ব্যাপারটাই এমন চিকেন ফ্রাই চিবোতে চিবোতে- বল বীর, বল চির উন্নত মম শির শুনি। রক্ত টগবগ করে আর মাংসের উপর কামড় বসাই।
আর পেটে ক্ষিধা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান শুনি।
বাস্তবতা এইরকমই। যা করতেছি, যা শুনতেছি, যা পড়তেছি তার সাথে কর্মের কোন মিল নেই। সিমন দ্যা বোভেয়ারের পড়ে অনলাইনে সানি লিওন খুঁজে যদি নারীবাদ খোঁজা লাগে তারচেয়ে রসময় গুপ্ত পড়াই ভালো।
তাহলে কি কিছু করবো না? অবশ্যই করবো। মূলধারা সিনেমার বাহিরেও যে সিনেমা আছে এইটাই বা কয় জনে জানে? মূলধারা, যাকে মুষলধারা বলি। তো এই মুষল ধারার সিনেমার বাহিরে সিনেমা বলতে কলিকাতার সৃজিত বাবু আর বাংলাদেশের কতিপয় কিছু সিনেমার কথাই বেশির ভাগ লোকে জানে। প্রামাণ্য চিত্রের কথা লোকে বলে রিপোর্ট। অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেকেই খুঁজতে যায়না। অনেকেই ডিসুম ডিসুম নায়ক না হইলে দেখেই না। স্বাধীন দৈর্ঘ্যের সিনেমা! কেনোই বা দেখবে? সেটাও তো কথা। আর যদি ইন্ডিপেনডেন্ট সিনেমার কথাই বলি, তাহলে তো সবার আগে সবাই পিঁপড়া বিদ্যার নামটাই আগে নিবে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি- এই মুহূর্তে ইয়াসমিন কবিরের নাম মনে আসছে, তার একটা সিনেমা আছে স্বাধীনতা নামে, বীরাঙ্গনা নিয়ে। গুরুদাসী নামের চরিত্র। ৭১ এ সব হারিয়ে পাগল। লোকে বলে পাগল আসলে সেই স্বাধীন মানুষ। নিজের অধিকার নিজে আদায় করে নেয়। ফেমিনিজম কি এটা স্বাভাবিক মস্তিষ্কেই বোঝা সম্ভব। গ্যারান্টি দিচ্ছি একবার দেখা শুরু করলে শেষ পর্যন্ত অনেক প্রশ্ন মাথার মধ্য খেলতে শুরু করবে। তো এই স্বাধীনতা সিনেমাটা অনেকেই দেখার সুযোগ হয়তো পাচ্ছেনা। আর দেখলেই বা কি হবে? সেটাও তো প্রশ্ন। মাথায় যদি প্রশ্ন আর বোঝার কনসেপ্টটা না থাকে তাহলে আপনি সিনেমার প্রথম দৃশ্য দেখেই ইয়াসমিন কবিরকে গালি দেয়া শুরু করে দিবেন। তারপর দলা দলি শুরু করবেন।
আর ভালোভাবে বলছি, এতগুলো কথা বলার যেটা কারণ। আপনি মার্কস পড়ছেন, আরজ আলী মাতুব্বর পড়ছেন, সিমন দ্যা বোভেয়ার পড়ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি পড়ছেন, শুনছেন, দেখছেন। স্বাভাবিক ভাবেই মুক্তমনের অধিকারী বা মুক্ত চিন্তা করা শুরু করে দিবেন। যেটা চেইন বিক্রিয়ার মত। একের পর এক চিন্তা, প্রশ্ন আসতেই থাকবে। গ্যারান্টি দিচ্ছি আপনার মুক্তমনের চিন্তার প্রাকটিসটা প্রথমে আপনার ফ্যামিলির সাথে করে দেখুন। যারা আপনার কাছের লোক। যারা আপনার শত অপরাধ এক বাক্যে মেনে নেয়। তারাও মেনে নিবে না, আপনাকে বোঝাবে, টাকাটাই মেইন, সার্টিফিকেট মেইন।
আর সেখানে আপনার কথা চাঁদে সাঈদেকে দেখার মত অন্ধ বিশ্বাসের লোকজন কিভাবে নিবে? অবশ্যই নিবেনা। নিতে পারবেনা। তাহলে কি মুক্ত চিন্তা বাদ? কেন বাদ থাকবে? অবশ্যই চলতে থাকবে। আমের গাছে তো গোলাপের আশা করা যায়না। তার জন্য গোলাপ গাছ রোপন করতে হয়। যাদের যেগুলো, যে মুক্ত চিন্তা করার বিষয় বস্তুগুলো দিচ্ছেন তার জন্য তো তাদের মুক্ত চিন্তার বীজ গুলো আগে তো দিতে হবে। যে প্রক্রিয়ায় আপনি মুক্তমনা, বিজ্ঞান মনস্ক হয়েছেন।
অবশ্যই কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ কার্ল মার্কসের কোন কথাই বুঝবে না। অথচ কার্ল মার্কস যেখানে তাদেরই অধিকারের কথা বলে গেছে। আবার আরজ আলী মাতুব্বরের কথা স্বাভাবিক ভাবেই কোন যুক্তি তর্ক ছাড়াই নিবেই না। উল্টো আপনাকেই মারতে আসবে।
তাহলে কি মুক্ত চিন্তা বাদ? কেন বাদ থাকবে? আমি বলি ব্যালেন্স করে চলা। অনেকেই আবার স্যাক্রিফাইস বলে। নিজের স্বতন্ত্র জায়গা গুলো, চিন্তার জায়গাগুলো, বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গা গুলোর সাথে অন্য সবার অন্ধ, গোঁড়ামি, অবিশ্বাস এইসবের সাথে সরাসরি যুদ্ধে বা বাক যুদ্ধে না যাওয়া। পাশ্চত্যে ফ্যামিলির সবাই একসাথে মদ খাওয়াটা অপরাধ হয়তো না। কিন্তু এখানে বড় কারো সামনে সিগারেট ফুকানোটাই পাপ। জঘন্যতম কাজ।
আপনি মুক্তবাদী, মুক্ত মনা হয়েছেন তার মানে এই নয়, শাড়ির সাথে লুঙ্গী পড়বেন, আপনার যা ইচ্ছা তাই করবেন। আপনার মুক্ত চিন্তা আপনার মত যারা তারাই শুধু নিবে । আর সবাই যারা আপনার মত চিন্তা করতে জানেনা তারা নিতে পারবে কিভাবে? ফাক ইউ বলে তাদের সাথে তর্কে নামলেন। লাভ কি হবে?
আপনি যেভাবে দিনে দিনে মুক্তমনা হয়েছেন। অপরদিকে দিনে দিনে তারা অন্ধ হয়েছে। মুক্তমনা হয়ে তাদের মুক্তমনা শিখানোর চেয়ে এটাই মনে হয় ভালো- তাদের আগে বিশ্বাস করানো। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। সেখানে কোন মানুষ দেখা যায়না। তারপরে না হয় বললেন চাঁদের নিজস্ব আলো নেই ওটা সূর্যের থেকে ধার করা।