somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অথচ এটা অপরাধবোধের ব্যাপার না, কিন্তু ভয় লাগছে, অনেক!

১৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই লেখা যখন লিখছি (মানে এখন) ঘড়িতে রাত ১০:১৪, ১লা আগস্ট। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপত্তার স্বার্থে (ভয়ে?) এই মুহূর্তে পোস্ট করছি না। জানি না কখন পোস্ট করবো! যদি বিজয় আসে স্বাধীনতার তবে পোস্ট করতে আর ভয় পাওয়ার কথা না!

খুব স্বাভাবিক সময়েও আমার পরিবারের সবার সাথে খুব একটা কথা হয় না। কেউ খোঁজ নিলে আমার খোঁজ পাওয়া যায়। এই নির্লজ্জ ব্যাপারটা কিভাবে আসলো, কিভাবে আমার বদভ্যাস হয়ে গেলো সেটা জানা নেই। সেই গল্প অন্যদিন করা যাবে।

হঠাৎ ছোট বোনের ফোন। একটু ঘাবড়ানো ব্যাপার। কারণ আমার এই নির্লজ্জ উদাসীনতার জন্য কিছুটা অভিমানে আমাকে খুব একটা ফোন দেয় না। আর যখন দেয় তখন বলা যায় কোন না কোন সমস্যা থাকে।

ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বললো ফোন দিতে। বাসার সবাই টেনশন করে এভাবে ফোন না দিয়ে উধাও হয়ে গেলে। বল্লাম ফোন দেয়ার মত অবস্থা নেই (অবশ্য কখন থাকে সেটাও আমার জানা হয়ে নেই)।

কথার ফাঁকে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, "কিরে কি অবস্থা আন্দোলনে যাস?"

-না! আমি যেয়ে কি করবো এসব আন্দোলনে! এসবে যাই না আমি।

আমিতো জানি ও কোনভাবেই যাওয়ার কথা না। তারপরও বললাম, "লজ্জা লাগে না এসব বলতে? রাস্তায় নির্বিচারে ছাত্র হত্যা হচ্ছে, আর তুই বলিস কেন যাবি? লজ্জা থাকা উচিৎ!"

-আসলেই যাবো?

আমিতো জানিই ওর যাওয়ার মত অবস্থা নেই। তারপরও বললাম, "হ্যাঁ সুযোগ থাকলে যাবি!"

-আমি গেছিলাম।

আসলেই?!!!!!?

-হ্যাঁ!

এবার আমার পুরো শরীর হিম হয়ে গেলো। সত্যি বললে গর্বে না, ভয়ে। কারণ এটা ভয়ের বাংলা। কারণ আমি জানি কোনভাবেই ও যাওয়ার কথা না!
নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আসলেই? কয়বার গেছিস? কবে কবে?"

-দুইবার। ১৮ তারিখ আর কালকে (৩১)।

এবার আমি আসলেই বুঝতেছিলাম না আমি কি খুশি হবো নাকি রাগারাগি করবো।
বললাম, "সাবাস! সাবাস! সাব্বাসস! সেরা! তবে সাবধানে, পরিস্থিতি বুঝে। যেহেতু বাসা থেকে অনেক দূরে যেতে হয় সুতরাং পরিস্থিতি বাজে হলে যাওয়ার দরকার নেই। সাবাস! যাক এবার একটু ভাল লাগছে। নির্লজ্জ লাগছিলো কিছু করতে না পেরে। এবার তোর জন্য অন্তত গর্ব করার মত একটা গল্প(আসলে ইতিহাস) পেলাম"।

-আসলেই! সিরিয়াসলি তুমি সাপোর্ট দিচ্ছো! কেউ জানে না। আব্বু আম্মু জানার পরে অনেক বকা দিয়েছে। আম্মু বলেছে তোর ভাইয়া শুনলে তোর কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিতে বলবে। এখনতো উল্টো! (এক গাল হাসি, একটু সাপোর্ট পেয়ে)

বললাম, " এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। যাওয়া লাগবে না আর খুব দরকার না হলে। অনেক দূরে যেতে হয় তাই না করতেছি। বাসার কাছেই যদি হতো তাহলেতো আমি ধাক্কা মেরে বের করে দিতাম যাওয়ার জন্য (মনে মনে আমি জানি এটা কথার কথা, এত দুঃসাহস কি আসলেই হতো!)। যাইহোক জানাইলি না কেন গেছিস যে? আমাকে বললে তো ব্যবস্থা করতাম। আন্দোলনে পানি খাওয়াতে পারতি!"

-সমস্যা নেই। আমি নিজের টাকায় ম্যানেজ করেছি।

বললাম, "ঠিক আছে। গেছিস ভাল কথা। কারো সাথে এটা শেয়ার করার দরকার নেই। বিজয় আসলে তখন বুক ফুলিয়ে বলা যাবে।
আর শুন, ছবি পাঠাইছ আন্দোলনের। কোন সমস্যা হয়েছিল?"

-১৮ তারিখে হয়েছিলো। অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। জেলা স্কুল রোড ব্লকড। হুট করে পুলিশ আর ছাত্রলীগ একসাথে আসে এবং টিয়ারশেল মারে। সামনে ছিল প্রযুক্তির আপুরা, ওরা দৌড় দেয়। আমরা কিছু বুঝার আগেই আমার উপর ৬/৭ জন পড়ে যায়। আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু উঠতে পারি নি। ২-৩ জন আমার পিঠে পা দিয়ে চলে যায়। হাঁটুতে আর হাতে কেটে যায়, পিঠে ব্যাথা পাই। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। পরিস্থিতি অল্প সময়ে স্বাভাবিক হওয়ায় আমাকে বাকীরা এসে মসজিদে নিয়ে যায়।


ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম মুহুর্তেই। স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করি, "ঠিক আছে। আর গেলে যাওয়ার আগে অবশ্যই জানাবি। সাবধানে থাকিস।"

-ঠিক আছে।

...........

যাইহোক, এতদিন ভাবতাম ঘুমাতে পারছি না, অস্বস্তি লাগছে। এখন যে ১-২ ঘন্টা ঘুমাই, সেটাও ঘুমাতে পারবো তো?

এতদিন তো অন্যের ভাইবোনকে নিজের ভেবে ঘুমাতে পারি নি। এখন? এখনতো নিজের বোনের চিন্তা!

বুকের ভেতর ভাল লাগছে। আমার আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না - "এই বলদি আন্দোলনে গেছে! এখন দেখি আমি বলদ!!"

বুকে ভাল লাগলেও, মাথা ভার লাগছে। ভয় লাগছে। অপরাধবোধও লাগছে যে বাবা-মায়ের ভরসা রেখে উল্টো উস্কে দিলাম ছোট বোনকে!
অথচ এটা অপরাধবোধের ব্যাপার না, কিন্তু ভয় লাগছে, অনেক!

আমার মাথা আসলেই অনেক ভার হয়ে আসছে...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×