বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এ্যালেন গুথ মহাবিশ্বের এই সুনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ হার দেখে স্তম্ভিত হয়ে বললেন “এই সম্প্রসারনের হার এতটাই সুনিয়ন্ত্রিত, যেখানে ভুলের সম্ভাবনা ১/১০^৫৫। এত সুক্ষ এবং সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বা বা প্রক্রিয়া কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা হতে পাওয়া অসম্ভব। বিগব্যাং যদি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা হতো তবে এই প্রক্রিয়া এতটা সঠিক এবং উপযুক্ত ভাবে চলতে পারতো না। তাই বলা যায় এটি অবশ্যই একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া।” মহাবিশ্বে মহাজাগতিক বসতু সমূহের অবস্থান এবং এদের মধ্যে দূরত্ব পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কসমিক বল দ্বারা নক্ষত্রগুলোর মধ্যকার দূরত্ব পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রেখেছে। কসমিক বল দ্বারা নক্ষত্রগুলোর মধ্যকার দূরত্ব এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যা পৃথিবীকে মানুষের জীবনধারনের উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতি গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মহাজাগতিক বস্তু সমূহের মধ্যকার দুরত্ব যদি কিছু কম হোাতো তবে মহাকষীয় আকর্ষন, তাপমাত্রা ইত্যাদির ব্যপক পরিবর্তন ঘটতো। আর যদি মহাজাগতিক বসতু সমূহের মধ্যে দুরত্ব কিছুটা বেশি হতো তবে বস্তুগুলো সুপারনোভা অবস্থায় ছড়িযে ছিটিয়ে যেতো। ফলে গ্রহানুগুলো একত্রীত হতে পারত নাা এবং আমাদের পৃথিবীর মতো গ্রহ তৈরী হওয়ার জন্য প্রযোজনীয় ঘনত্বে পৌছাতে পারত না। এই প্রসঙ্গ নিয়ে বিশিষ্ট বিশিষ্ট মহাকাশ বিজ্ঞানী জর্জ গ্রিনস্টেইন বলেন “ যদি তারকাগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব কিছুটা কম হতো তবে astrophysics খুব একটা পরিবর্তন হতো না। পদার্থ বিদ্যার নিয়ম, যেসব নক্ষত্র, নেবুলা ইত্যাদির মধ্যে ক্রিয়াশীল সেসব ও খুব একটা পরিবর্তন হতো না। শুধুমাত্র ছোট খাট কিছু পরিবর্তন হতো। যেমন, রাতে ঘাসের মেঝেতে শুয়ে রাতের যে আকাশটা দেখি তা কিছুটা উজ্বল দেখাত। আর আরেকটি ছোট্ট পরিবর্তন হতো। তা হচ্ছে, রাতের এই আকাশ আরো উজ্জল দেখাত আর আরেকটি ছোট পরিবর্তন হতো তা হচ্ছে, রাতের এই উজ্জল আকাশ দেখার জন্য আমি বা আপনি কেউই থাকতাম না।”
বিজ্ঞানীরা যে কোন নক্ষত্রের জন্য একটি নির্দীস্ট দুরত্ব নির্ধারন করেন যে স্থানটি অক্সিজেন হাইড্রোজেন এর সমন্ময়ে পানি উতপাদনের একটি পারফেক্ট স্থান এবং যেখানে পানি তরল অবস্থাায় থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন। যে স্থানটির তাপমাত্রা স্বচ্ছ এবং একটি সুক্ষ সমন্মিত নিরাপদ বাসযোগ্য স্থান হিসেবে অনুমান করে থাকেন । বিজ্ঞানীরা সেই স্থানটির নামকরণ করেন “গোল্ডিলকস্ জোন”। কোন নক্ষত্র থেকে ঠিক এতটুকু দুরত্বই প্রাণ বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ন অথচ আমাদের সৌরজগত এবং সত্যি করে বলতে কি আমাদের পৃথিবী ঠিক সেই স্থানেই পড়েছে।
আমাদের অস্তিত্বকে সম্ভব করতে কিছু মৌলিক ধ্রুবককে সুক্ষ সন্নিবেশ করা হয়েছে। মহাবিশ্বের এই ধ্রুবকগুলোর যদি একটু বদলানো যায় তাহলে এই মহাাবিশ্বের ব্যপক পরিবর্তন হতো। অনেক সময় এটা জীবন বিকাশের জন্য অযোগ্য হয়ে যেতো। আমরা এক্ষেত্রে পরমানুর গঠন এর উপর চোখ বুলালে দেখতে পারবো আরেকটি জটিল বিষয়। পরমানুর গঠন উপাদানগুলোর উপর সক্রিয় রয়েছে সবল নিউকিক্লয় বল। নিউক্লিয় বল দুটি প্রোটনকে আকষর্ণ করে। কিন্তু তড়িত দুম্বকিয় শক্তি তাদের এক হতে বাধাার সৃষ্টি করে। আর এই কারনে পরমানু এক এক্যবদ্ধ হয়ে আকৃতি গঠন করে। কিন্তু এই দূবর্ল নিউক্লিয় বল আরো বেশি দূবর্ল হতো তবে মহাবিশ্বের সব হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিনত হতো। ফলে মহাবিশ্বে কোন তারা দেখা যেতো না আর যদি দূবর্ল বল আরো বেশি সবল বা শক্তিশালী হতো তবে সুপারনোভার বিস্ফোরন তার বাইরের আবরনকে ছিন্ন করে ছুড়ে দিতে পারতো না। ফলে জীবন বিকাশের জন্য ভারী মৌল তৈরী হতো না। আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো মানবদেহ গঠনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় উপাদান কার্বন। এই ছয় প্রোটন বিশিষ্ট কার্বন নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য ভারীমৌল বিশিষ্ট গঠিত হলো ? হ্ইাড্রোজেন, হিলিয়াম এবং অল্প কিছু লিথিয়াম নিয়ে আদি মহাবিশ্ব বিবর্তিত হয়ে এই মহাবিশ্বে রুপান্Íরিত হয়েছে আসলে আদি মহাবিশ্বের বলগুলোকে ঠিক এমনটিই হতে হয়েছে যেমনটি হলে আদি মৌল সমূহ থেকে ভারী সমূহ গঠিত হতে পারে। আদি বল সমূহ যেভাবে নক্ষত্র গঠন করলো। আর সেই নক্ষত্রই ছিলো ভারী মৌলসমূহের রান্না করবার চুল্লি। আদি নক্ষত্রগুলোকে এমন ভাবে গঠিত হতে হয়েছে যে তার মধ্যে কিছু কিছু নক্ষত্র জীবনচক্র শেষ করে সুপারনোভা আকারে বিস্ফোরন ঘটে এবং ভারী মৌল বিস্ফোরন হতে ছিটকে বেরিয়ে পড়ে। এবং সেই ছিটকে বেরিয়ে পড়া ভারী মৌলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জমাট বেধে গ্রহ উপগ্রহ গঠন করে।
কার্বন যাকে বলে প্রানের মূল উপজীব্য। সেই কার্বন অনেকটা অলৌকিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি। নক্ষত্র গুলোর মধ্যে ফিউশন বিক্রিয়ায় কার্বন গুলোর উতপত্তি। বিশেষ করে ফ্রেড হয়েল কার্বন তৈরীর এ প্রক্রিয়া দেখে অসম্ভব বলেই ঘোষনা করেন। নক্ষত্রগুলোর কেন্দ্রে কার্বন অণুগুলো সৃষ্টি হয় দুটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়। প্রথমত ২ টি হিলিয়াম অনু একত্রীত হয়ে ৪ টি প্রোটন ও ৪ টি নিউট্রন বিশিষ্ট অস্থিতিশীল বেরিলিয়াম অনুর সৃষ্টি হয়। তখন এটি ৩য় হিলিয়াম অনুর সাথে যুক্ত হয়ে ৬ টি প্রোটন ও ৬ টি নিউট্রন বিশিষ্ট কার্বন অনুর সৃষ্টি করে।