somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাহিদুল হক শোভন
এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

গল্প: ইন্টারভিউ

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"চোখ লাল কেন?
.
কাল সারা রাত ঘুম হয় নি। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে রাতটা কাটিয়ে দিয়েছি। ভাবতে ভাবতেই রাতটা কেটে গেছে। এত বড় একটা রাত আমার কাছে একটুও দীর্ঘ মনে হয় নি। একবার বিছানা থেকে উঠি পায়চারি করি আবার বিছানায় গিয়ে গড়া গড়ি করি কিন্তু আমার চোখে ঘুমের ছায়া টুকুও স্পর্শ করার অনুভূতি পাই নি। আমি পৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললাম...
.
"রাতে ঘুম হয় নি। তাই চোখ লাল।
"ঘুম হয় নি কেন?
"কেন হয় নি, সেটা নিশ্চয় আপনি ভালো করেই জানেন।
.
ও আমার দিকে একটু কেমন করে যেন দেখলো। তারপর একটু চুপ করে থেকে বললো...
.
"সত্যিই ঘুম হয় নি?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালাম। সত্যি বলতে কি আমার কেমন জানি লাগছে। আমার হাতের তালু ঘামতে শুরু করেছে। আমি যখন খুব নার্ভাস বা অস্বস্হি অনুভব করি তখনি আমার হাতের তালু ঘামতে থাকে। পৃথিলা ওর ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে বললো...
.
"নিন এটা।
.
আমি একটা হাসি দিয়ে থ্যাংকস বলে টিস্যুটা নিলাম। ও আবার বললো..
.
"তো সারা রাত কি করলেন?
"ঘুমাই নি বললে ভুল হবে, ঘুম চোখে আসে নি। আর কিভাবে আসবে? ঘুমের ঔষধ তো আপনার কাছে। সারা রাত আপনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে গেছে।
.
ও একটু শব্দ ছাড়া হাসলো। তারপর কয়েকটা এহেম এহেম করে কাশি দিয়ে বললো...
.
"তো প্রশ্তুত মিঃ?
.
আমি মাথা দিয়ে হ্যা সুচক ইশারা দিলাম। আমার কেমন জানি লাগছে। সারা রাত ঘুমাই নি। তারউপর ইন্টারভিউ দিতে আসলাম। ইন্টারভিউ বললে ভুল হবে প্রেমের পরীক্ষা দিতে আসছি। আসলে এই এলাকায় আমি চার মাস হয়েছে আসছি। আর এইখানে এসেই কয়েকদিন পরেই পৃথিলাকে দেখলাম। প্রথমে তেমন একটা গুরুত্ব দেই নি। বেশ কয়েক দিন পর গলির মুখে দেখলাম পৃথিলী লাঠি নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে আর দুইটা ছেলে কান ধরে উঠবস করছে। আমি বেশ অবাক হলাম। কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে কিছুটা অনুমান করতে পারলাম যে ছেলে দুইটা কিছু একটা করেছে। আমি দৃশ্যটা দেখেই বাসার দিকে চলে যাই।
.
এর দু এক দিন পর আরিফের সাথে আমার পরিচয় হয়। নতুন এলাকা, নতুন বাসা, সব কিছুই আমার কাছে নতুন। ভার্সিটি থেকে আসার পর সারাদিন বাসায় সময় পার করতে কেমন জানি লাগতো। আর সেই পথ ধরেই এই এলাকায় আরিফের সাথে পরিচয় হয়। একদিন রাস্তা দিয়ে আসছি, হঠাত্‍ আরিফ হাতে সিগারেট নাড়াচড়া করতে করতে আমার মুখোমুখি হয় তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে...
.
"লাইটারটা দেন তো আগুন ধরাবো।
"জ্বি নেই। আমি এসব খাই না।
.
আমার কথা শুনে ও আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার কেমন করে যেন দেখলো। আমি নেড়ে চড়ে একটা কাশি দিয়ে শার্টের কলারটা একটু ঠিক করলাম। ও বললো...
.
