয়েছিলেন দেশপ্রেমের টানে ৷ জামাতের বর্তমান সাপোর্টাররা জানেই না যুদ্ধের সময় তাদের নেতাদের কী ভূমিকা ছিল ৷ জানাতে গেলেও বিশ্বাস করে না ৷ বিশ্বাস না করার কারণটা হচ্ছে ধর্ম ৷ তারা মনে করে,এরকম ধার্মিক ব্যক্তিরা ঐরকম জঘন্য কাজ করতে পারে না ৷ এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর একটা মতামত তুলে ধরছি,যখন কেউ কোনও দলের অন্তর্গত হয় তখন তারা দুনিয়াকে নিজের চোখ দিয়ে না দেখে দলের চোখ দিয়ে দেখে ৷ আর একারণেই ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় সফল হতে পারে ৷ শুধু ধর্ম ব্যবসায়ীরা নয়,রাজনৈতীক দলগুলোও এইভাবেই ক্ষমতায় আসে ৷ যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে সম্পূর্ণ সাধুবাদ না জানাতে পারলেও এই বিচারের কারণে মনের মাঝে কিছুটা হলেও শান্তি পাচ্ছি ৷ হোক আ'লীগ দাবার গুটি চেলেছে,তারপরওতো কিছু রাজাকারদের বিচার হচ্ছে ৷
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১:৪১