আমরা থাকি একটা গন্ডির ভিতরে। সংকীর্ণ একটা দেশে । যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে অথবা একটা মেয়ে একটা ছেলেকে হায় মারলে জাত চলে যায়। চার দিকের মানুষ ভাবে এই বুঝি দুই জনের ভিতর কি হয়ে গেলো। একটা মেয়ে রাস্তায় বের হলে এমন ভাবে তাকে দেখা হয় যেন তাকে খেয়ে ফেলবে। কাপড় যদি একটু টাইট থাকে তাহলে তো কথাই নেই, তাকে নিয়ে অনেকে নির্জনে যাওয়ার চিন্তা করে বসে। আমরা ছোট থেকেই নারীর আব্রু আর ঢিলে পোষাক দেখে দেখেই বড় হয়েছি তাই রাশিয়া, ফ্রান্স, ইউ এস এ, চীন ইত্যাদি দেশে আসলে তাদের যখন ছোট পোশাক দেখি তখন আর মাথায় কাজ করে না । এই তো গত কয়েকদিন আগে চীনের গুয়াংজু থেকে ঘুরে এলাম। দেশ থেকে আমার বন্ধু ফোন দিয়ে বলল তার দুই জন পরিচিত ছেলে আছে চীনের প্রযুক্তি বিস্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, তাদের সাথে একটু দেখা করে যেন রাশিয়াতে ফিরি। এ বছরে জানুয়ারিতে তারা চীনে এসেছে।
চাকুরীর প্রয়োজনে চীনে যাওয়া। ছেলে দুই টাকে সাথে নিয়েই গিয়েছিলাম । ছেলে দুই জন পাশে থাকলে অগত্য চলে যেতে বলে ঠিক হয় না। এখন চীনে সামার সিজন চলে । মেয়েরা সবাই ছোট পোষাক পরে রাস্তায় বের হয়। আমার এক পরিচিত চাইনিজ আছে , চীনে গেলেই তার সাথে ঘুরতে বের হই। এবার তার পরিবার সহ বের হলাম।তার দুই টা জমজ মেয়ে আছে । দেখতে খুবই কিউট। বয়স ষোল, সতের বছর হবে। মেয়ে দুই টা ইংরেজি তেমন একটা বলতে পারে না , এটা তাদের জন্যে একটা বড় লজ্জা। তাই সব সময় তাদের বাবার পাশেই থাকে, যত জিজ্ঞাসা বাবাকে দিয়েই করায়। আমার সাথে দু জন ছেলে আছে, এই টা চাইনিজ ব্যাক্তিকে আগেই জানিয়ে রেখে ছিলাম। উনি অভিনন্দন জানিয়েছিল।সামার সিজনে মেয়ে দু টা ছোট টি- শার্ট আর হাফ প্যান্ট পরে বের হয়ে ছিল। আমাকে আঙ্কেল সম্বধন করে।
কেন যেন মেয়ে দুই টা অস্বস্তি বোধ করছে। আমাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে । ভাল করে লক্ষ করলাম আমার সাথের ছেলে দুই টা তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । এ ভাবে তাকিয়ে থাকা কেউ সহজ ভাবে নিবে না। বার বার তাদের দৃষ্টি শুধু পোষাকের দিকেই যাচ্ছে । সৈকতের পাশে এভাবে পোশাক পরা মেয়েরা আরও আছে কিন্তু তারা একটু দূরে। আমি নিজেই লজ্জায় পরে গেলাম।না জানি পরে মেয়েরা আমার সম্পর্কে কি ভাববে।
একপর্যায়ে ছেলে দু জনেরে কথা শোনার চেষ্টা করলাম। বাতাসে কথা গুলো আমার কানে আসছে । মেয়ে দুই টা বাংলা বুঝলে হয়ত এতক্ষনে আমাকে ইজ্জতের চরম মুল্য দিতে হত।
শুধু এ দু জন ছেলে না। আমার দেশ থেকে অনেক বড় মাপের ব্যাক্তিদের বিদেশে এসে নারী কেলেঙ্কারীতে পরতে দেখেছি। তারা আমার দেশের মতো বিদেশের নারীদের সহজ লভ্য মনে করে। সর্ট পোষাক দেখে হাত দিতে ইচ্ছে করে।
আমরা আমাদের মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে পারলাম না । একটা দেশ কে পরিবর্তন করতে হলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন খুব জরুরী।
বাৎসরিক মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, আর সাত তলা থেকে বিশ তলা কংক্রিটের গাথুনি কখনো একটা দেশকে পরিবর্তন করতে পারে না । আগে দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাতে হবে।একটা মেয়েকে আমরা মেয়েই ভাবি, যতক্ষণ একটা মানুষ ভাবতে না পারব, ততক্ষণ উন্নতি সম্ভব না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৬