"ভালো খুব ভালো। ভদ্র ছেলে। সিগারেট খাওয়া ভালো না।
.
এইটা বলেই ও আমার সামনে থেকে সিগারেট টা নাড়তে নাড়তে হাটা দেয়। আমিও হাটা দেই। তারপর কয়েক সেকেন্ড পর পিছন থেকে ডাক দেয়...
.
"হে ব্রো।
.
আমি ফিরে তাকাই। ও আমার কাছে এসে বলে...
.
"নতুন আমদানি নাকি?
"স্যরি আমি কিছু বুঝি নি।
"বলতেছি এলাকায় নতুন নাকি?
.
আমি মাথা দিয়ে হ্যা সূচক ইশারা দিলাম। ও একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো...
.
"আমি আরিফ। এলাকায় এক নামেই চিনে।
"আমি জাহেদ। নতুন তো কেউ চিনে না।
.
তারপর টুকটাক কথা হলো। বিকেলের দিকে ও আমাকে আরো কয়েকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। হাটতে হাটতে যখন চায়ের টঙের দিকে যাচ্ছিলাম আমি বেশ খেয়াল করলাম আরিফ সহ যে কয়েকজন ছিল সবাই মাথা নিচু করে দু হাত পিছন দিয়ে হাটতে লাগলো। আমি কিছুই বুঝলাম না। আমাদের সামনে দুটো মেয়ে হেটে আসতেছে সেটা লক্ষ্য করলাম। বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলাম সেদিনের সেই লাঠি হাতে নেওয়া মেয়েটাও আছে। মানে পৃথিলা। ওকে শুধু আমি ঐদিন দেখেছি কিন্তু ওর নাম ও আমি জানতাম না। বেশ অবাক করে দেওয়ার মত পৃথিলা মেয়েটা। অন্যরকম আশ্চর্যের মেয়ে। প্রথম যেদিন দেখলাম আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। অনেকটা প্রথম ভালো লাগার মত। হুট করে যখন কেউ কাউকে দেখে মনে মনে বলে ওয়াও মেয়েটা চমত্‍কার তো। ঠিক এই রকম। তারপর মনে মনে বললাম এই মেয়ের পাশে সিট খালি থাকার নয়। এই রকম মেয়ের পাশে সিট খালি থাকলে চট করেই ফিলাপ হয়ে যায়। সবাই যখন মাথা নিচু করে হাটতে লাগলো তখন পৃথিলার সাথে আমার চোখাচোখি হয়। ও আমাদের ক্রশ করে যখন কিছুটা দুর চলে গেল তখন আরিফ বললো...
.
"এই এলাকায় নতুন আসছো ঐ যে সাদা ড্রেশ পড়া মেয়েটা দেখছো ভুলেও ওর দিকে নজর দিও না
.
আমি একটু চুপ করে থেকে মাথা চুলকালাম। আরিফ নিশ্চয় ওকে পছন্দ করে। তারপর বললাম...
.
"ওকে তুমি লাইক করো?
.
সবার মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল। তারপর আলভী আমার কাধে হাত রেখে বললো...
.
"শুধু ও না। আমরা সবাই।
.
আমি খুব অবাক হলাম। তারপর কিছু বলতে যাবো আলভী আবার বলতে লাগলো...
.
"শুধু আমরা না, অনেকে পৃথিলাকে পাওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে।
"তো ভাগ্যবান কে হলো?
.
সবাই একটু চুপ হয়ে গেল। তখনি জানলাম ওর নাম পৃথিলা। তারপর আরিফ বললো..
.
"যারা যারা ওকে পছন্দ করত। তারা সবাই ওকে প্রপোজ করেছে। কিন্তু কাজ হয় নি। যারা প্রপোজ করেছে তাদের প্রত্যেককে প্রথমে ইন্টারভিউ নিয়েছে। ওর একটা শর্ত আছে ইন্টার ভিউ উর্ত্তীন্ন হলে বন্ধুত্ব করবে। বন্ধুত্ব করার পর বুঝে শুনে বলবে এক্সেপ্ট করবে নাকি করবে না।
"কেউ উর্ত্তীন্ন হয় নি?
"হবে কিভাবে? উদ্ভট উদ্ভট প্রশ্ন করে। আর যে ইন্টার ভিউতে ফেল করবে তাকে সারাজীবনের জন্য ভাই বানিয়ে দিবে।
.
আমি হাসলাম। ইন্টারেস্টিং তো। তার মানে পাশ বসে জার্নি করার জন্য সিট খালি। আমি বললাম..
.
"তোমরা তাহলে এখন বোনের নজরে দেখো?
.
সবাই একসাথে মাথা দিয়ে হুম সূচক ইশারা দিল। আমি ওদের বললাম পৃথিলার আমার প্রেমে পড়বে। সবাই একটু অবাক হলো। সেদিনের পর থেকেই মাঝে মাঝে পৃথিলার বাড়ির আশে পাশে সময় পেলে একটা চক্কর দিয়ে আসতাম। পৃথিলাও ব্যাপারটা নজর দিয়েছে এই যে আমি ওর বাড়ির আশে পাশে ঘুর ঘুর করি। এক মাস কেটে যায়। একটুর জন্য ও কথা বলি নি। শুধু রাস্তায় দেখা হলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।
.
হুট করে একদিন, না চাইতেই কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ভার্সিটি শেষে , যে বাসে করে আসছিলাম সেই বাসেই পৃথিলা ছিল। ও ড্রাইবারের পাশের সিট গুলোর মাঝে বসে ছিল। আমি প্রথমে দেখি নি। দাড়িঁয়ে ছিলাম। কন্ট্রাকটার যখন ভাড়া খুঁজলো তখন পৃথিলা একটা পাঁচশটাকার নোট দিল। কন্ট্রাকটার বললো...
.
"আপা ভাংতি নাই।
"আমার থেকে ও নেই।
"ভাংতি টাকা নিয়া উঠতে পারেন না? এই যে এখানে লেখা আছে ৫০,১০০,৫০০ টাকার ভাংতি নাই।
.
আমি দৃশ্যটা দেখেই কন্ট্রাকটারকে বললাম.. ভাড়া আমি দিব। পৃথিলা আমার দিকে তাকালো কিছুক্ষন কিন্তু কিছু বললো না। আমি ওর ভাড়া দিয়ে দিলাম। গাড়ি থেকে নেমে ওর পিছন পিছন হাটছি। ও একটু থেমে আমায় বললো...
.
"আমি সব বুঝি মিঃ
.
আমি হাসলাম। কিছু বললাম না। ও আবার বললো...
.
"আমি কেমন সেটা নিশ্চয় খোঁজ খবর নিয়েছেন। সো ঐ আশা করে লাভ নেই।
.
আমি আবার হাসলাম। আমার হাসি দেখে ও একটু বিরক্ত হলো। এমন টাইপের লুক দিল যেন আমার মুখ সেলাই করে দিবার অবস্হা। তারপর কোমড়ে হাত রেখে বললো..
.
"আপনি আমার পিছন পিছন হাটবেন না। আপনার টাকা আপনি পেয়ে যাবেন। আমি কারো কাছে ঋনী থাকি না।
"আচ্ছা আপনি কী মনে করেন বলেন তো? আপনি কি ভাবছেন আমি আপনার প্রেমে পড়বো? যদি ভেবে থাকেন তাহলে ঠিক আছে তবে আপনিও আমার প্রেমে পড়বেন দেখে নিয়েন।
.
ও চোখ দুটো বড় বড় করলো। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে কিছুক্ষন তাকিয়ে আর কিছু না বলে সোজা হাটা দিল এরপরের দিনই ও আমাকে টাকাটা দিয়ে দেয়। এইভাবে আরো দু মাস পার করে দেই। কোন কথা বলতাম না। শুধু ওর বাড়ির আশে পাশে বিকেল বেলায় একটা চক্কর মেরে আসতাম। আর ওকে দেখলে ওর দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতাম। এর বাহিরে আমি আর কিছু করি নি। চার মাসের মাথায় আমি একদিন ওকে বললাম...
