আজ ঈদুল ফিতর। খুশির দিন আনন্দের দিন। অথচ আজকের দিনটি আসলেই আমার ১৯৯১ সালের
১৭ এপ্রিল বুধবারের এর কথা মনে পড়ে। সেদিন ১৭ ই এপ্রিল ছিল ঈদুল ফিতর। আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি
এবং আমাদের চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ভাই পড়ে মাত্র কলেজে।
সেদিন তুমি (আব্বা) চলে গেছ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে আমাদের এতিম করে। আর সেই দিনই আমরাও তোমাকে সাথে নিয়ে কুষ্টিয়া
ছেড়ে গ্রামে চলে গেছি।
তুমি সেই সময়ের একজন উচ্চ শিক্ষিত এম,এ পাস মানুষ হয়েও অধিক সরলতা আর উদাসীনতার
কারনে নিজের জীবনের সুবর্ন সময় নষ্ট করে, পরন্ত বিকালে ছেলে মেয়েদের মানুষ করার তাগিদে পরিবার নিয়ে
গ্রাম ছেড়ে কুষ্টিয়া শহরে ছুটে গেছ। কিন্তু ততক্ষনে বেলা শেষ, কে তোমাকে চাকুরি দিবে! শেষে উপায় না পেয়ে
সবার মুখের দিকে তাকিয়ে করেছ ছোট্ট একটা চাকুরি। তারপর শুরু হয়েছে তোমার জীবন সংগ্রাম।
নিজের শরীরে কঠিন অসুখ বয়ে বেরিয়েছ, কখনো ভাল ডাক্তার দেখাওনি। এরই মধ্যে অসুখ যখন
তোমাকে রিতিমত শেষ করে দিয়েছে তখন আর ডাক্তার দেখিয়ে কি হবে! যাদের জন্য এত কষ্ট করলে এবার তো
তাদেরকে আরো কষ্ট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে এতিম করে এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তোমাকে চলে যেতে হবে!
কেননা নামকরা ডাক্তার এইচ,আর খান বলে দিয়েছে তোমার বুকের ২ টা ভাল্ব ই নষ্ট হয়ে গেছে, এখন জমি জমা বিক্রি করেও
কোন লাভ হবে না।
সেদিন ইদের খুশিতে ব্যস্ত ছিলাম, তার পর দেখলাম সবাই কাদছে। তেমন কিছু না বুঝেই সেদিন সবার দেখা দেখি কেদেছিলাম।
তারপর আস্তে আস্তে যখন বুদ্ধি হল, যখন দেখি সবার আব্বা তাদের সন্তানদের কত আদর করে, ভালবাসে। তখন বুক ফেটে যায়, কাদতে ইচ্ছা করে।
তুমি থাকতে , ইদ আসলেই আমরা ভাই বোন কান্না কাটি করতাম নতুন পোশাকের জন্য আর তুমি তোমার সামান্য রোযগারের মধ্যে সব কিছু
ম্যনেজ করার চেষ্টা করতে। তুমি যাবার পর আমাদের বুদ্ধি হয়ে গেল! তুমি নাই, কাদব কার কাছে! আগে কত বোকা ছিলাম, কেদে কেদে
তোমাকে কষ্ট দিতাম! আব্বা, তোমার কি মনে আছে! যখন তুমি নামাজ পড়তে তখন আমি আর তোমার ছোট মেয়ে তোমার জায়নামাজের সামনে
গিয়ে তোমাকে হাসাতাম, আর তুমি হেসে ফেলতে। হি হি...
বাবা, তুমি কখনও কাউকে আঘাত করতে না, এমনকি তোমার সন্তানেরা তোমাকে হাজার জ্বালালেও তুমি গায়ে হাত তুলতে না। আমি না বুঝে বলতাম,
আমার বোচা নাক তোমার নাকের মতন, শুনে সবাই হাসত, তুমিও হাসতে। হি হি...কারন তোমার নাক তো বোচা ছিল না। তুমি ছিলে রাজ পুত্রের মতন দেখতে।
তুমি চলে যাবার পর, তোমার পৈত্রিক সম্পত্তি ও তোমার ভাইদের স্নেহ,ভালবাসা ও সহযোগিতায় আজ আর তোমার ছেলেমেয়েরা সেই পিচ্চি নাই।
বিশেষ কারও অবদানের নাম তোমাকে এখানে বলব না, তুমি তোমার আল্লাহকে জিজ্ঞাস করো, উনিই তোমাকে বলে দেবে।
এছারাও তোমার বড় বংশের প্রত্যেকেই স্নেহ ভালবাসা দিয়েছে। আব্বা, ভালবাসাটাই সবকিছুর থেকে বড় শক্তি।
বাবা, তুমি কি জানো! তোমাকে সবাই কত ভালবাসে! হয়ত তুমি কিছুটা জানো...তবুও তোমাকে বলি, সবাই তোমাকে খুব ভালবাসে।
সবাই কে তোমার কথা মনে করিয়ে দিতে হয় না, আজও মানুষ সবাই তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়। তোমাকে অনেক মানুষ চেনে। কেন বলোতো?
নাহ আমি তোমাকে বলব না, তুমি নিজেই এটা জানো। এবং তোমাকে যারাই চেনে তারাই তোমাকে খুব ভালবাসে। এমন কি তোমার বংশের যারা চির শ্ত্রু তারাও
তোমাকে ভালবাসে। আমি শুনেছি মানুষ যাকে ভালবাসে খোদাও তাকে ভালবাসে। আমি বিশ্বাস করি, তুমি ভাল আছো। তুমি যদি ভাল থাক তাহলে এতিম
হয়েছি জেনেও কখনো কাদব না। তুমি ভাল থাকো আব্বা, আল্লাহ তোমাকে ভাল রাখুন।