শিল্পায়নের যুগেও কমছে না ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অসংখ্য শিশু শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের কারণে প্রতি বছর পাচার, সন্ত্রাস ও নির্যাতনে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে শিশুরা। ফলে ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম বন্ধের অঙ্গীকার ব্যর্থতায় পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
আজ সর্বজনীন শিশু দিবস। বেসরকারিভাবে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ কর।' গার্লস গাইডসহ যৌথভাবে বেশকিছু সংস্থা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। তবে দিবসটি সরকারিভাবে পালন করা হয় না বলে জানিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০০৩ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩২ লাখ। এর মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এই ১৩ লাখ শিশু শ্রমিক সপ্তাহে ৪৩ ঘণ্টা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, এসব শিশু শ্রমিকের প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউনিসেফ পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০০ ধরনের অর্থনৈতিক কাজে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে।
শিশুশ্রমের ওপর বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ৪৫ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ। ফলে দেখা যায়, মাঠ-শ্রমিকের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে শিশু। মাঠ শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৭৩.৫০ শতাংশ ছেলে এবং ২৬.৫০ শতাংশ মেয়ে। শিশু শ্রমিকের ৬.৭০ শতাংশ আনুষ্ঠানিক খাতে এবং ৯৩.৭০ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
শুধু একবেলা খাবার জোগাড় করতে শিশুরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। শহরে ও গ্রামের শিশু শ্রমিকরা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক খাত যেমন ট্যানারি, শিল্প-কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, জাহাজ ভাঙা, পরিবহন সেক্টর এবং অনানুষ্ঠানিক খাত কৃষি, পশু পালন, গৃহকর্ম, নির্মাণ কর্ম, ইট ভাঙা, রিকশা-ভ্যান চালানো, লোহা কাটার কাজসহ প্রভৃতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইসরাফিল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা শিশুদের অধিকারের কথা বলি। আবার বস্তি থেকে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবহার করি। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার গ্রহণ এবং সেই অঙ্গীকার পূরণে সবার সদিচ্ছা থাকতে হবে।'
কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিরিন আখতার জানান, 'ঢাকা শহরে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে শিশু শ্রমিক নেই। চরম দারিদ্র্যের কারণে তাদের মা-বাবা এ ধরনের কাজে ঠেলে দিতে বাধ্য হন।' Source- Click This Link