এই পদ্ধতিতে ১ম অবস্থায় উৎপন্ন হওয়া বেরিলিয়াম অনু পৃথিবীতে প্রাপ্ত বেরিলিয়াম অনুর চেয়ে ভিন্ন ধরনের। কারন আমাদের পর্যায় সারণীতে প্রাপ্ত বেরিলিয়াম অনু একটি অতিরিক্ত নিউট্রন ধারন করে। নক্ষত্রগুলোর মধ্যে প্রাপ্ত এই অস্বাভাবিক বেরিলিয়াম অনু বিজ্ঞানীদের ধাঁধায় ফেলে দেয়। কারন এটি অতিমাত্রায় অস্থিতিশীল। এতোটাই যে এটি তৈরি হওয়ার ১/১০^১৫ বা ০.০০০০০০০০০০০০০০১ সেকেন্ডের মধ্যে বিভাজিত হয়ে যায়। তাহলে এই বেরিলিয়াম অনু কিভাবে কার্বন অনু সৃষ্টি করে, যখন তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই ভেঙ্গে যায়? তাহলে কি কাঁকতলিয় ভাবে হিলিয়াম অনু বেরিলিয়াম অনুর সাথে যুক্ত হয়ে কার্বন তৈরি করে? কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তাও তো সম্ভব নয়। কারন ২ টি অনু আলাদা ভাবে যুক্ত হয়ে ০.০০০০০০০০০০০০০০১ সেকেন্ডের মধ্যে যুক্ত হয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারে না। একটি জটিল এবং প্রায় অসম্ভব এক পদ্ধতিতে নিউক্লীয় ফিউশন বিক্রিয়া দ্বারা কার্বন গঠিত হয়। এই বিক্রিয়াটি একটি নির্দিষ্ট হারে এবং নির্দিষ্ট শক্তিতে ঘটে থাকে। সৌভাগ্যক্রমে, এই রেজোন্যান্স খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে থাকে। নক্ষত্রগুলোর মধ্যে Double Resonance এর মতো একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে। প্রথমত ২ টি হিলিয়াম অনু যুক্ত হয়ে বেরিলিয়াম অনু গঠিত হয়। এরপর ১/১০^১৫ সেকেন্ডের মধ্যে এটি ৩য় আরেকটি হিলিয়াম অনুর সাথে যুক্ত হয়ে কার্বন অনুর সৃষ্টি করে। জর্জ গ্রিনস্টেইন ব্যাখ্যা করেন কেন এই Double Resonance অতি অসাধারন একটি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন
“There are three quite separate structures in this story—helium, beryllium, and carbon—and two quite separate resonances. It is hard to see why these nuclei should work together so smoothly… Other nuclear reactions do not proceed by such a remarkable chain of lucky breaks…It is like discovering deep and complex resonances between a car, a bicycle, and a truck.
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং তার “গ্রান্ড ডিজাইন” বইতে বলেছেন “তাহলে এসব কাকতাল থেকে আমরা কি বুঝবো? ভাগ্যক্রমে মৌলিক নিয়মসমূহের খুটিনাটির যে মিলন সেটা পরিবেশ উদ্ভুত চলকসমূহের ভাগ্যক্রমে মিলে যাওয়া থেকে আলাদা। একে তো এটাকে ্এত সহজে ব্যক্ষর্তা করা সম্ভব নয়। তার উপর এতে গভীর ও ভৌত ও দার্শনিক ইঙ্গিত নিহিত আছে। আমাদের মহাবিশ্ব এবং তার আইনসমূহ দেখে মনে হয় যেনো একেবারে নকশা অনুযায়ী দর্জির হাতে কেটে এমনভাবে বানাানো যেমনটা হলে এখানে জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব হবে। এবং যেখানে এই নকশা থেকে বিচ্যুতির কোন অবকাশ নেই। ব্যাপারটার ব্যাক্ষা সহজ নয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে এটা এমন কেনো?”
চলবে (পর্ব - ৪)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৪