বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম,
সকল প্রশংসা ঐ মহান সত্ত্বার যিনি আমাকে এই পোষ্টটি দেওয়ার তৌফিক দান করেছেন। অসংখ্য দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নাবী মুহাম্মাদ সা: এর উপর।
সত্য প্রকাশিত হোক, প্রমাণিত হোক - এটা প্রতিটি মুসলিমই চায়। কিন্তু তাই বলে নিজের মাযহাবী মতের পক্ষে হওয়ায় যঈফ হাদিসকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে স্বার্থ হাসিল করা এবং মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করায় হানাফী মাযহাবের আলিমরা সব সময়ই এগিয়ে। এজন্য তারা নোবেলও পেয়ে যেতে পারে।
আজ আমরা হানাফীদের অন্যতম মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানভী কর্তৃক লিখিত আস্তে আমীন বলার পক্ষে কিছু হাদিস দলিলের জবাব দিচ্ছি। তিনি পাঁচটি হাদিস দলিল হিসেবে দিয়েছেন। এই দলিলগুলো হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদরা ঘন ঘন কপি পেস্ট মেরে থাকে কোনোরূপ তাহক্বীক ছাড়াই। আর যেহেতু তারা মুকাল্লিদ, তাই তাদের দ্বারা এটি অসম্ভব কিছু না।
যাইহোক নিম্নে আস্তে আমিন বলার হাদিসসমূহ ও আমাদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো। হানাফী আলেমদের বলছি, যদি পারেন, তবে হাদিসগুলোকে সহীহ প্রমাণ করুন। এতে আপনাদেরও ভালো, আমাদেরও ভালো। আর আমরাও চাই সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক।
আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে দলিলসমূহ নিম্নে দেওয়া হলো।
১ম দলিল:
হযরত ওমর রা. বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ।
أربع يخفيهن الإمام : التعوذ وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين واللهم ربنا ولك الحمد
(ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল ৮/২৭৪; বিনায়াহ ২/২১৯)
জবাব:
এই হাদিসটি মুনকাতি হওয়ার কারণে যঈফ। কারণ হাদিসটি ইব্রাহিম নাখয়ী বর্ণনা করেছেন উমার রা. হতে। আর ইব্রাহিম নাখয়ী উমার রা. কে পান নাই।
এছাড়া আরো একটি বর্ণনা রয়েছে আবদুর রহমান বিন আবী লায়লা হতে উমার বিন খাত্তাব রা. এর বর্ণনা। সেটিও মুনকাতি। কারণ আবদুর রহমান বিন আবী লায়লাও উমার বিন খাত্তাব রা. কে পান নাই। (তাহযিবুত তাহযিব)। সুতরাং হাদিসটি দলিলযোগ্যও নয়, প্রমাণিতও নয়।
২য় দলিল:
২. আবু ওয়াইল রাহ. বলেন, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও।
كان علي وعبد الله لا يجهران ببسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ، ولا بالتأمين، قال الهيثمي : رواه الطبراني في الكبير وفيه أبو سعد البقال، وهو ثقة مدلس.
(আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮)
জবাব:
হাদিসটি যঈফ। কারণ হাদিসটির সানাদে রয়েছেন, আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল।
ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদিস;
ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি মাতরুকুল হাদিস;
ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি মাতরুক;
ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি যঈফ;
ইমাম ইজলী বলেন, তিনি যঈফ;
ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নন।
এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন (তাহযিবুত তাহযিব)
এছাড়া আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল মুদাল্লিস এবং মুদাল্লিস রাবীর (বর্ণনাকারীর) আন শব্দে বর্ণিত হাদিস দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। হাদিসটি যঈফ হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ।
মোট কথা জমহুর মুহাদ্দিসিনের নিকট তিনি যঈফ। তাই দলিলটি অগ্রহণযোগ্য। অথচ হানাফীরা এসব অগ্রহণযোগ্য যঈফ হাদিসই দলিল হিসেবে দিয়ে থাকে নিজেদের মাযহাবী মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর মুকাল্লিদরা সেগুলো প্রচার করে এবং নিজেদের হুজুরদের আকড়ে ধরে অন্ধের মতো।
৩য় দলিল:
আবু ওয়াইল থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর রা. ও হযরত আলী রা. বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না।
لم يكن عمر وعلي يجهران بسم الله الرحمن الرحيم ولا بآمين.
(ইবনে জারীর তবারী ; আলজাওহারুন নকী ১/১৩০
জবাব:
এই হাদিসটিও যঈফ। কারণ হাদিসটির সানাদে রয়েছেন, আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল।
ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদিস;
ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি মাতরুকুল হাদিস;
ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি মাতরুক;
ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি যঈফ;
ইমাম ইজলী বলেন, তিনি যঈফ;
ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নন।
এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন (তাহযিবুত তাহযিব)
এছাড়া আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল মুদাল্লিস এবং মুদাল্লিস রাবীর (বর্ণনাকারীর) আন শব্দে বর্ণিত হাদিস দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। হাদিসটি যঈফ হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ।
মোট কথা জমহুর মুহাদ্দিসিনের নিকট তিনি যঈফ। তাই দলিলটি অগ্রহণযোগ্য। অথচ হানাফীরা এসব অগ্রহণযোগ্য যঈফ হাদিসই দলিল হিসেবে দিয়ে থাকে নিজেদের মাযহাবী মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর মুকাল্লিদরা সেগুলো প্রচার করে এবং নিজেদের হুজুরদের আকড়ে ধরে অন্ধের মতো।
৪র্থ দলিল:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ ..., বিসমিল্লাহ ... ও আমীন।يخفي
الإمام ثلاثا : الاستعاذة وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين.
(আলমুহাল্লা ৩/১৮৪)
জবাব:
হাদিসটির সম্পূর্ণ সানাদ নিম্নে দেওয়া হলো:-
আবী হামজা => ইব্রাহিম নাখয়ী => আলকামাহ ও আসওয়াদ => আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
عن أبي حمزة عن إبراهيم النخعي عن علقمة ، والأسود ، كلاهما عن عبد الله بن مسعود قال : يخفي الإمام ثلاثا - : الاستعاذة ، وبسم الله الرحمن الرحيم ، وآمين
উপরোক্ত হাদিসটি যঈফ। কারণ সানাদে রয়েছেন "আবী হামজা মায়মুনা" তিনি মাতরুকুল হাদিস অর্থাৎ হাদিসের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। ইনি মারাত্মক দুর্বল। এমন হাদিস যে, হানাফীরা কিভাবে দলিল হিসেবে দেয়, তা আল্লাহই জানেন। এদের আল্লাহর ভয় আছে কি না সন্দেহ।
এছাড়া হানাফীরা দলিল না পেয়ে আস্তে আমিন বলার পক্ষে ইব্রাহিম নাখয়ীর "নিজস্ব" মন্তব্য দলিল হিসেবে দিয়েছেন যা খন্ডন করার কোনোই প্রয়োজন নাই। আমরা শুধুমাত্র হাদিসগুলোর উত্তর দিলাম। যদি কোনো হানাফী আলিম পারেন তো আমাদের বক্তব্যকে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ভুল প্রমাণ করেন। আমরা মেনে নিব ইনশাআল্লাহ। আশা করি আপনারা টপিকের বাহিরে যাবেন না। আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৯