চুমুর মত একটা বিষয় যে এমন প্রকাশ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে তা এক বছর আগেও ধারনা ছিলনা।পত্রিকা হাতে পেলেই আমি বিলিভ ইট অর নট,রাশিফল,বেসিক আলি এবং ন্যান্সি পড়ি।সেদিন বিলিভ ইট অর নটে পড়লাম চুমু খেলে নাকি ক্যালরি ক্ষয় হয়।আমার বেশি ওজন নিয়ে আমার হবু স্ত্রী সবসময় গালমন্দ করে। বলে নিয়মিত ব্যায়াম কর আর খাওয়া টা কমাও।সকাল বিকাল চিল্লাচিল্লি করে।সুযোগের সৎ ব্যাবহার করার আশায় আমি তখনি তার হলে চলে গেলাম।গিয়ে লিখিত প্রমান দাখিল করলাম।বিষয় টা ভেবে দেখবে বলে আমাকে বিদায় করে রুমে চলে গেল।দুদিন পর জরুরী তলব ফুলার রোডে আস।অনেক আশা মনে পোষন করে ভালো করে মেডি প্লাস দিয়ে দাত মেজে গিয়ে হাজির হলাম।সবুজ মামার দোকান থেকে উনার জন্য একটা মিষ্টি পান নিয়ে গেলাম।ভাবলাম আজ থেকেই হয়তো ক্যালরি ঝরিয়ে ফেলার ব্যায়াম শুরু,তাইতো ফুলার রোডে ডেকেছে।জায়গাটা এ ধরনের ব্যায়ামের জন্য প্রসিদ্ধ।গিয়ে পাশে বসতেই উনি নিজের স্মার্টফোন ঘেটে একটা লেখা বের করলেন।তাতে লেখা আছে চুমু খেলে আট কোটি ব্যাকটেরিয়া স্থান পরিবর্তনের সুযোগ পায়।শুনে মাথা চক্কর দিল।যাই হোক,সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আমিও স্মার্টফোন ঘেটে আর একদিন একটি লেখা দেখালাম।লেখাটি নিম্নরূপ
(ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ চুমু। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। কিছু সমাজে সম্পর্ক গড়া ও টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে চুমু বড় ধরনের ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সমাজে। তারা মনে করে থাকে, গভীর আবেগে চুমু দেওয়া মানুষের সর্বজনীন আচরণ।
সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে অন্যান্য সমাজের সংস্কৃতিতে অর্ধেকেরও কম মানুষের মধ্যে চুমুর প্রচলন রয়েছে। বিশাল প্রাণী জগতের অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে চুমু খাওয়ার ঘটনা বিরল। অবশ্য শিম্পাঞ্জির মতো বুদ্ধিমান প্রাণীও চুমু খেয়ে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশের অনেক সমাজে চুমু খাওয়ার বিষয়টিকে অশালীন ও উদ্ভট আচরণ হিসেবে দেখা হয়। তাহলে এই উদ্ভট আচরণের পেছনে কারণটা কী? চুমুতে যদি উপকারই হয়, তাহলে প্রাণী জগতের বেশির ভাগ প্রাণী চুমু খায় না কেন?
