'থান্ডারক্যাটস'-এর তলোয়ার বানিয়ে লায়নো সাজা, কি বা 'ক্যাপটেন কেইভ ম্যান' হবার তালে বিকট চিৎকার দেয়া তো অহরহ কাজ। ব্রুসলী'র ছবি দেখে বড়ভাইয়ের কুংফু শেখার শখ জাগলো একবার, পাড়াতে বড়ভাইয়ের কাছ থেকে শিখে এসে প্র্যাকটিকাল করতো ঘরের চারআনা আটআনা আমাদের উপর, আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ কান্নাকাটি শুরু করলে বুঝাতো আদর করে "দেখ, এতে তোদের মাসল হবে দারুন, আর প্রথম প্রথম একটু ব্যাথা পেলেও আস্তে আস্তে দেখবি একটুও ব্যাথা পাবিনা "
ভাইতো তাও কিছুটা বড় ছিলো, আমার পিঠাপিঠি এক কাজিন সে সময় পাড়ার মাস্তানের ভাবে মশগুল। ঠিক করছে যা হই না হই আমি মাস্তান হবো। তো বিল জমা না করার কারনে তাদের বাড়ীর কারেন্ট লাইন কাটতে এলো বিদুৎ বিভাগের লোকেরা। মই লাগিয়ে প্রায় দোতালা সমান খাম্বায় চড়ছিলো লোকটা এমন সময় পিচ্চির সিনেমা স্টাইলে চিৎকার "মিসতিরি, লাইনে হাত দিবা না কইলাম, খবর হয়ে যাবে কিন্তু।" স্বভাবত:ই নাকে শিকনি গড়ানো হাফপ্যান্ট সামলানোতে ব্যস্ত পিচ্চির কথা আমলে না আনাটাই বিবেচকের কাজ, তেমনি করেছিলো লোকটা। কিন্তু এর পরের কান্ডের জন্য ইলেকট্রিসিয়ান কেন কেউই প্রস্তুত ছিলো না। ধাক্কা দিয়ে মই ফেলে দিয়ে ব্যাগে করে আনা আধলা ইট ছুড়তে লাগল "হইতে চাই মাস্তান" সাব!! সাথে ছিলো পাশের বস্তি থেকে আনা তার ইয়ার দোস্ত। যতক্ষন ওর বাবা না আসছে কেউ ওকে থামাতে পারেনি।
এরা তো ছিলো বুরবক পিচ্চি। আরেক ধাচেঁর আছে জ্ঞানী পিচ্চি, তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা মারাত্নক। তেমনি একজন বন্ধু আমার পড়তে পারতো কিছুটা বুঝতেও। তার নাকে ফোড়াঁ উঠেছিলো একটা। বাড়ীর কাছের ডিসপেন্সারি থেকে একটা ঔষুধের লিফলেটে পড়লো যে সেটা মাইটোকন্ড্রিয়াতে খাবার সাপ্লাই বন্ধ করে কিভাবে যেন জীবাণু মেরে ফেলে, এরও আগে সে জানতে পেরেছিলো (লেখাপড়া করে আর কি)মাইটোকন্ড্রিয়া শরীরের কোষের পাওয়ার হাউস। দু'য়ে দু'য়ে চার মেলানোর কাজ সে অনেক করেছে, এবার করতে চললো ফোড়াঁতে ঔষুধ থুক্কু মাইটোকন্ড্রিয়াতে খাবার সাপ্লাই বন্ধ করার কাজ!! হোক না অদম্য সাহসের ফল স্বরুপ ২/৩ মাস নাক পোড়া নিয়ে ঘুরতে হয়েছে তাকে, কিন্তু চারি দিকে যে হারে তার নাম হয়েছে সেটা আর বলবার না। সব মা-বাবারা বাচ্চাদের পইপই করে বুঝিয়েছে, আর যাই করো ওর কাছ থেকে বুদ্ধি নিয়ো না কোন বিষয়ে ....
বাসায় ভাই-বোনদের পড়াতে আসা স্যার-হুজুর'দের অনেক আদর পেয়েছি। ওদের পড়ানোর মাঝে আমি বসে অনেক অনেক প্রশ্ন করতাম, সুন্দর করে বুঝাতেন উনারা। একবার এক স্যার কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন না, বারবার বলছিলেন - "কথা বলবো না, মাথা অনেক গরম আছে, যাও যাও, পড়াতে দাও তো এদের"। স্যারকে বেশ পছন্দ করতাম, তাই উনার মাথা ঠান্ডা করার চিন্তায় অস্হির হয়ে এক মগ পানি এনে ঢেলে দিয়েছিলাম। স্যারের মাথা ঠান্ডা হয়েছিলো কিনা মনে নাই, আমি দুনিয়ার উত্তম মধ্যম খেয়েছিলাম বেশ মনে আছে। :# তো সেই স্যারের কাহিনীর কারনেই নাকি কে জানে, এরপর থেকে আর এমন হয়নি।
সুপারম্যান দেখে ৪/৫ বছর বয়েসে আকাশে উড়বার কি যে শখ চাপলো, উচুঁ টেবিল থেকে লাফ দিয়ে বিছানায় উড়ে পড়া ছিলো অহরহ কাজ। তেমনি একদিন হুজুরকে বললাম, "আমি উড়ে পড়ি আপনি লুফে নেন।" কাটখোট্টা ছিলেন না মোটেই উনি, না না করেও আপুদের পড়ানো মাঝে মাঝে আমাকে ধরছিলেন হুজুর। একসময় আমাকে মানা করে দিয়ে পড়া দেখাতে লাগলেন ওদের, কিন্তু আমি তো আছি সুপারম্যান হওয়াতে মশগুল। উডবি-সুপারম্যান টেকঅফ তো করলো কিন্তু ল্যান্ডিং টা হলো ফ্লোরে!! ফলাফল, মাথা ফেটে যাওয়া, অনেকদিন হসপিটালে থাকা।
সবকিছুতেই বলা চলে ভালো দিক থাকে, তেমনি এই হসপিটালে থাকাটাও। হলিফ্যামিলি হসপিটাল এখন কি অবস্হায় আছে জানি না, তবে আমার বেডের পাশের বারান্দা পেরিয়ে দারুন একটা বাগান ছিলো কত রকমের যে ফুলে ভরা। শুয়ে শুয়ে দেখতাম শুধু ছিড়তে মানা ছিলো ফুল। কাছাকাছি বেডে বিদেশী একটা ছোট ছেলে ছিলো এ্যাকসিডেন্টের রোগী, মুখের এক পাশ কেটে গিয়েছিলো ওর। একদিন ছেলেটা এসে বড়ো এক বক্স চকলেটের সাথে ওই বাগানের কয়টা ফুল দিয়ে গেলো। কষ্ট করে আনা ফুলগুলোর চেয়ে বাক্সভর্তি চকলেটই যদিও বেশি লোভনীয় লেগেছিলো সে সময়। তবু অনেক মনে করতে চাই দারুন সেই উপহার দেয়া মানুষটাকে। এতো কিছু মনে আছে, কেন জানি মনে নাই ছেলেটার মুখ ......