উতসর্গ : এই ছোট্ট লেখাটি স্নেহের ভাতিজা আবু কোহাফা'কে উতসর্গ করলাম।
"তোমার শুভো জন্মদিন" এই ছোট্ট বাক্যটার সাথে এখন পরিচিত হতে শিখেছি! অথচ জীবনের
শুরু থেকে অনেক গুলো বছর চলে গেছে কিন্তু জন্ম দিনটা কখনো টের পাইনি! অন্য সব স্বাভাবিক দিনের মত এই দিনটাও প্রতি বছর কেটে গেছে।
আমি নিজেও ভুলে যেতাম কবে আমার জন্মদিন!
আসলে আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি সেখানে এগুলোর কোন চর্চা নেই তবে তার জন্য আমার মোটেও ক্ষোভ নাই,এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যপার ।
আমার জন্মদিনের তারিখ স্বরনে আসা শুরু করেছে কয়েক বছর আগে থেকে। দেশের বাইরে গ্রাজুয়েশন করে আসার পর আমার ঢাকায় থাকার প্রয়োজন পরে,
কিন্তু তখন ঢাকায় থাকার মত তেমন কোণ জায়গা আমার ছিল না।
ঠিক সেই সময় ঢাকায় পোষ্টিং হয় আমার দাদার বড় নাতি, বড় চাচার বড় ছেলে। উচ্চ পদস্ত আমলা, মিরপুর ন্যাম গার্ডেনে সরকারি কোয়ার্টার।
যাইহোক সাময়িকভাবে ভাবীর বাসায় উঠে পড়লাম, কিন্তু সেই যে উঠলাম আর বের হয়নি। হিহি
ভাবীর ২ টা ছেলে। বড় ছেলে নর্থ সাউথ ইউনিতে আর্কিটেকে পড়ছে, ছোট ছেলে এই বছর থেকে পাবনা টেকনিকাল ইউনিতে বিবিএতে ।
ভাবীর বাসায় জন্মদিনের চর্চা তার সন্তানের জন্মের পর থেকেই আর আমার জন্মদিনের চর্চা ভাবীর বাসায় যাবার পর থেকে।
আমার নিজের মনে থাকত না, কিন্তু ভাবী ঠিকই মনে রাখত, ঠিক রাত ১২ টার সময় আমার কাছে এসে ঠিকই উইশ করত। আমি ঘুমিয়ে গেলে ডেকে তুলে উইশ করত!
আর পরের দিন তার নিজ হাতে বিশেষ কিছু রান্না। প্রথম বার আমি অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি অনেক রকম রান্না বান্না করে রেখেছে । ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম ভাবী এগুলা কিসের আয়োজন ? ভাবী মিষ্টি হেসে বলল, এমনিতেই করলাম সবাই খাব বলে।
কিন্তু, একটূ পরেই বুঝেছিলাম আমার জন্মদিন উপলক্ষে তার এই আয়োজন।
সেদিন আমি খুবই পুলকিত হয়েছিলাম। এভাবেই শুরু । আমার ছোট ছেলেটা (ভাবীর ছোট ছেলে, নাম আবু কোহাফা) কখনো ভুলত না! তার স্বরনশক্তি সাংঘাতিক, সে ঠিকই সবার আগে মনে করিয়ে দিত,"চাচা আজ তোমার জন্মদিন"।
কিন্তু আমি সাংঘাতিক ভুলো মন।
এবারো আমার ছোট ছেলে(কোহাফা)র জন্মদিন ভুলে গেছি!অক্টবারে ছিল! কিন্তু কিছুতেই ডেট-টা শিওর হতে পারলাম না,তাকে জিজ্ঞেসও করতে পারলাম না!
সেও ইচ্ছা করেই তার ফেস বুকে জন্মদিন উল্লেখ রাখে নাই। যদিও সে জানে, আমার খুব ভুলো মন তার পরও আমি জানি, সে কষ্ট পেয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক।
বাবা কোহাফা, আমি অনেক লজ্জিত ও দুঃক্ষিত। আমি সরি বলছি। তোমার শুভো জন্মদিনের উইশ আমি সবসময় মনথেকে করি।
সে শুধু সন্তান নয়, সে আমার সব থেকে ভাল বন্ধুও বটে! ঢাকাতে ৪-৫ বছর এক রুমে এক বেডে কাটিয়েছি। আমি আমার যে কোণ বন্ধুর চেয়ে তার সাথে বেশী হাসি ঠাট্টা ফাজলামি শাসন সব কিছু করি।
তার পারসোনালিটিও সাধারনের মত না, আলাদা।
বড় ছেলে মাসুম বিল্লাহ খুবই ভবঘুরে তারপরও সেও উইশ করতে ভুল করত না। সেও আমার খুব ক্লোজ বন্ধু। মাঝে মাঝে বাপ বেটা এক সাথে ২-১ টা স্মোকও করেছি! হিহি
এভাবেই মানুষের জীবনের প্রতিটা মুহুর্তই একেকটা স্মৃতি! এগুলো কি বলে শেষ করা যায়!!
