গণিতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার -- এবেল পুরস্কার
নরওয়ে থেকে দেয়া হয় এই পুরষ্কার ।
যারা জানেন না বা ভুলে গেছেন তাদের জন্য একবার স্মরণ করিয়ে দেই,
অন্য অনেক বিষয়ে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হলেও ম্যাথে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় না ।
ম্যাথের অবদানগুলোকে আসলে কোন না কোন দিক দিয়ে পদার্থে চালিয়ে দেয়া যায় ।
পদার্থবিদেরা তাই বলে থাকেন, "ফিজিক্স ইজ দ্যা ফাদার অফ সাইন্স " ।
ম্যাথে দেয়া হয় এবেল প্রাইজ
নরওয়ে এর ম্যাথম্যাটিশিয়ান নিলস হেনরিখ এবেল
এর নামানুসারে এই পুরষ্কারের নাম দেয়া দেয়া হয় "এবেল প্রাইজ" ।
১৯০২ সালে এবেলের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই প্রাইজ এর প্রচলন শুরু হয় ।
১৯০২ সালে শুরু করা হলেও আবার প্রচলন করা হয় ২০০৩ সালে ।
এই প্রাইজের মূল্যমান ৬ মিলিয়ন নরোয়েইয়ান মুদ্রা বা ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭৬ মার্কিন ডলার ।
যেখানে নোবেল প্রাইজের মূল্যমান ৩ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ।
এবেল প্রাইজের ওয়েবসাইটঃ
এবেল প্রাইজ ওয়েবসাইট
২০০৩ থেকে এই অব্দি মোট ১৭ জন পেয়েছেন এই সন্মাননা ।
এ বছর অর্থাৎ ২০১৬ তে এবেল প্রাইজ পেয়েছেন ব্রিটিশ ম্যাথম্যাটেশিয়ান স্যার এন্ড্রু জন উইলস ।
ইনি রয়েল সোসাইটির গবেষক এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ।
ইনি নাম্বার থিউরি নিয়ে গবেষণা করেন এবং ফার্মেটস লাস্ট থিউরি প্রমাণ করে এবেল পুরষ্কার পান ।
তাঁর দুইটি স্মরণীয় বাণী:
১/ সর্বদা সেই সমস্যার সমাধান চেষ্টা করুন যা আপনার কাছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
২/ শৈশবে আমার যে স্বপ্নগুলো ছিল পরিণত বয়সে এসে আমি তাঁর খুব কম সংখ্যকই খুঁজে পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি ।
আপনি হয়ত মনে মনে ড. জন ন্যাশের কথাই ভাবছেন ?
জ্বি ঠিকই ধরেছেন ২০১৫ সালে এই সিজিওফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ম্যাথম্যাটেশিয়ান জন ন্যাশ পেয়েছেন এবেল প্রাইজ ।
একই সালে তাঁর সাথে আরও এবেল প্রাইজ পেয়েছেন লুইস নিরেনবার্গ ।
এরা দুজনেই মার্কিন গণিতবিদ ।
জন ন্যাশ এর কথা বলতেই মনে পড়ে গেল A Beautiful MInd মুভিটার কথা ।
এই মুভি দেখেন নাই হেন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না । জন ন্যাশের জীবনী নিয়ে করা ।
না দেখলে মিস করে গেছেন অনেক কিছুই । এই মুভিতে জন ন্যাশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন
গ্ল্যাডিয়েটর খ্যাত Russell Crowe ।
মুভির কথা যখন উঠলই তখন আরেকটা মুভি সাজেস্ট করছি, গণিতের যুবরাজ শ্রীনিবাস রামানুজন (Srinivasa Ramanujan) , উনি উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত গণিতবিদ । যিনি পাই এর মান নির্ণয়ে অবদান রাখেন । উনি ম্যাথে এতটাই ভাল ছিলেন কিন্তু ইংরেজিতে এতটাই কম পারতেন যে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় বেশিদূর যেত পারেন নি । শেষকালে তিনি যক্ষ্মায় মারা যান ।
তাঁর জীবনী নিয়ে করা মুভি The Man Who Knew Infinity , চাইলে দেখে নিতে পারেন ।
গতকালকেই ছিল শ্রীনিবাস রামানুজন এর ১২৯ তম জন্মদিন ।
যাহোক ফিরে আসি জন ন্যাশের কথায়, ন্যাশ সাহেব এবেল প্রাইজ পেয়েছেন গেইম থিউরি , ডিফারেন্সিয়াল জ্যামিতি এবং পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন উপর অবদানের জন্য ।
যারা গেইম থিউরি কি সেটা নিয়ে চিন্তা করছেন তাদের জন্য নিচের লিঙ্ক ।
গেম থিউরি
এই ভদ্রলোক ম্যাথ নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে দুনিয়াবি সকল কাজ কাম ভুলে যেতেন । একা একা বক বক করতেন । এক পর্যায়ে আক্রান্ত হন সিজিওফ্রেনিয়াতে ।
লুইস নিরেনবার্গ লিনিয়ার এন্ড নন-লিনিয়ার পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়েশন এর গঠন , কাজ এবং জ্যামিতি ও জটিল বিশ্লেষণে তাদের এপ্লিকেশন নিয়ে ফান্ডামেন্টাল কাজ করার জন্য এবেল এওয়ার্ড পান । (মানুষ হয় লিনিয়ার ডিফারেন্সিয়েশন না হয় নন-লিনিয়ার ডিফারেন্সিয়েশন তা না হলে পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়েশন নিয়ে কাজ করে উনি মাশাল্লা সব নিয়াই কাজ করছে )
২০১৪ সালে গণিতের এই সর্বোচ্চ পদক পান রাশিয়ান গণিতবিদ Yakov Sinai (ইয়াকুব সিনাই) ।
উনি ডায়নামিক সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করেন এবং সম্ভাব্যতার সূত্রাবলির সিস্টেমের সাথে ডায়নামিক সিস্টেমের সংযোগ ঘটান । তিনি গাণিতিক পদার্থবিদ্যার উপরেও কাজ করেছেন ।
আজকে থাকছে এই চারজনকে নিয়েই । বাকী ১৩ জনকে নিয়ে হাজির হব আগামীর কোন সংখ্যায় ।
কিপ সলভিং ম্যাথ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