জোরান জিভকভিকের জন্ম ১৯৪৮ সালে ৷ এ পর্যন্ত ১৮ টি ফিকশন বইয়ের রচয়িতা ৷ জিভকভিকের বইগুলোর অনুবাদের ৬০টিরও বেশি সংস্করণ বের হয়েছে ৷ তিনি বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে প্রফেসর পদে কর্মরত ৷ এ আলোচনায় তিনি মধ্য ইউরোপের ফ্যান্টাস্টিকা “fantastika” আন্দোলন, তার লেখার শিল্পমান, ক্রমবিকাশ ও নিজস্ব লেখক সত্তার ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন ৷
--------------------------পর্ব১----------------------------
##########ফ্যান্টাস্টিকা ও সার্বিয়ার সাহিত্য########
মাইকেল মরিসনঃ আপনার ফিকশনগুলো আর মধ্য ইউরোপের ‘ফ্যানটাস্টিকা’র ঐতিহ্য একই সমান্তরালে যুক্ত ৷ কিভাবে আপনি এ ঐতিহ্যকে সংজ্ঞায়িত করবেন ? এ ধারার কোন কোন লেখকেরা আপনার লেখায় প্রভাব ফেলেছে ?
জোরান জিভকভিকঃ সাহিত্য ও ভৌগলিক দিক দিয়ে শব্দটি “Mitteleuropa” (“Central Europe”) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ৷ পূর্বের ধারণাটি আরো বেশি বিস্তৃত ছিল আর যা ছিল রাশিয়ার আশপাশের এলাকায় ৷ এ ধারণা উনবিংশ শতকে ও বিংশ শতকের কিছু অংশে সংস্কৃতিগত, প্রগতিশীলতায় ও শৈল্পিকভাবে নানাভাবে সম্মিলিত ছিল, বিশেষ করে সাহিত্যে এর প্রভাব পড়ে ৷ উল্লেখ্য যে ভেলেরি ভ্রয়োসভের The Fiery Angel (১৯০৮) উপন্যাসে এর প্রতিফলন দেখা যায় ৷ যার আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য হল পুরো প্রেক্ষাপটই ষোল শতকের জার্মানি যা কেউ বুঝতেও পারবে না যে সেটা আসলে রাশিয়াতে লেখা হয়েছে ৷ যার মূলত আদর্শগত ভাবেই অধিকার জার্মানির ৷
“fantastika” ধারাটি বিভিন্ন ভাবেই ইউরোপের নানান ভাষায় এসেছে ৷ যেগুলোকে আসলে ইংরেজিতে যথাযতভাবে রূপান্তর করা যাবে না ৷ এতে শুধু ফ্যান্টাসিই থাকতে পারে যদিও বাজারজাতকরণের জন্য “Tolkienesque” ফিকশন নামেও ক্ষুদ্রভাবে প্রচার করা হয় ৷ Fantastika কখনও সাহিত্যের বিস্তৃত পরিধির সূক্ষ্ম দিকের সংকীর্ণ অংশ নয় ৷ আসলে এ নিজেই ব্যাপক ৷ আর সবগুলোই বিস্তৃতির দিক দিয়ে স্বতন্ত্র গদ্যধর্মী ৷ প্রায় ৭০ শতাংশই গত ৫হাজার বছর ধরে লেখা হয়েছে যেগুলো স্বতন্ত্র ধারা ৷ যারা fantastika শাখার উপধারা হিসেবে এসেছে যেমনঃ ফোকলোর(folklore),খোয়াবনামা(oneiric),রূপকথা(fairytale), মহাকাব্য(epic) আরো অনেক প্রকারে ৷
মধ্য ইউরোপিয়ান ফ্যান্টাস্টিকা কখনও আক্ষরিক অর্থে অন্যদের মত জাতিগতভাবে সাহিত্য আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেনি বা বিস্তৃতি লাভ করেনি ৷ পারতপক্ষে এটির ঐতিহ্য হিসেবে কিছু চরিত্রগত অংশীদারিত্ব ছিল কিন্তু মূলত এ ধারা অসমসত্ত্ব ৷ আর এর খুব সাধরণ অংশ হলো অদ্ভূত, বিচিত্র, কল্পনার উপকরণ ৷
আমি অনেক ঋনী মধ্য ইউরোপিয়ান fantastika-র নামী বোদ্ধদের কাছে ৷ ই.টি.এ.হ্যাফম্যান থেকে শিখেছি কিভাবে বিচক্ষনভাবে ফ্যানটাস্টিকা’র অনুসঙ্গ, ফ্যানটাস্টিকা গল্পে সাংকেতিক মানদণ্ড বৃদ্ধি করা যায় সেটা গোগল থেকে, কিভাবে মৌলিকত্ব লাভ করা যায় তা ব্রেয়োসভের কাছ থেকে, আঙ্গিক ও fantastika-র টেক্সট পাঠে কিভাবে হিউমার বৃদ্ধি করা তা মিখাইল বুলগাকভের কাছ থেকে, কাফকা থেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় অযৌক্তিকতা বা আবসার্ডকে, fantastika-র নতুন নতুন পথের নির্দেশনা পাওয়া যায় সেটা স্টানিসল্ লেমের কাছ থেকে ৷
মাইকেল মরিসনঃ আপনি বললেন অতিতের লেখকদের লিখার পদ্ধতি থেকে কিভাবে শিখেছেন ৷ এবার আপনার লেখার দিকে আসি ৷ আপনার ফিকশনগুলো আমার কাছে মনে হয় মেটাফিজিক্যাল ফ্যানটাসিয়াস (“metaphysical fantasias”) ধারার ৷ কোন লেখক যদি আপনার লেখার কোন মূলভাব থেকে প্রভাবিত হবেন ?
জোরান জিভকভিকঃ আমিও মনে করি চূড়ান্ত প্রশ্নে আমার উপন্যাসগুলো মেটাফিজিক্যাল ফ্যানটাসিয়াস (“metaphysical fantasias”) ধারার বলে সমাদৃত বা গৃহীত ৷ যদিও মনে হতে পারে চূড়ান্ত প্রশ্নের সাথে দর্শনের সংযোগ আসলে বাইরে থেকে দেখলে এমনটাই ৷ সাহিত্যের অন্যান্য ধারা-উপধারা ও শিল্পের অনুসঙ্গগুলো সুদৃঢ়ভাবে একই সমান্তরালে শীর্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করে ৷ শিল্পের মধ্যে গল্প উপন্যাস-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী নিঃসন্দেহে ৷ যে কেউ বলতেই পারে চূড়ান্ত প্রশ্নের সম্মখীন হতে শৈল্পিক প্রতিকূলতা অতিক্রম ৷
যাই হোক এটা কোন সাধারণ কাজ নয় ৷ ফিকশনে কোন ঘটনার মোচড়ের ফাঁদ সবসময়ই ওত পেতে থাকে, অনভিজ্ঞতার ভয়াবহ চাপ, অযত্ন বা সরলতা অপেক্ষা করে অযোগ্য লেখকের জন্য ৷ এ ধরণের কাজগুলো গদ্যশিল্পের উপযোগিতার সাথে বিদ্রোহ করে ৷ সব মিলিয়েই হলো গল্প বলার শিল্পকলা ৷
উক্ত ফাঁদগুলো এড়াতে প্রজ্ঞাবানরা স্বীকৃত নানান পন্থা গ্রহণ করেন ৷ এই কারণে আমি আপনার আগের প্রশ্নে জোর দিয়েছি মধ্য ইউরোপিয়ান ফ্যানটাস্টিকার শীর্যস্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গির কাজ থেকে আমার শিখার বিষয়ে ৷ এ দৃষ্টিভঙ্গির ধারণাগুলো বেশ দরকারি ৷ বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের কোর্সে চার সেমিস্টারের মধ্যে তিনটিতেই আমি আমার শিক্ষার্থীদেরকে গদ্য শৈলীর প্রাথমিক ধারণা দেই ৷ কেবলমাত্র চূড়ান্ত সেমিস্টারে আঙ্গিকের বিকশিত পর্যায় থাকে ৷
যদিও খুব দরকার নেই গদ্যশৈলীর চূড়ান্ত প্রশ্নে গল্পের শৈল্পিক বিকাশে ৷ অনেক বিজ্ঞ শেষ বিবেচনায় কোন ছাড় দেননি এই সকল শৈলীতে ৷ আমার মনে হয় কারও কারও কাছে সেসব দিকটি বেশ ঢাল আছে ৷ অপর দিকে সবসময় এটি সুখকর নয় এবং অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক দ্বন্দমুখর সম্পর্কও চূড়ান্ত প্রশ্নে ৷ বেশ নিরাপদ ও কম চাহিদার ফিকশনের ধরণটি ৷
অনেক শিক্ষকরা আমার মতামতকে নানান ভাবে চূড়ান্ত প্রশ্নে প্রকাশ করেছেন ৷ আসলে প্রায় পঠিত সব কিছুই প্রভাবিত করেছে আমাকে মেটাফিজিক্যাল ফ্যানটাসিয়াস ধারার লেখক হিসেবে গড়ে তুলতে ৷ কিন্তু আমাকে যদি বলা হয় শুধুমাত্র একজনের নাম বলতে আমি বলব ফিওদর মিখাইলোভিচ্ দস্তয়ভস্কি ৷ আমি বিগত দেড় বছর ধরে তাঁর সব ফিকশন পুনর্বার পড়েছি তৃতীয়বারের মত ৷ এ অভিজ্ঞতা ছিল, মনে হল আমি তাকে কখনও পড়িনি একবারেই সদ্য পঠন ৷ সেই ষাট শতকের প্রথম দিকের মতন ৷ আমার আছে বিচক্ষণ ও বিদগ্ধ চোখজোড়া তাঁর চমৎকার শিল্পকর্মের উপর ৷
মাইকেল মরিসনঃ বিংশ শতক জুড়েই বলকান অঞ্চল ভুগেছে রাজনৈতিক অভ্যুত্থানে, নৃতাত্ত্বিক স্থানচ্যুতি ও নৃসংশতায়, অর্থনৈতিক চরম বিশৃঙ্খলতায় পরিসূচকের ভিন্নতা থাকলেও আঙ্গিকগুলোকে একজন বহিরাগত হিসেবে কল্পনা করা বেশ কঠিন ৷ এসব নানান ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুগোস্লাভ ও সার্বিয়ান লেখকেরা তাদের গল্প ও উপনাসে এনেছেন ৷ যেমনঃ বরিস্লাভ পাভিকের The Houses of Belgrade, ভুক ড্রাস্কোভিকের Knife, ভ্লাডিমির আরসেনিঝেভিকের In the Hold এবং ফ্যান্টাস্টিকায় মিলোরাড পাভিকের Dictionary of the Khazars লেখায় ৷ তুলনামূলকভাবে লেখার চরিত্রেরা বৃহৎ অর্থে ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ৷ কিভাবে, সার্বিয়ার বিশৃঙ্খল অবস্থা কি প্রভাবিত করেছে তোমার লেখায় ? বৃহৎ আয়তনে এইসবগুলো ঘটনা পরিকল্পিতভাবে আপনার সৃষ্টির প্রক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা দেয় না ৷
জোরান জিভকভিকঃ সহজভাবে উত্তরে বলা যায় আমি অনুকরণপ্রিয় লেখক নই এবং সেইজন্য আমার বইগুলো বাস্তবতার মন্তব্য নির্ভর নয় ৷ এমনকি যখন বাস্তবতা আক্ষরিক অর্থে বেশ দমনরত বিংশ শতাব্দির বলকান অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে ৷ কিন্তু কিভাবে সম্ভব, যেকেউ অবাক হবে, এ অবস্থায় অনুকরণশীল লেখক নয় হিসেবে, কি করে শক্তিশালী ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জকে অবহেলা করি যেখানে অন্য সব সার্বিয়ান লেখকেরা সাড়া দিচ্ছে ?
