বলরুমে হাইহিল পড়া বেঁটে মেয়েটা অপ্রস্তুত তাকিয়ে দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে-
এখনো কিছু মিনিট হাতে আছে, এক হাতে দস্তানা পড়ে নিয়েছে
অন্যহাতেও পড়বে, নাকি এই হাতের থেকেও খুলে ফেলবে সেই চিন্তা
কিংবা উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে পাওয়া নিয়ে যখন প্রবল অস্বস্তি-বোধ;
খালি হাতের উপর ভারী একটা হাত রেখে পুরুষালী গলায় জিজ্ঞেস করলাম
- ডু ইউ ড্যান্স, মিসেস -- -----
আকস্মিকতায় কিছুটা বেঁকে গিয়ে এক ঝটকায় দস্তানাটা পড়ে,
হাতে হাত রাখতে রাখতে বললে,
- ইলি, মিস ইলি।
স্বল্প-দুর থেকে এতক্ষণ চোখে যে সংশয় ও দ্বিধা রেখা যাচ্ছিলো
কাছে আসতেই সেটা মনে হল সম্মোহনী রূপ নিল
অর্কেস্ট্রা দু’বার কেশে উঠে তালে বাজতে শুরু করলো
মিস ইলি হাতে হাত রেখে চোখ ইশারা করে বললে,
- মিস্টার, এসেই যখন পড়েছ কোমরটা শক্ত করে ধরো, পড়ে যাব তো!
স্যাক্সোফোন বেজে উঠতেই একে অপরের আরও কাছাকাছি চলে গেলাম-
স্টেপগুলো কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিলো, এক-দুই-তিন--- তিন-দুই-এক
দু’পা পেছন থেকে সামনে ঘুরতেই মিস ইলি এক ঝটকায় নিজেকে টেনে এনে ফেলল আমার হাতের তালুর উপরে-
ভায়োলিনের দুই স্কেল বেজে উঠতেই মিস ইলির কোমর ধরে-
আলতো ক’রে ছুড়ে ফেললাম উপরের ঝাড়বাতি বরাবর,
স্টেপ গুণে গুণে ফিরে আসতেই শূন্য থেকে আবার হাতের গ্রীবায়-
একদম যেন গলে যাওয়া মোমের মত এঁটে গেলেন মিস ইলি।
অর্কেস্ট্রা একদম চুপ-
গ্র্যান্ড হল জুড়ে শুধুমাত্র কেবল পতিত হওয়া সাদা পোশাকি রমণীদের
ফুসফুস দ্রুত ওঠানামা করার সরল ছন্দিত স্পন্দন-
আর ঘন নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ।
দু’টি ত্রিভুজ চোখ যেন নীলাভ ধোঁয়াশে বিষ হয়ে আচ্ছন্ন করে ফেলছে মগজ ও রক্তনালী-
পা’এর বিন্যাসের সাথে সমঝোতা করতে পারছে না হাতের কব্জি-
পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে যেন পড়ে যাচ্ছি বলরুম ফ্লোরে;
মনে হলো অনেকক্ষণ – কয়েক হাজার বছর পরে অকস্মাতই অর্কেস্ট্রা আবার বেজে উঠল-
আবার আমরা পা’য়ে পা মেলাতে লাগলাম।
বিদায়ের ভায়োলিন করুণ শব্দে থেমে থেমে বেজে একসময় নিশ্চুপ হয়ে গেল-
নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,
মাথা ঝুঁকে জাপানিজ কুর্নিশ করে-
কোথায় যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন মিস ইলি।
তবুও আমি-
এক হাতে একটি হাত, অন্য হাতে একটি চিকন কোমর জড়িয়ে ধ’রে
স্টেপ গুণে যাচ্ছি-------- এক-দুই-তিন!
জাহিদ অনিক
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫৬