1st part
2nd part
তৃতীয় এবং শেষ পর্ব লেখার আগে আমি কিছু কথা বলতে চাই ৷ আসলে আমি লেখক হিসেবে যথেষ্ট বাজে ৷ লিখে ঠিকমতো মনের ভাব প্রকাশ করতে পারিনা ৷ আর লেখাটি সংক্ষেপে লিখতে গিয়ে অস্পষ্টতা একটু বেশী দেখা দিয়েছে ৷ পাঠকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে,দয়া করে লেখার ভাবার্থ কষ্ট করে বুঝে নিবেন ৷
একটু পরেই সকাল হলো ৷ সে এখনও শুয়ে আছে, তবে ঘুমায়নি ৷ আটটার দিকে ক্যাম্পাসে চলে আসলাম ৷ কিছুই যেন ভাল লাগছিলো না ৷ আবার বাসায় চলে আসলাম ৷ ভাবলাম,ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইব ৷ কিন্তু, সেই সাহসটাও হলো না ৷ ছাদে গিয়ে এক বিবাহিতা বান্ধবীকে ফোন দিলাম ৷ কেন জানি মনে হল তার কাছে থেকে কিছু পরামর্শ পাওয়া যাবে ৷ শুরু থেকে শেষে পর্যন্ত সব খুলে বললাম ৷ এগুলো শুনে সে আমাকে কিছুক্ষণ গালমন্দ করলো ৷ যেহেতু আমি সরাসরি ভুল স্বীকার করার সাহস পাচ্ছিলাম না তাই সে একটা বুদ্ধি দিল ৷ বুদ্ধিটা আমার মনে ধরলো ৷ রুমে চলে আসলাম ৷ বউকে দেখলাম ব্যালকনিতে বসে আছে ৷ পরিবেশ আগের মতোই নীরব ৷ বরাবরের মতই কেউ কারও সাথে কথা বলছিনা ৷ বউকে ডাক দিলাম ৷ ডাক শুনে সে ভিতরে আসলো ৷ চা আনতে বললাম ৷ চা বানাতে রান্না ঘরে গেল ৷ একটু পর চা নিয়ে আসলো ৷ কাপে এক চুমুক দিয়ে বললাম,চিনি কম হইছে,চেক করে দেখ ৷ আসলে আমি চাচ্ছিলাম ও নিজেই কাপে চুমুক দিয়ে পরীক্ষা করুক ৷ আমার উদ্দেশ্য ছিল এইটা বোঝা যে আমার প্রতি তার অনুভূতিটা কেমন ৷ কিন্তু সে কাপে চুমুক দিল না ৷ আরেক কাপ চা তৈরী করে দিল ৷ আমি বুঝে গেলাম আমার প্রতি তার কতটা বিরূপ মনোভাব ৷ আগের দিনগুলোর মতই ঐ দিনটাও চলে গেল ৷ পরের দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বান্ধবীর বুদ্ধিমতো পড়ার টেবিলে বসলাম ৷ আমি আর্ট করতে না পারলেও যতটুকু সম্ভব সুন্দর ও বড় করে আই লাভ ইউ লেখলাম ৷ তারপর কাগজটা একটা বইয়ের ভাঁজে রাখলাম ৷ সময়মতো ক্যাম্পাসে চলে আসলাম ৷ একটা ক্লাশ শেষ করে বাড়িওয়ালার স্ত্রীর নাম্বারে ফোন দিলাম ৷ ধরলো তার পিচ্চি মেয়ে ৷ তাকে বললাম ফোনটা নিয়ে তোমার আন্টির কাছে যাও ৷ পিচ্চি ফোন নিয়ে গেল ৷ বউকে বইয়ের নাম উল্লেখ করে বললাম ,ঐ বইয়ের ভিতর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ আছে৷ ঐখানে কি লেখা আছে সেটা আমাকে জানাও ৷ এমনভাবে বললাম যেন ও মনে করে কাগজটা আমার পড়ালেখে সম্পর্কিত এবং সেটা জানা এখন আমার খুব জরুরী ৷ আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম ৷ লেখাটি দেখে সে হয়তো অবাক হয়ে যাবে ৷ আমার প্রতি তার সকল অভিমান দূর হয়ে যাবে ৷ এইরকম অনেক কিছুই ভাবছিলাম ৷কাগজটি খুজে পেলে জিজ্ঞেস করলাম কি লেখা আছে?সে নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল,আই লাভ ইউ ৷ তার এরকম আচরণে আশাহত হলাম ৷ রাগ করে বাসায় চলে আসলাম ৷ বাসার পরিবেশ আগের মতই নীরব ৷ কিছুই ভালো লাগছে না ৷ রাতে ঘুমাতে গেলাম ৷ ঘুমানোর সময় ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলাম ৷ এই প্রথম ওকে জড়িয়ে ধরলাম ৷ কিন্তু ওর কোন রেসপন্স নেই ৷ চলে গেল আরও কয়েকদিন ৷ আমার আর এরকম সহ্য হচ্ছিলো না ৷ একদিন রাতে খাওয়ার পর ব্যালকনিতে গেলাম ৷ ও যেখানে বসে থাকতো ঠিক সেখানেই বসলাম ৷ একটু পর ওকে ডাক দিলাম ৷ আসলে আমার পাশেই বসতে বললাম ৷ কিছু না বলেই দাঁড়িয়ে থাকলো ৷ আবার বসতে বললাম ৷ এবার বসলো ৷ আধাঘন্টা লেকচার দিলাম আমার ভুল স্বীকার করে এবং ক্ষমাও চাইলাম ৷ ওর দিকে তাকিয়ে