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রায়ই এ প্রশ্নের সম্মখীন হই আমি ৷ কিছু সময়ের জন্যও সার্বিয়ান প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্য আমার এ ব্যপার নিয়ে কি করবে বুঝতে পারে না ৷ শতাব্দিকাল ধরে বাস্তবধর্মী ধারারা ফ্যান্টাস্টিক ধারার উপর ছড়ি ঘুড়াচ্ছে ৷ যা জাতীয় সাহিত্যের শিকড়ের প্রতিকূলে ৷ আমাদের নিজস্ব ফোকলোর এইসব ফ্যান্টাস্টিক ধারার অনুসঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ৷ এমনকি একাবিংশ শতাব্দির প্রারম্ভে একজন সার্বিয়ান লেখক জাতীয় ইতিহাস থেকে কোন উপসর্গ নিতে পারেন যা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৷
প্রথমেই তারা আমার বইগুলো অবহেলা করে ৷ যদিও ছাপান তবে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী হিসেবে তকমা লাগান ৷ তাদের অভিধানে এগুলো উপজাতি সাহিত্যের সঙ্গে সমার্থক ৷ ফলে বুঝা যায় তারা আমার কাজগুলো পড়েন না ৷ কিন্তু পর্যায়ক্রমে আমি সর্বাধিক অনূদিত তুলনামূলক সার্বিয়ান লেখক হিসেবে গন্য হচ্ছি ৷ এ মুহূর্তে ২১টি ভাষায় ৬১টি বৈদেশিক সংস্করণ হয়েছে আমার বইয়ের ৷ ফলে কার্যত উপেক্ষা করার মতন নয় আর অল্পসংখ্যক সার্বিয়ান লেখক বহির্বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছেন ৷ তাইতো বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক আমার ফ্যান্টাস্টিক লেখাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম বলে মনে করছেন ৷ অন্যদিকে জাতিয়তাবাদি ছোট অংশ কাজগুলোকে জাতিয় জনগুরুত্বপূর্ণ বলছেন সেসব বিগত ইতিহাস নির্ভর রূপান্তরকরণ যা অনূদিত হয়েছে ৷
একইভাবে মাঝে মাঝে বাইরেও বাঁধার সম্মখীন হয় ৷ কিছু সমালোচক এরা গতানুগতিক সার্বিয়ান লেখকের মত নয় বলে অনুধাবনে ব্যর্থ হন ৷ সাধারণত ১৯৯০ সালের দিকের সাহিত্যে বলাকান গৃহযুদ্ধোত্তর ধারার ব্যতিক্রমি আঙ্গিকধর্মী ৷ বিস্তারিতভাবে বললে তারা জানেন না আমি কোথাকার এবং সক্ষম হন না আমার গল্প ও উপন্যাসের মর্ম উদ্ধার করতে ৷ আমার অনুভূতি হয় তাদের নঞর্থকবাদিতা যা আমাকে অজ্ঞাত সাহিত্যের উপত্যকা থেকে আামাকে বিরত রাখে ৷
আমি বিশ্বাস করি এসব ভুল বুঝাবুঝিগুলো সৃষ্টিশীল ধারার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার শিকড় গজাচ্ছে ৷ খুব সাধারণভাবে বললে লেখক কখনও আঙ্গিক বাছাই করেন না ৷ আঙ্গিকই লেখককে বেছে নেন ৷ সর্বপুরি আমার ক্ষেত্রে এমনটাই হচ্ছে ৷ কোন সময় আমি আমাকে জিজ্ঞাসা করে কোন নতুন কাজে হাত দেই না ৷ যখন আমি লেখার টেবিলে যাই নতুন গল্প বা উপন্যাস লিখতে আমি খুব একটা জানি না সেটা সম্পর্কে ৷ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায় প্রায় অজ্ঞাত ৷ অবচেতনে কাজটি তখন সুসংঘটিত রূপ ধারণ করে থাকে ৷ অপেক্ষায় থাকি কিবোর্ডের মাধ্যমে মনিটরে প্রতিফলনে ৷ অপেক্ষারত আমি মূলত তখন শুধুই একজন মূদ্রাক্ষরিক বা টাইপিস্ট ৷ আর একজন আগ্রহী পাঠক তৈরী কি হচ্ছে সে সময়ে আমার অবচেতন মনে ৷ যাইহোক এসব রহস্যঘেরা কারণে অনুকরণহীন লেখা বের হয় আর সঙ্গে পাঠক হিসাবে আমার সন্তুষ্টি ৷
মাইকেল মরিসনঃ সার্বিয়ান জনগণ কিভাবে দেখেন সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ? আরো বিশতভাবে বললে সার্বিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপে এসময়ে ফ্যান্টাস্টিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?
জোরান জিভকভিকঃ পাঠকসমাজ কখনও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন না ৷ বেশিরভাগেরই কোন পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই ফ্যান্টাস্টিকা ফিকশনের অগ্রযাত্রায় ৷ মানুষেরা যা পছন্দ করে তাই পড়ে ৷ কেউ কেউ ফ্যান্টাস্টিকা পছন্দ করে না যা আদতে স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ৷ একাডেমি অব সাইন্স এন্ড আর্টস্, কিছু বিভাগ, সংস্থার তুলনামূলক সার্বিয়ান প্রাতিষ্ঠানিক ধারা যা বেশিরভাগ সর্বোচ্চ সাহিত্যচক্রে সীমাবদ্ধ ৷ আর এদের রক্ষণশীল অংশের প্রভাবে প্রভাবিত এসব ৷
তবে ফ্যান্টাস্টিকা ফিকশনের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলেছে সার্বিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপ জুড়ে ৷ কিন্তু বেশিরভাগ সীমাবদ্ধ বিদেশি অনবাদ কর্মের উপর ৷ যদিও স্থানীয় ফ্যান্টাস্টিকা ফিকশনের লেখকেরা বেশ উন্নতমানের ৷ তবে এদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হয় বিদেশি সর্বোচ্চ বিক্রীত বইয়ের সাথে যাদের মান যাই হোক না কেন ৷ সার্বিয়ায় আমার বইয়ের মূদ্রণ সংখ্যা কদাচিৎ দুই হাজারের উর্ধে যায় ৷ যেখানে গতানুগতিক পিঁশাচধর্মী উপন্যাস দশ হাজারের উপে যায় ৷ যা এখানে প্রায়ই দৃশ্যত ৷ কিন্তু এটাই স্বাভাবিক ৷ আসলে এটা বাহুল্য আমার কাছে, বিশেষায়িত ধারার একজন রচয়িতা হিসেবে ৷ পিঁশাচধর্মী উপন্যাসের পাঠকের কান নেই আমার গান শোনার নয়তো আমার কোন গান নেই তাদের কর্ণকূহরের জন্য ৷
স্থানীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠানেরা ফ্যান্টাস্টিকা প্রশ্নে সহৃদয়শীল নয় যথেষ্ট ৷ ফলে আশ্চর্য নয় যে ফ্যান্টাস্টিকা ধারার লেখক বেশ অপ্রতুল এখানে ৷ বর্তমানে আমি বোধহয় একমাত্র আন্তর্জাতিকভাব স্বীকৃত একমাত্র লেখক ৷ সৌখিন কিছু এ ধারার লেখকের লেখা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গৃহীত নয় ৷ যদিও তাদের কিছু বই আসলে বেশ মানসম্পূর্ণ ৷
মাইকেল মরিসনঃ জাতীয়তা ব্যতিত আপনি কিভাবে একজন সার্বিয়ান লেখক হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করবেন ? আপনার ফিকশনে এ পরিচয়টি কিভাবে সজ্ঞায়িত হয় ?
জোরান জিভকভিকঃ আমি নিজেকে অবশ্যই একজন সার্বিয়ান লেখক হিসেবে দেখি ৷ আমার মাতৃভাষা সার্বে আমি লিখি ৷ অপরদিকে আমি অবগত যে, অন্যদের মত আমি গতাণুগতিক সার্বিয়ান লেখক নই ৷ এ পর্যন্ত প্রকাশিত উনিশটি বইয়ের মধ্যে শুধু The Last Book বইয়ে চরিত্রদের নাম সার্বিয়ান ৷ অন্যদিকে আমার সকল বইয়ে কোন সার্বদের প্রকাশ ঘটেনি ৷ এ কারণটি আরো প্রকটতর হয় ফ্যান্টাস্টিকা ধারার লেখায় ৷ যা ফলে সাহিত্য প্রাতিষ্ঠানিক বোদ্ধারা আমার বিপক্ষে বিশেষ করে জাতিয়তাবাদি অংশটি ৷ বিশেষ করে ১৯৯০ সালের দিকে মিলসেভিকের শাসনামলে যা এখনও বর্তমান ৷ অবশ্য খুব শক্তিশালী নয় ৷
শুধু কোন সার্ব চরিত্রই নেই আমার গল্প বা উপনাসে সেখানে আরো নেই কোন অ্যামেরিকান, রাশিয়ান, চাইনিজ, ক্রোয়েট, এস্কিমো চরিত্রও ৷ আমার গল্প বা উপনাসে চরিত্রের জাতীয় পরিচয় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় ৷ এছাড়াও হয় তারা নামহীন নয়তো আন্তর্জাতিক নাম যেগুলো বহু ভাষায় ব্যবহৃত হয় ৷ সবশেষে, তাদের তরীর দিকফলক যথেষ্ট স্পষ্ট নয় বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যেও নয় ৷
আমার চরিত্রগুলোর এ রকম বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয় যখন ভালবাসা ও মৃ্ত্যুর উপর ভিত্তি করে আমার লেখায় ৷ এ দুটো প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপট ফিকশনের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যে ৷ আমাদের জীবনের অন্যতম দিকনির্দেশনা ও গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রেষ্ট আবেগ, দুই নৈতিকতাকে ভিত্তি করে আমরা ফিকশন লেখায় প্রথম প্রাধান্য দেই ৷
