somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ বিশ্ব পরিবার দিবস। একক নাকি যৌথ পরিবার, সন্তানের জন্য কোনটা ভালো ?

১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমাদের ছোটবেলাটা অন্যরকম ছিল। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিগুলো সব ছোটবেলার। আমরা সব ভাইবোন আর চাচাদের ছেলেমেয়েরা একসাথে এক বাড়িতে এক ছাদের নিচে বেড়ে উঠেছি। ‘আমার’ বলে কিছু ছিল না, সব ছিল ‘আমাদের’। দাদারা বেঁচে না থাকাই বড় চাচাই ছিলেন পরিবারের প্রধান। আমরা কি পড়ব, কি করব- সবকিছু মা-বাবা চাচার সঙ্গে ঠিক করে করত। এখনকার ছেলেমেয়েরা সেই পরিবেশ পেল না পাচ্ছে না, অবশ্যই একদম পাচ্ছেনা বললেই চলে।

যৌথ পারিবারিক কাঠামো ভেঙে একক পরিবারের মাঝেই এখন মানুষ স্বস্তি খুঁজছে, স্বাধীনতা খুঁজছে। কিন্তু সত্যিই কী মিলছে, স্বস্তি, স্বাধীনতা এমন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সহজ কোনো উত্তরও মিলছে না। বিশেষ করে “মায়ের হাতে সন্তান খুন” ‘পরকীয়ার জের ধরে সন্তানদের খুন’ — সংবাদপত্রের পাতায় এসব ঘটনা যান্ত্রিক জীবন ও মানসিক সংকটে অস্থির মানুষের কথাই তুলে ধরছে। সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে ভোগী হয়ে উঠছে মানুষ। তাই প্রাণপ্রিয় সন্তানকেও সেই ভোগী জীবনের বাধা হিসাবে মনে করছে স্বার্থপর মন। আধুনিক ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে এসে মানুষে মানুষে ‘সম্পর্ক’ বিষয়টি এক নতুন ধারণা নিয়ে সামনে আসছে। সবচেয়ে বিশ্বাসের, সবচেয়ে নির্ভরতার সম্পর্কগুলো যেন অপরিচিত আদল নিয়ে সামনে দাঁড়াচ্ছে।

ভেঙে যাচ্ছে যৌথ পরিবারগুলো এটা এখন সবারই জানা। সবাই তা মেনেও নিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা আর্থিক সচ্ছলতা পেলে, বিয়ে করলে আলাদা সংসার করবে। পরিবারের মাঝে সম্পর্ক সুস্থ রাখতে এই কাঠামো এখন স্বীকৃত। বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত এই পরিবর্তন। কারণ, ক্ষুদ্র একক পরিবারের স্বাধীনতাই বেশি টানছে মানুষকে। আবার যৌথ পরিবার ভেঙে যারা বের হয়েছিলেন, কয়েক বছর পরে আবার তারাই উপলব্ধি করছেন সেই যৌথ পারিবারিক পরিমণ্ডলটার সুবিধাও ছিল অনেক। বিশেষ করে, শিশুদের মানসিক বিকাশে, মূল্যবোধ গড়ে তুলতে এক ছাদের নিচে সবাই মিলে বসবাস যে খুব কার্যকর এটা টের পেতে শুরু করেছেন অনেকেই। বিশ্ব পরিবার দিবস ‘সুস্থ জীবন, সমৃদ্ধ ভবিষ্যত্’

এ পরিস্থিতিতে আজ রবিবার ১৫ মে সারবিশ্বে পালিত হবে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ জীবন, সমৃদ্ধ ভবিষ্যত্।’ ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস’ ঘোষিত হয়। এরপরে জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালকে ‘আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ’ ঘোষণা করেছিল। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পর পরিবারের ধরন ও ভূমিকা পাল্টাতে থাকে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থা থেকে ক্রমশ ব্যক্তিকেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক পরিবার বা যৌথ পরিবার ব্যবস্থা এবং এর থেকে একক বা নিউক্লিয়ার পরিবারে পরিণত হতে থাকে।

পরিবার একটা বড় শিক্ষার জায়গা। যৌথ পরিবারগুলো শিশুদের বেড়ে উঠতে খুব বড় ভূমিকা রাখতো। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই তাদের আচরণে নিয়ন্ত্রণ রাখতো। মা-বাবার দ্বন্দ্ব, হতাশা এসব বাচ্চাদের সামনে তারা প্রকাশ করতো না। কারণ এতে সবাই তা জেনে যাবে। যখন যৌথ পরিবার ছিল তখন এসব তারা নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন পরিবারে তো নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। ফলে মা-বাবারা দস্যুর মত আচরণ করতে থাকে। সময় বদলাচ্ছে, পাল্টাচ্ছে ধারনা এমনটি মনে করেন অনেকেই।

প্রেম করা নিষিদ্ধ বিষয় বলেই মনে করা হতো। প্রেমের বিয়েতে অভিভাবকদের ঘোর আপত্তি ছিল। রীতিমত বনবাসে পাঠানোর মত দূরে সরিয়ে রাখা হতো ছেলেমেয়েদের। এখন তো শহুরে জীবনে সম্বন্ধ করে বিয়ে দেয়ার চাইতে ছেলেমেয়েরা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করলেই মা-বাবা বেশি খুশি হন। দিন দিন সামাজিক রীতিনীতি পাল্টাচ্ছে। মানুষের মূল্যবোধ বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে সমাজের অনুশাসন, কাঠামো। মানুষের আর্থিক স্বাধীনতা যত বাড়ছে, জীবনযাপনের স্বাধীনতাও ততটাই ভোগ করতে চাইছে। পরিবারগুলো ভাঙছে। সমাজও তার আদল বদলাচ্ছে। জীবনযাপনের পুরনো রীতিগুলোও পাল্টাচ্ছে। মানুষের আশা-আকাংখা, বেড়ে ওঠা সবকিছু ছিল সামগ্রিকভাবে পরিবার কেন্দ্রিক।