চুমু পছন্দ করা নিয়ে নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রোমান্টিক অনুভূতি নিয়ে চুমু খাওয়ার যে সংস্কৃতি, তা খুব বেশি নয়। ১৬৮টি সংস্কৃতির মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ৪৬ শতাংশ ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে চুমু খেয়ে থাক।)
সেদিন চুপচাপ হলে ফিরে গেল।তিন দিন পরে দেখা করতে আসলো আমার বাসায়।আমার রুমমেট চাকুরিজীবি।সারা দিন রুম খালি।ভাবলাম এবার হয়তো চিড়ে ভিজেছে।কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। স্মার্টফোন ঘেটে আবার লেখা দেখালো।লেখাটা নিম্নরুপ।
( ১৬৮টি সংস্কৃতির মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ৪৬ শতাংশ ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে চুমু খেয়ে থাকে। এই সমীক্ষার ফলাফল আগের ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আগে মনে করা হতো, চুমু খাওয়ার বিষয়টি মানুষের সর্বজনীন আচরণ এবং বিশ্বে ৯০ শতাংশ মানুষ এ আচরণে অভ্যস্ত। সমীক্ষায় সন্তানকে বাবা-মায়ের আদর-সোহাগের চুমুর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কেবল প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রীর অধরাবদ্ধ চুমুর বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে।
সমীক্ষায় বেশ কিছু শিকারি নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে চুমুর প্রচলন নেই এবং এ ধরনের কোনো আকাঙ্ক্ষাও কারও মধ্যে দেখা যায় না। বরং অনেক নৃগোষ্ঠীর মানুষ চুমু খাওয়াকে বিদ্রোহের মনোভাব হিসেবে দেখে। ব্রাজিলের মেহিনাকু নৃগোষ্ঠীর মানুষ চুমু খাওয়াকে ‘অশ্লীল’ মনে করে।
এই সমীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত লাস ভেগাসের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম জাঙ্কোউইয়াক বলেছেন, ভালোবাসার আবেগে চুমু খাওয়ার বিষয়টিকে আগে যেমন মানুষের প্রায় সর্বজনীন আচরণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল, নতুন এই সমীক্ষা সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে, চুমু খাওয়ার প্রচলন এসেছে পশ্চিমা সমাজ থেকে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
আবেগ-ভালোবাসার চুমুর বিষয়ে আবার অন্যরকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাফায়েল ডব্লিউলোডারস্কি। বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে চুমু কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে অন্য সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছেন।
পুরোনো তথ্যপ্রমাণ বলে, সাড়ে তিন হাজার বছরের বেশি সময়ের আগে হিন্দু বৈদিক সংস্কৃতিতে চুমুর প্রচলন ছিল। ওই সময় অবশ্য এটা আবেগ-অনুভূতির কোনো বিষয় ছিল না। এতে বরং আত্মশুদ্ধির একটা বিষয় ছিল। প্রাচীন মিসরীয় হাইয়ারওগ্লিফিকস চিত্রে চুমু খাওয়ার ছবি রয়েছে।
মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর মধ্যে মুখ বা ঠোঁট ব্যবহার করে চুমু খাওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম শুধু শিম্পাঞ্জি ও তাদের নিকট আত্মীয় বোনোবোর বেলায়। শিম্পাঞ্জির মধ্যে স্ত্রীর চেয়ে পুরুষের মধ্যে চুমু খাওয়ার প্রচলন বেশি। দুই পুরুষের মধ্যে মল্লযুদ্ধ হওয়ার পর মিলমিশ হলে তখন পরস্পর চুমু খেয়ে সন্ধি স্থাপন করত তারা।)
সেদিন ফেসবুকে ইভেন্ট দেখলাম জার্মান প্রবাসী এক জোড়া তরুন তরুণী সেখান থেকে সেলফি তুলতে তুলতে লম্বা হয়ে যাওয়া ঠোটের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে প্রকাশ্যে চুমু খাবেন।
খবর পেয়ে আবার আমি একটা চান্স নিব ভাবলাম।আমাদের ইচ্ছা ছিল এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে কোথাও ঘুরতে যাবো।আমি ভেবে রেখেছিলাম যে ১৪ তারিখ টা গাজিপুরে কোন একটা গ্রামে পিকনিক করতে যাবো। কিন্তু ফেসবুকে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ঘোষণা শুনে খুশিতে বগল বাজাতে বাজাতে তার কাছে গেলাম বললাম চল,এই ইভেন্টে যোগ দেয়।এই প্রথম তার চোখে ভালোবাসার পরিবর্তে রাগ দেখলাম।
কোন কিছু না বলে প্রস্থান করলো।
এভাবেই তার সাথে ব্রেক আপ হইলো।
সর্বশেষে, এই ইভেন্ট সফল হোক বা নাহোক আমাকে আবার সিঙ্গেল করে দিয়ে গেল।তাই ভাবছি অন্ততপক্ষে ইভেন্ট সফল হলে আমার ব্রেকআপ টাও সফল হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