নৈরাশ্যগত ভাবে দেখা যায় মৃত্যু ছাড়া ভালবাসা হয় না ৷ মনে হতে পারে এরা অবিচ্ছেদ্য ৷ মুদ্রার উল্টো পিঠের মতই সৌভাগ্যের অপরদিক দুর্ভাগ্য ৷ কোন দর্শনগত, ধার্মিকতা বা বৈজ্ঞানিকভাবেই এ চূড়ান্ত দ্বৈততাকে সামাল দিতে পারে না ৷ শুধমাত্র শিল্পকলাই করতে সক্ষম ৷ সাহিত্যের সব শাখাই মানুষের এই ট্রাজিক গোপনীয়তার অন্তর্মূলে যেতে পারে ৷ আসলে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আবিস্কৃত সকল সাহিত্যকলায় আমরা এ দুই নিয়ে লিখে আসছি ৷ যা এখনও আমরা প্রকাশ রে যাচ্ছি ৷ এরা কখনও শেষ হবে না আর প্রকৃতপক্ষে এ মিথ্যাদের রয়েছে অন্তর্নীহিত গুরুত্ব সহিত্যে ৷
সবধরণের শিল্পকলার পরও আমারা আদতে মানুষ ৷ সংস্কৃতিক, ধর্ম, সামাজিক বা অন্য দিক বিবেচনার যেকোন প্রেক্ষিত হোক না কেন ৷ অপরদিকে যদিও আমার চরিত্রেরা প্রকাশ করেনা সার্ব বা অন্য কোন জাতিয়তাকে হয়তো ৷ এই জাতিয়তাহীনতার ফলে বিশ্বের সকল পাঠক আমার চরিত্রদের চিনতে পারে, বুঝতে পারে তাদের অবস্থা ও সমস্যা ৷
-------------------------পর্ব ২---------------------------
~~~~~~~~~~~~পরিবর্তনের পেশা~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
গবেষক, অনুবাদক, প্রকাশক থেকে ফ্যান্টাস্টিকার লেখক
মাইকেল মরিসনঃ আপনার পেশায় অনুপ্রবেশ ঘটে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর উপর গবেষণার জন্য বৃত্তি নিয়ে ৷ এ পর্বের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালে ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব সাইন্স ফিকশন’ বই প্রকাশের মাধ্যমে ৷ তিন বছর পর আপনার প্রথম The Fourth Circle উপন্যাস সার্বিয়ায় প্রকাশ পায় ৷ এরপর থেকে আপনার উনিশটি ফিকশন ছাপা হয় যারা আদতে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নয় ৷ The Fourth Circle উপন্যাস একটি পরিবর্তন পর্যায়ের কাজ যার পর থেকে পরবর্তী কাজের মধ্যে আর কল্পবিজ্ঞানের ছায়া দেখা যায়নি ৷ এটি লেখার সময় কি ঘটেছিল আপনার লেখার মধ্যে যাতে আপনার মনে হল কল্পবিজ্ঞানে আপনার লেখার গল্প কথন প্রকাশে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা যথেষ্ট নয় ?
জোরান জিভকভিকঃ The Fourth Circle লেখার সময় নানা ভাবে নূতন নূতন অভিজ্ঞতা হয় আমার ৷ যদিও সাহিত্য আমার জীবনে অপরিহার্য অংশ তবে যাবতীয় পঠনক্রিয়া শুরু হয় ছয় বছর থেকে যখন পড়তে শিখি ৷ এরপর আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ( তুলনামূলক সাহিত্য), প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থাপনা (থিসিস) একই সাথে অনুবাদক ( সত্তরের অধিক বই যার বেশির ভাগ ইংরেজি) জীবন, সম্পাদক ও প্রকাশক জীবন এবং সবশেষে ননফিকশন (সত্য কাহিনী অবলম্বনে) লেখা এ পর্যায়গুলোতে আমি কখনও গল্প উপন্যাসে হাত দেয়নি ৷ আসলে সেসব ধারণা আমাকে পেয়ে বসেনি ৷
আমি শুরু করি পয়তাল্লিশ বছর বয়সে ৷ প্রথম লেখা (“The circle.”) গল্পের ১ম বাক্য ১৯৯৩ সালের ফেব্রয়ারিতে দক্ষিণ সার্বিয়ার পর্বতের এক অবকাশকেন্দ্রে হঠাৎ করে ছোট্ট একটি ঘটনা ঘটে গেল ৷ আমি স্ত্রী মিয়া এখনও একজন শৌখিন স্কাইয়ার (উচ্চ পাহাড় থেকে লাফ দেওয়া) ৷ আমরা প্রতি শীতকালে তার প্রিয় কুপাওনিক পাহাড়ে যাই ৷ তবে আমি এর ভক্ত নই ৷ সময় কাটাই সকাল ও দুপুরে হেঁটে আর গ্রাণ্ড হোটেলের শূন্য লবিতে পড়াশোনা করে ৷
আমি আনন্দের সঙ্গে লেখার অপেক্ষায় থাকি তারপর হঠাৎ করে কোন সূর্যলোকিত দিনে ভর করে আমার উপর ৷ পড়ার বই বন্ধ করে চলে যাই কাছের বইয়ের দোকানে আর কিনে আনি খাতা ও কলম ৷ ফেরত আসার সঙ্গে সঙ্গে লিখতে বসে পরি ৷ ইতিমধ্যে মিয়ার ভ্রমণ শেষ হওয়ার মাঝেই শেষ হয় The Fourth Circle এর প্রথম অধ্যায় ৷
আসলে আমি অবাক হয়ে যাই আমার গল্প লেখায় ৷ আরো বিস্ময় মনে হয় যখন তার উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না ৷ ননফিকশন লেখার কৌশল থেকে অনেটাই ভিন্ন অভিজ্ঞতা ৷ ননফিকশন থেকে এর পদ্ধতি অন্য রকমের যেমনটা সেক্ষেত্রে আমি জানি কি করতে চাচ্ছি এবং তা কিভাবে করবো ৷ আর যখন গল্প লিখি বাক্যেরা থাকে ভাসমান গন্তব্য অজ্ঞাত আর সেই সাথে অদৃশ্য থেকে কেউ তাদের আমার জন্য নির্দেশ দিতে থাকে ৷
মাত্র চার মাস পরে The Fourth Circle উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে ৷ অনন্য অভিজ্ঞতা হয়, সত্যিকারের প্রথম ফিকশনের প্রেরণার উৎস ৷ কোথাও যেন আমার আনন্দময় নিঃশ্বাসের স্তর, আমার অস্বাভাবিক অজ্ঞাত নিজস্বতা, একটি জটিল সমন্বিত সম্মেলন ৷ গত শতাব্দির গড়ে উঠা আমার সাহিত্যের জ্ঞান নুতন কিছুতে রূপান্তর হচ্ছিল ৷ যখন প্রকাশের সেই মুহূর্ত আসল মনে হলো যেন আগ্নেয়গিরির অগ্নোৎপাত ৷ প্রায় যথার্থ কোন পর্বতের শীর্ষদেশে ৷
উপন্যাসটি লেখার সময় নিজেকে বিভক্ত করি ৷ একবার লেখকরূপে যে অবচেতনে কিছু ঘটাচ্ছে আবার পাঠকরূপে যখন লেখক টাইপিংয়ে বিরতি দিচ্ছেন ৷ (আমি টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে ডান হাতের শুধুমাত্র তর্জনি ব্যবহার করি ) ৷ তবে The Fourth Circleএর শেষ অধ্যায়গুলো লিখতে বেশ অস্বস্তিকর বেগ পেতে হয়েছিল ৷ শার্লক হোমসে্র সমাপ্তি ৷ যখন আমি বুঝতে পারছিলাম অযাযিত বহিরাগত কাঠামো ক্রমাগত মূল শৈলীতে সংযুক্ত হতে চেষ্টারত ছিল ৷
The Fourth Circle ছিল আমার বিগত চল্লিশ বছরের সাহিত্যের সাথে বসবাসের বিরুদ্ধাচরণ ৷ নিঃসন্দেহে প্রবাহিত শিকড় যারা কল্পবিজ্ঞানের প্রতিক্রিয়া ৷ কারণ হয়ত এই প্রকারের সাথে পনের বছরের সম্পৃক্ততা ৷ তবে আমি একে কল্পবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখতে চাইনি ৷ আসলে বাজারজাতকরণের কোন তালিকায় পরে না ৷ খুবই ছোট বিশেষায়িত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যা এক দশক পরে অ্যামেরিকা ও বৃটেনে বাজারজাত করা হয় ৷
The Fourth Circle কল্প বিজ্ঞানের অনুসঙ্গগুলো ভীতিকর বা অস্তিত্বহীন আমার উনিশটি ফিকশন বইয়ের অপেক্ষা ৷ আমার অভ্যাস অপেক্ষা কল্প বিজ্ঞানের বইয়েরা কম গুরুত্বপূ্র্ণ ৷ জীবনের দীর্ঘ ও ফলদায়ক অংশ অপেক্ষা এগুলো প্রতারণার মত হতো ৷ বিংশ শতাব্দির শেষ অর্ধাংশের ফ্যান্টাস্টিকার দুইটি ধারার মধ্যে কল্প বিজ্ঞান অন্যতম ৷ অপরটি অবশ্যই যাদু বাস্তবতা ৷ কিন্তু আমার কাছে মনে হয় কল্প বিজ্ঞান তার শীর্ষক্ষণ পেরিয়ে গেছে ফলে এখন আর পারবে না ভূমিকা রাখতে ফ্যান্টাস্টিকার কোন গৌরবোজ্জ্বল পথচলায় ৷
মাইকেল মরিসনঃ পরিস্কার বুঝলাম The Fourth Circle অনেক শিক্ষণীয় পথে এসেছে ৷ বিস্তারিত বলবেন কি আপনার সৃজনশীলতার পদ্ধতি ? কিভাবে গল্পেরা তৈরী হয় ? কিভাবে গল্পের পথকে উন্নতি করেন ? বৃহৎ অর্থে কিভাবে আপনার কাজগুলো মূল্যায়ন করেন ?
জোরান জিভকভিকঃ একজন ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রায় শিক্ষার্থীরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে কিভাবে আমি ফিকশন লিখি ৷ আমি ভাবি এই প্রশ্নে তারা কিভাবে সত্যিকারের উৎসাহ পাবে ৷ তাদের দিক থেকে এভাবে ভাবতে বাস্তবতা খুঁজে পাই ৷ তাদের কারণগুলো এভাবে ভাবা যায় আমাদের শিক্ষক যে নাকি একইসাথে সফল লেখক ফলে তার প্রদর্শিত পথে আমরাও ভাল গল্প তৈরী করতে পারবো ৷
ব্যখ্যা করি তাদের কাছে যতটুকু পারি সেই সাথে যোগ করি শেষে এগুলো আসলে ভিত্তিহীন আমার কাছে (এমনকি অন্য কোন লেখকের কাছেও) ৷ প্রথমত কোন চমকই নেই আমার লেখার পদ্ধতি ৷ আসলে কোন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই লেখার ৷ কোন মাধ্যমেই আসলে চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে না নুতন ফিকশনে ৷ এটা কোন বিষয়ই না কোন সংক্ষিপ্ত পথে বা কন্টকসম দীর্ঘ পথ শেষে তোমার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো ৷ প্রত্যেক লেখকেরই তার নিজস্ব পদ্ধতি থাকে ফিকশন রচনায় ৷ আমার পদ্ধতি ব্যতিরেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরী পথ বানাতে পারবে ৷ এভাবেই একদিন তারা সফল হবে ৷