এভাবেই ৪-৫ বছর ভাবীর বাসায় সবাই আনন্দ ফুর্তির মধ্যে এক সাথে কাটিয়েছি। বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার কথা ভাবতে পারতাম না কেউ ভাবতেও দিত না!
মাঝে ২-১ বার ভাবীকে বাইরে থাকার কথা বললে, মলিন মুখে তার জিজ্ঞেস "তোকে কি আমি কষ্ট দিই!"
আমি কি কষ্ট পাব! উলটা আমি তাকে সব সময় জ্বালিয়েছি। টিভি দেখতে গিয়ে তার রিমোট নিয়ে টানাটানি করা,তার প্রিয় সিরিয়াল ঠিকমত তাকে দেখতে না দেওয়া।
২-১ দিনের জন্য সে কোথাও বেড়াতে গেলে ,রান্নার ঝামেলা হবে দেখে তার উপর রাগারাগি। এছারাও আমার বাইরে খেলে সমস্যা ও কষ্ট হয় দেখে
প্রতিদিন সকালে ভাবী সবার নাস্তার পাশাপাশি আমার অফিসের জন্য আলাদা করে লান্স তৈরি করে দিত।
আরো কত রকম জ্বালাতাম আর প্রায়ই ইচ্ছাকরেই ক্ষ্যপাতাম!
ভাবী কোথাও বেড়াতে যাবে! সে সময় আমি বাসায় থাকলে প্রায়ই আমাকে তার বেড়ানোর সাথী করে নিত!
আরো অনেক অনেক মজার কথা ও স্মৃতি লিখে শেষ হবে না, কাজেই থাকনা মনের ভিতর লুকানো!
ভাবী ছিল মায়ের মত! মায়ের স্নেহ ভালবাসা আমি আরো একজনের কাছে পেয়েছি!আমার হাইস্কুল জীবন কেটেছে ছোট চাচার বাসায় থেকে পূরো ৫ বছর।
তখন ছোটমা'র(ছোট চাচি) কাছে পেয়েছি মায়ের স্নেহ ভালবাসা আর ছোটআব্বা'র(ছোট চাচা) কাছে বাবার স্নেহ ভালবাসা।
ছোট চাচার তিন ছেলে মেয়ে সেই সাথে আমি ও আমার বড় বোণ মিলে প্রায় কাছাকাছি বয়সি ৫ ভাইবোণ এক জাইগায় কৈশর কাটিয়েছি।
সেই সময়ের কিছু স্মৃতি না হয় অন্য সময় লিখে রাখার চেষ্টা করব। এখানে জন্মদিন প্রসংগ চলছে...!
এখন ডিজিটাল যুগ, ফেসবুকে আমরা সবাই বন্ধু বান্ধবের জন্মদিন আগাম জানতে পারি,উইশ করতে পারি!
এখন ভুলে যাবার বা ভুল হবার চান্স খুবই কম। আমরা ভুলতে চাইলেও ফেসবুক ভুলতে দিবে না!হিহি
তবে এখানে ম্যনিলাতেও জন্মদিন কালচার খুবই পোক্ত। গত ১০ দিন আগেই আমার কলিগরা হোয়াইট বোর্ডে,আমার জন্মদিনের তারিখটা লিখে রেখেছে!
গত বারও এরা আমাকে ভুলতে দেয়নি, এছারাও যে যেখানে আছে সবাই মনে করিয়ে দিয়েছে ও দিচ্ছে!
এইত হলো জন্ম দিন...!!
আজকের মত প্রতিটা জন্ম দিনে অন্তর থেকে আমার মা,ছোটমা ও বড় ভাবী'র পা ছুয়ে ছালাম রইল।
এই পোষ্টে মন্তব্য নিঃপ্রয়োজন !! বিষয় বস্তু নিয়ে মন্তব্য না করলেই ভাল !