হ্যালো এটা কি ২৪৪১১৩৯ ,
দিননা ডেকে বেলাকে একটিবার
কিংবা
একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে
থাকবেনা সাথে কোন ছাতা
গান গুলো জড়িয়ে আছে জীবনের সাথে ।
দত্ত । অঞ্জন দত্ত ।
এই নামটা লিখে বসে ছিলাম প্রায় দশ মিনিট । কি লিখব ভেবে চিনতে কিছুই কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না ।
আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের প্রভাব যদি থেকে থাকে তাহলে অঞ্জন দত্তের প্রভাবও আছে ।
কেউ অঞ্জন দত্ত কে এই প্রশ্ন করার আগে আমি চাই সে প্রশ্ন করুন অঞ্জন দত্ত কি ?
এক কথায় উত্তর দিলে অঞ্জন দত্ত একটা পাগল ।
সে আসলেই একটা ঝোঁকের পাগল ।
আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় অঞ্জন দত্তের কোনটা বেশি ভাল লাগে, গান, অভিনয় না ডিরেকশন ?
আমার উত্তর হবে , সবথেকে বেশি ভাললাগে তাঁর কথাবার্তা, কথা বলার ভঙ্গি , হাঁটাচলা ।
এটা আসলে বলে বুঝানো যাবে না ।
অঞ্জন দত্ত বলতে আমি বুঝি একটা লোক যে সব সময় একটা কালো রোদ চশমা চোখ দিয়ে থাকে, টাক মাথায় সিগারেট খায়, একটা নীল জিন্স প্যান্ট আর আলখাল্লা টাইপের শার্ট গায়ে ঘুরে বেড়ায় ।
বাংলা গান এর জগতে অঞ্জন দত্ত একজন জনপ্রিয় শিল্পী। জীবনমুখী গান নামে বাংলা গান এর যে ধারা প্রচলিত,
অঞ্জন দত্ত সেই ধারার গান লেখেন, সুর করেন এবং গেয়ে থাকেন। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে দার্জিলিং-এ।
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টারস্ করেছেন। তাঁর গান এর সহজবোধ্যতা সবাই কে আকৃষ্ট করে।
তাঁর ছেলেবেলার কথা তাঁর গান এ ভীষণভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর সবচাইতে জনপ্রিয় গান '2441139'।
তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন।
অঞ্জন দত্ত আর নীমা রহমান এর কন্ঠে প্রিয় বন্ধু শিরোনামে একটা চিঠি আছে কিছুটা কাহিনীকাব্যের আঙ্গিকে ,
যদি শুনে না থাকেন তাহলে অবশ্যই শুনে নিবেন ।
চিঠির গভীরতা কতটা হতে পারে , কিভাবে চিঠি এত প্রিয় হতে পারে সেটা বোঝার জন্য হলেও এটা শুনে দেখা উচিত ।
লিঙ্কঃ
গান লিখেছেন যুবক, কিশোর, কিশোরী , ঘর ছেড়ে পালাতে চাওয়া মেয়ে সবার জন্য ।
ছোটদের জন্য লিখেছেন অসংখ্য গান।
ছোটদের গানগুলোর মধ্যে প্রিয় গান-
বাপি আর মা গেছে সিনেমায় তুমি একা
ভয় যদি হয় আছে টিভি টাকে খুলে ভুলে থাকা
মা গেছে বলে ঐ টিভি টাকে খুলে তুমি দেখ না
আমি বলি কী একটা চালাকি করে দেখ না
জানলা দিয়ে ঐ আকাশটাকে দেখ টিভি দেখ না
বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চাওয়া মেয়ের জন্য লিখেছেন ইতি তোমার আদরের রমা গানটি -
মাগো আমার মাগো জানি অনেক কষ্ট পাবে তুমি
তবু আমার নেই কোন উপায়
যেতেই আমায় হবে সে যে
