সাঁই সাঁই করে ছুটে যাওয়া শানদার একখান শকট। ভেতরে ঝকঝকে পোশাকে স্মিতহাস্যধারী একসার আদম। অপ্রত্যাশিত দ্রুততায় পৌঁছে যায় প্রত্যাশিত গন্তব্যে। ভরপুর তৃপ্তিতে মাথা উঁচিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে আলোকিত শহরে। সম্মানিত, সুশোভিত এক বা একাধিক নারী এবং স্বর্গীয় ছাঁচে গড়া তুলতুলে শিশুর দল সহাস্যে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে ফেলে নিমিষেই। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের কলকল কল্লোলধবনি শুনতে কান পাততে হয়না। তারপর কেউ কেউ হারিয়ে যায় অই দূর পাহাড়ের ঘন্টাধবনি লক্ষ্য করে। কারো বাসনা জাগে প্রেয়সীর গায়ে লুকোনো চাপ চাপ হাল্কা সুবাস আরো নিবিড়ভাবে পরখ করতে। আরেকদল উদরপূর্তিকেই রাখে অগ্রগণ্য। তীব্র উপভোগ, বিশুদ্ধ উপযোগ, প্রবল জীবনবোধ এই নিয়ে বেশ আছে অনুপম শহরবাসীরা।
তারা এই শহরের বাসিন্দা, বান্দা নয়। শহর তাদের গোলামী করতে শেখায়নি। শেকলে বেঁধে বাধ্য করেনি জন্তুরূপী জীবনযাপনে। ধুঁকে ধুঁকে চলতে থাকা নিরানন্দ এক যানে চড়িয়ে পাঠায়নি দাসত্ব করতে। জানালার ঘোলা কাঁচে এঁকে রাখেনি ভয়াবহ বিষন্ন একসার জীর্ণ মুখোচ্ছবি।
অনুপম শহরের নাগরিকজীবন অভিশপ্ত শহরবাসীদের মত নয়।
অভিশপ্ত নগরের আদমকুলের অনির্দিষ্টযাত্রা ফুরোয়না এ জীবনে। তারা চলতে থাকে কলের পুতুলের মত, কলুর বলদের মত। শহরে তাদের একটাই মুখোশ- পরাজিত এক দাসের গ্লানিময় অবয়ব। চোখের কোনা বেয়ে ঝরে পড়ে তরল ক্লান্তি। গোলকধাঁধাঁর চক্রে পড়ে প্রতিনিয়ত পথ খুঁজে দিশেহারা মানবেরা সেই কবে প'রে নিয়েছিল নিরাশার জোয়াল, মনে নেই কারো!
তবু অবিশেষ কোনো গুমোট সন্ধ্যায় অথবা ভীষন একঘেয়ে কিছু ঘানি টানা মধ্যাহ্নে, আর বিক্ষিপ্ত কতক ঘুনে ধরা রাত্রিপ্রহরে তারা স্বপ্ন দেখে। এক টুকরো সাহস তারা সন্তর্পণে বাঁচিয়ে রাখে স্বপ্নবচন উচ্চারনে। তারা আলোচনা করে কাব্য ও দর্শন। চর্চা করে ইতিহাস, বিজ্ঞান। গড়ে তুলতে চায় আরেকটা অনুপম শহর। দূরের অই সুরেলা আওয়াজ, টুকরো টুকরো রিনিঝিনি হাসির লহরী বুভুক্ষ করে তাদের মুক্তির স্বাদ পেতে। অভিশপ্ত নগরের সবাই আর মন্ত্রবন্দী শ্রমিক-প্রজা আর দাস নয়। তারা কেউ কেউ আজ পূজারী ও ভাস্কর।
পূজারী স্বপ্নের; ভাস্কর মুক্তির।