মা বানাইবো ডাক্তার,আব্বায় বানাইব গণিতবিদ ৷আমি পড়লাম ফাঁপড়ে ৷কোনটা থুইয়া কোনটা হইমু ৷বড়ভাইরে ফোন দিয়া দুঃখের কথাটা জানাইলাম ৷ভাই নিজে কিছু কইলো না ৷ছাইড়া দিল ভাবীর উপর ৷ভাবী কইলো আমার যেইটা ভাল লাগে সেইটা নিয়াই যেন পড়ি ৷কথাটা মনে ধরলো ৷কিন্তু বিপদ আরেকখানে ৷আমার আসলে কী ভাল লাগে অথবা কোন বিষয়টায় আমার যোগ্যতা বেশী হেইডা আমি নিজেও জানি ৷আমাগো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিগত ১২ বছরে সেইটা আমাকে জানতে দেয় নাই ৷এইদিকে সময়ও নাই ৷ইন্টার পরীক্ষা শেষ ৷এডমিশনের প্রস্তুতি নিতে হইব ৷অনেক কষ্টের পর বুঝবার পারলাম কম্পিউটার সাইন্স আমার জন্য পারফেক্ট ৷প্রস্তুতি নিলাম ইন্জিনিয়ারিং পড়ার ৷আবারও ঝামেলা লাগলো ৷আব্বায় কয় বুয়েটে চান্স পাইতে হইব ৷মা কয় ঢাবিতে চান্স পাইতে হইব ৷অনেক চিন্তাভাবনা কইরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সাস্টে পড়মু ৷পরীক্ষা দিলাম, লাইগাও গেল ৷ভর্তিও হইলাম ৷সমস্যা হইলো থাকমু কই?২৮ গুষ্টির মধ্যে ( বাপের ১৪ গুষ্টি + মায়ের ১৪ গুষ্টি ) কেউ সিলেটে থাকে না বা কেউ পরিচিত নাই ৷চিরুনি অভিযান চালাইয়া একজনরে পাইলাম ৷মাইলখানেক দূর দিয়া পরিচিত ৷তিনি আবার সাস্টেরই স্টুডেন্ট ৷বগুড়া থাইতা রাতে গাড়িতে উঠলাম ৷টার্গেট হইল পরের দিন সিলেট পৌঁছাইয়া ডাইরেক্ট ভার্সিটি যামু,ক্লাশ করমু তারপর বড় ভাইটার লগে দেখা করমু ৷৯টার সময় ক্যাম্পাসে পৌছাইলাম ৷দুইটা ক্লাশ করলাম ৷প্রথম ক্লাশেই ছোট খাটো অপমান হইলাম ৷আমার সাথে ইয়া বড় বড় দুইখান ব্যাগ দেইখা স্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন ৷যথাযথ উত্তর দিলাম ৷কয়েকজন মাইয়ারে দেখলাম আমার দিকে তাকাইয়া ফাসুর ফুসুর করতাছে আর হাসতাছে ৷আমারতো ব্যাপক লেভের অপমান লাগতাছে ৷( মাইয়াগো দিকে আমি ক্যান তাকাইছিলাম সেইটা জিজ্ঞাস কইরা অপমানটা আর বাড়াইয়েন না ) ৷ক্লাশ শেষ কইরা বড় ভাইরে ফোন দিলাম ৷হেতে আর ফোন ধরে না ৷আমারতো কান্দন কান্দন অবস্থা ৷পরে ভাবলাম,আমি কান্দি ক্যারে?প্রয়োজনে দুইদিন হোটেলে থাইকা বাসা খুজমু ৷ঘন্টাখানেক দেখি ৷ফোন রিসিভ না করলে হোটেলে উইঠা পরমু ৷এইটা ভাবার পর নিজেরে খুব সুখী মনে হইলো ৷একটু পর একখান পোলা আইসা আমার সাইডে দাঁড়াইলো ৷জিগাইলো ওয়ান ওয়ান নাকি ৷আমিও কইলাম হুম,ওয়ান ওয়ান ৷হেতে দেখি মিট মিট কইরা হাঁসে ৷মন চাইলো একখান থাপড়া দিয়া জিগাই,আরে ব্যাটা তুই কি মাইয়া মানুষ নাকি মিটমিট হাসতাছোস ? কিন্তু সাহস হইলো না ৷একটু পর জিগাইলো র্যাগ খাইছি কিনা ৷এইটা শোনারপর আমার শরীরে ভুমিকম্প শুরু হইয়া গেল ৷আমার মনেই ছিল না র্যাগের কথা ৷ভয় পাইয়া গেলাম ৷মাথা ঝাকাইয়া কইলাম খাই নাই ৷হেতে দেখি আরও হাসে ৷আসলে সে আমার চেহারা দেইখা ভাবছে আমি র্যাগ খাইছি ৷যাইহোক,একসময় সে চইলা গেল ৷বড় ভাইরে আবার ফোন দিলাম ৷এবার সে রিসিভ করলো ৷জানাইলো সে ক্লাশে ছিল তাই ফোন রিসিভ করতে পারে নাই ৷আরেকটা ক্লাশ আছে সেইটা শেষ কইরা আমার সাথে দেখা করব ৷ফোন কাইটা দিলাম ৷এইসময় খেয়াল করলাম পিছন থাইকা একটা মাইয়া কন্ঠ লাড্ডু কইয়া কারে যেন ডাকতাছে ৷পিছনে তাকাইয়া দেখি তিনটা ভাইয়া আর দুইটা আপু দাঁড়াইয়া আছে ৷একটা আপু হাত দিয়া ইশারা কইরা আমারে ডাক দিল ৷বুঝলাম লাড্ডু আর কেউ না,আমিই ৷কাছে যাইতেই এক ভাই দিল একখান থাপ্পর ৷আমিতো চোদনা হইয়া গেলাম ৷হা কইরা থাপ্পরদাতার দিক তাকাইয়া আছি ৷একজন কইলো,আমরা এইখানে সবাই সিনিয়র আর তুই সালাম দিলি না ক্যান?এক আপু কইলো,মাফ কইরা দে ৷ছোট মানুষ তাই বুঝতে পারে নাই ৷আরেক আপু কইলো এইবার সালাম দে ৷কি আর করার,সালাম দিলাম ৷আবারও ভুল ধরলো ৷উচ্চারণ নাকি ঠিক হয় নাই ৷আবার উচ্চারণ ঠিক করে সালাম দিলাম ৷কাম হইলো না ৷বারবার তাদের সাথে উচ্চারণের প্র্যাকটিস কইরাও উচ্চারণ ঠিক হইলো না ৷আর ঐ সিচুএশনে উচ্চারণ ক্যামনে ঠিক করমু আপনেরাই কন ৷একপর্যায়ে সালাম পর্ব শেষ হইলো ৷এইবার জাতীয় সংগীত গাওয়ার পালা ৷দুই লাইনের বেশী কইতে পারলাম না ৷একজন কইলো,এই মেধা নিয়া সাস্টে চান্স পাইলি ক্যামনে?আমি মনে মনে কইলাম,এই চরিত্র নিয়া তোমরা চান্স পাইলা ক্যামনে?জাতীয় সংগীতের পালা শেষ ৷এইবার ড্যান্স দিতে হবে ৷এইটা শুইনা আমি পুরাই শেষ ৷মনে হইতেছিল একটু পর আর চোখের পানি আটকাইতে পারমু না ৷ড্যান্সের ক্ষেত্রে ঘোরতর আপত্তি জানাইলাম ৷একজন কইলো,ড্যান্স না দিলে সিগারেট খাওয়া লাগব ৷কোনটা করবি সিদ্ধান্ত নে ৷মহাফাঁপড়ে পইরা গেলাম ৷পরিশেষে কইলাম সিগারেট খামু ৷একজন একটা সিগারেট বাইর কইরা দিল ৷বুঝতে পারলাম তারা চরম মজা নিতেছে ৷বাতাসের কারণে আর সিগারেট ধরাইতে পারি না ৷একজন ধরাইয়া দিল ৷পয়লা টান দিতে না দিতেই দ্বিতীয় থাপ্পর খাইলাম ৷অপরাধ,তাদের সামনে সিগারেট খাইছি ৷এইবার কাইন্দা ফালাইলাম ৷যখন কাইন্দা ফালাইছি তখন তারা আমায় রেহাই দিল ৷এরপরেও দুইবার র্যাগ খাইছিলাম ৷অপরাধ হিসেবে যেটা বুঝবার পারছিলাম সেইটা হল আমার চেহারা একটু বোকা বোকা ৷
সবারই স্কুলের প্রথম দিন,কলেজের প্রথম দিন এবং ভার্সিটির প্রথম দিন হয় আনন্দের আর উপভোগ্য ৷কিন্তু আমার ভার্সিটির প্রথমদিন ছিল সম্পূর্ণ এসবের বিপরীত ৷এখনও সেইদিনের কথা মনে হইলে শিউরে উঠি ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৬