ছেলেটার জন্য মাগরিবের আজানটা চিরকালই বেদনার ছিল। মাগরিব মানে, তার যাবতীয় আঁধারের সূচনা। যে ছেলেকে তার মা শেকল দিয়ে বেধেও রাখতে পারেনি কখনো। কোনো বেলাতে। সেই ছেলেই অসহায় হয়ে যেতো মাগরিব সময়।
যখনই ভেসে আসছে মাগরিবের আজান। তখন ছেলেটা যেন মাছ হয়ে যেতো। কেউ দিনভর পেতে রাখা জাল গুটিয়ে নিচ্ছে। আর ছেলেটা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে আত্মসমর্পনের দিকে।
তখন ছেলেটা পাখি হয়ে যেতো। যে পাখির দেয়া হয়েছে ডানা কেটে।
দুনিয়া এই ডানা কাটা পাখির সাথে করতো রসিকতা। নির্মম রসিকতা।
রসিকতা করতো ঘরের একট ওয়াটের বালব। রসিকতা করতো শব্দ করে ঘোরা ফ্যান। ঘরের জাণালায় বাধার দেয়াল তোলা হৃদয়হীন লোহারদণ্ডরা।
তবে সে এই রসিকতায় বিব্রত ছিলনা। সে জানতো তার জন্য কেউ আছে। কারণ, তার জন্য কেউ কেউ তখনও কাঁদতো।
কাদঁতো তার বন্ধুরা। তার ক্রিকেট ব্যাট। বল। খেলার মাঠ। এমনি মাঠের ঘাসও তার জন্য হয়তো কাঁদতো।
সকালে ঘাসের ঘায়ের শিশির সদৃশ জল সেই সাক্ষ্যই দিত।
ছেলেটা সন্ধ্যা হলে শিক্ষকের কঠিন চেহারার অচর্না করতে বইপুস্তক নামের হাবিজাবি নিয়ে বসত। তাকে বসতে হতো। মন না চাইলেও বসতে হতো।
ছেলেটার ওই জীবন দুঃসহ ছিল।
আজ অনেকদিন পর ছেলেটার সেই জীবনের কথা মনে পড়ে। সেই জীবনের প্রতি মায়া হয়। আহা সেই দিন!
আজো মাগরিবের আজান হয়। সন্ধ্যা নামে। ছেলেটা আর পড়তে বসেনা। বসার প্রয়োজন হয় না। ছেলেটার জন্য তার পড়ার টেবিল অসহায়ের মতো অপলক তাকিয়ে থাকে।
ছেলেটার আক্ষেপ হয় সেই জীবনের জন্য। ছেলেটা কষ্ট পায় তার জীবনের দ্রুত চলা দেখে।
ছেলেটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আহ জীবন আস্তে যাও।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:১৮