ঋতুতে পৌষমাস জাতিতে সর্বনাশ। সরকার আসে সরকার যায় মাঘ যেন থেকেই যায়। ১০ টাকায় চাউল নেই, মায়ের হাতে পিঠা নেই। আমার তিন খানা কম্বল , ফটিকের চেড়া সার্টটাই সম্বল। আমি বাঁছি বহাল তবিয়তেই বাঁছি ।
আমি সাংস্কৃতি মনা। শীত এলেই ক্যালেন্ডার বানাই-চাঁদা তুলি, পিকনিক করি। মেলা, মাহফিলের আয়োজন করি, চাঁদা দিই। কোট-টাই পরে বিয়েত যাই। অনেক কিছুই খাই। তার পর ও বলি নাই নাই । অথচ রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের পঁছা খাবার ছাড়া ফটিকের কপালে কিছু নাই।
আমি দানশিল, শীত এলেই কেমেরার সামনে কম্বল দেই। বই দেই। মুক্ত বাজার চর্চা করি। মুখে ধোঁয়া তুলি। ঋন নিয়ে ঋনী হই। সুধ খেয়ে সুধী হই। সরকার পরিবর্তনে দেশ চাড়ার ফরম ফিল-আফ করি।
আজব! দেশের মানুষ আমি! মানুষ মরে, গার্মেন্সে আগুনে পুড়ে মানুষ মরে। নির্মানাধীন ফ্লাই ওভার ভেঙ্গে মানুষ মরে। আর আমি বলি যুদ্ধাপরাধীরা ষড়যন্ত্র করে। রঙ্গ দেখিয়া বঙ্গ কহে হায় হায়। বাথরুমে বেঁধে জীবন্ত মানুষকে টুকরা টুকরা করে কেটে ফেলা নরপশু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ফাঁসির আসামী মুক্তি পায়, গণতন্ত্র মুর্ছা যায়। ছাত্র নামের কিছু পশু নামক হিংস্র জানোয়ারের দল বিশ্বজিৎ নামক নিরীহ হরিণ শাবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাঁর রক্তের উপর উন্মত্ত পৈশাচিক নৃত্য করে। খুনের আসামি হাইকোর্টের বিচারক হয়, শততম ধর্ষণ উদযাপনকারীর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি হয়। আর কথিত কাল্পনিক অজুহাতে জেলে আটক নিরপরাদ মানুষ ফাঁসির অপেক্ষায় রাত কাটায়। সাংবাদিক মরে, সৈনিক মরে, সত্য মরে। আমি মরিনা। জীবনের প্যডেলে পা দিই। চাপাতি বা লাশের ওপর উল্লাসনৃত্যের দৃশ্য দেখে দুঃখ পাই । তারপর দুই টাকার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সব ভুলে যাই।
আমি বন্ধু। অনুপ্রাণিত শুধু আরেকজনের জন্য। একজনের সম্ভাবনায় প্রভাবিত। একজনের শূন্যতায় বিষন্ন। অন্যের জয়ে আনন্দিত। এক বিন্দুতে বসবাস দুই জীবনের অভিলাষ। এক মরাতে দুই লাশ, দুই মরাতে সর্বনাশ।
আমি এক প্রবাসি। মাস শেষ হলে আমার পকেট শূন্য হয়ে যায়। শীতের মত প্রবাস ও আমাকে কাঁদায়। শীত পাইলে ও আমি পাইনা কাঁচা খেজুরের রস। আমি বেঁচে থাকি। হাজার মাইল দুরে থাকা স্বজনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই আমি এই প্রবাসে বেঁচে থাকি।