‘এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হত তুমি বল তো ?’
উত্তমের সেই মোটর বাইক থেমেছে ঢের আগে। পথে ছিলেন সুচিত্রা। সেই পথ শেষ হয়েছে, বছর দেড়েক হতে চলল। সুচিত্রা সেনের একটা বিষয় আমার বেশ লাগতো। প্রিন্ট মিডিয়া হোক আর ইলেকট্রনিক, সব যায়গাতেই সুচিত্রার সেই হাসি মাখা তরুণ মুখ। একজন নায়িকা হিসেবে, ৮৫ বছর বয়সী কোন ছবি, রেখে যাওয়া যে, খুব একটা কাজের কথা নয়, এটা তিনি বেশ বুঝতেন। তাই খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার মধ্যগগনে থাকা অবস্থাতেই নিজেকে গুঁটিয়ে নিলেন। আড়ালে থাকলেন আমৃত্যু খানিকটা হলিউডের প্রবাদ প্রতীম অভিনেত্রী গ্রেটাগার্বোর মতন।
অভিনয় জীবনে তুমুল দাপুটে এই অভিনেত্রী, ষাটের দশকে মুভি সাইন করতেন দু-লক্ষাধিক রুপিতে। ছিলেন দারুন নারীবাদীও। সিনেমার পোস্টারে নিজের নামের আগে উত্তমের নাম ছাপাতে দেন নি কখনোই। লিখতে হত, 'সুচিত্রা-উত্তম' জুটি।
আমাদের বাঙালি নাক সাধারণত অতটা খাঁড়া নয়। কিন্তু, সুচিত্রা সেন ব্যতিক্রম। তাঁর বিরল সৌদর্যের একটা দিকও বোধ হয়, এই নাকের সাথে চোখ-কপাল এবং চীকের নিখুঁত অনুপাত। মহানায়ক উত্তমের সাথে পর্দার রসায়ন দর্শককে মোহাচ্ছন্ন করেছে-করছে এবং করবে চিরকাল। বাংলা ছবির হাত ধরেই, কোটি কোটি দর্শকের মনের আর্কাইভে ঠাই পেয়েছেন তিনি। তাঁর ভুবনজয়ী হাসি, 'পাখির নীড়ের মত চোখ' তুলে তাকানো- এ সবই প্রজন্মের পর প্রজন্মে তৈরি করবে নস্টালজিয়া। তিনি ছিলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের রোমান্টিক সৌন্দর্যের শেষতম সংজ্ঞা।
আজ সুচিত্রা সেনের জন্মদিন।
প্রিয় সুচিত্রা,
আপনাকে নিয়ে যতক্ষণ লিখছিলাম, আপনি সাথে ছিলেন। লেখা ফুরোচ্ছে। আপনি হেঁটে চলছেন অজানার পথে। তাই বলতেই হয়-
'কিছুক্ষণ আরও নাহয় রহিতে কাছে.
আরও কিছু কথা নাহয় বলিতে মোরে।
এই মধুক্ষণ মধুময় হয়ে নাহয় উঠিত ভরে,
আরও কিছু কথা নাহয় বলিতে মোরে।'