ট্যাক্সি নিয়ে বসে আছে বাসষ্টপেতে আমার অপেক্ষায়
বিয়ের সাজে ঘোমটা টেনে, বাবা কাকার চোখ এড়িয়ে
যাচ্ছি ছেড়ে ছোট বেলার ঘর
অনেক ভাবনা চিন্তা করেও পারছি না যে মেনে নিতে
তোমাদের পছন্দ করা বর
মাগো মা চললাম আমি করতে নিজের সংসার
মাগো মা ফিরে আসছি না
ইতি তোমার আদরের রমা।
বিরহী প্রেমিকের জন্য লিখেছেন মোন উদাস করা ও ভাবনায় ফেলে দেয়া গান-
একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে
থাকবেনা সাথে কোন ছাতা
শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝ রাস্তায়
ভিজে যাবে চটি, জামা মাথা
থাকবেনা রাস্তায় গাড়িঘোড়া
দোকানপাট সব বন্ধ
শুধু তোমার আমার হৃদয়ে
ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ
বেকারত্ব , প্রেম ও বিরহ নিয়ে গেয়েছেন -
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা
সম্বন্ধটা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো
মা-কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি
আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস
স্টার্টিংয়েই ওরা ১১০০ দেবে তিন মাস পরে কনফার্ম
চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছো না
ছেলেবেলার প্রেমের কথা স্মরন করে লিখেছেন-
কালো সাহেবের মেয়ে ইশকুল পালিয়ে
ধরতে তোমার দুটো হাত
কত মার খেয়েছি মুখ বুজে সয়েছি
অন্যায় কত অপবাদ
বয়স তখন ছিলো পনেরো তাই ছিলো
স্বপ্ন দেখার ব্যারাম
মাথার ভেতর ছিলো এলভিস প্রিসলি
খাতার ভেতর তোমার নাম
ম্যারী এ্যান
ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী
ভবঘুরে ছেলেদের জন্য লিখেছেন --
আমার রাস্তা আমার বাড়ি
আমার ফাটা দেয়াল
আমার পোড়া মনের অজস্র জঞ্জাল
জীবনের হতাশা, পাওয়া না পাওয়া নিয়ে লিখেছেন -
আমি রোদের পুরে ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছি
আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
আমার জীবনে অঞ্জন দত্তঃ
প্রিয় গায়ক, প্রিয় অভিনেতা নিয়ে সকলেরই একটা ভালোলাগা কাজ করে ।
আমারো আমার প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি একটা ভালোলাগা বা ভালবাসা কাজ করে ।
আমার বন্ধু মহলে আমি বাদে আর কেউ যে অঞ্জন দত্তের ভক্ত হতে পারে সেটা আমার সামনে কেউ বলতে সাহস পায় না।
একবার বন্ধুদের আড্ডায় দত্তের একটা গান গাইতেছিলাম, মানে জোর করে পালাক্রমে গাইতে হচ্ছিল । গানের সুরটা মনে আছে কিন্তু লিরিক কিছুতেই মাথায় আসছিল না।
আমি লিরিক মুখস্থ রাখতে পারি না ।
বন্ধুরা তখন বলেছিল আজ থেকে আমার অঞ্জন দত্তের গান শোনা বন্ধ ।
আমি এত যার ভক্ত তাঁর গানই যদি মুখস্থ রাখতে না পারি তবে সেই গান শুনে লাভ নেই ।
এবং সত্যি সত্যি ওরা আমাকে পরের কয়েকদিন দত্তের গান শুনতে দেয় নি ।
