ফুয়াদ
একটু আগে সাইফ চলে গেল আমাদের ছেড়ে। মারা যায় নি, তবে মৃতই বলা যায়, গিয়েছে মিশিগানে। ফিরবে না। সিমন জিজ্ঞেস করছিলো তবে ওর কবিতার কী হবে। একটু হেসেছিল শুধু। 'কবিতা তোমায় দিলাম ছুটি, ক্ষুধার রাজ্যে .......' বলেই হাসল। বলল :
দোস্ত, ভেবেছিলাম কবিতা লিখে পৃথিবীটা বদলাবো, নিদেন পক্ষে এ দেশটা। কিন্তু যেখানে মাঝারি মানের কবিরা-ই সব ভূলে পা চাটছে কবিতার মিছরি রেখে, সেখানে আমার কবিতারা যেন বড্ড কর্কশ, চিরতার মতো। জানিসই তো, মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো, কবিতা লিখে যাবো, মৃত্যুর পরেও পাঠক পড়বে ওগুলো, হেমিংওয়ের মতো আমারও জম্মশত বার্ষিকী হবে, আগেরা ভাগেরা সব subliminal thoughts!; কিন্তু কী লাভ? সবচেয়ে বড় কথা হলো বেচে থাকতেই নিজেকে মারতে পারবো না। মোহ ছুটে গেছে। অমরত্বের খায়েশ আর নেই। তানিয়াকে বলিস, ওর ফীল্ড এখন খালি।
ঠিক আছে বলবোখ'ন। আমি বললাম। পারলে ফোন দিস।
গাড়িতে উঠতে উঠতে ভাবলাম সাইফটা আসলেই স্পাইনলেস। নয়তো এভাবে কেউ পালায়? শালা এসকেপিস্ট! আজ অবশ্য তানিয়ার বাসায় আড্ডা আছে। ওখানেই এ বিষয়ে আলাপ করবোখন।
আজকের আড্ডাটা কেমন যেন ম্যাড় মেড়ে। সবাই ছাড়া ছাড়া কথা বলছে। তানিয়ার চোখ লাল, বেশ ফুলে আছে। বোধ হয় বিরহ জলের আছর। ভাবছি সুমিতকে খোচাবো। সম্রাট কে ইঙ্গিত করলাম, কিছু সাড়া দিল না ও। বুঝলাম ওরও মুড নেই। শর্মিলীকে চা দিতে বললাম, হঠাৎ সিমন বলে উঠলো আমার মনের কথাটাঃ
ম্যাডি নাকি সিনেমা বানাবি? (ও আমাকে ম্যাডি বলে, কারণ আমি নাকি হিন্দি মুভির মাধবনের মতই স্মার্ট)
হুঁ ; বাংলা সিনেমা, প্রচন্ড কমার্শিয়াল আর রোমান্সের মিশেল দিয়ে।
কে বানাবে মুভি? ডিরেক্টরি কি তোর বাপ? কে হবে প্রযোজক-শ্বশুর!
আমি হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে গেলাম (কখনই হই না সাধারনত):
কাজী মউৎ - এর সাথে কথা হয়েছে। আমার এক ফ্রেন্ড আছে লোটাস, ওরই দুলাভাই। তার সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখে যাচ্ছি কী হয়। তবে প্রজেক্টটা পছন্দ করেছেন। আর উনিইfinancing and producing করবেন।
হঠাৎ সম্রাট বলে উঠলো
স্ক্রিপ্টে কে? কাস্টিং কী?
সবই ঠিক করছি, স্ক্রিপ্ট হলো এটা। (বের করে দিলাম) আর কাস্টিং- স্ক্রিপ্ট টা পড়লেই বুঝবে।
হঠাৎ-ই স্ক্রিপ্টের একটা অংশ চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সুমিত চট্টলার গীর্জায় ঢুকলো। ঢং ঢং ঘন্টা। একটা বে›েচ বসলো। মাথা নিচু। শর্মিলী এসে ওর পাশে বসলো। পুরোদস্তুর নান্। জিজ্ঞেস করলো : কেন এসেছো?
সুমিত নিশ্চুপ।
তুমি তো গড বিশ্বাস করো না। তবে কেন এলে?
তোমার প্রতি যে বিশ্বাসটা এখনও আছে, তোমাকে পাবার বিশ্বাস।
চলে যাও, আর এসো না।
আসবো, যতদিন না ফিরে চলো। ততদিন আসতেই থাকবো।
হঠাৎ পুরো হল জুড়ে তালি, ওয়াহ; কী মুভি! সেলিব্রেট করা দরকার সিনটা।