এক কথায় বলতে গেলে, কর্মীদের নিয়ে তাৎক্ষনিক যে মিটিং, তাই টুলবক্স মিটিং।
কবে থেকে এর প্রচলন, এর নামটাই বা এরকম কেন? এর সঠিক কোন প্রতি উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ধারনা করা হয়, আদীতে কোদাল বেলচা, বাকেট অথবা যন্ত্রপাতির বাক্স (টুলবক্স) অথবা শ্রমিকের হাতে থাকা যে কোন কিছুর উপরে বসে পরে সভা করা হতো বলেই ক্রমে এটা টুলবক্স মিটিং নামে পরিচিতি পেয়ে যায়।
সকাল দুপুর সন্ধ্যা- দিনের যে কোন সময় এ সভা হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা সকাল বেলায়ই হয়ে থাকে।
মূলতঃ কাজের শুরুতে ফোরম্যান, সুপারভাইজার অথবা গ্রুপ লিডার তাঁর সকল কর্মীদের একত্রিত করে ঐ দিনের কাজের ব্যাপারে এবং ঐ কাজের সাথে সম্পর্কিত নিরাপত্তা ঝুঁকি সমূহ ও তার বিপরীতে সকলের করনীয় কর্তব্য সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করেন। যেন কাজটি সুচারু রুপে সম্পন্ন হয় এবং কর্মীগন দুর্ঘটনা এড়িয়ে দিনের শেষে নিরাপদে থাকেন।
খুবই সুন্দর একটা ব্যবস্থা। তবে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় শ্রমিকদের কাছে সকাল বেলার এই টুলবক্স মিটিঙয়ের চেয়ে বিরক্তিকর আর কোন কিছু মনে হয় আর নাই। কেন?
যারা এর সাথে সম্পর্কিত তাঁদের প্রায় সকলেই জানেন, কারণটা কী? গৎ বাঁধা একই কথা প্রতিদিন যদি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার লোকেদের সামনে বলা হয়- ( কাজের সময় মাথায় হেলমেট পরবে, উপরে কাজ করতে গেলে সেফটি বেল্ট/হারনেস ব্যবহার করবে, সেফটি স্যু ছাড়া কাজ করবে না, কাজের যায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে, ইত্যাদি ইত্যাদি......।। ) রস কশ হীন বক্তব্য। লোকেরা বিরক্ত তো হবেই।
আমি জানিনা আমাদের দেশের ওয়ার্ক প্লেসে সেফটি ষ্ট্যাণ্ডার্ড কি রকম? তবে সিঙ্গাপুরের সেফটি ষ্ট্যাণ্ডার্ড যে যথেষ্ট উন্নত তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বিশ্বমানের। এখানেও দেখা যায় ওয়ার্কাররা প্রায়ই টুলবক্স মিটিং ফাঁকি দেয়। অনেকটা স্কুল ফাঁকি দেয়ার মত। মিটিং শেষ হয়ে গেলে হেলমেটটা বগলদাবা করে ওয়ার্ক সাইটে প্রবেশ করে। ইদানিং এই ব্যাড হ্যাবিট ফেরাবার জন্য বিভিন্ন রকমের পানিশমেন্টের ধারা প্রবর্তন করছে বিভিন্ন সাইট।
আমি এখানে তুলে ধরবো টুলবক্স মিটিঙয়ের আকর্ষণীয় কিছু দিক। বিরক্তি নয়, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে এক একটা মিটিং। আর এ সবই আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে। হতে পারে আমার এই পোষ্টের কোন একটা পর্ব হয়তো আপনার অথবা আপনার সাথীর জীবন অথবা লীম্ব, পারিবারিক অথবা পারিপার্শ্বিক স্বকীয়তা অথবা স্থিতিশীলতা রক্ষাকারীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েও যেতে পারে।
পোষ্টটিকে আমি পর্ব ভিত্তিক করার চেষ্টা করবো। নিয়মিত হয়তো হবে না ( আমার কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব এবং ব্যাস্ততার কারনেই) তবে ক্রম অনুসারিত হবে এইতুকু বলতে পারি।
আমি এখানে লিখবো আমার এখানকার এক একটা বাস্তব টুলবক্স মিটিঙয়ের আলোচনার আলোকে। মুক্ত আলোচনা থেকে শুরু করে কৌতুক পর্যন্ত সব থাকবে। গতানুগতিক টুলবক্স মিটিঙয়ের নিরস আলোচনা যতটা সম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করবো।
ওয়ার্কাররা যেহেতু এনজয় করে, আশা করছি আপনাদেরও ভালো লাগবে।
আর আপনি যদি কর্মজীবনে সেফটি রিলেটেড পারসন হয়ে থাকেন, আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য ছোট্ট দুইটা টিপসঃ
* সুপারভাইজার নয়, ওয়ার্কারদের উদ্বুদ্ধ করুন আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য।
* কর্মক্ষেত্র নয়, তাঁদের পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করুন। শেষের দিকে একে ডাইভার্ট করুন কর্ম বিষয়ে। দেখবেন মিটিং শেষে কেমন প্রফুল্ল মনে ওরা যার যার কাজে লেগে যায়।
আপনারা যারা সৌখিন অথবা শিক্ষানবিস আপনারাও পরখ করে দেখতে পারেন যার যার কর্ম পরিবেশে। খুবই কাজের একটা পদ্ধতি। আমি আমার আপন কর্মস্থলে এখন পর্যন্ত তাই করছি এবং বলতে পারেন সকলের আন্তরিকতায় আমি অভিভূত।
বেনিফিটঃ আমার কোম্পানীর অন্যান্য সেকশনের চেয়ে আমার সেকশন অন্তত সেফটি ষ্ট্যাণ্ডার্ডের দিক থেকে বরাবরই এগিয়ে।
নিজের ঢোল নিজে তো অনেকই পিটালাম। পিটাতে পিটাতে পোষ্টটাকে টেনে বেশ অনেকটা লম্বা করে ফেলেছি। আর লম্বা করাটা মনে হয় সমীচীন হচ্ছে না। ভাবছি, এটাকে ভূমিকা হিসাবে রেখে মূল পোষ্ট আগামি পর্ব থেকে শুরু করবো।
জীবন চলার প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হয়। তা সে আপনি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন। যিনি এটি মানবেন না তিনি হয় পাগল আর না হয় শিশু। আমি কিন্তু কোন প্রধানমন্ত্রীর ডায়ালগ দিচ্ছি না। কাজের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে অফিস আদালত, এমনকি আপনি যখন খেতে বসেন অথবা ঘুমাতে যান তখনও কিছু নিরাপত্তা প্রণালী রয়েছে। অবজ্ঞা করলে যে কোন সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। আমরা এখানে ধারাবাহিক ভাবে সেই সমস্ত নিরাপত্তা প্রণালী নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো কম বেশী সবারই কিছু না কিছু জানা দরকার। আপনাদের কোন উপদেশ পরামর্শ বা অভিজ্ঞতা থাকলে তাও শেয়ার করতে পারেন এখানে। ফেসবুকের মত শুধু লাইক নয়, আমরা আলোচনা-সমালোচনা-প্রতিউত্তর কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৩