সেদিন রেডিও থেকে বাসায় ফিরছিলাম, মানে ধানমণ্ডি ৪ নাম্বার রোড থেকে ২৭ নাম্বার রোডে যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠলাম । রিকশায় উঠে শুনলাম কোথায় যেন গান বাজছে...আমি কিছুটা অবাক হয়েই ভাবলাম চলন্ত রিকশায় গান আমার সাথে সাথে চলছে কেন ?!! কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম যে রিকশাওয়ালা তার বুক পকেটে তার মোবাইল ফোনে খুব অল্প ভলিউমে গান শুনছে । আমি তাকে বললাম বাহ আপনি তো দেখি বাউল গান শুনেন । আমারও খুব পছন্দের । তো পথিমধ্যে আমার ফোনে একটা কল এলো, আমি ভয়ঙ্কর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সে তখন গান অফ করে দিল...আমার কথা বলা শেষে আবার গান প্লে করল...আবার ও একি কাণ্ড ঘটলো । তৃতীয় বার কল আসার পর আমি তাকে বললাম যে গান বন্ধ করার প্রয়োজন নেই...এই ঘটনা থেকে দুটো ব্যাপার আমাকে ভীষণ ভাবে ধাক্কা দিল...
# এই খেটে খাওয়া মানুষটার বোধ যতটা সজাগ যতটা জাগ্রত সেটা সত্যি অবাক হওয়ার মত...তার যাত্রীর যেন কথা বলতে সমস্যা না হয় সেটা ভেবে যা করে দেখাল তা এখনো আমাদের মধ্যে নেই...শিক্ষায় দীক্ষায় আধুনিকতায় কতটা এগিয়েছি আমরা (!!!) কিন্তু প্রতি মুহূর্তে নিজের কোন কাজে বা কথায় পাশেরজন কে কষ্ট আর বিরক্ত করে চলেছি...যেন তাতেই আমাদের সাফল্য...লোকটার বোধ দেখে দুঃখ হয়েছে এতোটা জাগ্রত একজন সচেতন মানুষের মূল্যায়ন আবারো ভুল জায়গায় হচ্ছে...এমন একজন মানুষের রিকশা চালানোর কথা না...যারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাদের হাতে দিয়ে রেখেছি আমরা মূল্যবান দায়িত্ব আর যারা কিছুটা সচেতন মনের বা চিন্তার দিক থেকে আসলেই যারা মানুষ, তাদের কে নামিয়ে দিয়েছি এতোটাই নিচে যেখান থেকে তাদের আর করার কিছুই থাকেনা...লোকটার আইকিউ লেভেল যতটা ভালো আমি বিশ্বাস করি সে বেশিদিন রিকশাওয়ালা থাকবেনা...সে তার অবস্থান থেকে নিজেকে বের করে নেবে...তাকে দেখে নিজেকে বলেছি - রাসেল এখনও অনেক কিছু শেখার বাকী তোমার...এখন তোমরা মানুষ হওনি...!!!
#আর একজন সংগীত কর্মী হিসেবে এই ঘটনা আমাকে বলেছে...এমন একজন মানুষের এত কঠিন ক্লান্তির সময় যদি তুমি তাকে তোমার গানের মাধ্যমে বিন্দুমাত্র আনন্দ দিতে পারো...যদি এতোটা কষ্টের মধ্যেও সে ভালো লাগা বা শান্তনা খুজে পায় তবে তোমার গান বাঁধার চেষ্টা পবিত্র এবং সার্থক...গান ভালোবেসে তুমি ভুল করনি...গান যা করতে পারে তা আর কোন কিছুই করতে পারেনা...