ব্লগার " অর্ফিয়াস " । সামু তে উনি সম্ভবত ২০১০ থেকে ছদ্ম নামে লিখা লিখি করেন । আমি ছোট বেলা থেকেই ভ্রমন প্রিয় হওয়ায়, বিভিন্ন বই / পত্রিকা / ব্লগ এ ভ্রমন গল্প খুজে বেড়াতাম । সেই সুবাদে ২০১২ তে ব্লগ / অনলাইন এ ঘাটা ঘাটি করতে গিয়ে খুজে পেলাম জোসনার মায়াবী আলোয় এক আলৌকিক জল ভ্রমণের গল্প নামে অসাধারন এক নদী ভ্রমনের ব্লগ । যার কিছু অংশ আমি কোট করে দিচ্ছি " নিরবতা সংগী করে লঞ্চের নেভিগেশন লাইটটাতে হেলান দিয়ে বসি পা ছড়িয়ে। হুহু বাতাসে গা শীতল হয়ে আসে নিমিষে। এবার অবসর হলো আকাশটার দিকে তাকাবার। আহা এইতো সেই বিশাল চাদ যার জন্য এতো ওদেখলেপনা আমার। আমি চেয়ে রই চাদের পানে, দেখি বুড়ির চড়কা কাটার দৃশ্য। জীবনে কত জায়গায় যে চাদনি রাত কাটিয়েছি তার ঠিক নেই কিন্ত জলের ওপর বসে চাদে দেখার যেন কোন তুলনা হয়না। আম তাই প্রাণ ভরে দেখি আমার চাদকে। দেখি চাদের আলোয় আলোকিত হওয়া জল, মেঘনার ছলকে ওঠা রুপালী জল। দুরে অষ্পষ্ট হয়ে দেখা যায় কোন এক অচেনা বন্দরের আলো। আমি সে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকি, ভাবি একদিন ঠিক চলে যাবো অচেনা সে বন্দরে। কেউ আটকাতে পারবেনা আমায়। " অসাধারন ভালো লাগলো আমার কাছে লাইন গুলি , কল্পনায় হারিয়ে যেতাম আমিও সেই জলের রাজ্যে । এরপর থেকেই উনার ব্লগ নিয়মিত ফলো করি ।উনি মূলত সম সাময়িক বিষয় গুলো নিয়ে লিখলেও, ভ্রমন বিষয় নিয়ে বেশী লিখতেন , অসাধারন ছিলো তার লিখা গুলো । এক সময় তার ফেসবুক আইডি ও পেয়ে গেলাম ও তাকে বন্ধু তালিকায় এড করে নিলাম । এরপর থেকে ইনবক্স এ কথা হতো ও ব্যাক্তিগত ভাবে পরিচয় হয়ে গেলো । ফেসবুক ভিত্তিক একটি ভ্রমন গ্রুপ এর এডমিন ছিলেন তিনি ।
তার সাথে প্রথম দেখা ২০১৪ তে " বেড়াই বাংলাদেশ " এর কুয়াকাটা ইভেন্ট এ । তার মুখে না বলতে কোন শব্দ ছিলো না । নদী ভিত্তিক কোন ইনফো লাগলে ইনবক্স তো করতেন ই , ফোন ও দিয়ে বসতেন । আর ইভেন্ট বা চাঁদপুর এ যদি ইভেন্ট ছড়াও পারসোনালি ট্রিপ দিতেন , আমাকে নক দিয়ে বসতেন , আমি যেতাম ও ফ্রি থাকলে । চড়ে বসতাম লঞ্চ এর ছাদ এ। আমার ভ্রমন শুরু যদিও আরো কিছু দিন আগে থেকে তবে এই ভ্রমন এর পেছনে যাদের ইন্সপাইরেশন আমার কাজ করে তাদের মধ্যে এই "মাহমুদ হাসান খান", আমাদের প্রিয় মাহমুদ ভাই অন্যতম ।
নদী , নৌযান , রকেট স্টীমার ও এম ভি বাঙালি জাহাজ এর প্রতি এ মাহমুদ ভাই এর ভয়ংকর রকমের আসক্তি ছিলো, যেটা আমারো রয়েছে । কোন এক জোছনা রাতে চাঁদপুর এর লঞ্চ এর ছাদে বসে আড্ডা হচ্ছিলো তার সাথে, উনার নানার বাড়ির কাছে সন্ধ্যা নদীর পাড়ে কোন এক লঞ্চ ঘাট এ রাত কাটাবেন , আমদের মতো কিছু ভাই ব্রাদার দের নিয়ে । অন্ধকার এ লঞ্চ ঘাট এর টিনের চালে আর নদীর জলে বৃষ্টির ছপাত ছপাত শব্দ উপভোগ করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটা হলো না , খুব আগেই তিনি চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে ।
মাহমুদ ভাই গেলেন তার ড্রীম ট্রিপ আমেরিকায় । সেখানে যাওয়ার পর ও মেসেঞ্জার এ নক দিতাম কথা হতো । এক দিন টিওবি এর কোন একটা পোস্ট এর কমেন্ট এ তিনি সহ কথা হচ্ছিলো , ব্রিটিশ দের খনন কৃত গাবখান ক্যানেল নিয়ে । ভরা বর্ষায় গাবখান এর সৌন্দর্য আসলে লিখে প্রকাশ করা যাবে না । ওই কমেন্ট এই প্ল্যান করে ফেললাম , আমেরিকা থেকে তিনি আসলে আমরা যাবো গাবখান ক্যানেল এ , এম ভি বাঙালি তে করে । কিন্তু নাহ ! উনি এসে দেশ এ স্থির ও হতে পারলেন না । তার আগেই চলে গেলেন না ফেরার দেশ এ ।
আজ বাংলাদেশ এর লোকাল ট্যুরিজম এর নেপথ্যে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান মনে রাখার মতো । তিনি বাংলাদেশ কে অন্য ভাবে প্রমোট করেছিলেন বিশ্ব দরবারে । বিশ্ববিখ্যাত ট্রাভেল গাইড বুক লোনলি প্লানেট তাকে Guardian Angel of Travelers in Bangladesh উপাধি দিয়েছে । আফসোস তিনি খুব আগেই চলে গেলেন , তাকে দরকার ছিলো এই দেশ এ আরো অনেক বছর ।
২০১৪ এর পর সামুতে তিনি আর নিয়মিত ছিলেন না । তার শেষ ব্লগ ছিলো ২০১৬ এর মার্চ এ অষ্টগ্রামে ক্যাম্পিং ট্যুর
ছবিতে মাহমুদ ভাই এর সবচেয়ে প্রিয় জল বাহন পি এস মাহসুদ এর ব্যালকনিতে, কোন এক রাতে আড্ডার মুহূর্তে ।
দুই বছর আগে এই দিন এ তিনি চলে যান , সবাই কে কাঁদিয়ে । আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসীব করুন । আমিন। ওপারে ভালো থাকুন ব্লগার " অর্ফিয়াস " - এই হউক কামনা ।
আমিও অনেক দিন পর সামু তে লিখলাম । আশাকরি সামনে নিয়মিত হবো ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