বাবা দুটি অক্ষরের এই একটি শব্দ দিয়ে প্রকাশিত হয় সন্তানের সঙ্গে অকৃত্রিম এক সম্পর্ক। মায়ের সঙ্গে সন্তানের যেমন থাকে নাড়ীর টান, তেমনি বাবার সাথে থাকে রক্তের বন্ধন। সন্তানের জন্য পিতা হচ্ছেন সবচেয়ে বড় শক্তি। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে বাবা সন্তানের চোখে পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, জ্ঞানী, স্নেহশীল ,শাসক,পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, অথবা কোনো সময় বন্ধু হিসেবে। মেয়ে শিশুরা জীবনের শুরুতেই আদর্শ পুরুষ হিসেবে পিতাকেই কামনা করে। অন্যদিকে ছেলে শিশুরা জীবনের শুরুতে পিতাকে দেখে শক্তির উৎস হিসেবে। তাই ছেলে শিশুরা চায় পিতার মতোই শক্তি অর্জন করতে তথা পরিবারের সর্বময় কর্তা হতে। এছাড়া শিশু যখন বাড়ন্ত অবস্থায় থাকে, তখন পিতা তার মূল্যবান উপদেশ দিয়ে সন্তানদের জীবনের পথ বাতলে দেন। বাবারাই পারেন সন্তানদের নানাভাবে নানা সময়ে সাহয্য করতে। শাস্রে তাই বলা হয় ---পিতা'ই তাপস্য----
আমার জীবনে বাবাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ছয় ভাই ও এক বোনের সংসারে বাবা ছিলেন সবার বড়। দাদা দুই বিয়ের কারণে প্রায় রাজশাহী থাকতেন। যার কারনে পরিবারের দায়িত্ব পড়ে বাবার কাঁধে। যিনি ছিলেন মাত্র ৮০ টাকা বেতনের এক স্কুল শিক্ষক। স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি মসজিদের ইমামতি করে এতবড় একটা সংসার পরিচালনা করতেন। বড় পরিবার হওয়ার কারণে সংসারে টানাটানি লেগেই থাকতো।
অবশেষে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাঁসি ফোটানো বা সংসারে সচ্ছলতার জন্য পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। সংসারে সচ্ছলতা আসলে ও ২৩ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বাবার মাথায় এসেছিলো ১০ লাখ টাকা ঋনের বোঝা।
বাবার জীবনে কোনো সঞ্চয় না থাকলে ও বড় সঞ্চয় আমরা দুই ভাই , দুই বোন। বাবার অবর্তমানে প্রবাসীর সন্তান হিসেবে আমরা ৪ ভাই, বোন পড়ালেখার পাশাপাশি সবকাজে নৈতিকতার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছি যার জন্য বাবার দুঃখ ছিলনা। বাবা জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছেন, পরিবারের পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে চেষ্টা করেছেন।
বাবার ছাত্রদের মাঝে দু'জনের কথা আমার খুবই স্মরনে আছে একজন জনাব ইলিয়াছ, যিনি standard asiatic oil company limited chittagong এ কর্মরত। আর অন্যজন হচ্ছেন ফেনী জেলার এক আইনজীবী জনাব এডভোকেট নুর হোসেন।
খুব বেশি সময় বাবাকে কাছে পাওয়ার সূযোগ মেলেনি কারণ আমরা দু'ভাই দেশে থাকতে বাবা ছিলেন প্রবাসে, আর বাবা যখন দেশে তখন আমরা দু'ভাই প্রবাসে।
কারো উপকার করতে না পারো, অন্যের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, অনৈতিক কোনো কাজ করবেনা, এটিই বাবার সবসময়ের নির্দেশ দু'ভাইয়ের প্রতি।
বাবা আগের মত চলাফেরা করতে পারেন না ঠিকমত, তবে আমরা যখন দেশে যাই বা দেশ থেকে দুবাই চলে আসি, আমাদেরকে এয়ারপোর্ট থেকে বিদায় দেয়া এবং রিসিভ করার কাজটি বাবা নিজেই করেন। বাবার হাঁসি মাখা মুখ দেখলে বুঝা যায়না যে উনি অসুস্হ।
দিবস বা উপলক্ষ ছাড়া জীবনের সব সময়ে বাবাকে যেভাবে আশ্রয়স্হল হিসেবে পেয়েছি আমরা সবাই, ঠিক তেমনিভাবে বৃদ্ধাশ্রম নয় আমাদের বাসা বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর স্হানটুকুতে থাকবে বাবা মায়ের জন্য। মুলত আল্লাহ এবং তার রাসুল (সাঃ) এর পরই মা, বাবার অবস্হান। তাই কোনো দিবসের অপেক্ষায় না থেকে জীবনের সব সময় আমাদের রবের শেখানো সেই কোরআনের আয়াত...رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا (রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা) আমরা পড়বো আমাদের বাবা মায়ের জন্য।
ইছমাইল,
দুবাই,সংযুক্ত আরব আমিরাত,