somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষায় টুঙ্গিপাড়া

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে সর্বচ্চ রায় প্রকাশের দিন । লেখাগুলো পড়লে কান্না চলে আসে ...

সংযোজন :
ব্লগার "গল্পসল্প" এর একটা তথ্যবহুল পোষ্ট :

টাইটেল : সেদিন যা ঘটেছিল

Click This Link

নিচের লেখাটা প্রথম আলো থেকে কপি পেষ্ট করা :
স্বীকারোক্তি : লেখাটা আজকে প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে ।

‘বঙ্গবন্ধু পড়তেন ক্লাস এইটে, আমি পড়তাম ক্লাস সেভেনে’—বাঁশুরিয়া গ্রামের অশীতিপর আবদুল মান্নান গর্ব করে বলেন। গ্রামপুলিশের পোশাক পরে তিনি বসে আছেন একটা বেঞ্চে, পেছনে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুলিশ ভবন, সামনে বাইগার নদীর কাটা গাঙ, তাতে নৌকাও ভাসছে, গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান আর সমাধিস্থল হিসেবে এখন সবার পরিচিত গোপালগঞ্জের এই টুঙ্গিপাড়া।
‘বঙ্গবন্ধুর দাফন-কাফনের কথা মনে আছে?’ স্মৃতি তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে, নাকি ইতিহাস তাঁর মনে জট পাকিয়ে ফেলেছে; আবদুল মান্নান বলেন, ‘পাকিস্তানি মিলিটারিরা তাঁকে মারছে, তারপর হেলিকপ্টার নিয়ে আসছে, ভয়ে পালায়ে গেছি, কাছে আসি নাই, বাড়ি পুড়ায়া দিছল না?’ ১৯৭১ সালে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আগুন দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা, কিন্তু পঁচাত্তরে পাকিস্তানি মিলিটারি আসেনি, যারা এসেছিল, তারা বাংলাদেশের—এ কথা তাঁকে বোঝানোই যায় না।
গত ১৭ নভেম্বর গোপালগঞ্জ শহর আর টুঙ্গিপাড়া এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তির মুখ থেকে প্রায় একই কথা শোনা গেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে রেডিওতে শেখ মুজিবের হত্যার ঘোষণা মেজর ডালিমের কণ্ঠে শোনার পর গ্রামবাসীর অনেকেরই নাকি প্রথমে মনে হয়েছিল, পাকিস্তানি সেনারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। সঙ্গী আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন আর সাংবাদিক সুব্রত সাহা মিলে আমরা আলোচনা করি, বঙ্গবন্ধু যেমন বিশ্বাস করতে পারতেন না, কোনো বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে। দেশ-বিদেশের গোয়েন্দাদের সাবধান বাণী উপেক্ষা করে তিনি বলতেন, ‘সবাই আমার সন্তান, ওরা কীভাবে আমাকে মারবে।’ এই গ্রামবাসীও তেমনিই ভেবেছিল। বঙ্গবন্ধুকে মারতে পারে কেবল পাকিস্তানি সেনারা, কাজেই তাঁকে হত্যা করার পর তাঁর লাশ নিয়ে যারা এসেছে, তারাও পাকিস্তানি।
বঙ্গবন্ধুর সমাধি চত্বরে দাঁড়িয়ে কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব (৫১) বলেন, ‘রেডিও তো তখন বেশি ছিল না। আমার বয়স তখন ১৭। আমি শুনছি আমার মনে আছে।’ তারপর তত্কালীন রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়িতে স্থাপিত ওয়্যারলেস যন্ত্রে নির্দেশ আসে ছয়-সাতটা কবর খোঁড়ার। আবার নির্দেশ আসে, একটা কবর খুঁড়তে হবে। কাঠমিস্ত্রি আইয়ুবকে ধরে আনা হয়েছিল হেলিকপ্টারে মৃতদেহটা আসার পর, পেরেকবিদ্ধ কফিনটা খুলতে। পেরেক খুলে তিনি দেখলেন ভেতরে বরফ দেওয়া লাশ, বুকে ক্ষত, হাতের আঙুল উড়ে গেছে। ওই গ্রামের নারীরা এখনো সেই সময়ের কথা মনে করে শিউরে ওঠেন। যাঁদের কবর খুঁড়তে আর জানাজা পড়তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁদের স্ত্রী আর মায়েরাও ভেবেছিলেন, পাকিস্তানি সেনারা আবার এসেছে একাত্তরের মতো, তাঁদের স্বামী-সন্তানেরা বোধহয় আর ফিরবেন না!
৮৬ বছরের আবদুর রাজ্জাক, সত্তরোর্ধ্ব সোহরাব আলী শেখসহ আরও গ্রামবাসী জমায়েত হন চত্বরটিতে। তাঁরা স্মৃতিতর্পণ করেন ৩৪ বছর আগের ১৬ আগস্টের সেই দিনটির:
“আকাশে একটা হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। ‘মেজর’ বারবার বলছেন, টাইম কত লাগবে। তাড়াতাড়ি করো। ইমাম সাহেব বললেন, যদি বলেন শহীদের মৃত্যু, তাহলে গোসল লাগবে না, তা না হলে তো গোসল করাতে হবে। ৫৭০ সাবান এল। রিলিফের শাড়ি আনা হলো দুটো, একটা লালপেড়ে, আরেকটা কালো, পাড় ছিঁড়ে তৈরি হলো কাফনের কাপড়। ‘মাইঝা চাচি আইলেন, উনি ভয় পান নাই, গালি পাড়তে লাগলেন, হারামিরা, তোমরা আমার বাবারে মাইরা তারপরে আনছ’?”
সমবেত গ্রামবাসী বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন আর স্মৃতিকাতর হন। ব্রিটিশ আমলে দুর্ভিক্ষের সময় ছাত্র মুজিব এলেন কলকাতা থেকে, পিতা শেখ লুত্ফর রহমানকে বললেন, ‘আব্বা, তোমার গোলায় দেখি ধান, গ্রামের মানুষ তো না খেয়ে।’ ‘ওই জায়গাটায় ছিল গোলাটা’—প্রবীণ কথক আঙুল উঁচিয়ে দেখান, ‘শেখ সাহেব উঠে গোলার বেড়া কেটে দিলেন, ধান পড়তে লাগল, পাটগাতি ইউনিয়নের লোকেরা সেই ধান কোছা ভরে ভরে নিয়ে গেল।’ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি নিজে মেপে দিয়েছি, কথা ছিল পরে যখন সংগতি হবে, এই ধান গ্রামবাসী ফেরত দেবে। কেউ কি আর ফেরত দেয়!’
তাঁর ঋণ কেই বা ফেরত দিতে পারবে? গোপালগঞ্জ শহরে নজরুল ইসলাম লাইব্রেরিতে বসে গ্রন্থাগারিক মইনউদ্দিন (৭৬) আর মধুপুরের তোতামিয়া (৬০) সেই কথাই বলাবলি করেন।
বঙ্গবন্ধু আর তাঁর পিতা-মাতার সমাধিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সুপরিকল্পিত সমাধিসৌধ। হরদম দর্শনার্থীরা আসা-যাওয়া করছে। একদা যে পল্লীটি ছিল নিভৃততম, তা আজ সরগরম। বঙ্গবন্ধুর সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বারবার মনে পড়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার লাইন, ‘আজ আমি কারও রক্ত চাইতে আসিনি, আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।’
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:১৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×