দিনটি ছিল সোমবার। সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনার পাশাপাশি ছিল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, বাতাসও বইছিল হালকাভাবে। দুপুর গড়াতেই বেড়ে গিয়েছিল বাতাসের গতিবেগ। বিকেলের পর থেকে বাতাসের সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টি। রাত ১২টার দিকে ভেড়িবাঁধ ভেঙে উঠে আসা জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাড়িঘর, মানুষ, গবাদিপশু সবকিছু। মূহুর্তের মধ্যে পাল্টে যায় সবকিছু!
এটি কোন গল্পের বর্ণনা নয়, বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া এক দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা!
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রকৃতির এ ভয়াল রূপটি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। ২৫ বছর আগের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর প্রাণহাণির দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আবারো দিনটি হাজির হয়েছে উপকূলবাসীর কাছে!
২৯ এপ্রিলের মধ্যরাতে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলার শত শত ইউনিয়ন!
ঘন্টায় ২০০ থেকে ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগের প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় এবং ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয়েছিল বিরানভূমিতে। ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, সহায় সম্বল হারায় মানুষ।বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস তছনছ করে দিয়েছিল উপকূলীয় জনপদ। ভেসে গিয়েছিল ফসলের ক্ষেত, লাখ লাখ গবাদি পশু।
ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। যদিও সরকারি হিসাব মতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার। সম্পদহানি হয়েছিল ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল প্রায় ৬০ লাখ মানুষ!
২৯ এপ্রিলের সেই ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে নিয়ে আবারও উপকূলীয় মানুষের কাছে দিনটি ফিরে এসেছে। ভয়াল সে স্মৃতি আজো কাঁদায় পুরো উপকূলবাসীকে। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। দুঃসহ সে স্মৃতি এখনো কাঁদায় স্বজনহারা মানুষগুলোকে!
সেই ভয়াবহ দিনটি কখনো ভূলবো না, ভোলার নয়! আজো মনে পরলে(সেই রাত) এখনো শরীর কেপেঁ উঠে। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থাদের জন্য সমবেদনা ও নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি...