অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হলো ৩১, মার্চ , বৃহস্পতি বার রাতে। ২০ মিনিট এর প্ল্যান এ ও বিশেষ কাজে বরিশাল গেলাম। বৃষ্টির ভেতর চলে গেলাম #সদরঘাট । এম ভি #মধুমতি তে শিমুল ভাই , সীমান্ত ভাই আগেই ছিল, আমি উঠে গেলাম। জাহাজ ও ছেড়ে দিল। এরপর থেকেই মোটামুটি বিজলী চমকানো ও ঝড় শুরু হয়ে গেলো। কেবিন ছেড়ে চলে তিন তলার পেছনে চলে গেলাম । কিছুক্ষন আড্ডা দিতেই বৃষ্টি । চলে এলাম দু তলার সামনের অংশে । তুমুল বাতাস সাথে, মেঘনার ভয়ঙ্কর ঢেউ শুরু হয়ে গেল। বাতাস যেন আমাদের কে সামনে থাকতেই দেবে না। তারপর থেকে গেলাম, কিছুক্ষন পর চাঁদপুর এর #আল_বোরাক লঞ্চটি বডি হালকা হওয়ায় ঢেউ এর উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেল চাঁদপুর এর দিক এ । এবার আবার সামনে থেকে #গ্রীনলাইন_৩ নাকানি চুবানি খেতে খেতে ঢেউ দিয়ে চলে গেল । ঢেউ এসে মধুমতি এর গায়ে লাগলো মধুমতি তে কিছুই টের পাওয়া গেলো না, এই ঢেউ এ নাকি বড় বড় লঞ্চ গুলো রোলিং করে । যাই হোক ব্জ্রপাত শুরু হয়ে গেলো বিজলী চমকানো এর ঝলশানি তে মেঘনা নদীর জল, আলোকিত হয়ে যাচ্ছে বার বার । পানির গায়ে এর আলোর বিচ্ছুরন অপূর্ব লাগছিল। লাইফ এ অনেক লঞ্চ / নৌযান এ গিয়েছি কিন্তু ছোট খাট অনেক ঝড় ও এসেছে কিন্তু এমন ফিল পাইনি কোথাও । এভাবে কিছুক্ষন যাওয়ার কেবিন এর দিকে যাব। ভাবলাম খেয়ে নেই, খেলাম মধুমতিতে সাদা ভাত, মরিচ ভর্তা, আলু ভর্তা, ডাল চরচরি, সবজি, আরেকটা ভর্তা এর কথা মনে নাই । মরিচ ভর্তা টা ভালো ছিল ।
ছবিঃ Launch Vessel Finder's Bangladesh
এরপর জাহাজ চাঁদপুর এসে গেলো । চাঁদপুর আর নামিনি বৃষ্টি ছিল বেশী। চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর বেশ দ্রুত গতিতেই জাহাজ চলছিল। ঘুমুতে চলে গেলাম, কিন্তু ঘুম কি আসে ? ওদের দু জন কে কেবিন এ রেখে বাইরে থেকে লক করে দিয়ে, আমি চলে গেলাম আবার পেছনে। কিছুক্ষন পর, শুরু হলো প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রুপ। উলটো দিক থেকে আসা ছোট - বড় লঞ্চ গুলোকে দেখছিলাম ট্রলার এর মতো রোলিং করতে। অন্ধকার এ দেখা না গেলেও বিজলী চমকানো এর আলোয় ক্ষন ক্ষন এই দেখা যাচ্ছিল এমন। বাতাস যে কুন্ডুলি পাকিয়ে পাকিয়ে পানি ছুড়ে দিচ্ছিল উপর দিক এ। ঢেউ এর ছপ ছপ শব্দ আর বাতাস এর গতির শব্দ মিলিয়ে অচেনা এক ধরনের অনুভুতি তৈরি করছিল। কেন যেন আমার কাছে ভয় লাগছিল না একটু ও, আশে পাশের অনেকেই ভয় পাচ্ছিল। আমি ব্যাপার টা এঞ্জয় করছিলাম। ঢেউ এর আঘাত অবশ্য মধুমতি এর কিছুই করতে পারেনি । ইভেন ভেতরে যারা ছিল তারা টেরই পাইনি । তখনই বুঝলাম, বাংলাদেশ এ ইনল্যান্ড নদী পথে এই জাহাজ টিই শুধুমাত্র ১০০% নিরাপদ । এমন একটা ঝড় যাচ্ছে কেউ বুঝতেই পাচ্ছে না। ক্যাপ্টেন / মাস্টার মাঝ নদী দিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে । (পরদিন সকালে শুনেছি - ঢাকা বরিশাল রুটের বড় লঞ্চ #সুন্দরবন_৭ এবং পটুয়াখালী রুটের সবচেয়ে বড় লঞ্চ #সুন্দরবন_৯ ঝড়ের বাতাসে নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে চরে গিয়ে আটকিয়েছিল, এছাড়াও অনেক ছোট লঞ্চ তীরে দিয়ে থামিয়ে রেখেছিল যে গুলো নির্ধারিত সময়ের ৫-৯ ঘন্টা পর গন্ত্যব্যে পৌছে), ঝড়ের তান্ডব বেড়েই চলছিল, বাতাসের চাপ সহ্য না করতে পেরে অনেকেই, নিচে নেমে গিয়েছিল, এর পর শুরু হলো বৃষ্টি । বাতাসে বৃষ্টির পানি আমাদের কে ভিজিয়ে দিচ্ছিল প্রায়। এভাবেই চলল আরো ৩০ মিনিট এর মত। এরপর জাহাজ যখন মেহেন্দী গঞ্জ এর এদিক টা দিয়ে ছোট নদী তে ঢুকে গেলো । তখন ঝড় কমে গিয়েছিল। তখন নেমে এসে ঘুম দিলাম অল্প একটু। #মধুমতি একদম নির্ধারিত সময়ে বা আগেই পৌছে গিয়েছিল । এর পর আমরা বরিশাল ঘাট এ নামলাম । (সমাপ্ত)
ছবিঃ এম ভি মধুমতি । বিস্তারিতঃএমভি মধুমতি (BIWTC এর নতুন জাহাজ)
এবার মুল কথায় আসি একটু বড় হয়ে গেলেও দরকার এই বিষয় গুলোঃ
#শুরু_হয়েছে_কাল_বৈশাখী_ঝড়ের_মৌসুম
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দেশের মধ্যে সাধারণ একটু ঝড়ো বাতাস বইলে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কিন্তু আমাদের নৌপথে চলাচলরত নৌযানগুলোর সে মতে প্রস্তুতি খুবই সামান্য। একটু সচেতনতা এবং ধৈর্যধারণ ও নৌযান মালিক / পরিচালনাকারীদের কিছু বিষয় এ সচেতন করা গেলে শত শত মানুষের জীবন বাঁচার পাশাপাশি নৌ যাত্রা নিরাপদ হয়। আসুন আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হইঃ
যাত্রী সচেতনতাঃ
* ঝড় এর পূর্বাভাস পেলে যথাসম্ভব ছোট নৌযান এড়িয়ে চলুন, আন ফিট নৌযান এ উঠবেন না।
* অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কোন ক্রমেই নৌযান এ আরোহণ করিবেন না।
* যাত্রা কালে ঝড়ো হাওয়া বা ঝড় শুরু হলে কোন ক্রমেই আতঙ্কিত / উত্তেজিত হয়ে ছোটাছূটি করিবেন না। স্থির হয়ে যার যার যায়গায় যেভাবে আছেন সেভাবেই বসে/শুয়ে থাকুন । মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া / পার্থনা করুন।
* সম্ভব হলে এই মৌসুমে নিজেরা লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা চাইলে বড় দুর্ঘটনা হলেও মাত্র ৪৫০ টাকা মূল্যের একটি লাইফ জ্যাকেট আপনার মূল্যবান জীবন বাঁচাতে পারে।
