ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন দেয়াটা ছিল অতি উৎসুক জনতার একটা মারত্মক কাজ, তবে এটা স্বৈরাচার পতনের একটা কনসিকোয়েন্স। ঐতিহাসিক ভাবে দুটো কারণে এই কাজটা ছিলো মারাত্মক।
১। একটা জাতিকে শোষণের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে একই জায়াগায় দাঁড় করানোতে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান সেটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই আসলে। সুতরাং ঐতিহাসিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বারক হিসেবে এর গুরুত্ব অবশ্যই অনেক।
২। একজন সাধারণ মানুষ থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা এই মানুষই আবার দেশ স্বাধীনের পর বদলে যান। ক্রমান্বয়ে ৭২ থেকে ৭৫ হয়ে উঠেন স্বৈরাচারী, গঠিত হয় বাকশাল। যেটার কনসিকোয়েন্স হিসেবে জন্ম নেয় আরেক ইতিহাস ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। যেটা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক। ইতিহাসের সবটাই রাখতে হয়। অথচ পতিত হওয়া স্বৈরাচার ইতিহাস কপচিয়ে গেছে এক পাশ থেকে, পক্ষপাত ভাবে। বাকশালের স্বারক হিসেবেও এই বাড়ি গুরুত্বপূর্ণ।
এই ২ টা কারণেই এই ৩২ নম্বরের বাড়ি অক্ষত থাকা জরুরী ছিল। একই সাথে সংগ্রাম আর স্বৈরাচারের স্বারক লেগে আছে দেয়ালে দেয়ালে, এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর কয়টা স্থাপনা আছে?
পরবর্তী প্রজন্ম কে ৩২ এ প্রবেশের সময়ে বলা যায়, ৭১ পর্যন্ত তিনি যেমন ছিলেন এরকম বিপ্লবী হতে হবে দেশের জন্য।
আবার এটাও বলা যায়, ৭১ এর পরে তিনি যেমন ছিলেন তা হওয়া যাবে না কারণ সেটা আত্মঘাতী দেশের জন্য এবং নিজের জন্য।
আরেকটা কারণ আছে। যেটার প্রভাব এখন খুব একটা পড়বে না। কিন্তু আগত দিনে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর সাথে নতুন করে যুক্ত হবে এই ভাঙচুরের গল্প আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে। যেটা বেচে ২০২৪ এ ঘটা এই গণহত্যার ইতিহাস পাশ কাটাতে যাবে।
তবে হ্যাঁ পরবর্তী কোন সরকার যদি পূর্বের মত গনবিরোধী হয়ে না উঠে সেক্ষেত্রে এই গল্প যতই করুক সেটা একটু কমই আমলে নিবে মানুষ। কিন্তু বাঙালি জাতি হিসেবে ক্ষমতা পেলে সবকিছুর আগে গনবিরোধীই হয়ে উঠে এটাই হলো সবচেয়ে বড় সমস্যা।
৩২ এ উৎসুক জনতা যা করেছে তার দায় সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার। বিগত ১৫ বছরেরও বেশি সময়ে যে পরিমাণ চেতনা ব্যাবসা করেছে তাতে মানুষের যত ক্ষোভ ছিল সব উতলে উঠেছিল। গণহত্যা কায়েম করে স্বজন হারানোর যে নাটক করেছিলো তা মানুষের মনে ভস্মীভূত ছিল।
স্বৈরাচার যেমন ধ্বংসাত্মক, সাধারণ মানুষের ক্ষোভও তেমনি ধ্বংসাত্মক হয় স্বৈরশাসকের প্রতি।
সাধারণ মানুষ যে ভাঙচুর করেছে এর সবটাই একটা দুর্বিষহ স্বৈরাচার সরকার পতনের কনসিকোয়েন্স। এটা থামানো সহজ ছিল না, সহজ না। কেবল যতটুকু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যায়, ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় সেটাই একমাত্র উপায়।
কনসিকোয়েন্স ছিলো বলেই শুধু ৩২ এ বঙ্গবন্ধুর বাড়িই পোড়েনি, পুড়েছিল মেইন রোড লাগোয়া সান্তুর রেষ্টুরেন্টও!
জলের গানের, রাহুল আনন্দ এর বাসায় আগুনও ছিলো সেই কনসিকোয়েন্স এর স্বীকার। আর এই কথাটা পরিচিত অনেকের সাথে তখনই বলেছিলাম। আর সেটাকে পুঁজি করে নির্লজ্জ ভাবে গদি ছাড়ার পরেও ছড়ানো হয়েছে সাম্প্রদায়িক উষ্কানির প্রোপাগাণ্ডা। জলের গান কোন বিবৃতি না দিলে সেটা হয়তো এখনও চলমান থাকতো।
মুক্তিযুদ্ধের সাথে সাথে, স্বাধীনতা পরবর্তী যতগুলো স্বৈরশাসন কায়েম হয়েছে সবগুলো প্রতিনিয়ত মনে রাখতে হবে। যারমধ্যে ২০২৪ এর স্বৈরাচারী কায়েম করেছে একটি গণহত্যার।
স্বৈরাচার পতনের কনসিকোয়েন্স এ অনেক কিছুই হবে যা কেউই চায় না। কিন্তু সেই কনসিকোয়েন্স কে বড় করে দেখতে যেয়ে ২০২৪ এর এই আন্দোলন, গণহত্যা যাতে কোনভাবেই ছোট না হয়।
এখন সময় বিভাজনের না। সময় এখন স্বাধীনতার নতুন স্বাদে নতুন করে দেশ গড়ার।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:৪২