১৯৭১ এ রাজাকার বাহিনী পাকিদের কে সহায়তা করেছে। একসময় রাজাকাররা এইদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ঘুরেছে অথচ তারা এই দেশের জন্মই চায়নি। আজ যখন আমরা রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করছি ঠিক তখনই এই দেশের কিছু সন্তান এই আন্দোলনের বিরোধিতা করছে। কেউ কেউ বলছে সেখানে নাকি টাকা দিয়ে লোক নেওয়া হয়, সেখানে নাকি গাঁজা আর মদের আসর চলে, তাদের জন্য আমার দূঃখ হয়। তারা শাহবাগে না এসেই এরুপ মন্তব্য করে বেড়াচ্ছে। তাদের এরুপ আচরণ দেখে মনে হচ্ছে এই দেশে নতুন করে রাজাকার জন্ম নিচ্ছে।
গতকাল আমাকে একজন বলে বসল শাহবাগে নাকি দিনের বেলায় যাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা আর রাতে নাকি ১০০০ টাকা দেয়া হয়। এটা নাকি আওয়ামিলীগ দেয়। তখন আমি বললাম, আমি ১০০০ লোক ব্যবস্থা করে দিব রাতের বেলায় থাকার জন্য আপনি ১ লক্ষ টাকা নিয়ে সেন। তখন ওই লোক বলল, আমি টাকার ব্যবস্থা করছি, এই বলে সে চলে গেল। তার আর দেখা পাওয়া গেলনা। আমি ভেবে পাইনা তারা এমন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকেও কেন সমর্থন জানাতে পারছেনা?
শাহবাগের এই আন্দোলন একটি দেশপ্রেমের আন্দোলন। দেশদ্রোহীদেরকে সাজা দেয়ার আন্দোলন। আজ যেখানে সারাদেশের মানুষ এই আন্দোলনের সাথে একাত্নতা ঘোষনা করেছে সেখানে কি করে কতিপয় লোক এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে? তাদের মধ্যে কি নূন্যতম দেশপ্রেমও নেই? আমার মতে যারা শাহবাগের আন্দোলনের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করেনি, যারা এই আন্দোলনের বিরোধিতা করছে, তারাও প্রকারান্তে দেশদ্রোহী। এইসব দেশদ্রহীদের এই বাংলায় স্থান হতে পারেনা। এই বাংলা আমাদের যারা দেশকে ভালোবাসি।
অনেককে দেখি ফেসবুকে ছবি শেয়ার করতে যেখানে তারা প্রমান করতে চায় আন্দোলনকারীদেরকে টাকা দেয়া হচ্ছে। অথচ তারা বুজতে চেষ্টা করেনা যে, এখানে হাজার হাজার মানুষ দিন রাত অবস্থান করছে, এইসকল মানুষের খাবারের তো ব্যবস্থা করতে হবে। বিরোধীরা এখানে না এসেই কিংবা প্রকৃত সত্য জানা সও্বেও মিথ্যা তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদেরকে বলতে চাই এখানে মানুষের খাবারের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০+ ডেক খিচুড়ি রান্না হয়। ২৪ ঘণ্টা মানুষ সেখানে থাকে । টাকা খরচ তো হবেই কিন্তু এটা পরিষ্কার কেউ বা কাউকে টাকা দিয়ে এখানে আনা হচ্ছে না , এমন হলে কেউ যেত না আন্দোলনে । সবাই মনের টানে যাচ্ছে।
অনেককে এটাও প্রচার করতে দেখি শাহবাগে ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে। সেখানে নাকি সব নাস্তিকেরা অবস্থান করছে। এমনকি বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীরা নিজেরাই ফেইক আইডি দিয়ে ইসলামকে অবমাননা করছে এবং নিজেকে একজন শাহবাগের আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচয় দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছ। তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে চাচ্ছে। অথচ ইসলামই তো আমাদেরকে শিখায় দেশকে ভালোবাসতে, আমাদেরকে শিক্ষা দেয় মানুষকে ভালোবাসতে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্টা করতে।
আমরা ইতিহাস থেকে দেখতে পাই যারা ইসলামকে নিয়ে ব্যবসায় করছে, তারাই অন্যায়ভাবে অজস্র নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। যা সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ। কোরানে বলা হয়েছে, "কেউ যদি ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কিংবা অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করে, তাহলে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল।ইসলাম কিন্তু এখানে বলে নাই কোন মুসলমানকে হত্যা করলে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করা হবে কিংবা অন্য ধর্মের লোকদের হত্যা করলে কোন সমস্যা নেই। এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে "কোন মানুষকে" অর্থাৎ সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন, তার ক্ষতি করা যাবেনা।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা শাহবাগের আন্দোলনের বিরোধীতা করছেন, তারা দেশটাকে ভালোবাসেন, দেশকে ভালোবাসতে শিখেন। যদি দেশকে ভালোবাসতে না পারেন তাহলে "প্রজন্ম পাকি" হিসেবে নিজেদেরকে চিহ্নিত করুন।