চাকরিটাও চলে গেলে! খুব ভাল বেতন না হলেও মাসে ৮৫০০ টাকা। এই বাজারে ৮৫০০ টাকা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব না। তবুও আমার অসুস্থ মা আর ছোট বোনকে নিয়ে কোনমত চলত। ৩০০০ টাকা বাসা ভাড়া আর বাকিটা দিয়ে বোনের লেখাপড়া খরচ, মা ওষুধ আর আমার সংসারের খরচ। মাঝে মাঝে না খেয়েও কেটে দিয়েছি। কিন্তু আজ এই চাকরিটা আর নেই। বসের অন্যায় আবদার রাখতে পারি নি বলে আমার চাকরিটাই চলে গেল। ঠিকই তো, এই দুর্নীতি দিনে বসের সাথে দুর্নীতি করব না, তা কি হয়? আরে আমি তো বসের গোলাম। বস যা বলবে তাই তো করতে হবে। বস যদি বলে কান ধরে বসে থাকতে তাই করতে হবে। মহুয়াও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। গতকাল আমাকে বলে দিয়েছে, আমার মত কাঙ্গালের সাথে সে আর সম্পর্ক রাখবে না। ঠিকই তো রাখবে কেন? যে মানুষের দুই টাকার খাওয়ানোর মুরাদ নাই, সে আমার প্রেম করে! প্রেম করার আগেই ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু আমি কি করব? মহুয়াই তো আমার সাথে জোর করে সম্পর্ক করেছে। বলেছিলাম আমি গরীব মানুষ, কিন্তু তখন সে শুনে নি। এখন সে তার ভুল বুঝিতে পারছে। আরও আগেই তার বুঝা উচিত ছিল। হায়রে আমার কপাল? সব কষ্ট দুঃসংবাদ এক সাথে এসেছে। এদিকে গত ক'দিন মার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। মাকে ডাক্তার দেখানো দরকার, কিন্তু সেই অবস্থা আমার নেই। কত কুলাঙ্গার ছেলে আমি, জন্মদাত্রী মার চিকিৎসা করতে পারছি না। পার্কে বসে চিন্তা করছি, কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে। পেটে কিছু পরে নি! পকেটে চল্লিশ টাকা আছে। সিগারেট এর নেশা আমার ছিল না, মাঝে মাঝে দু এক টান দিয়েছি অথবা টাকার অভাবে কখনো কিনে খাওয়া হয় নি। কি মনে করে আটত্রিশ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট হলিউড সিগারেট আর একটি ম্যাচ কিনলাম। এখন সম্বল মাত্র দুই টাকা। একটার পর একটা সিগারেট টানশি আর পার্কের বেঞ্চের পাশে একটি কাক এর কান্ড দেখছি। অনেক কষ্টে সে আধ খাওয়া একটি রুটি পলিথিনের প্যাকেট থেকে বের করার চেষ্টা করছে। এক সময় সে সফল হল। নিজেকে কাকের থেকে ছোট মনে হচ্ছে! কাক তার খাবার ঠিকই বের করতে পেরেছে কিন্তু আমি আজ ব্যার্থ। উদ্ভট কথা ভাবতে ভাবতে এমন সময় এক ছোট মেয়ে ফুল নিয়ে আসল।
স্যার, একটা ফুল নিবেন?
না, মামনি। আমার কাছে টাকা নাই। দুই টাকা আছে এটা নিয়ে যাও। আর আমাকে স্যার বলবে না, কাক্কু বল। কি নাম তোমার?
ময়না, কাক্কু আমি আপনারে চিনছি। আমার থেকে একবার একটা ফুল নিয়েছিলেন, আমারে ১০০ টাকা দিয়েছিলেন। টাকা লাগব না, এই ফুলটা আপনার জন্য।
ঠিক আছে মামুনি, দাও।
আপনে এইখানে বইয়া আছেন ক্যান?
মা, আজ সকালে আমার চাকরি চলে গেছে, তাই বাসায় না যেয়ে এখানেই সকাল থেকে বসে আছি।
কাক্কু দুপুরে কিছু খাইছেন?
না, মামানি।
চলেন, চা রুটি খাইয়া আসি।
বাবা, আমার কাছে টাকা নাই। তুমি যাও।
আমি খাওয়াব আপনাকে। আমাকে যদি মা বলতে পারেন, তাহলে আমি কি খাইতে পারি না?
আচ্ছা, মা চল।
খুব খিদা লেগেছিল। চা দিয়ে বন রুটি খাচ্ছি আর একটি ছোট বাচ্চা মেয়ের মমতা দেখে চোখে পানি চলে এসে গেল! আমার চোখের পানি দেখে ময়নার চোখেও পানি এসে গেছে। হয়তো এটাই ভালোবাস, অন্যরকম ভালোবাসা। মনে হচ্ছে নিজের মেয়ে আমার সামনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