পরিবারের যে কোন সদস্যের যে কোন চাহিদা পূরণ ছিল রীতিমত পারিবারিক সিদ্ধান্ত থেকে। নিজের সন্তানের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসত পরিবারের প্রধানের কাছ থেকে। দাদা, চাচা, মা, চাচী, চাচাত ভাইবোনরাও সমান অংশীদার ছিল পরিবারের যে কোন ব্যক্তির প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে। পরিবারের যৌথ কাঠামো এই সামাজিক বন্ধন ও নৈতিক বন্ধন দৃঢ় করতো। বড়দের মানা, প্রত্যেক সম্পর্ককে সম্মান করা এসব কিছুই তারা শিখতো গুরুজনদের কাছ থেকে। সেই পারিবারিক সম্পর্ক এখন অনেক আলগা হয়ে গেছে। এখন চারপাশে জীবন ও জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। ফলে অসুখী দাম্পত্য, সন্তানের লেখাপড়া, ক্যারিয়ার নিয়ে এত ব্যস্ত যে, চাওয়া-পাওয়া আর উন্নতির চক্রে ঘুরছে সবকিছু। এমনকি মেকী বন্ধুতাও এখন চাকরি বা প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে।

এটা ঠিক, প্রযুক্তির বিকাশ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন আনছে। কিন্তু পারিবারিক অনুশাসন না থাকায় সেই প্রযুক্তি আর আকাশ সংস্কৃতির স্রোত আমাদের ভাল মন্দ চেনাচ্ছে না। পারিবারিক অনুশাসনের বাইরে চলে আসায় অভদ্রতা করা, মানুষকে অসম্মান করাটাকে স্মার্টনেস জ্ঞান করা হচ্ছে। এসব শিক্ষা স্কুল-কলেজের বাইরে পরিবার থেকেই পায় সবাই। সেই পরিবার কাঠামোই তো নেই। দাদা-দাদী, ফুপু, চাচা-চাচীর বদলে ছোট পরিবারে শিশুর সার্বক্ষনিক সহচর কাজের মানুষটি।

পরিবার অপরাধ ও হিংস্রতা কমানোর শক্তিশালী মাধ্যম রূপে সামাজিকীকরণে বাস্তব ভূমিকা রাখে। এই শৃংখলার মধ্যে ছেলেমেয়েরা সমাজের আর্থিক ও সামাজিক নিয়মগুলো শেখে। বংশানুক্রমিকভাবে দাদা, দাদি, বাবা, মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ছেলের বউ, নাতি, নাত-বউ এবং নাতনি নিয়েই আমাদের যৌথ পরিবারগুলো পরিচালিত হতো। এরসঙ্গে জ্ঞাতি সদস্যদের মধ্যে ছিল চাচা ও চাচি, চাচার ছেলে ও মেয়ে, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের ছেলেমেয়ে এবং এই ধারাবাহিকভাবে অন্যান্যরা। কিন্তু হাল আমলে পরিবার বলতে স্বামী-স্ত্রী আর সন্তান। অন্যরা হচ্ছে আত্মীয়।

বর্তমান ছেলেমেয়েরা অসামাজিক হয়ে পড়ছে মূলত মা-বাবার কারণে। মা-বাবার সুস্থ সম্পর্ক না থাকা, শিশুদের সামনে ঝগড়া করা, পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে বাড়ির স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট করা, সবচেয়ে বড় কথা ছেলেমেয়েদের নিজেরা সময় না দিয়ে তাদের ডে কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করে দেয়া। এটা সাময়িক একটা সময় পার করা হতে পারে। কিন্তু এভাবে শিশুটির চরিত্র তৈরি হবে না। তাই মা-বাবাকেই সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হবে। খেলার সুযোগ না থাকলে প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে আত্মীয়-বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া। এটা করলেও বাচ্চারা সামাজিকতা শিখবে। সেখানে অন্য বাচ্চাদের সম্পর্কে মিশে যেমন তাদের সহ্য ক্ষমতা বাড়বে তেমনি মা-বাবদের অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবহার পরিমিতিবোধ ভদ্র আচরণ দেখেও তারা শিখবে। কিন্তু এসব আড্ডায় বড়রাও খুব একটা নিজেদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করেন না। #[এখানে বেশ কিছু নিজের পরিবারের কথা ও কিছু তথ্য সংগৃহীত এবং সম্পাদিত]

আসলে, আজকালকার ইট-পাথরে ঘেরা জীবনে মানবিক এই সম্পর্কগুলো ভীষণ জরুরি। এই সম্পর্ক আরেকজনের সাথে ভাগাভাগি করা শেখায়, শেখায় সামাজিকতা। আর পারিবারিক মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তাও সামনে তুলে আনে। আনুষ্ঠানিক ভাবে বা ঘটা করে কোন নির্দিষ্ট দিন মাস বছর নয়, প্রত্যেক দিনই আসলে পরিবার দিবস।

যাই হোক,
বিশ্ব পরিবার দিবসে সকলের পরিবার হোক সুন্দর জীবনের অনুপ্রেরণা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৩:৩৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি তাদের কাছেই যাবে তারা তোমার মূল্য বুঝবে....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪


মৃত্যুর পূর্বে একজন পিতা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বললেন, 'এই নাও, এই ঘড়িটা আমি তোমাকে দিলাম। আমাকে দিয়েছিলো তোমার দাদা। ঘড়িটা দুইশত বছর আগের। তবে, ঘড়িটা নেওয়ার আগে তোমাকে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×