আমার ব্যক্তিগত মুল্যায়নে কোটা আন্দোলন একটি ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই তথাকথিত কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে সুক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। যার ফলাফল হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তরুন প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। নিজের দেশের প্রতি তরুন প্রজন্মের মধ্যে অনাস্থার বীজ সুকৌশলে রোপন করা হচ্ছে।
তরুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবিশ্বাস, অবমাননা বা স্বাধীনতার মুল্যবোধকে মুছে ফেলার কাজ খুবই পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে। প্রথমেই সৃষ্টি করা হলো প্রচুর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে বীর মুক্তিযোদ্ধার ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছে। এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আবার ভাতাও প্রদান করা হয়েছে। এদের সংখ্যা কত জানেন? আট হাজার।
খানাপিনা শেষ! পেট ভরে গেছে, এখন বলা হচ্ছে এই আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা উদ্ধার করা হবে। যেদিন টাকা উদ্ধার করে গেজেট দিবে, তার আগে পর্যন্ত এই গল্প আর আরব্য রজনীর গল্পের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। ফলে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে তরুন প্রজন্মের বয়েই গেছে। গত কয়েক বছর আগেও যা অকল্পনীয় ছিলো সেটা আজকে বাস্তবে চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে।
এই দেশে সম্মানজনক দুর্নীতি করার উপায় হচ্ছে সরকারী চাকরী। আপনি দুর্নীতিও করতে পারবেন আবার সরকারী চাকুরীজীবি হিসাবে সম্মানও পাবেন। সেই পরীক্ষাকেও দুর্নীতি খেয়ে ফেলেছে। ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ২০ হাজার টাকার চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। আমাদের নীতি নৈতিকতাকে এমন জায়গায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে যে, আপনার বিবেক ভুলেও আপনাকে প্রশ্ন করবে না ২০ হাজার টাকার চাকরিতে আপনি ১৫ লাখ টাকা কোথায় পাবেন? মানুষ ভাবতো, বিসিএস পরীক্ষা বুঝি কলংকমুক্ত – এখন জানা গেলো, সেখানেও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।
একটা সময় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। তখন ছাত্রদের ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলার সময় অনেকেই বলেছে তারা বিদেশে যেতে চায় না বা গেলেও তারা ভালো ডিগ্রি নিয়ে চলে আসতে চায়। বর্তমানে আপনি বিভিন্ন ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে দেখবেন – মানুষ কিভাবে পাগলের মত দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অবস্থাটা এমন যে, মানুষ ভারতের ভিসা পেয়েও কয়েকবার আলহামদুলিল্লাহ বলে ভিসার ছবি আপলোড করে।
কেন কোটা আন্দোলনকে আমার ঘরোয়া আন্দোলন বলে মনে হয়? কারন এখনও কোন হেলমেট বাহিনীর দেখা পাওয়া যায় নি, এখনও পুলিশ শান্ত, কোন লাঠি পেটা নেই, টিয়ার গ্যাস নেই। তবে আমি আজীবন তরুনদের শক্তিতে বিশ্বাস করি। হয়ত শেষ পর্যন্ত কোন মিরাকেলের বিশ্বাস করে যাবো। একমাত্র তরুনরাই পারে দেশের উপর যে কালো জাহিলিয়াতের ছায়া পড়ছে, সেটা থেকে উদ্ধার করতে। নইলে আমি এই দেশের কোন ভবিষ্যত দেখি না।
মনে রাখবেন আমাদের বাবা চাচা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলো বা যারা এই দেশের স্বাধীনতার সাথে যুক্ত ছিলো, তাদের মোরালিটি ছিলো, নীতি নৈতিকতা ছিলো, আদর্শ ছিলো। আর আজকে আমাদের তরুনদের আদর্শ মাদক, অশ্লীলতা, দুর্নীতি দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। একমাত্র নীতি নৈতিকতা আর বুকে আদর্শ থাকলে নিজের দেশের বিপদে যুদ্ধ করা যায় কিন্তু নীতি নৈতিকতা ধ্বংস হয়ে গেলে বা বুকে আদর্শ না থাকলে যুদ্ধ করা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:২৯