লিরিক সহ অঞ্জন দত্তের গানগুলো পাওয়া যাবে এখানে ।
এছাড়া ইউটিউব তো আছেই ।
অঞ্জন দত্ত'র গানের এ্যালবাম
০১. শুনতে কি চাও? - ১৯৯৪
০২. পুরোনো গিটার -১৯৯৫
০৩. ভালবাসি তোমায় - ১৯৯৬
০৪. কেউ গান গায় - ১৯৯৭
০৫. প্রিয় বন্ধু (বাংলাদেশে "গানে গানে ভালবাসা" শিরোনামে মুক্তিপ্রাপ্ত; অঞ্জন দত্ত, নিমা রহমান ও পরশপাথর) - ১৯৯৮
০৬. চলো বদলাই - ১৯৯৮
০৭. হ্যালো বাংলাদেশ - ১৯৯৯
০৮. কলকাতা-১৬ - ১৯৯৯
০৯. Bandra Blues (ইংরেজি এ্যালবাম) - ২০০০
১০. অসময় - ২০০০
১১. রং পেন্সিল - ২০০১
১২. অনেকদিন পর (অঞ্জন দত্ত ও কবির সুমন) - ২০০৪
১৩. ইচ্ছে করেই একসাথে (অঞ্জন দত্ত ও বাপ্পা মজুমদার) - ২০০৫
১৪. The Bong Connection (ছায়াছবির গান) - ২০০৭
১৫. আমি আর গদদ (নীল দত্ত ও অঞ্জন দত্ত) - ২০০৭
১৬. আবার পথে দেখা (অঞ্জন দত্ত, বাপ্পা মজুমদার ও এস, আই টুটুল) - ২০০৭
১৭. ঊনষাট -২০১৪
বানিয়েছেন অনেকগুলো সিনেমা।
পরিচালিত ছবিঃ
০১. বড়দিন - ১৯৯৮
০২. বো ব্যারাকস ফোরএভার - ২০০৪
০৩. কলকাতা - ২০০৫
০৪. দ্য বঙ কানেকশন - ২০০৬
০৫. চলো, লেটস গো - ২০০৮
০৬. চৌরাস্তা ক্রসরোডস অফ লাভ - ২০০৯
০৭. ম্যাডলি বাঙ্গালী - ২০০৯
০৮. ব্যোমকেশ বক্সী - ২০১০
০৯. রঞ্জনা আমি আর আসবোনা- ২০১১
১০. আবার ব্যোমকেশ - ২০১২
১১. দত্ত ভার্সেস দত্ত - ২০১২
১২. গণেশ টকিস - ২১ জুন, ২০১৩
১৩. শেষ বলে কিছু নেই - ২০১৪
১৪. ব্যোমকেশ- ২০১৫
১৫. ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা- ২০১৬
১৬. হেমন্ত - ২০১৬
এছারাও অপর্না সেন , ঋতুপর্ণ ঘোষ ও সৃজিত মূখর্জী এঁদের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন বেশ কিছু সিনেমাতে।
অসাধারন অভিনয় দিয়ে দর্শকের মোন কেড়ে নিয়েছেন প্রত্যেকটি সিনেমাতে ।
অভিনীত কিছু ছবিঃ
১. নির্বাক
২. সাহেব বিবি গোলাম
৩. মিঃ এন্ড মিসেস আইয়ের
৪. জানি দেখা হবে
৫. চিত্রাংগদা
অনেকে মনে করেন অঞ্জন দত্ত'র বিভিন্ন গানের সুর প্রায় একইরকম, একই সুর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনি অনেক গানে ব্যবহার করেন।
অনেকের মতে, তার গানের কথা খুব হাল্কা ধরনের।
এছাড়া তার গানের সুরে অনেক ক্ষেত্রেই সিমন এবং গারফাঙ্কল,বব ডিলান এদের গানের সুরের অনুসরণ লক্ষ্য করা যায়।
তার ছায়াছবি গুলিতেও বারবার প্রবাসী বঙ্গ সন্তানদের জীবন যাত্রাই ধরা পরে।
যদিও অঞ্জন দত্ত গণেশ টকিজ করার পর বলেছিলেন তিনি এই জাতীয় সিনেমা করে ভুল করেছেন।
দর্শক তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা তাঁর অ-ভারতীয় কিংবা প্রবাসী ভারতীয়দের জীবনের ওপর হওয়া সিনেমা গুলি বেশি পছন্দ করে।
অনেকে বলে থাকেন অঞ্জন দত্ত আমাদের জীবনে কৈশরের গায়ক। তাঁর গানগুলো কিশোর বয়সে ভাল লাগে। যুবক বয়স বা তার একটু বেশি বয়স হলে গানগুলো তার শ্রোতাদের কাছে আবেদন হারায়।