.
"আপনাকে আমার ভালো লাগে।
"তো এখন কী করতে হবে?
"কি আর করবেন ইন্টারভিউ নিবেন।
"আপনি না আমায় বললেন আমি আপনার প্রেমে পড়বো?
"হা হা হা আগে তো ইন্টারভিউ নেন।
"ফেল করলে এর নিয়ম নিশ্চয় জানা আছে?
"হ্যা জানা আছে। ফেল করলে আপনাকে বোনের চোখে দেখবো। রাস্তায় আপনাকে দেখলে মাথা নিচু করে ফেলবো। ঠিক আছে আপা?
"এই আপা ডাকলেন কেন?
"আগে থেকে প্র্যাকটিস করলাম আর কি।
.
পৃথিলা আর কিছু বললো না। আমার সামনে থেকে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় পিছন ফিরে আমায় বললো.. আগামীকাল সকালে ইন্টারভিউ। আর এই কারনে এখন ইন্টারভিউ দিতে আসছি। এই ইন্টারভিউর জন্য রাতে একটুও ঘুম হয় নি।
.
"তো ইন্টারভিউ দিতে তৈরি?
.
ওর কথায় একটু নেড়েচড়ে বসলাম তারপর বললাম...
.
"সে কবে থেকেই প্রশ্তুত। কি যুগ আসলো প্রেম করার জন্য ও ইন্টারভিউ দিতে হয়। আমি নিশ্চিত আপনার এই উদ্যেগটা দেখে আরো অনেক মেয়ে এইটা ফলো করবে।
.
ও যেন একটু হাসলো। তারপর বললো..
.
"প্রেম করেছেন আগে?
"না করি নি।
"প্রেম করেন নি, প্রেম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই তাহলে আমার সাথে প্রেম করবেন কিভাবে? অভিজ্ঞতা ছাড়া আজকাল চাকরিও পাওয়া যায় না। প্রেমের বেলায় ও সেইম।
.
আমি একটু চুপ করে রইলাম। এই মেয়ে দেখছি আমায় ফাদে ফেলতেছে। তার মানে বরশি ফেলে কথা আদায় করতেছে প্রেম করেছি কিনা আগে। আমি বললাম...
.
"জন্মের পর হাটতে চলা শিখেনি। আম্মা শিখিয়েছে। সো আপনার সাথে প্রেম করার সময় আপনি শিখিয়ে দিলেই হবে। দেইখেন অনেক ভালোবাসবো প্রমিজ।
.
ও কি বলবে একটু ভাবলো তারপর বললো..
.
"নেক্সট কোয়েশ্চন এ আসি। আপনি আমার জন্য কী করতে পারবেন?
"কি করতে হবে সেটা বলেন।
"জীবন দিতে পারবেন?
.
আমি একটু হাসলাম। তারপর মাথা চুলকিয়ে বললাম...
.
"জীবন দিলে আপনাকে কই খুঁজে পাবো? আপনাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছি বাস্তবায়ন হবে কিভাবে? জীবন দেওয়ার পর আপনাকে কবরে খোঁজবো? এটা আমি পারবো না। হ্যা যখন আপনি আমার হয়ে যাবেন তখন আপনার বিপদ আপদ তো আমিই দেখবো তাই নয় কি? তখন যদি কিছু করতে হয় সেটা ভেবে করবো। এ ধরেন এক্সিডেন্টে আপনার দুটো চোখ নষ্ট হয়ে গেল। চোখ খুজে না পেলে আমার থেকে না হয় একটা দিয়ে দিব। কি বলেন? তখন আমার চোখ দিয়ে এই দুনিয়া দেখবেন দুনিয়ার মানুষ দেখবেন। আমাকে দেখবেন।
.
পৃথিলা একটু হাসলো আমার কথা শুনে। তারপর চুল গুলা একটু ঠিক করে বললো...
.
"সিগারেট খান?
"এই চারমাসে আমাকে একবারো খেতে দেখেছেন?
