আমাদের স্পেশশীপটা একটা অদ্ভুত গ্রহে এসে পৌঁছিয়েছে। চারদিকে কি সব অদ্ভুত প্রাণী। আচ্ছা, এদেরকে তো প্রাণীই বলে? নাকি অন্য কিছু।। সৃষ্টি কর্তাই ভালো জানে।
চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। আমার সাথে যারা আসছে তারা কোথায়? রিনি, ইরা তোমরা কোথায়... হ্যালো... হ্যালো...
দড়াম করে স্পেশশীপের দরজার ঐ অদ্ভুত প্রাণীরা আগাত করল। দরজা ভেঙ্গে আমাকে নিয়ে চলল।
বাঁচাও ... বাঁচাও... কিন্তু কেই নেই... আমি একা।
আমাকে এক জাগায় নিয়ে আসল। প্রাণীগুলো সমাবেশ এর মত বসে আছে। তবে নিশ্চুপ। আমার মনে পড়ে গেলো পৃথিবীতে মানুষের সমাবেশ এর কথা। সমাবেশ মানেই কাটাকাটি, মারা মারি, কটুক্তি, আরো কত কিছু।
হঠাৎ করে একজন বলে উঠল। দেখ বালক, তুমি আমাদের গ্রহতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেছ। এটা অন্যায়। বিশাল অন্যায়। আর এ জন্য তোমাকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে।
আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছিল না। আমি তারপর ও বলার চেষ্টা করলাম, আমি ইচ্ছে করে প্রবেশ করি নি। আমার স্পেশশীপ ক্র্যাস করছিল। তাই আপনাদের গ্রহতে জরুরী ল্যান্ড নিতে হয়েছে।
দেখ বাকল, অন্যায় অন্যায়ই। তুমি যেভাবেই ল্যান্ড কর না কেন। তুমি অন্যায় করেছ। যাই হোক, তোমাকে আমরা একটি সুযোগ দিতে পারি। তোমার যদি শেষ কোন ইচ্ছে থাকে, আমরা তা পূরন করতে পারি।
আমি চিন্তা করলাম আমি তো মারাই যাচ্ছি, শেষ সুযোগ দিয়ে লাভ কি হবে। তারপর হঠাৎ মনে পড়ল পৃথিবীর কথা। পৃথিবীর খারাপ মানুষের কথা। যারা পৃথিবীর মানুষদের দেখাশুনা করার নাম করে তাদের নিয়মিত ধংশ করে চলছে। আমি বললাম, দেখ আমার শেষ ইচ্ছে তোমরা পূরন করতে পারবে না। তাই আমার বলেও লাভ নেই।
প্রাণীটা বলে উঠল, তুমি বলেই দেখ। এ মহাবিশ্বে আমরা পারিনা এমন কোন কাজ নেই।
মনে মনে একটু সাহস পেলাম। বললাম দেখ, আমাদের গ্রহে অনেক গুলো দুষ্ট প্রজাতির মানুষ রয়েছে। যারা নিজেদের একটু উপকারের জন্য অন্যের ক্ষতি করে বেড়ায়। তাদের পৃথিবী থেকে বের করে অন্য কোন গ্রহে রেখে আসতে পারবে? আর হ্যা, এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।
পুরো নিশ্চুপ সমাবেশে তখন গুঞ্জন উঠল। হয়তো তারা এমন অদ্ভুত শেষ ইচ্ছে এবারই প্রথম শুনল। যে লোকটি কথা বলছিল, সে হয়তো সবার রাজা। সে বলে উঠল, চুপ করো তোমরা...
দেখ বালক, তোমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে হলে আমাদের নিয়ম ভঙ্গ করে পৃথিবীতে প্রবেশ করতে হবে। আমরা নিয়ম ভঙ্গ করতে পারি না।
আমি বললাম, আপনি আমার শেষ ইচ্ছে জানতে চেয়েছেন, আমি জানিয়েছি। আর তাছাড়া ঐসব মানুষকে যদি আপনারা পৃথিবী থেকে বের করতে পারেন, তাহলে পৃথিবীর মানুষ খুশি হবে। আপনাদের কথা সারা জীবন মনে রাখবে।
দেখ বালক, যদি তাই হয়। তাহলে আমরা তা করার চেষ্টা করব। তবে তা করতে সময় লাগবে। তত দিন আমরা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব না। কারন আমাদের অক্সিজেনের অপচয় হবে, আমরা তা চাই না। তবে তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমরা তোমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করবই।
অদ্ভুত ঐ প্রাণীদের মধ্যে তখন একটি প্রাণী বিশাল একটা কাচের বক্সে নিয়ে আসল। আরেকটা প্রাণী নিয়ে আসল একটা ক্যাপসুল। তাদের মতে প্রাণ বিশর্জন ক্যাপসুল। কাচের বক্সে আমাকে ঢুকে দেওয়া হলো। এবার একজন আমার মুখ হা করে খুলে ধরল আরেকজন ক্যাপসুলটা আমার মুখে প্রবেশ করিয়ে দিল। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। আমি আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করতে লাগলাম।
কানের পাশে হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর শব্দ হলো। চিন্তা করলাম আমি মারা যাওয়ার পর আবার কিভাবে শব্দ শুনি। চোখ আসতে আস্তে খুলতে দিয়ে দেখি আমি দেখতে ও পাচ্ছি। অর্থাৎ আমি এতক্ষন স্বপ্ন দেখলাম। হঠাৎ মনে হলো আরে, আজ তো আমার এক্সাম। লাপ দিয়ে উঠলাম। আরেকটি ভয়ঙ্কর শব্দ হলো। বুঝতে পারলাম আশে পাশে কেউ ককটেল বোমা পুটিয়েছে। তারপর মনে পড়ল আজ হরতাল। তার মানে আমার পরীক্ষা দিতে হবে না। তার মানে আমি আরেকটু ঘুমুতে পারব...
বিদ্রঃ ভয়ঙ্কর মানুষ গুলোকে সত্যি যদি পৃথিবী থেকে সরানো যেত, ভালো লাগত। এটা সত্যি সত্যি আমার ইচ্ছে। কেউ যদি সত্যিকারে আমাকে এসে জিজ্ঞেস করে কি চাও, আমি বলল পৃথিবী থেকে হাঙ্গামাকারীদের সরিয়ে দাও। মানুষের শান্তি পিরিয়ে দাও। হরতাল, মৃত্যু এসব থেকে মানুষকে মুক্তি দাও।