দেখি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ভাবলাম,কাজ বোধহয় হইছে ৷ কিন্তু ওর মুখে কোনও কথা নেই ৷ নীরবভাবেই চলে গেল আরও কিছুক্ষণ ৷ কিছু বলছে না দেখে আমি উঠে রুমে চলে গেলাম ৷ সিদ্ধান্ত নিলাম কয়েকদিন রুম থেকে বাহিরে যাব না ৷ সবসময় ওর পাশে থাকব ৷ শুরু করলাম আমার কার্যক্রম ৷ ও বসে থাকলে আমিও পাশে গিয়ে বসি ৷ শুয়ে পরলে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ি ৷ সবসময় কথা বলার চেষ্টা করি ৷ কিন্তু ও আগের মতই এক কথায় উত্তর দেয় ৷ এভাবেই চলে গেল কয়েকদিন ৷ একদিন রাতে খেয়াল করলাম আমার জ্বর জ্বর লাগছে ৷ শেষ রাতের দিকে ঘুম ভেঙে গেল ৷ তখন কল্পণার অতীত একটা দৃশ্য দেখলাম ৷ সে আমার পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে ৷ এই দৃশ্য দেখে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না ৷ মনের ভিতর এতোটাই ভালো লাগা শুরু হলো যেটা আপনাদের লিখে বোঝাতে পারব না ৷ আমি মাথাটা তুলে তার কোলের ওপর রাখলাম ৷ তার সেইদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই ৷ একমনে জলপট্টি করে যাচ্ছে ৷ আমার আর ঘুম হলো না ৷ মনের মাঝে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিলো ৷ও মাঝে মাঝে শরীরে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলো জ্বর কমেছে কি না ৷ একপর্যায়ে ভোর হয়ে গেল এবং জ্বরও কিছু কমে আসলো ৷ সে ভেবেছিল আমি ঘুমে আছি ৷ তাই আস্তে আস্তে আমার মাথা তার কোল থেকে নামিয়ে বালিশে রেখে বিছানা থেকে উঠতে যাচ্ছিলো ৷ আমি হাত ধরে ফেললাম ৷ শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে পরলাম ৷ অনেকটা অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করলাম সে আমাকে ক্ষমা করেছে কিনা ৷ কিন্তু বরাবরের মতই কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ কিছুক্ষণ পর অনেকটা ধমকের সুরেই বললাম,কিছু বলছো না কেন?এবার কেঁদে ফেললো ৷ এতোদিন শব্দ ছাড়া কাঁদলেও সেদিনের কান্নায় শব্দ ছিল ৷ আমি স্যরি বলে জড়িয়ে ধরলাম ৷ কিন্তু সে আমাকে ধরলো না ৷ কান্না থামলে ছেড়ে দিলাম ৷ ও রান্না ঘরে চলে গেল ৷ আমি ওর মন মানসিকতা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ৷ সে কি একটুও বুঝতে পারছে না আমি আমার কৃতকর্মে অনুতপ্ত?শুধু অনুতপ্ত নয়, রীতিমতো ভালবেসে ফেলেছি তাকে ৷ এসব ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতে দেড়িতে বাসায় ফিরব ৷ রিএকশন কি হয় সেটা দেখতে হবে ৷ বিকেলবেলা বের হলাম আর ফিরলাম রাত দুইটার দিকে ৷ একবার কলিং বাজাতেই দরজা খুলে দিল ৷ বুঝতে পারলাম ঘুমায়নি ৷ কিন্তু তার মাঝে কোনও ভাবান্তর নেই ৷ আগের মতই চেহারা গম্ভীর করে আছে ৷ খুব রাগ হলো ৷ অনেকটা চিল্লাচিল্লি করেই বললাম,আমিতো মানুষ ৷ আর ভুল মানুষেরই হয় ৷ আমি আমার কাজের জন্য যথেস্ট অনুতপ্ত ৷ এখনও কি আমাকে ক্ষমা করা যায় না? এরকম আরও অনেক কিছুই বললাম ৷ কিন্তু তার কোনও পরিবর্তন নেই ৷ চুপচাপ বসে আছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে ৷মেজাজটা খুব খারাপ হলো ৷ মনে হলো পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে নিজেও ধ্বংস হয়ে যাই ৷ এবার ওর কাছে গিয়ে ওকে ধরে কিছুটা ঝাঁকি দিয়ে বললাম, কিছু একটা বলো ৷ নাহ,এতেও কিছু বলল না ৷ কম্পিউটারের মনিটিরটা মেঝেতে আছাড় মেরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ দুই মিনিট পর পিছনে একজনের উপস্থিতি অনুভব করলাম ৷ বুঝতে পারলাম বউ এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে ৷ দশ মিনিট চলে গেল ৷ আমি পিছনে এখনও তাকাইনি ৷ হঠাৎ করেই সে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো ৷ দেড় বছরে এই প্রথম বউ আমাকে জড়িয়ে ধরলো ৷ পিছন ফিরে আমিও ধরলাম ৷ একটু পর কান্না থামিয়ে বউ প্রথম বলা শুরু করলো ৷ তবে তখন সে যেটা বলেছিল সেটা শুনে মন থেকে সকল কষ্ট নাই হয়ে গেল ৷ হো হো করে হেঁসে উঠলাম ৷ এবার সে লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল ৷ সেও মিষ্টি মিষ্টি করে হাসছে ৷ সে আসলে বুঝতে পেরেছিল তার কথাটি পাগলামীতে ভরা ৷ তবে সেই হাসির দিকে হাজার বছর তাকিয়ে থাকতে আমার কোনও আপত্তি নেই ৷ আর যে কথাটি বলেছিল সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি না ৷ ধীরে ধীরে সে নিজেকে পরিবর্তন করা শুরু করলো ৷ নিজেকে পরিপূর্ণ স্ত্রী হিসেবে তৈরী করে ৷ আমার অজান্তেই সে একটা কাজ করেছিল ৷ তখন আমি ফাইনাল ইয়ারে ৷ দুই মাস পর ফাইনাল পরীক্ষা ৷ একদিন রাতে বউ আবদার করলো ছাদে যাওয়ার জন্য ৷ ছাদে গেলাম ৷ গল্প করলাম,খুনসুটি করলাম ৷ রুমে ফিরে আসব তখন সে বলল একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে ৷ কি কথা জিজ্ঞেস করলাম ৷ সে যেটা জানালো সেটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না ৷ আসলে সে প্রেগন্যান্ট ৷ আর সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাকে সে জানায়নি ৷ তবে যতটা আশ্চর্য হয়ে ছিলাম তার বেশী আনন্দিত হয়েছিলাম ৷ বউকে মাথায় রাখব নাকি বুকে রাখব বুঝতে পারছিলাম না ৷ খুশিতে প্রায় আত্মহারা আমি ৷ দেখতে দেখতে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ ৷ বউ তখন সাত মাসের প্রেগন্যান্ট ৷ মা বলল বউকে নিয়ে বাড়িতে আসতে ৷ চলে গেলাম বাড়ি ৷ ১ সপ্তাহ পর এক বড় ভাই ফোন দিয়ে একটা সুখবর দিলো ৷ সুখবরটা ছিল চাকরীর ৷ আগেপিছে চিন্তা না করে একটি আইটি ফার্মে জয়েন দিলাম ৷ একদিন বউ ফোন দিয়ে বাড়িতে যেতে বলল ৷ কারণ আর বেশীদিন দেরী নেই ৷ পরের দিন ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এলাম ৷ মাকে বললাম কোন ক্লিনিকে ভর্তি করাব কিনা ৷ মা জানালো তার দরকার হবে না ৷ কারণ সে ধরনের কোনও লক্ষণ নেই ৷ আসলে মার এধরনের অভিজ্ঞতা আছে ৷ তিনি স্বাস্থ্য সহকারীর চাকরী করতেন ৷ একদিন বউয়ের প্রসব ব্যাথা উঠলো ৷ আমি খুব টেনশনে ছিলাম ৷ আমার শ্বশুর,শাশুরী,শালা ,শালী সবাই আসছে ৷ একটু পর সুখবর আসলো ৷ মেয়ে হইছে ৷ খুশিতে আমি বাকরুদ্ধ ৷ ঘরের ভিতর গিয়ে নিজের মেয়েকে দেখলাম ৷ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব ৷ বউয়ের চেহারায় ব্যাথার ছাপ স্পষ্ট ৷ তবে তার হাসি বলে দিচ্ছিল সে কতোটা আনন্দিত ৷ ১মাস পর বউ বাচ্চা নিয়ে কর্মস্থল ঢাকায় চলে আসলাম ৷ অফিস থেকে বাসায় ফিরে যখন মেয়ের কাছে যেতাম, তখন তার ফোকলা দাঁতের হাসি দুনিয়ার সকল অনুভূতিকে হার মানাতো ৷ বর্তমানে আমার মেয়ের বয়স দুই বছর ৷ আর তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি আমি ৷ আর আমার বউয়ের মানসিক সমস্যাটা এখনও আছে ৷ এখনও মাঝে মাঝে পাগলামী করে ৷ ভালবাসার পাগলামী ৷ আমি তার চিকিৎসা করাইনি ৷ কারণ তার পাগলামীটাই আমার কাছ সবচেয়ে ভাল লাগে ৷ দোয়া করবেন আমাদের জন্য ৷ মৃত্যু পর্যন্ত যেন আমার পরিবারে এই ভালবাসার বন্ধন অটুট থাকে ৷ ধন্যবাদ সবাইকে আমার লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য ৷ সবার জীবনের সুখ কামনা করে আমার গল্পের ইতি ঘোষনা করছি ৷