১.
আমার হাতে রূপার বিয়ের কার্ড । চমৎকার গাঢ় নীল রঙের ওপর শাদা কাপড়ের টু ফোল্ডেড খাম । ভেতরে ছোট্ট চিরকুট আকৃতির কাগজে দিন তারিখ লেখা । চিরকুটের কাগজ মাখনের মত মোলায়েম । ধরলেই ছিঁড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে । আমি দ্রুত কাগজে চোখ বুলিয়ে নিলাম । পাত্রের নামটা বীভৎস । রহমান কুদ্দুস ইবনে গফফার । রূপার স্বামীর নাম কুদ্দুস কিংবা গফফার টাইপের ভাবতেই গা গুলাচ্ছে । রূপার পাশে সুমন্ত কিংবা অরন্য নামের কেউ থাকলে মানাতো । কি আর করা !
আমি কার্ড বালিশের পাশে রেখে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম । ঠিক তখনই নিউটনের সূত্রকে সার্থক করে দিয়ে বিশাল শব্দে ধুপ করে বিছানাটা ভেঙে পড়ল । আমি ভাঙা বিছানার উপর চিৎ হয়ে আবার শুয়ে পড়লাম । এখন ব্যাথা নিয়ে ভাবাই যাবে না । আমার বাবা তার বিখ্যাত ডায়েরীতে লিখে রেখে গেছেনঃ
“বাবা হিমালয় ! কষ্ট দুই রকমের হইয়া থাকে । শারীরিক আর মানসিক । ইহারা একে অন্যেরে জড়াইয়া ধরিয়া আবর্তিত হয় । তাই শারীরিক কষ্টকে মানসিক কষ্টের দ্বারা উপশম করা যায় । আবার মানসিক কষ্টকে ভুলাইয়া রাখা যায় শারীরিক কষ্টের দ্বারা । একরকম কষ্টকে ভুলিতে চাইলে অপর রকম কষ্টকে তোমার আলিঙ্গন করিতে হইবে । তুমি হয়ত প্রশ্ন করিবে দুই কষ্টকে একই সঙ্গে নিবারন করিবার উপায় কি ? উত্তর তোমার জানা আছে । তুমি যেইদিন মহাপুরুষত্ব অর্জন করিয়া ফেলিবে সেইদিন উত্তরের উপাদান তোমাতে আত্মস্থ হইবে ।”
বাবার কথা মতে, এই মুহূর্তে শারীরিক কষ্টকে নিয়ে চিন্তা করা নাস্তি । চিন্তা করা শুরু করলেই এখন মনে হবে- আমার বুঝি কোমর ভেঙে গেছে বা ব্যাকবোনের সাথের দু’একটা রিবস ভেঙে দু’টুকরা হয়ে ঝুলে পড়েছে । এখন ভাবতে হবে অন্যকিছু যাতে ব্যথাকে খানিকক্ষনের জন্য ভুলে থাকা যায় । নিউটনের সূত্র নিয়েই ভাবা যাক । নিউটন বেচারা গ্রাভিটি নিয়ে নির্ভুল সূত্র আবিষ্কার করেছে এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই ঠিক, কিন্তু তার আপেলের গল্পটা নিয়ে যথেষ্টই খটকা আছে । ঐ যে তিনি বাগানে আপেল গাছের নিচে বসে বই পড়ছিলেন । একটা আপেল পড়ল তার মাথার উপর । তিনি ভাবলেন আপেল কেন উপরে উড়ে গেলো না । কেন নীচেই এসে পড়ল ? আবিষ্কৃত হল ফিজিক্সের ল’ অফ গ্রাভিটি । সবকিছু আসলে গ্রাভিটির কারনেই নিচের দিকে টান অনুভব করে । কিন্তু কথা হচ্ছে সে যখন এই সূত্র আবিষ্কার করেছে তখন তার বয়স হল তেইশ বছর । এতো বছরের জীবনে গড়ে প্রতিদিন দশবার করে হলেও সে ষাট হাজার বার বাথরুমে গেছে । মূত্রত্যাগের সময় তার মূত্র নিচেই পড়েছে কখনো উপরের দিকে ওঠেনি । তাহলে গ্রাভিটি সূত্র আরও আগে কেন তার মাথায় এলো না ? কেন আপেলই পড়তে হল ?
