আমাদের আজকের টুলবক্স মিটিঙয়ের বিষয় 'ফায়ার এক্সটিংগুইশার' বা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র।
এটা কি কাজে ব্যবহার করা হয় সেকথা যদি এখন বলতে যাই, হয়তো আপনারা আমাকে দাবড়ানি দিবেন। কেননা এর নামই বলে দিচ্ছে এটা কি কাজে ব্যবহৃত হয়। অফিস আদালত, কল-কারখানা, কিচেন কত যায়গাতেই হর হামেশা আমরা এই যন্ত্রটির দেখা পাই। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী একটি ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট এটি। তবে সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানা না থাকলে বিপদের সময় এ কোন কাজে আসবেনা। আজ আমরা এর সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। প্রতি বছর আমাদের দেশে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে অগ্নিকান্ডে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি কম বেশী ৯০% লোকের এ ব্যাপারে তেমন কোন ধারনা থাকে না, শুধু ভাসা ভাসা একটা অনুমান নির্ভর আইডিয়া থাকে। এমনকি সেফটি রিলেটেড পারসন যারা তাঁদেরকে প্রশ্ন করলেও প্রায় সময়ই উল্টা পাল্টা উত্তর পাওয়া যায়। এটা বিপদজনক!
চলুন প্রথমেই এর একটা ছবি দেখি। (বলবেন না, মিয়া সারা বছর তো আপনার প্রফাইল পিক দেখছিই। আজ আবার নতুন করে কি দেখবো? প্রফাইলে ফায়ার এক্সটিংগুইশারের ছবি দেয়ার একটা কাহিনী আছে। সেটা আরেক দিন শেয়ার করবো। আজ দেখুন না আরেকবার। এটা টুলবক্স মিটিং না? নিয়ম তো রাখতে হবে!)
এটা স্টোরড প্রেশার টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইশার। সাধারণতঃ এ ধরনের এক্সটিংগুইশার গুলোই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই আমরা এটা নিয়েই এখানে আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক!
প্রথমেই একটা পাস (ফ্রেইজ) দিচ্ছি আপনাকে মনে রাখার সুবিধার জন্য।
1 pass! মনে রাখুন এটা।
সহজ একটা মনে রাখার ফর্মুলা। শুধু এই ৫টা অক্ষর মনে রাখতে পারলে আপনাকে আর কখনো কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না ফায়ার এক্সটিংগুইশারের ব্যবহার প্রণালী সম্পর্কে। যদি আজ থেকে ১০ পরেও আপনার কখনো এ জিনিস ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।
1 pass এ কি হয় এবার দেখুনঃ (ভেবে নিতে পারেন এটা আপনার নিরাপত্তা পাস ও বটে)
1 = +- 1.5 meter. অর্থাৎ আগুন থেকে আপনি কতটা দূরে দাঁড়াবেন? অতিরিক্ত কাছে দাঁড়ালে যে কোন সময় আগুন আপনার জামা কাপড়ে লেগে যেতে পারে। তখন আপনি আগুন নেভাবেন কি, আগুন আপনার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে। আবার বেশী দূরে দাঁড়ালে এক্সটিংগুইশার পূর্ণ শক্তিতে তার কাজ করতে পারবে না। অর্থাৎ এটা আর তখন আগুন নেভাতে পারবে না। গজ ফিতা হাতে নিয়ে দেড় মিটার মাপার প্রয়োজন নেই। রিয়েল টাইমে আপনি অতটা সময় পাবেনও না। যে জন্য আমি প্লাস মাইনাস দেড় মিটার বলেছি।
P = Pull the pin. হাতল বরাবর প্রতিটা এক্সটিংগুইশারেই একটি সেফটি পিন থাকে। অপ্রয়োজনে হাতের চাপ লেগে যেন এ থেকে গ্যাস (গ্যাস, পাউডার বা ফোম যে কোনটাই হতে পারে) বেরিয়ে না আসে। নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে প্রথমেই পিনটাকে টান দিয়ে খুলবেন। টান দেবার সময় একটু মোচড়ের সাথে টান দিবেন। কেননা এই পিনটা আবার হালকা একটা সুতা দিয়ে বাঁধা থাকে। যেন সহজে এটা খুলে পরে না যায়। কান মোচড়ানোর মত মোচড় দিলে সূতাটা তখন ছিঁড়ে যাবে।
a = Aim. Aim at the base of the fire. আগুনের উপরে নয় গোড়াতে, যেখানে আগুন লেগেছে সেকানে তাক করুন। যদি বায়ু প্রবাহ থাকে বাতাসের বিপরীতে দাঁড়াবার চেষ্টা করুন। তা না হলে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে আগুন আপনার উপরে ফেলতে পারে। অথবা এর লকলকে শিখায় আপনার মুখমণ্ডল ঝলসে যেতে পারে।
s = Squeeze. Squeeze the handle. অর্থাৎ এবার আপনি হ্যান্ডেলে চাপ দিবেন। চাপ দিবার সাথে সাথে অগ্নিনির্বাপক পদার্থ বের হতে শুরু করবে।
s = Sweep. Sweep from side to side. এক্সটিংগুইশারের মুখ ডানে বাঁয়ে ঘুরাবেন। উপর নীচে নয়। উপর নিচ করাটা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে। অগ্নিনির্বাপক এজেন্ট উড়ে এসে আপনার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দিতে পারে।
আগুন নেভানোর পরে ব্যবহৃত এক্সটিংগুইশারটি আর পূর্বস্থানে রাখবেন না। অব্যবহৃত ভ্যালিড একটা ফায়ার এক্সটিংগুইশার সব সময় হাতের কাছে রাখুন।
কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ
* আগুনকে বাড়তে দিবেন না। যত দ্রুত সম্ভব এর উপর অ্যাটাক করুন।
* ফায়ার এক্সটিংগুইশারের এক্সপায়ারি ডেটের উপর লক্ষ্য রাখুন। সময় মত রিফিল করুন।
* এক্সটিংগুইশার কখনো তালা বদ্ধ করে রাখবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