-ভাই কিছু খাবেন নাকি?
-খাবো মানে!
-ভাই আজ প্রথম বেতন পাইলাম। কিছু খাবেন টাবেন না?
-তুমি বেতন পেয়েছ ভালো কথা। দেশে টাকা পাঠাও, নিজের প্রয়োজনীয়তা সারো।
-সেতো সারবোই, আপনি কিছু খাবেন টাবেন না?
-কি যন্ত্রনা! আমি কি না খেয়ে আছি নাকি?
-ভাই, ভাই, আপনি আমাদের সবকিছু। আপনার সাহায্য সহযোগীতা নিয়েই তো চলতে হবে। একটু লক্ষ্য রাখিয়েন ভাই। ……………………।
ও এই কথা! চকিতে বুঝে গেলাম আসলে ও কি বলতে চাইছে? যে দেশে আছি সে দেশে এ ধরনের প্রপোজালের সাথে আমরা পরিচিত নই। তবে দেশের কথা তো আর একেবারে ভুলে যাইনি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নও নই। তবু ধাক্কাটা সামলাতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো।
ওকে দোষ দেই না। এটা আমাদের যাকে বলে একেবারে কালচারে মিশে গেছে। আর এই একটা কালচার(!) আমাদের রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে। পয়সা ছাড়া কেহ একপা নড়তে চায় না। উপকারিতা, সহযোগিতা এসব আবার কী, পয়সা ছাড়া? সহযোগিতা করবো না কখনো বলেছি নাকি? টাকা দাও, সহযোগিতা অবশ্যই করবো। সোজা সাপটা জবাব এসে যায় আজকাল। এ ছেলেটার দোষ এটুকুই, সে মাত্র দেশ থেকে এসেছে। যে পরিবেশে তার প্রতিনিয়তঃ উঠবস ছিল। এখানে সে তারই প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছে। আমি তার এতটুকু দোষ দেইনা।
দোষ আমাদের। আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের। যারা আমাদের লিড দিচ্ছেন।
এই যে আমি, এখানে বড় বড় (!) কথা লিখে যাচ্ছি, এ ধরনের কথা তো আমার লিখার কথা না। আমার আরও খুশি হবার কথা, এমন একটা প্রস্তাব আমার সামনে আসার জন্য। কেননা এই আমিও তো সেই একই দেশের লোক। তাহলে কেন আমি আজ একে খারাপ দৃষ্টিতে দেখছি? আমি কি সাধু সন্যাসি? মহামানব ধরনের কোন কিছু? তা তো নই। তাহলে? আমার ভিতরকার এই পরিবর্তনটা কে তৈরি করলো?
কিছু নিয়ম কানুন, কিছু ধর্মীয় বিধিনিষেধ, সামাজিক পরিবেশ, আর সবচেয়ে বড় কথা আইনের শাসন। এখানে যে আইনের শাসনটা আছে আমাদের দেশে তা নেই। আর এখানেই আমাদের লিডারদের ব্যর্থতা। সর্বস্তরে ঘুষ বানিজ্য, অবৈধ ইনকাম চলছে বেশুমার।
এই দেশে কি অসাধু লোক নেই? কেহ কি তাহলে ঘুষ বা অবৈধ ইনকাম করে না? আছে এবং করে। তবে যে করে সে ভালো করেই জানে, ধরা খেলে রক্ষা নেই। আর এখানেই এদেশের সাথে আমাদের দেশের পার্থক্য। এরা করে হাতে গোনা কয়েকজন এবং তা অত্যন্ত গোপনে। আর আমরা করি মামা চাচা খালু মিলে সপরিবারে এবং প্রকাশ্যে।
ধোঁকা দিয়ে কিছু অর্জন করা, ঠেকিয়ে কিছু আদায় করতে পারা বা কৌশলে প্রাপ্যতার চেয়ে বেশী কিছু নিতে পারাটাকে আজকাল মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ পর্যন্ত সকলে একটা বাহাদুরী বলে মনে করে। মনে করে এ আমাদের অধিকার। এ যে অন্যায়, গর্হিত একটা কাজ, এই সেন্সটুকুও আমাদের নেই।
একটা সুস্থ্য জাতি হিসাবে এমন তো হবার কথা নয়! তাহলে? কেন হচ্ছে এসব? উপর থেকে নজরদারীর, শেখানোর মত, দেখানোর মত কেউ নেই বলে।
এভাবেই কি চলবো আমরা? দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অন্তহীন অন্ধাকার পথে??
পরিবর্তন হবে কি আমাদের? কবে??
আমি দিকনির্দেশনা দিতে পারবো না। সেই অধিকার বা ক্ষমতা আমার নাই। তবে ভালো কে ভালো, আর খারাপকে খারাপ বলে চেঁচামেচি করে লোকেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো নিঃসন্দেহে।
চারিদিকে এত চাপ চাপ কালো অন্ধকারের মাঝে এটুকু দৃষ্টি আকর্ষণও যদি কারো করতে পারি সেই বা কম কিসে?