একেকটা দিন আসে ব্যস্ততার টুং টাং ঘন্টা বাজিয়ে... ছোট্টবেলার সেই আইসক্রীম চাচার মত।। আলতো পায়ে এলেও কেন যেন ঘরের দোরে এসেই পাগলা ঘোড়ার মত ছুটতে শুরু করে। তারপর সেই পাগলা ঘোড়ার ন্যাজটা ধরে হাঁচড়ে পাঁচড়ে বেরিয়ে পড়া...।
ছাতাটা ব্যাগে ভরো রে,
ডোরটা লক করো রে,
একটা রিক্সা ধরো রে,
ময়নাকে খাইয়েছ? চাবিটা নিয়েছ? আর শপিংয়ের লিস্টি? এই যাহ, ভুলে গেছ? কী হবে এখন! ফোন নিয়েছ, মুঠোফোন? হেডফোন? ইস, ভারী ভুলোমন...
ঘর পেরুলেই যেন তেপান্তরের মাঠ! বিশাল একেকটা দৈত্য আসে কোট্টা অস্ত্র নিয়ে। আসে দশ মাথাওয়ালা রাবন, আসে ইয়া বড় এক গদা হাতে শক্তিশালী ভীম, ছোট বড় রাক্ষস-খোক্কস, শাকচুন্নী, মামদো ভূত আর তার সাঙ্গো-পাঙ্গো!
জ্যাম, ভীড় ঠ্যালা-ঠ্যালি, ঝগড়া-কাইজ্জা, বজ্জাতি, পকেটচুরি, উফ, মাগো! সত্যি যেন এক কুরুক্ষেত্র! সব দানোদের হটিয়ে- হারিয়ে, লড়াই করে তবেই না কর্মসিদ্ধি...
সারাদিনের ডিউটি সেরে সূর্য নামেন পাটে। ঝালমুড়ি মামার টিমটিমে কুপির কাছে একটু, রাস্তার পাহারাদার হলদে ল্যাম্পের কাছে কিছু আর অই, অই দূর আকাশের অযুত-নিযুত তারার কাছে আরকিছু আলো জমা রেখে ঘুম পাড়েন সূর্য মিয়া।
যুদ্ধ শেষে কতকটা জয়ের- বাকিটা হেরে যাবার গল্প নিয়ে ঘরে ফেরে কেউ কেউ। শীতের গন্ধ এসে ঢুকে যায় নাকের ফুটোয়... মগজের ভেতরে সিগন্যাল যায়--- কাল থেকে অবশ্যি অবশ্যি শালটা নেবে ব্যাগে, কেমন? নেবে তো? যা ভুলোমন!
ছাতিম ফুলের গন্ধটা দারুচিনির কথা মনে করিয়ে দেয়...।
সেই সাথে কারো ম্রিয়মান স্মৃতি... কোনো এক শীতে শালের ওম ভাগাভাগি...
"তোমার গায়ের গন্ধটা না, উমম, একটা ফুলের মত।... জানো, কী ফুল?
হাসবে না তো?... ছাতিম, চেনো?... হাসছ কেন? আমার প্রিয় ফুল, বিশ্বাস করো...।
প্লিজ হেসো না......প্লিইজজ।।"
কানে বেজে মিলিয়ে যায় রিক্সার টুং টাং বেল-এর শব্দে।
নাহ, মনটা একেবারেই ভুলো নয় তবে!
নইলে এত বছর পরেও...!!!!
সে'জন হারিয়ে যাবার এতো বছর পরেও?