somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুজবের কবলে!

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে প্রথম বাল্যকালে প্রাপ্তবয়স্ক গুজবের শিকার হয়েছিলাম। কোথায় কি হল বুঝলাম না। একদিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে সবাই মুখ চেপে হাসছে। আমি প্রথমদিকে খুব একটা গা না করলেও, পরে দেখি বিষয়টা গায়ে এসেই লাগছে।
সবাই হাসে।
কেউ দূর থেকে আমাকে দেখায়।
কেউ বা পাশে এসে বলার চেষ্টা করে এটা কিন্তু ঠিক করিসনি।
আমি সব সয়ে যাচ্ছিলাম নীরবে। কিন্তু যখন আমাদের অঙক আপা এসে বললেন, এই ছেলেই? এবং সবাই আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে বলল, জি আপা। সে-ই।
তখন আর সহ্য করতে না পেরে জিজ্ঞাসা, একজনকে ধরলাম। কী হয়েছে। বল।
সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, শুভ কাজে দেরি করতে নেই ঠিক আছে। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি?
আমি বললাম, মানে?
তুই জানোস না?
আমি বললাম, কী জানব?
তুই জানোসনা, তুই যে বিয়ে করেছিস?
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। ছোটবেলার মন। তখন বিয়ে বিষয়টা কিছু কিছু বুঝলেও গুজব জিনিসটা ভালো করে বুঝি না।
বিষয়টা মিথ্যা আমি জানি। তাও আমি বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লাম এটা বাসায় জানলে কী হবে?
তাই ব্যাপক শংকা নিয়ে আমি বাসায় ফিরি। কোনও মতে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায়। ঘুম।
ঘুম ভাঙতেই, মা সামনে। ওটা করেছিস?
আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম। মা কি পরিমাণ লজ্জা পেলে আমাকে সরাসরি বিয়ে শব্দটা বলতে পারছেন না। কী একটা গুজব ছড়ল।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, বললে তুমি বিশ্বাস করবে?
মা বলল, বল আগে।
না।
কি হল বুঝলাম না। মা সশব্দে চড় বসিয়ে দিল।
আমি অবাক হলাম, মা কি চেয়েছিল এই বয়সে আমি বিয়ে করে ফেলি?
মাকে কী জিজ্ঞাসা করা যায় ভাবতে ভাবতে মা চলে গেলেন।
সন্ধ্যার পর, বাবা এসে সামনে দাঁড়ালেন।
আমার মোটামুটি হাত-পা কাঁপার দশা।
সাদি সম্পর্কে কি শুনছি। তুই কখনও মানুষ হবি না।
আমি থ বনে গেলাম। বললাম,
সাদির এসব মিথ্যা।
বাবাও দিলেন ভয়ংকর চড়। উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমার পেছনে আমি এত খরচ করতে পারব না।
আমি কী যে করব বুঝলামই না। মন চাচ্ছে গুজব ছড়ানো লোকটাকে ধরে পেটাই। কী এক দোটানায় ফেলে দিল। স্কুলে এটা নিয়ে তিরস্কার আর বাসায় না করায় তিরস্কার। খুব খারাপ লাগছে আমার। কান্নাকাটি করতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না। বিয়ের গুজব যদি সত্যিই হয় তবে তো আমার কাঁদার কথা না। কাঁদবে আমার বউ। কিন্তু কে সে? কই সে?
আমি মন খারাপ করে বসে আছি। বাবা এরকম একটা কথা বলতে পারল? আমার বিয়ের খরচ দিতে তার এখনই অস্বীকৃতি। আমি আর এ বাসায় থাকব না।
ঠিক করলাম, এখনই মা-বাবাকে ডেকে বলব। আমি চলে যাচ্ছি। কোনদিন বিয়ে করতে পারলে তবেই বাসায় ফিরব।
তাদের উদ্দেশে রওনা দিতেই, দেখলাম দু’জনেই আমার রুমে।
মা বলল, তোকে আজ অযথাই মেরেছি। কারেন্ট বিল দেয়ার সময় আরও আছে দেখলাম। আমি ভেবেছি সময় চলে গেছে। তাই একটু রেগে গেছি আর তিনদিন আগের একটা কাজ দিয়েছি, সেটা করতে তোর এত আলসেমি কেন?
বাবা বলল, তোর মা মেরেছে জানলে আমি তোকে কিছু বলতাম না। কিন্তু সাদি ভালো রেজাল্ট করেছে, তার বাবা আজ প্রসংশা করল। তুই যখন এটা অস্বীকার করেছিস তখন আমার মেজাজ খারাপই হয়েছিল। আমি কি মিথ্যা বলি?
আমি আবার আকাশ থেকে পড়লাম, হায় কারেন্ট বিল দিতে না হয় ভুলে গেছি। কিন্তু আনোয়ার সাদি নামের বন্ধুর নাম কি করে বুললাম। হায়!
এখন যদি ওইসব আমি বলে ফেলতাম। তাহলে কি কেলেংকারিই না হতো!
বাসা থেকে কোনভাবে বেঁচে গেলেও স্কুলে সেটা চলল। পানির মতো। আমি চিন্তা করলাম, এটাকে বন্ধ করতে হলে আরেকটা গুজব লাগবে।
আমি সবাইকে ডেকে ডেকে বললাম, কাউকে বলতে পারবি না আমি হেডস্যারের মেয়েকে বিয়ে করেছি।
এটা ছড়াতে ছড়াতে এক সময় হেডস্যারের কানে পৌঁছতেই দু’দিন পর সব চুপ।
আমি বললাম, কিরে আমার বিয়ের শেষ খবর কী?
অনেকে দেখলাম কথা বলে না। গালে হাত দেয়। পিঠে হাত দেয়।
বেতের বাড়ি যেখানে যেখানে পড়েছে আরকি!
যারা বলাবলি করেছে সবগুলোকে হেডস্যার ডেকে ডেকে বিয়ের দাওয়াত খাইয়েছে।
আমি ব্যাপক আনন্দ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছি। কিন্ত বিপরীতে সবাই চুপ।
এ আনন্দ নিয়ে আমি বাসায় ফিরতেই মা আটকাল। তুই নাকি বিয়ে করেছিস?
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×