‘ভাইজান, আছেন না গেছেন ?’
আমি চোখ বন্ধ করেই গম্ভীর গলায় আবৃত্তি করলাম,
“হেঁইয়ো ব'লে হাত পা ছেড়ে পড়ছে তেড়ে চিৎপটাং,
উঠছে আবার ঝট্পটিয়ে এক্কেবারে পিঠ সটান্ ”
‘ভাইজান !’
আমি বললাম, ‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না ?’
‘কি কথা ?’
‘এই যে এখন কথা শুনতে পেয়ে উত্তর দিলেন- তার মানে আছি । মরলে তো কথা বলতে পারতাম না । ছড়াটা শুনেছিলেন ?’
‘কি ছড়া ?’
‘উঠছে আবার ঝট্পটিয়ে এক্কেবারে পিঠ সটান্ ?’
‘ভাই ফাজলামির তো একটা সময় আছে । কথা নাই বার্তা নাই, চৌকি হঠাৎ দুম করে ভেঙে পড়ে গেল । বুঝলেন ভাই, আমি পরশু দুপুরে আপনার এই চৌকির উপর শুয়ে গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম । ভাবলেই তো গায়ের লোম সব খাড়া হয়ে যায় ! হাড্ডি-টাড্ডি ঠিক আছে তো আপনার ? ভাঙলে দেরী করা ঠিক হবে না । সলিমুল্লায় আমার পরিচিত অর্থোপেডিক্সের ডাক্তার আছে । ডাক্তার হামিদ হোসেন নাম । চলেন যাই ।’
আমি উঠে বসতে বসতে বললাম, ‘খলিল সাহেব, চা খাওয়াতে পারবেন ?’
‘বেলা বাজছে দুইটা । এখন কি চা খাবেন ?’
‘কোকের বোতলের এক বোতল গরম চা ঢকঢক করে গলায় ঢালতে ইচ্ছা করছে । সমস্যা হচ্ছে টাকা নাই । দ্বিতীয় সমস্যা আরও মারাত্মক ।’
‘উঠতে পারছেন না ? তার মানে সিওর প্যারালাইসিস করেছে । উপরে ঠিক থাকলেও নিচের দিক অবশ । টাকা-পয়সা নিয়া এখন ভাববেন না । আমরা আছি কি জন্য ? সময়ে অসময়ে মেসের এক ভাই-ই তো আরেক ভাইরে দেখবে, তাই না ? একেবারেই চিন্তা নিবেন না । হাফ প্যারালাইসিস ভালো হবার উপায় আছে । আমার নিজের আপন শালা একবার...’
‘ভাই আগে এক বোতল চা খাওয়ান । কাউকে টাকা দিয়ে পাঠান । বলেন ছটকুর দোকানের কোকাকোলা চা । নিচে বের হয়েই হাতের ডান দিকে কনফেকশনারির পাশের নাস্তা-ভাজির দোকানটা ।’
‘আগে আপনাকে তুলবার ব্যবস্থা করি ?’
‘তুলতে হবে না ভাই । আমাকে আগে একটু জিরোতে সময় দেন । পুরো ব্যাপারটা বুঝতে দেন । আমি আপনাকে সাথে নিয়েই সলিমুল্লায় হামিদ হোসেনের কাছে যাবো । কথা দিলাম । আপনি চায়ের ব্যাপারটা একটু দেখেন ।’
খলিল সাহেব তৎক্ষনাৎ বের হয়ে গেলেন । বের হবার সময় দরজার চৌকাঠে পা বাঁধিয়ে ব্যথাও পেলেন । তিনি আমাদের মেসের সবচে’ করিৎকর্মা লোক । বাজার থেকে শুরু করে রাতের তাসের আড্ডা সবখানেই তার অবাধ বিচরন । তিনি যদিও তাস-টাস তেমন খেলেন না । তার মত মাইডিয়ার ধরনের লোক আমি খুব কমই দেখেছি । বাচাল প্রকৃতির হলেও নিতান্তই ভালোমানুষ গোছের ।
আমি উঠে দাঁড়ালাম । শরীরের কলকব্জা বোধহয় সব ঠিকঠাকই আছে । টেবিলের ড্রয়ার থেকে সিগারেট বের করলাম । দিয়াশলাই পাচ্ছি না । এখন যদি ঘর উলটে পালটেও দিয়াশলাই খোঁজা হয় তাহলেও পাওয়া যাবে না । দিয়াশলাই পাওয়া গেলেও তাতে থাকবে একটা মাত্র কাঠি । ধরানোর জন্যে বক্সে ঘষা দেওয়া মাত্রই যার বারুদ খসে পড়বে । এর নাম নিয়তি । একে পাল্টাবার পথ নেই । জানালা ভেঙে কড়া রোদ পড়েছে মেঝের ওপর । রেললাইনের পাটরির মত আলো আর ছায়ার লাইন । মনে হচ্ছে রবার্ট বার্কারের আঁকা কোন প্যানোরোমিক পেইন্টিং । ছুঁয়ে দেখতে গেলেই অদৃশ্য হয়ে যাবে । আমি অসাড় সিগারেট হাতে নিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম । হাত নাচিয়ে নাচিয়ে ঈশ্বরের পেইন্টিং বদলাবার চেষ্টা করছি । যদিও জানি ঈশ্বরের পেইন্টিং বদলাবার সামর্থ্য কারও নেই ।
‘আপনি হিমু ?’
আমি মুখ তুলে তাকালাম । কোট-টাই পরা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে । মাথাভর্তি টাক । ভেন্টিলেটর থেকে সূর্যের আলো এসে পড়ায় সেই টাক চকচক করছে । বোধহয় কড়া কোন সেন্ট মেখেছেন গায়ে । ভুরভুর করে গন্ধ বেরোচ্ছে । প্রশ্নকর্তা আমার দিকে প্রাচীন দিনের মুনি-ঋষিদের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । পারলে এখনই ভস্ম করে দেয় । আমি চোখ পিটপিট করলাম । এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে সাধারনত আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ি এবং প্রতিবারই ধরা খাই । তাই এবার চোখ-মুখে সারল্য এনে অবলীলায় বললাম, ‘জ্বী না ।’
‘নীচতলা থেকে বলল এটাই হিমু সাহেবের কামরা ।’
‘হ্যাঁ । এটা হিমুর ঘর । হিমুর ঘরে যে থাকবে সে-ই যে হিমু হয়ে যাবে তা-তো না । আপনি তো এখন হিমুর ঘরে । আপনার নাম কি হিমু ?’
আমার কথা শেষ হতে না হতেই খলিল সাহেব রুমে ঢুকে পড়লেন । তার বাঁ হাতে কাচের মগভর্তি চা, ডানহাতে পলিথিনের প্যাকেটে সমুচা । ঘরে ঢুকেই বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠল, ‘হিমু ভাইজান- ম্যানেজার সাহেব তো গ্যায়া !’
টাকওয়ালা ভদ্রলোক আমার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন । আমার ‘স্কেপ গোট’ হওয়ার ঘটনায় তার যথেষ্ট উত্তেজিত হবার কথা । তার চোখে-মুখে সেই উত্তেজনার সাথে সাথে ক্রোধও ফুটে উঠেছে । আমি তার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিকে একেবারেই পাত্তা না দিয়ে খলিল সাহেবকে বললাম, ‘কোকাকোলা চা পাওয়া যায় নি ?’
‘রাখেন আপনার কোকাকোলা চা । এদিকে তো বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে ।’
আমি মগে চুমুক দিতে দিতে বললাম, ‘চায়ে তো চিনি একেবারেই হয় নি । সমুচাও তো একেবারে ত্যানা মেরে গেছে । ছটকুর দোকান কি বন্ধ ছিল ?’
‘নীচে বিরাট শোরগোল । ঘটনা বিরাট । ম্যানেজারের কাছে এসেছিল পুলিশ । তারপর তাকে নিয়ে ...’
মনে হচ্ছে খলিল সাহেব তার বিরাট ঘটনা না শুনিয়ে ছাড়বে না । তার চোখ চকচক করছে । ঘটনা বলার সুযোগ পেয়ে সে আনন্দিত । আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ছটকুকেও ধরে নিয়ে গেছে নাকি ?’
খলিল সাহেব থমকে গেলেন । তার ভঙ্গী বিস্মিত হবার ভঙ্গী । তার মানে ছটকুকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে । আমি ব্যাপারটা তার আগেই জেনে গেছি এটা সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । তিনিই বোধহয় প্রথম সংবাদ মাধ্যম- রয়টার্স টাইপ । গরম গরম খবর নিয়ে এসেছিল । আমি বললাম, ‘ইনাকে চেনেন ?’
‘জ্বি না ।’
আমি ঘাড় বাঁকিয়ে বললাম, ‘ভাই আপনার নাম কি ?’
‘আমার নাম সাদাত রেহমান । আমি একটা বিশেষ কাজে আপনার কাছে এসেছি । কাজটা প্রফেশনাল । প্রথমেই আপনার নিজের নাম গোপন করার ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । ব্যাখ্যাটা জানতে পারি ?’
‘অবশ্যই পারেন । আমি বিভিন্ন দিবস পালন করি । নিজের তৈরী দিবস । যেমন মনে করুন, সত্য দিবস । এই দিবসে সূর্যের আলো নিভে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সত্য কথা বলতে হবে । আজ হচ্ছে আমার মিথ্যা দিবস । কাজেই-
মোহময় মিথ্যেগুলি চঞ্চল দৃষ্টির মতো, জোনাকির মতো উড়ে যায়
কোনোদিন দুঃখ ছিল, সেই কথা মনেও পড়ে না...’
‘যদি আপনি সত্যি সত্যি মিথ্যা দিবস পালন করেন, তাহলে আপনার আগের কথাটি সত্য বলে আপনি আপনার দিবসকে ভন্ডুল করে দিয়েছেন ।’
‘সাদাত সাহেব, রবীন্দ্রনাথ অনেক আগেই লিখে রেখে গেছেন-
জগতে সকলি মিথ্যা সব মায়াময়
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় । কাজেই...’
‘আপনি কি সবসময় এমন মিস্টেরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলেন, নাকি আজ আপনার ‘রহস্য দিবস’ও চলছে ?’
‘রহস্য নিয়ে এখন মাথায় কোন কবিতা আসছে না । আসলে বলে ফেলতাম । মনে হচ্ছে আজ কবিতা দিবস । আপনার কাছে কি আজকের দিনটাকে কোন কারনে অদ্ভুত লাগছে না ? মনে হচ্ছে না আজ একটা বিশেষ দিন ?’
‘আজকে উজবেকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস । বাঙালিদের জন্য কোন ইম্পর্টেন্ট দিন বলে তো মনে পড়ছে না !’
আমি ‘খাইছে আমারে’ জাতীয় একটা শব্দ বের করার চেষ্টা করলাম । গলার কাছে এসে আটকে গেল । তার বদলে ঘোঁৎ-জাতীয় কিম্ভুত একটা শব্দ বের হল । আঁতেল প্রকৃতির লোকজন হচ্ছে ‘সমগ্র বাংলাদেশ’ গোত্রীয় ট্রাকের মত । এদের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকলে নিরাপত্তা রক্ষা হয় । আর সাদাত সাহেব তো মনে হচ্ছে সেখানে ‘সমগ্র ভূ-ভারত’- জ্বলন্ত আঁতেল । বিষবৎ পরিত্যাজ্য । ব্যাটা উজবেকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস মাথায় করে ঘুরছে । আমি দমে গিয়ে বললাম, ‘আমি অন্য অ্যাঙ্গেলে বলছিলাম । আপনার কাছে কি আজকের দিনটাকে রহস্যময় বলে মনে হচ্ছে না ?’