"তা অবশ্য দেখি নি। আমার সাথে প্রেম করলে সিগারেট খেতে হবে। পারবেন?
.
আমি একটু অবাক হলাম। আচ্ছা এই মেয়ে কি সব ইন্টার ভিউ নিচ্ছে বুঝলাম না। কোথায় বলবে ভালোবাসা কি? ভালোবাসা কত প্রকার। ইহার প্রকারভেদ বলেন। না উনি কিসব আস্ক করতেছে। আচ্ছা এই কথার মাঝে অন্য কিছুও লুকিয়ে থাকতেও পারে। আমি বললাম...
.
"এই শর্তে আমি একমত নই। আমার মা কি বলেন জানেন? সিগারেট খাওয়া আর গু খাওয়া এক। আমার বাবাকে ও খেতে দেয় না। আমার বাবা অবশ্য ভাত খাওয়া পর লুকিয়ে লুকিয়ে একটা খায়।
"বিয়ের পর আমি আপনার বাবা মার সাথে থাকতে পারবো না। আলাদা থাকতে পারবেন?
.
এই মেয়ে তো দেখি বিয়ে অব্দি নিয়ে গেল। আমি তো বাসর রাত বাদ, বিয়ে পর্যন্তও ভাবি নি।
.
"না পারবো না। দরকার হলে বিয়ে করবো না।
"তাই?
"হ্যা তাই।
"আচ্ছা কার গান আপনার ভালো লাগে?
"আর্টসেলের।
"এটা আবার কে?
"চিনবেন না, বেশির ভাগ মেয়েই আর্টসেল চিনে না।
"ওসব আর্টসেল টার্সেল বাদ। রবিন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, তাহসানের গান গেয়ে শুনাতে হবে। প্রেম করার সময় নিশ্চয় রাতে কল দিবেন কথা বলার জন্য তখন আমি বললে মাঝে মাঝে শুনাবেন। ঠিকাছে?
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। একটু চুপ করে থেকে বললাম...
.
"দেখুন যার যার দিক থেকে সবাই পারফেক্ট। আমার কাছে সবার গানই ভালো লাগে। দরকার হলে প্রেম করবো না, তারপরো আর্টসেল মিস দেওয়া যাবে না। আর কি যেন বললেন আমি কল দিব কথা বলার জন্য। কেন আপনি দিবেন না কল?
.
ও একটু অবাক হয়ে গেল এই যে ওর প্রত্যেকটা শর্ত আমি রিজেক্ট করে দিচ্ছি। যেখানে ওকে পাবার জন্য আমার সব শর্ত মানা দরকার। রিজেক্ট করে দেওয়াতে ও একটু অবাক হচ্ছে আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। ও বললো...
.
"আমি কল দিব কেন? কল তো দিবেন আপনি। আমি সর্বচ্চো মিস কল দিতে পারি।
"হ্যা এটা ছাড়া মেয়েরা আর কিবা করতে পারে।
(কথাটা একটু মিন মিন করে বললাম)
.
"কিছু বলেছেন মনে হচ্ছে।
"না কিছু বলি নি। আচ্ছা আমি আসি, আমার প্রেম করার দরকার নেই। আপনার এগ্রিমেন্টে আমি একমত নই। আল্লাহ হাফেজ। ভালো থাকবেন।
.
এইটা বলেই ওর সামনে থেকে উঠে হাটা দিলাম। আমার এই আচরণে ও আশ্চর্য রকমের অবাক হয়েছে। আমি মনে মনে একটু খুশিই হলাম। আমিও এটা চেয়েছি। সারারাত ভেবে চিন্তে বুদ্ধি বের করলাম পৃথিলা যে শর্তই দেক আমি রিজেক্ট করে দিব। আর সেটা হয়েও গেল। সব কাজ শেষ এখন শুধু ফিনিসিংটা বাকি। আর ফিনিসিংটা শেষ করবে পৃথিলা।
.
এরপর সাত দিন কেটে যায়। আমি এমন একটা ভাব ধরলাম যেন ওকে পাত্তাই দেই না। ওকে দেখলে, না দেখার ভান করে অন্য পাশ দিয়ে চলে যাই। ওর বাড়ির আশে পাশেও যাই না।
.
দশ দিনের মাথায় যথারিতি আমি ওকে না দেখার ভান করে ডান পাশ থেকে গলির ভিতরে ঢুকতেছি আর পৃথিলাও বাম পাশ থেকে গলির ভিতর ঢুকতেছে এমন সময় ও আমার সামনে এসে আমার দিকে রাগ রাগ ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকলো। আমি বললাম...
.
"কি ব্যাপার কি হয়েছে?
"কি হবে আপনি জানেন না? আপনার সমস্যা কি?
"দেখুন আপনাকে নিয়ে আমি আর ভাবি না।
"আগে ভেবেছেন কেন? আপনি জানেন যারা যারা আমার কাছে ইন্টার ভিউ দিয়েছে তারা সবাই আমার শর্তে রাজি হয়েছে। শুধু আপনি ছাড়া। আর আমি চাই ও না বিয়ের পর বাবা মাকে ফেলে আপনি আলাদা থাকবেন, আমি তো আপনার মনমানসিকতা দেখেছি। আমি চাইও না আপনি সিগারেট খান। আমি তো আপনাকে যাচাই করে দেখেছি।
.
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন পৃথিলা আবার বললো..
.
"আমি এখন আর্টসেলের গান শুনি। শুনবেন...
.
গানের আমি তুমি হারিয়ে যাবো মেঘের পরে,
মেঘের স্মৃতির ঘরে সময় ভেঙ্গে,
ভেঙ্গে ভেঙ্গে অন্য রোদের অন্য সময়ে...
.
আমাকে আর্টসেলের গান শুনালেই চলবে। আর মাঝে মাঝে আমিও ফোন দিব রাতে।
.
আমি হাসলাম। ঐ যে বললাম ফিনিসিংটা পৃথিলা দিবে। আসলে ওর পিছনে যখন অনেক ছেলে লাইন পড়েছে ও তখন ইন্টারভিউ নিয়ে রিজেক্ট করেছে। কিন্তু আমার বেলায় আমি ওর শর্তে রাজি হই নি। বরং ওকে বলেছি দরকার হলে প্রেম করবো না। তারউপর ওকে এড়িয়ে চলেছি ওকে দেখলে না দেখার ভান করেছি এইসব আচরণ গুলাই ওর মাঝে অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করেছে।
.
"হাসছেন কেন? আপনি এতদিন বাসার সামনে যান নি কেন?
.
"কি বলেছিলাম না, আপনি আমার প্রেমে পড়বেন?
"হু আমি প্রেমে পড়িনি, কে বলেছে আমি প্রেমে পড়েছি? আমি তো বন্ধু হতে আসছি।
.
আমি আবার হাসলাম, যে মেয়ে যার গান কোন দিন শুনে নি তার গান শুনে আমাকে শুনাতে পারে, এটা থেকেই তো অনেক কিছু বুঝা যায়। আর গুলা বুঝার দরকার হয় না। আমি এমন একটা ভাব ধরলাম তারপর বললাম..
.
"চলেন রিকশা করে বাসায় পৌছে দিব।
"এখান থেকে এখানে রিকশা কেন?
"আপনি বুঝবেন না।
.
তারপর একটা রিকশায় উঠলাম। যদিও বাসা একদম কাছে। বেশি হলে একহাজার ফুট দুরুত্ব। হেটে গেলে দু মিনিটের মতই লাগবে। কিন্তু আমি অন্য কিছুর জন্য রিকশাটা নিয়েছি। রিকশাটা যখন চায়ের টঙের কাছে আসলো আমি এমন একটা ভাব ধরলাম যেন আরিফ আলভীরা একটু দেখুক। আরিফ আলভীরা আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। পৃথিলা ব্যাপারটা বুঝে একটু হাসলো আর আমায় বললো.. আপনি একটা ফাযিল.. আমি কিছুই বললাম না, শুধু হাসলাম। মেয়ে তোমাকে তো আমার করেই নিলাম...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×