somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশীদের সত্যিকারের জাতঃ প্রবাসের সুখ দুঃখ- একটি মধুর ঘটনা

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মালেয়শিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ডিনার যা কিনা প্রতি বছর একবার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মিনিষ্ট্রি অফ হায়ার এডুকেশন (MOHE)ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রাপ্তদের মধ্যে সনদ বিতরন করা। ইউনিভার্সিটি পুতরা মালেয়শিয়া (ইউ পি এম)ক্যাম্পাস এর বানকুয়েত হল সেজেছিল অপরুপ রঙ্গে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মালেয়শিয়ার শিক্ষা মন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মাদ খালেদ বিন নুরুদ্দিন। এছাড়া ছিলেন শিক্ষা সচিব এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।



মুল কাহিনীতে আসার আগে প্রাক কিছু কাহিনী বলিঃ প্রায় সকল ইউনিভার্সিটি আমন্ত্রিত হয়েছিল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। নিয়ম অনুসারে আমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ি তার ৮০ জন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সুযোগ পেয়েছিল মুল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। এতে সকল জাতি ও দেশের প্রতিনিধিত্ব ছিল। আমার ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সোসাইটি (ISS) প্রেসিডেন্ট এর মহানুভবতায় এই প্রথম বাংলাদেশের ৮ জন স্টুডেন্ট মুল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়( যেখানে মোট বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এর সংখ্যা ১৪ তার মধ্যে ৮ জন সুযোগ পেয়েছে অন্যদিকে ইরানের ৩৫০ স্টুডেন্ট দের মধ্যে মাত্র ৭-৮ জন এই সুযোগ পেয়েছে। বুঝতেই পারতেছেন যে ইহা তার সুদৃষ্টির কারনেই সম্ভব হয়েছে)। জানিনা কেন যেন আমাদের ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট যিনি কিনা একজন ইয়ামেনি এবং একজন লেকচারার(শিক্ষা ছুটিতে পিএইচডি করছেন) বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের খুব পছন্দ করেন। বিকাল ৭ টায় ইউনিভার্সিটির বাস এ করে রওনা দিলাম ইউ পি এম ক্যাম্পাস এ। গিয়ে দেখি আমরাই লেট। যাই হোক যাবতীয় ফর্মালিটি সমাপ্ত করে ভিতরে ঢুকে দেখি সব টেবিল মোটামুটি লোক ভর্তি। জায়গা পাওয়াই মুশকিল। যাই হোক কোন রকম আমরা ৬ জন বাংলাদেশী এক সাথে বসলাম। মুল অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরি আছে তাই হাতে দেওয়া একটি ছোট বই দেখতে শুরু করলাম। ‘মালেয়শিয়া ইন মাই হার্ট’ প্রোগ্রাম এর বর্ণনা, মন্ত্রী সচিবের বানী, যারা যারা স্কলারশিপ এর জন্য মনোনীত হয়েছে তাদের নাম, তাদের জাতীয়তা, তাদের দেশের পতাকা, কোন বিষয়ে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে ইত্যাদি। পাতা উল্টিয়ে মনে হল বাংলাদেশের পতাকাই বেশি। মনে মনে হিসাব করে দেখলাম টোটাল ১৩ জন বাংলাদেশী এই স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হয়েছে। মোট স্কলারশিপপ্রাপ্ত স্টুডেন্ট এর সংখ্যা ৯০(প্রায় ৮৭ টি দেশের প্রতিযোগী) যেখানে সব্বোর্চ ১৩ টি পেয়ে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে। মনটা খুশিতে ভরে গেল। বলা বাহুল্য মালায়শিয়ার বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরাই এই স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হয়। যখন এই ভাইয়া আপুদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছিলো তখন হল ভর্তি দর্শকদের মধ্যে আমরা ৭/৮ জন জোরছে তালি দিচ্ছিলাম অন্য দেশের মানুষেরা হা করে দেখতেছিল। ঘটনা এইখানে না। ঘটনা ঘটল আরও পরে। মুল অনুষ্ঠান শেষ। অন্যান্য ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশী ভাইয়া-আপুদের সাথে পরিচিত হয়ে বেশ প্রফুল্ল মনে ক্যাম্পাসে আসার জন্য বাসে উঠলাম। মুল মজা আরও পরে। হটাৎ দেখি (ISS) এর প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়ালো। ঘোষণা করলো যে আজকে এতো গুলা স্টুডেন্টদের মধ্যে শুরু বাংলাদেশী স্টুডেন্টেরকে নিয়ে আসা সার্থক হয়েছে। বাংলাদেশ সর্বমোট ১৫ টি স্কলারশিপ পেয়ে প্রথম হয়েছে (সম্ভবত আরও দুইজন আছে যাদের নাম বইয়ে নাই )। শুরু হল আমাদের সেই অবিনাশী তালি, বাস ভর্তি বিভিন্ন দেশের স্টুডেন্ট এতে যোগ দিল। এর পর তামিমি(আমাদের আই এস এস প্রেসিডেন্ট) যোগ করলো ‘ এতো দেশের স্টুডেন্ট কেউ এইটা করতে পারল না শুধু মাত্র বাংলাদেশীরা ছাড়া’। আমাদের বলল ‘ ইউ সুড ফিল প্রাউড অফ ইয়োর কান্ট্রি। অ্যান্ড ইউ সুড লার্ন হাউ টু স্ট্যান্ড ইনডিভিজুয়ালি এগেইনষ্ট অল দা অবস্ট্রাগল’। গর্বে বুকটা ফুলে উঠল। আমরা সংখ্যায় কম হওয়ায় কখনোই বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারিনি। বাংলাদেশী শুনলেই বন্ধুরা কেমন যেন হয়ে যেত।বাংলাদেশী হওয়ার কারনে ইম্মিগ্রেশন থেকে শুরু করে ক্লাস অবধি এমনকি ট্যাক্সি ড্রাইভাররাও অবজ্ঞার চোখে দেখত। আমার মনে হয় প্রবাসী সবারই এই অভিজ্ঞতা আছে। নিজেকে খুব হীন মন্নতায় ভুগতাম। সউদি/ দুবাই এর স্টুডেন্টরা আমাদের দেখলেই বলত তোমাদের অনেক লেবার আমাদের ওখানে কাজ করে যারা অনেক খারাপ কাজের সাথে জড়িত। কিছুই বলার ছিল না। শুধু বিভিন্ন ভাবে কাটায় যেতাম।বলতাম তোমরা আমাদের আসল দিক জাননা তাই এই ধারনা কর। আজ সুযোগ পেয়ে আর ছাড়লাম না। হই হই করলাম, বাংলা গান শুরু করে দিলাম আমরা কয়েকজন। যতক্ষণ না কাম্পাসে পৌঁছেছি আমরা তালি আর গানে মাতায় রাখছি পুরো বাস। সত্যি এই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের সামনে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব করা হল। গর্বের সাথে বললাম ইয়েস আই এম প্রাউড টু বি এ বাংলাদেশি। সত্যি অনেক মধুর কিছু সময় কেটেছে আজ। ধন্যবাদ সেই সব ভাইয়া আপুদের যারা এই কৃতিত্ব অর্জন করে আমাদের সত্যিকারের জাত চিনিয়েছেন। সত্যি অনেক খুশি লাগছে। এত্ত খুশি যে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে সোজা ব্লগে বসে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। ভালো থাকবেন। যে যেখানে আছেন নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে গর্বিত করুন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×