somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা - ১ -মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই, এর থেকে নাম যে মধুর এ পৃথিবীতে নাই

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা - ১ -মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই, এর থেকে নাম যে মধুর এ পৃথিবীতে নাই।,, তুমি যদি একটি মা আমাকে উপহার দিতে পারো,আমি তোমাকে একটি জাতি উপহার দিবো।
এক ভদ্র মহিলা পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন পাসপোর্ট করাতে। অফিসার জানতে চাইলেন- আপনার পেশা কি?
মহিলা বললেন, আমি একজন মা।
আসলে ,শুধু মা তো কোনো পেশা হতে পারেনা।
যাক, আমি লিখে দিচ্ছি আপনি একজন গৃহিনী।
মহিলা খুব খুশী হলেন। পাসপোর্টের কাজ কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ হলো। মহিলা সন্তানের চিকিৎসা নিতে বিদেশ গেলেন। সন্তান সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসলো।
অনেকদিন পরে, মহিলা দেখলেন পাসপোর্টটা নবায়ন করা দরকার। যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে। আবার পাসপোর্ট অফিসে আসলেন। দেখেন আগের সেই অফিসার নেই। খুব ভারিক্কি, দাম্ভিক, রুক্ষ মেজাজের এক লোক বসে আছেন।
যথারীতি ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে অফিসার জানতে চাইলেন-
আপনার পেশা কি?
মহিলা কিছু একটা বলতে গিয়েও একবার থেমে গিয়ে বললেন-
আমি একজন গবেষক। নানারকম চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করি। শিশুর মানসিক এবং শারিরীক বিকাশ সাধন পর্যবেক্ষণ করে,সে অনুযায়ী পরিকল্পণা প্রণয়ন করি। বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যার দিকে খেয়াল রাখি। সুস্থ পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণে নিরলস শ্রম দিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোগত ভিত মজবুত করি। প্রতিটি মূহুর্তেই আমাকে নানারকমের চ্যালেঞ্জের ভিতর দিয়ে যেতে হয় এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা মোকাবিলা করতে হয়। কারণ,আমার সামান্য ভুলের জন্য যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
মহিলার কথা শুনে অফিসার একটু নড়ে চড়ে বসলেন। মহিলার দিকে এবার যেন একটু শ্রদ্ধা আর বিশেষ নজরে তাকালেন । এবার অফিসার জানতে চাইলেন-
আসলে আপনার মূল পেশাটি কি? যদি আরেকটু বিশদভাবে বলতেন।লোকটির আগ্রহ এবার বেড়ে গেলো।
আসলে, পৃথিবীর গুণীজনেরা বলেন - আমার প্রকল্পের কাজ এতো বেশি দূরহ আর কষ্ট সাধ্য যে, দিনের পর দিন আঙুলের নখ দিয়ে সুবিশাল একটি দীঘি খনন করা নাকি তার চেয়ে অনেক সহজ।
আমার রিসার্চ প্রজেক্ট তো আসলে অনেকদিন ধরেই চলছে। সর্বক্ষণ আমাকে ল্যাবরেটরি এবং ল্যাবরেটরীর বাইরেও কাজ করতে হয়। আহার,নিদ্রা করারও আমার সময়ের ঠিক নেই। সব সময় আমাকে কাজের প্রতি সজাগ থাকতে হয়। দুজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অধীনে মূলত আমার প্রকল্পের কাজ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলছে।
মহিলা মনে মনে বলেন,দুজনের কাউকে অবশ্য সরাসরি দেখা যায়না।
(একজন হলেন, আমার স্রষ্টা আরেকজন হলো বিবেক)
আমার নিরলস কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ আমি তিনবার স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছি। (মহিলার তিন জন কন্যা সন্তান ছিল।)
এখন আমি সমাজবিজ্ঞান,স্বাস্থ্যবিজ্ঞান আর পারিবারিক বিজ্ঞান এ তিনটি ক্ষেত্রেই একসাথে কাজ করছি, যা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিলতম প্রকল্পের বিষয় বলা যায়। প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ হিসাবে একটি অটিস্টিক শিশুর পরিচর্যা করে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলছি, প্রতিটি মুহুর্তের জন্য।
‘ঊষর মরুর ধূসর বুকে, ছোট্ট যদি শহর গড়ো,
একটি শিশু মানুষ করা তার চাইতেও অনেক বড়।‘
অফিসার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মহিলার কথা শুনলেন । এ যেন এক বিস্ময়কর মহিলা। প্রথমে দেখেতো একেবারে পাত্তাই দিতে মনে হয়নি।
প্রতিদিন আমাকে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা আবার কোনো কোনো দিন আমাকে ২৪ ঘন্টাই আমার ল্যাবে কাজ করতে হয়। কাজে এতো বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় যে, কবে যে শেষবার ভালো করে ঘুমিয়ে ছিলাম কোনো রাতে,তাও আমার মনে নেই। অনেক সময় নিজের আহারের কথা ভুলে যাই।আবার অনেক সময় মনে থাকলেও সবার মুখে অন্ন তুলে না দিয়ে খাওয়ার ফুরসত হয়না । অথবা সবাইকে না খাইয়ে নিজে খেলে পরিতৃপ্তি পাই না। পৃথিবীর সব পেশাতেই কাজের পর ছুটি বলে যে কথাটি আছে আমার পেশাতে সেটা একেবারেই নেই। ২৪ ঘন্টাই আমার অন কল ডিউটি।
এরপর আমার আরো দুটি প্রকল্প আছে । একটা হলো বয়স্ক শিশুদের ক্লিনিক। যা আমাকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে হয়।সেখানেও প্রতিমুহুর্তে শ্রম দিতে হয়। আমার নিরলস কাজের আর গবেষণার কোনো শেষ নেই ।
আপনার হয়তো বা জানতে ইচ্ছে করছে, এ চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পরিচালনায় আমার বেতন কেমন হতে পারে।
আমার বেতন ভাতা হলো- পরিবারের সবার মুখে হাসি আর পারিবারিক প্রশান্তি। এর চেয়ে বড় অর্জন আর বড় প্রাপ্তি যে কিছুই নেই।
এবার আমি বলি, আমার পেশা কি?
আমি একজন মা। এই পৃথিবীর অতিসাধারণ এক মা।
মহিলার কথা শুনে অফিসারের চোখ জলে ভরে আসে। অফিসার ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে ওঠেন। নিজের মায়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তিনি খুব সুন্দর করে ফর্মের সব কাজ শেষ করে, মহিলাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেন। তারপর নিজের অফিস রুমে এসে একটি ধূসর হয়ে যাওয়া ছবি বের করে -ছবিটির দিকে অপলক চেয়ে থাকেন। নিজের অজান্তেই চোখের জল টপ টপ করে ছবিটির ওপর পড়তে থাকে ।
আসলে "মা"-এর মাঝে যেন নেই কোনো বড় উপাধির চমক।বড় কোনো পেশাদারিত্বের করপোরেট চকচকে ভাব।কিন্তু কত সহজেই পৃথিবীর সব মা নিঃস্বার্থ ভাবে প্রতিটি পরিবারে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।মাতৃত্বের গবেষানাগারে প্রতিনিয়ত তিলেতিলে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×