বাংলাদেশ দুদিনের সফরে এসেছিলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ওডেস্কের সহ-সভাপতি ম্যাট কুপার। বাংলাদেশ আউটসোর্সিং এ দারুণ এগিয়েছে। এ খাতে বাংলাদেশের ৫০০ কোটি টাকার বাজার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কর্মীদের উদ্দেশ্য এ গুণমুখর কথাগুলো বললেন ম্যাট কুপার। আর তা জানিয়েছেন বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।
বাংলাদেশ আইসিটি খাতে দারুণ এগিয়েছে। এ দেশের ৭০ ভাগ প্রজন্মই তারুণ্যনির্ভর। তাই জনসংখ্যা এদেশের জন্য সমস্যা নয়। বরং সম্পদ। তবে সুদক্ষ আর পেশাভিত্তিক দক্ষতা ছাড়া এ সমস্যা জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে আসবে না। এ জন্য সরকারকে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
এদেশের উৎসাহী তরুণরা ওডেস্কের তালিকায় নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছে। ওডেস্ক তাদের জন্য সশরীরে সনদ বয়ে এনেছে। এ সম্মননায় বাংলাদেশের তরুণদের আরও উৎসাহিত হবে। কাজে উদ্যোম আসবে।
এ সময়ে পুরো বিশ্বেই আউটসোর্সিং নির্ভরতা বাড়ছে। স্থির অফিসের তুলনায় এখন চলমান (ভার্চুয়াল) অফিস পদ্ধতিই জনপ্রিয় হচ্ছে। আর বাংলাদেশে এ কাজের জন্য চমৎকার পরিবেশ আছে। এ খাতে সুনির্দিষ্ট পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন আছে। তরুণ উৎসাহ চায়। আর তা তাদের দিতে পারলেই যেকোনো অর্জনই সহজ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ গত ৩ বছরে আউটসোর্সিংয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে তুলে ধরেছে। বিশ্বের কোনো দেশই এখন আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশকে খাটো করে দেখে না। বরং সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিয়ের অর্ধেক বাজারই এখন ওডেস্কের দখলে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এ কাজের জন্য সবেচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর সাফল্যটাও নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আউটসোর্সিংবান্ধব। কিছু সীমাবদ্ধতা আর অদক্ষতা যে একেবারে নেই তা কিন্তু নয়। তবে তা কাটিয়ে ওঠা খুবই সম্ভব।
বাংলাদেশের জন্য অনলাইন অর্থনীতিতে গবেষণা এবং উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ‘সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন’ (এসইও) খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। তবে এ সীমাবদ্ধতা অচিরেই কাটিয়ে উঠতে হবে।
আউটসোর্সিং চাকরিতে আরও সুদক্ষ জায়গায় বাংলাদেশের তরুণদের প্রবেশ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আউটসোর্সিং কন্ট্রাকটররা ঘণ্টায় ন্যূনতম ১৫ থেকে ২০ ডলার আয় করে। বাংলাদেশে কন্ট্রাকটররা ঘণ্টায় ন্যূনতম ৫ থেকে ১০ ডলার আয় করছে।
তবে অনলাইনে ডলার পেমেন্ট প্রসঙ্গে হাসিমুখেই ম্যাট কুপার বাংলানিউজকে বলেন, পেপল, পেপল অ্যান্ড পেপল। এটা সত্যিই একটি বড় বাধা। এ নিয়ে ওডেস্ক সরকারের সঙ্গে ‘ডায়লগ ওপেন’ করেছে। অচিরেই গ্লোবাল ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ওডেস্ক তাদের পেমেন্ট পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছে।
এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশে আউটসোর্সিংয়ে তাদের সবচেয়ে বড় বাধাটি অতিক্রম করবে। তখন আরও বেশি তরুণ এ খাতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
ওডেস্কের কাজের জন্য অনেক তরুণ তাদের নিয়মিত পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে উঠছে-বাংলানিউজের করা এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাট কুপার বলেন, সবার আগে একাডেমিক পড়াশোনা। কোনোভাবেই নিয়মিত শিক্ষার বাইরে গিয়ে আউটসোর্সিংয়ে অমনোযোগী হওয়ার সুযোগ নেই।
এদিকে ওডেস্কের কন্ট্রাকটর কমিউকেশনের মুখপাত্র মনিকা চুয়া বাংলানিউজকে বলেন, শুধু কাজ জানলে আর কাজের খবর রাখলেই আউটসোর্সিংয়ে ভালো করার যায় তা নয়। আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসে নিজের দক্ষতা আর যোগ্যতার সঙ্গে কাজের সম্বনয় করাটাও একটি বিশেষ গুণ।
বাংলাদেশের উদীয়মান এ খাতে তরুণদের এ অংশে একটা ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এখানে তরুণরা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। নিজে থেকে জানার আগ্রহরা অনেকেরই একটু কম। এ জন্য শুধু সার্চ ইঞ্চিন অপটিমাইজেশন নিয়েই বেশি কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে।
আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমান আউটসোর্সিং বাজারে দ্বিগুণ দখলে নেবে। এ বিশাল বাজার পেতে অনেক আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশকে আমলে নিয়েছে। ওডেস্কের শীর্ষ দু কর্মকর্তার এ সফরে এমন অভাসই সুস্পষ্ট হয়েছে।
এ সম্ভাবনাকে শুধু কাগজে-কলমে আর সমীকরণে না নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জরুরি। সম্ভাবনাময় এ বাজার থেকে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। এ জন্য সরকারি উৎসাহ আর উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আউটসোর্সিং পেমেন্ট পদ্ধতি উন্মুক্ত আর সহজ হলে বাংলাদেশ দ্রুতই এ খাতে আরও চমক দেখাবে। এমন প্রত্যাশাই রেখে গেছেন বাংলাদেশ সফরে আসা ম্যাট কুপার।