আমার সব ফিকশনের বইয়ের জন্ম একইভাবে ৷ যাবতীয় সবকিছু যা অনুভূত হয়, শোনা যায়, অভিজ্ঞতা লাভ হয়, পঠিত হয়, সর্বোপুরি জ্ঞাত হয়ে সঞ্চিত থাকে এসবে আমার জমা থাকে নীরবে ৷ আমার অতিতের সবকিছুই জমা থাকে ক্রমাগত ভাবে নুতন করে কিছুই নয় ৷ শেষে এমনটাই আমি কল্পনা করি কর্মে নিয়োজিত সৃজনশীলতাকে যা ব্রহ্মাণ্ডের সুস্থির ও মহামূল্যবান ৷ সজ্ঞানেই আসলে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই এর উপর ৷ এমনকি ভিতরটিকে আঁকতেও পারি না যে কিভাবে এটি কাজ করে ৷ কিন্তু যতক্ষণ এটি কাজ করে ততক্ষণ বিস্মিত হয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করি ৷
যদি একবার সৃজনশীল ভারসাম্য পৌঁছায় অবচেতনে মনে ছবি ফুঁটে উঠে যা থেকে ভবিষ্যতের গল্প বা উপন্যাসের সূচনা বাক্যে রূপ লাভ করে ৷ এটি সাধারণত সকালের দিকে ঘটে যখন আমার মন চূড়ান্ত শুভ্রতায় থাকে ৷ তারপরই কম্পিউটারে লিখি কারণ হয়ত প্রেরণা হারিয়ে যেতে পারে ৷ কিন্তু চূড়ান্তভাবে আমার অভিজ্ঞতায় বলে যে এটি বিস্তারিত নয় ক্ষণিকের ঝলক মাত্র ৷ ফিকশনের পুরোটাই অবচেতনে অঙ্কিত হয়ে যায় যা থাকে চিরস্থায়ী হয়ে আর ধীরে ধীরে লিখিত রূপ নিতে অপেক্ষারত থাকে ৷
আমি সতর্ক থাকি যা সম্পূর্ণই অভূতপূর্ণ কিন্তু আমি কখনই আমার ফিকশনের পুনঃপাঠ করি না ৷ কিছু বানান ভুল থাকলেও আদতে প্রথম রূপটি চূড়ান্ত সংস্করণ ৷ প্রথমদিকে আমি দ্বিধাগ্রস্ত থাকতাম ৷ আমার যত সাহিত্যজ্ঞান থেকে মনে হয় কিছু ক্ষেত্রে পূণঃমূল্যায়ন দরকার ৷ কিন্তু কিছুতেই প্রাথমিক খসড়া থেকে অগ্রগতি করতে পারি না ৷ উনিশটি ফিকশন প্রকাশের পর মনে হয় এখন সময় এসেছে ফিকশন লেখা বন্ধ করার আবার মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত ৷
আমার সৌভাগ্য যে, আমি একজন বিশ্বস্ত প্রতক্ষ্যদর্শী পেয়েছি এ ক্ষেত্রে ৷ এলিস কোপলতশিক- Time Giftsএর র থেকে আমার সতেরটি বই অনুবাদ করেছেন ৷ প্রথম থেকেই একই সূচিতে কাজ করছি লেখা ও অনুবাদ একই সমান্তরালে ৷ যখনই গল্প বা উপন্যাসের কোন অধ্যায় লেখা শেষ করি সাথে সাথে ইমেইল করে দেই তাকে তারপর সে অনুবাদ করতে থাকে ৷ এবং আমি হাত দেই পরের অধ্যায়ে আর এভাবেই চলতে থাকে শেষ পর্যন্ত ৷ আমি তাকে কখনই বলি না পুনঃমূল্যায়ন করতে আদতে তার কোন প্রয়োজনই নেই ৷
মাইকেল মরিসনঃ আপনি যেমনটা বললেন তা আমাকে বিস্মিত করে দিল ৷ আপনার লেখায় বাক্য বিন্যাস অনেক জটিল ৷ প্রায়ই একের অপরের সাথে সংযুক্ত ও টীকাসম্পৃক্ত ৷ মাঝে মাঝে আন্তঃলাইনের সাথে পরস্পর ক্রিয়াশীল ৷ বৃহৎভাবে বললে প্রত্যেক বাক্যে আপনার ফিকশনগুলো ব্যতিক্রমি যথার্থ ৷ কোন শব্দ অপ্রয়োজনীয় নয় ৷ রূপকল্পে বিস্তারিত ফুঁটে উঠে চরিত্র ও আঙ্গিক ৷ অনেক বাক্য বেশ ছান্দনিক ৷ কিভাবে আপনি এই সক্ষমতা বুঝেন ? আপনার দক্ষতা গণিত ও দাবার সাথে তু্ল্য যা নির্দিষ্ট ছকে বাধাঁ ৷
জোরান জিভকভিকঃ বলা উচিৎ আপনার ধারণা প্রায় সঠিক ৷ যদিও আমি উল্লেখ করেছি আমার অক্ষমতা পুরো সৃজনশীলতার কর্মযজ্ঞ বুঝাতে ৷ কোন এক পর্যায়টি হয়তআসে যা গণিত ও দাবার ছকের সাথে সম্পৃক্ত ৷ যুবক কালে আমার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল এসব ক্ষেত্রে ৷ সম্ভাবনা থাকলেও গণিতবিদ বা দাবাড়ু না হয়ে লেখক হয়ে গেলাম ৷ মাঝে মাঝে নিজেকে খারাপ লাগলে পরিবর্তনকে দোষ দেই না ৷
মাইকেল মরিসনঃ সারাবছর ধরে আপনি সাহিত্যের উপর বাজারের প্রভাবকে তীক্ষ্ণস্বরে মন্তব্য করে আসছেন ৷ আপনার কি মতামত সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের প্রভাব সম্পর্কে ? কি কি উন্নয়ন আপনার কাছে মনে হচ্ছে হ্যাঁ বা না সূঁচক অর্থে ?