‘কই না তো ! তবে আপনাকে রহস্যময় বলে মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে দস্তয়ভস্কির উপন্যাস থেকে উঠে আসা কোন ক্যারেক্টার । আপনার সাথে এতোক্ষন ধরে কথা হচ্ছে অথচ একবারের জন্যেও জিজ্ঞেস করলেন না – আমি কেন এসেছি, কি চাই ।’
‘কেন এসেছেন ? কি চান ?’
লোকটা বিকট শব্দে হেসে উঠলো । এখন তাকে আর ঋষি মুনিদের মত লাগছে না । মনে হচ্ছে সে সার্কাসে খেলা দেখায় । পিং পং বলের খেলা । একটা থেকে তিনটা । তিনটা থেকে ছয়টা । মাঝে মাঝে বলগুলি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে । আর ঠিক তখন তার মুখে হাসি খেলে যাচ্ছে । যে-সে হাসি না, পেপসোডেন্ট মার্কা উজ্জ্বল হাসি । আমি হাত বাড়িয়ে বললাম, ‘আপনার কাছে লাইটার হবে ? আগুনের অভাবে সিগারেট ধরাতে পারছি না ।’
ভদ্রলোক তার কোটের পকেটে হাত দিলেন ।
(চলবে)
=========================================
উৎসর্গঃ
রাজশেখর বসুর বাংলা অভিধানে ‘কুম্ভীলক’ শব্দের অর্থ দেয়া আছে- ‘যে অপরের রচিত সাহিত্য হইতে ভাব ভাষা প্রভৃতি চুরি করিয়া নিজের বলিয়া চালায়’ । সেই হিসেবে কালিদাস-কাশীরাম দাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সবাই কুম্ভীলক । উদাহরন, কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ কিংবা রবীন্দ্রনাথের ‘কচ ও দেবযানী’ । একই চরিত্র ঘুরে ফিরে অনেকের লেখায় এসেছে । সবটাই সেই আদিশ্লোক-ছন্দের অনুকরনে, নতুন ছন্দে নয় । তবে, রাজশেখর বসু এঁদেরকে plagiarist মানতে রাজী হন নি । তিনি বলেছেন, এঁরা plagiarist এর ঠিক উল্টোটা । যাঁরা অপরের তৈরী চরিত্র নিয়ে লিখেই খুশি । কবিযশঃপ্রাপ্তি এঁদের কারোরই লক্ষ্য ছিল না ।
এতোসব কথার সারমর্ম একটাই । ‘হিমু’কে নিয়ে লিখবার দায়মুক্তি । ফ্রান্সিসকো মেলজি ‘মোনালিসা’র কপি এঁকেছিলেন । ক্যানভাসের সাইজটা বদলে পুরোটাই কপি করা । সেই ছবি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, কিন্তু ক্রিটিকরা এর দাম দেন নি । না দেওয়ারই কথা । সৃজনশীলতা এক, নকল করা অন্য । হিমুর স্রষ্টা আজ নেই । তিনি আজ অন্য কোন ভুবনে । আমি তাঁর পদধূলিকণা । তাঁর মত করে কখনই কেউ লিখতে পারবে না । আমিও পারিনি । পারার ইচ্ছাও নেই । অনেকের এই লেখা দেখে সঙ্গত কারনে খারাপ লাগতেই পারে । তাদের কিছু বলবার নেই । অন্যভুবনের জোছনা-পাগল মানুষটির কাছে দায়বদ্ধতা আছে । অন্যের লেখা ‘হিমুর পাশে তিনটি ছায়া’র উৎসর্গপত্রে তাঁর নামটাই থাকুক ।
কে লইবে মোর কার্য, কহে সন্ধ্যারবি—
শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি।
মাটির প্রদীপ ছিল; সে কহিল, স্বামী,
আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি॥
পরম শ্রদ্ধাষ্পদেষু, হুমায়ূন আহমেদ ।
===========================================
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