মাঝে মাঝে নাইজেরিয়ান লম্বা ছেলেটা হোটেলের মদের বারে বসে বোতলে চুমুক দেয় আর গান ধরে। প্রতি চুমুকে গানের ভাষা ভারি একটা বাশ ফাটানো আওয়াজ তোলে।তাদের ভাষা বুঝি না তবুও কেন যেন মনে হয় এই আওয়াজে কষ্ট আছে , আছে শত যন্ত্রনা।
কানাডার লিও ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছে, হারিয়েছে এই জন্যে বললাম তাকে ছেড়ে মা চলে গেছে।সেও বলে " আই লস্ট মাই মাদার"।
সেও মাঝে মাঝে জানালার পর্দা সরিয়ে বরফের শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ফ্রান্স থেকে আসা পিয়েরো কেমন যেন একটু বেশি চটপটে। সারাদিন হেড ফোন কানে লাগিয়ে হেলেদুলে চলে। র্যাপারদের সাইড মিউজিকে একটু বেশিই শরীর দুলায়। তবুও গত দুই দিন আগে তাকে রাত্রে নিরবে কাঁদতে দেখেছি।
বেচারা পাকিস্তানি। পরিবার নিয়ে হোটেলের একটা রুমে থাকে । ছোট্ট একটা ফুট ফুটে মেয়ে আছে।মেয়ের বয়স বড় জোর ছয় বছর হবে।
গত অটাম ফেস্টিভেলে সবার আনন্দের মাঝে এই ছোট্ট মেয়েকে তার বাবা সামনে কোলে করে এনে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি গান ধরল। উর্দু ভাষার গান বিশাল হল্ রুমের চারদিকে ছড়িয়ে গেল। তার বাবা গিটার নিয়ে পাশে বসে সুর দিল।
ভালই লাগছিল সবার। একটু পরে সামনে বসে থাকা মা কেঁদে ফেলল। এই আনন্দের মাঝে মায়ের কান্না বেমানান ছিল ।মা ওড়নায় মুখ ঢেকে সামনের গেট দিয়ে বাইরে গেল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে মায়ের কান্নার দিকে তাকিয়ে রইল। গান শেষে ক্ষমা চেয়ে নিল মেয়ের বাবা। গানটা ছিল পাকিস্তানে পেশোওয়ারে জঙ্গি হামলায় নিহত ছোট্ট মেয়েটার ভাইয়ের জীবনের সব চেয়ে প্রিয় গান। এই গানটা হামলার আগের দিন রাত্রে মাকে ফোন করে শুনিয়েছিল ছেলেটা।
জগতে যে বেশি উচ্ছল, যে বেশি সুখি সেই বেশি দুখি।বুকের ভিতর তারই বেশি কষ্ট লুকিয়ে থাকে। সেটা কখনো মদের বোতলের এ্যালকোহল হয়ে আসে, কখনো র্যাপারের মিউজিকের পর নিরব রজনীর অশ্রু বিন্দু হয়ে আসে, কখনো বা বরফ পরার সুন্দর্যের মধ্যে আবিষ্কার হয়, কখনো শত আনন্দের মাঝে কোন শিশুর গানের মাধ্যমে আসে।
জগতে মানুষের আনন্দ প্রকাশের ভাষার অভাব নেই।চলতে ফিরতে যখন যেখানে ইচ্ছা আনন্দ প্রাকাশ করতে পারে,কিন্তু আনন্দ প্রকাশের কোন বৈচিত্রতা নেই।পক্ষান্তরে দুঃখ প্রকাশ করার ভাষার অভাব আছে কারন ভাষা একটাই- কান্না কিন্তু বৈচিত্রতা্র কোন অভাব নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:০১