জোরান জিভকভিকঃ আমি বেশ সজাগ যে, বাজার ব্যবস্থাপনা অনেক কার্যকর মানুষের অনেক প্রবৃত্তির উপর ৷ কিন্তু পুরোটাই নয় ৷ অনেকের মাঝে প্রকাশনা শিল্পের দিকে তাকালে দেখা যায় আর সবার মতন খরচের প্রতিকূলে লাভ বিবেচ্য ৷ অনেককিছুর সফলতা নেই শুধু সাহিতাঙ্গনের ক্ষুদ্রাংশ বাদে ৷ এ অবস্থাকে সাধারণ সমিকরণে প্রকাশ করা যায় অদরকারি সমান জনপ্রিয়তা সমান বাজারজাতকরণ যোগ্য সমান লাভ ৷ শেষ বিশ্লেষণে তারাই পঠনযোগ্য যারা প্রতিনায়ক স্বরূপ তারা হল বাজার নিয়ন্ত্রণকারী ও সাহিত্যের প্রচার প্রতিনিধিরা ৷ অ্যান্না ক্যারেনিনা অবশ্যই এদের ব্যতিক্রম এ ক্ষেত্রে ৷ (The Book বই বিশ্বের প্রকাশনী শিল্প বিষয়ক ৷ )
আমার প্রধান উচ্চাকাঙ্ক্ষা হলো ধনী হওয়ার লক্ষ্যে সর্বাধিক বিক্রীত লেখক না হওয়া ৷ আমার ফিকশনের সবসময় নির্দিষ্ট পাঠককূল আছে ৷ বাজার বৃদ্ধির করার জন্য এ প্রবৃদ্ধিতে আমার কোন প্রয়াস নেই বা পাঠকের সংখ্যা বৃ্দ্ধি করা ৷ (যদিও আমি চাইতাম হয়ত পারবো না ৷ ) পাঠককে দেওয়ার জন্য আমি সংখ্যা থেকে মানবৃদ্ধিতে উদ্যোগী ৷ আমার আদর্শ মানসম্মত পাঠক যদিও সংজ্ঞায় এরা সীমিতসংখ্যক ৷
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রকাশক খোঁজার আমার প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে ৷ আমার ফিকশনগুলো প্রকাশনা শিল্পের চাহিদা উপযোগী নয় ইংরেজি ভাষার জন্য অন্ততঃ নয় ৷ এদিকে আমি একজন বিদেশি লেখক ৷ কিন্তু আমার অভিযোগের কোনো কারণ নেই ৷ নিকট সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ছোট প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে ৷ আমি সত্যিই গর্বিত সুন্দর সংস্করণের জন্য ৷
অস্তিত্বের আন্দোলনে ছোট ও স্বাধীন প্রকাশনকে বিশেষভাবে দেখি ৷ তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ও দয়াহীন তবে অবশ্যই দুর্বলতামুক্ত নয় ৷ ছোট প্রেসগুলো মানসম্পূর্ণ সাহিত্য প্রকাশ করে যার মধ্যে আছে অনুবাদ ৷ এদের উপর বাজার অবশ্য ভাগ্যক্রমে নিয়ন্ত্রকেরা নেই ৷ সেই সাথে প্রয়োজনও নেই সাহিত্য এজেন্টদের ৷ তারা এমনকি বেরও করতে পারে অ্যানা ক্যারোনিনা ৷
মাইকেল মরিসনঃ টেকনোলজি সম্পর্কে কি ভাবেন বিশেষ করে ইন্টারনেট ও ইবুকের ব্যপারে ? কিভাবে দেখেন ইমিন্যান্ট রিপাবলিকাশনকে নিয়ে যেখানে তারা আপনার বেশ কিছু বইয়ের ই-বুক বের করেছে ?
জোরান জিভকভিকঃ নানাভাবেই ডিজিটাল বই বিপ্লবী সূচনা ৷ কোন সন্দেহ নাই একটি ই-বুক কাগুজে বই অপেক্ষা অনেক সুবিধাজনক ৷ আগের যুগান্তরী বিপ্লব থেকে অনেক বড় পদক্ষেপ এক্ষেত্রে ৷ যখন হাতের লেখা বই থেকে ছাপানো বইতে আসে ৷ এটি আসলেই চমকপ্রদ গোটা লাইব্রেরিটাই ছোট ডিভাইসে এটে পুরে নেওয়া যায় ৷ এ পর্যন্ত এটাই শেষ বিপ্লব ৷
যদিও বিপ্লবী ঘটনা এটি আসলে ফর্মের পরিবর্তন, আঙ্গিকের নয় ৷ এর নানাবিধ ফিচার সত্ত্বেও ডিজিটাল বই আসলে একটি বই-ই ৷ বক্তব্যের সংরক্ষণাগার ৷ সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য খুব চমৎকার আর আগ্রহমূলক ৷ যদিও ভেতরে কিছু না থাকলে পুরোটা বৃথা ৷ আসল আঙ্গিক হলো বক্তব্যের গুণাগুণ ৷ কি পড়ছি সেটা, কিভাবে পড়ছি সেটা নয় ৷ সেকেণ্ডহ্যান্ড ব্যবহৃত অ্যান্না ক্যারেনিনা সুদৃশ্য একখানা ডিজিটাল ফিকশন অপেক্ষা বেশি মূল্যবান ৷
এই সাক্ষাৎকার বের হওয়ার সময় গত শতাব্দিতে আমার প্রকাশিত সাতটি বই পিএস প্রকাশনী বের করেছে ৷ এছাড়াও আছে The Fourth Circle ও The Ghostwriterএর ডিজিটাল সংস্করনে ৷ বাকি আছে Only Hidden Camera ও The Five Wonders of the Danube এর মধ্যে ৷ এখন দেখা যাক আমার ই-বুকে পাঠক কি সাড়া দেন ৷ ভবিষ্যতে এ রকম উদ্যোগে আমার উৎসাহ থাকবে ৷ আমি এখনও বুড়ো বা রক্ষণশীল হয়ে উঠেনি যে, বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকব সব ভাল কিছু অতিতের ৷
সূত্রঃ জোয়ান জিভকভিকের নিজস্ব সাইট
কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল
(সংক্ষেপিত, পরে আরো সংযোজন করা হবে)
**__++**__++**__++**__++**__++**__++**__+