এই অভিযোগটা যে একেবারে মিথ্যা তাও না । তার মধ্যে একটা কম বয়সী ছেলেমানুষী ভাব আছে ।
অনেকেই মনে করেন তাঁর গানের থেকে অভিনয় কিংবা পরিচালনা বেশি গ্রহনযোগ্য ।
একথা ঠিক তিনি একজন দুর্দান্ত অভিনেতা ।
দত্ত ভার্সেস দত্ত কিংবা রঞ্জনা আমি আর আসব না সিনেমাতে যেরকম পারফরমেন্স দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার ।
গেল বছরেই করা সাহেব বিবি গোলাম সিনেমা তে একজন পেশাদার কিলারের অভিনয়ের সাথে সাথে যে ব্যক্তিত্ব তিনি দেখিয়েছেন
কিংবা নির্বাক সিনেমাতে একজন একা মানুষের চরিত্র যেভাবে ফুটিয়ে ধরেছেন তা সত্যি বড় মাপের অভিনেতাদের কাজ ।
একবার তার প্রসংগে অনুপম রায় বলেছিল,
তারা যখন ছোটবেলায় অঞ্জন দা'র গানগুলো শুনত তখন বেশ ভালো লাগত কিন্তু বড় হয়ে যখন দেখা গেল কিছুকিছু গান ইংরেজী গানের অনুকরণ তখন বেশ অবাক লেগেছে ।
অঞ্জন দত্তের "মালা" গানের লিরিকে একটা লাইন আছে,
বৃষ্টি এলে চলে যাও জয়সালমির
শীতকালে গোদাই ক্যানাল
দমদমে নামলে তোমারই বাড়িতে
কফি খায় ইমরান খান
এই কথাগুলো অঞ্জন দত্ত কিভাবে সেই ইংরেজী গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিয়েছিলেন সেটা অনুপম রায়ের কাছে বেশ একটা খটকা এবং মজার বিষয় ছিল ।
অঞ্জন দত্তের এই যে অঞ্জন দত্ত হয়ে ওঠা এটা গোটা টা নিয়ে একটা রয়েছে একটা সিমেনা । সিনেমা নাম দত্ত ভার্সেস দত্ত ।
পরিচালনা করেছেন অঞ্জন দত্ত নিজেই ।
সিনেমায় অঞ্জন দত্ত অভিনয় করেছেন বাস্তবের অঞ্জন দত্তের বাবার (বীরেন দত্ত) ভূমিকায় আর অঞ্জন দত্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রনদ্বীপ বোস (রন দত্ত) ।
এছাড়া আরো অভিনয় করেছেন রিতা কৈরালা, রূপা গাঙ্গুলী, সৃজীত মূখর্জী, কৌশিক সেনের মত অভিনেতারা ।
এই সিনেমাটি করার পরে অঞ্জন দত্ত বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন।
কেননা ছবিটি মূলত ছেলেবেলার অঞ্জন দত্তকে নিয়ে, তিনি কিভাবে সেন্ট পলস , দার্জিলিং থেকে কোলকাতায় আসলেন।
কোলকাতা কিভাবে তাঁর প্রানের শহর হল। কিভাবে তাঁর গানের ও থিয়েটারের জীবনে পদার্পন হল এসব নিয়ে ।
কিন্তু দেখা গেছে ছবির বীরেন দত্ত (অঞ্জন দত্ত) ছবির অঞ্জন দত্তের (রন) থেকে ভাল অভিনয় করেছেন অর্থাৎ ফোকাসটা গিয়ে পড়েছে বীরেন দত্তের উপরে , রন দত্তের উপরে নয়।
তাই ছবিটা আর অঞ্জন দত্তের জীবনী নিয়ে হল না, ছবিটা হয়ে গেল বীরেন দত্তের জীবনী নিয়ে ।
শেষ কথা ।
যদিও অঞ্জন দত্ত বলেন ,
শেষ বলে কিছু নেই।
শেষ যেখানে, জেনো শুরু সেখানে ।
শুভ জন্মদিন দত্ত সাহেব,
হ্যাপি সিক্সটি-ফোর্থ বার্থডে টু ইউ ডিয়ার অঞ্জন দত্ত ।
আজ উনিশে জানুয়ারী ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৪