নৌযান মালিকদের অবশ্য কর্তব্যঃ
* নৌযান এর ১০০ % ফিটনেস রেখে নৌযান পরিচালনা করুন। নৌযান তৈরির সময় এই বিষয় টা সর্বাধিক গুরুত্ব দিন।
* নৌযান এ পর্যাপ্ত সেফটি ইকুইপমেন্ট (লাইফ বয়া, সম্ভব হলে লাইফ বোট, প্রতিটি যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট) নৌযান এ অবশ্যই রাখুন।
* অত্যাধুনিক নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট (জিপিএস, রাডার, রেডিও, ইকোসাউন্ডার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সার্চ লাইট, সাউন্ড সিস্টেম) ইত্যাদি নৌযান এ সংযোজন করুন।
* দক্ষ ও অভিজ্ঞ মাস্টার / ড্রাইভার ও অন্যান্য ক্রু দ্বারা নৌযান পরিচালনা করুন।
নৌযান পরিচালনাকারীদের অবশ্যয় করনীয়ঃ
* ঝড় এর পূর্বাভাস পেলে নৌযান পরিচালনা করিবেন না বা নৌ যান ছাড়বেন না।
* যাত্রা কালে ঝড়ো হাওয়া বা ঝড় শুরু হলে নৌ যান এর ক্রুরা প্রথমেই জাহাজের ডেক এর দুইপাশের ত্রিপল উঠিয়ে দিন যাতে, যাতে ঝড়ো বাতাস এক পাশ থেকে অন্য পাশে প্রবাহিত হতে পারে।
* মাস্টার / ড্রাইভার রা মাথা ঠান্ডা রেখে নৌযান পরিচালনা করুন। সম্ভব হলে নিকটবর্তী কোন নদী চর / নদীর তীর এ নৌযান বারথিং এর ব্যাবস্থা করুন। আপনার নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট এর যথাযথ ব্যাবহার করুন।
* রেডিও / মোবাইল এর মাধ্যমে নিকটবর্তী অন্যান্য চলমান নৌযান সমূহের মাস্টার / ড্রাইভার দের সাথে যোগাযোগ রাখুন, আলোচনা করে ব্যাবস্থা নিন।
* নৌযান এর ক্রুরা সাউন্ড সিস্টেম / মাইকে এ যাত্রীদের স্থির থাকার জন্য উপদেশ এবং এই সংক্রান্ত বিষয়ে সাহস সঞ্চার মূলক ঘোষণা দিন, এতে যাত্রীরা মনে সাহস পাবে।
সর্বোপরি সবাই মনে রাখবেন, "একটি দুর্ঘটনা - সারাজীবনের কান্না" সবাই সেফটি নির্দেশনা মেনে চলার চেস্টা করুন।
জাহিদ ইবনে জাহান
০৩-০৪-২০১৬
সামু তে আমার আগের লিখা গুলো এখান থেকে পড়তে পারেনঃ আমার সমস্ত লিখা সমুহ
বাংলাদেশ এর নৌ রুটে চলাচল কারী সকল ধরনের জাহাজ/লঞ্চ নিয়ে ভারচুয়াল জগতে, আমরা এই Launch Vessel Finder's Bangladeshপেজ এ টিউন করে থাকি, এগুলোতে যাতায়াত এর ভালো মন্দ, সময়, যাত্রী সচেতনতা সব কিছু। শুধু মাত্র নৌযান এর প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা কিছু নৌযান পাগল ছেলে পেলে কাজ গুলো করি। আমাদের পেজ টা ঘুরে আসার আমন্ত্রন রইল। আর কোন ইনফো দরকার হলে আমাকে আমার ফেবু তে নক করতে পারেন।
আমাদের পেজঃ https://www.facebook.com/vesselfinderbd/
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ৮:১২