আমি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করিয়াছি নির্ধারিত পরিমাপে। (সুরা কামার:৫০-৫১) “সেই মহান সত্ত্বা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সমূহকে সৃষ্টি করিয়াছেন অতি সুক্ষ সমতায়।” (৬.৭৩) সুধী পাঠক, লক্ষ্য করুন উপরোক্ত দুটি আয়াতে। দুটি আয়াতেই এই মহাবিশ্বটির ‘ফাইন টিউনিং’ এর বিষয়টি উল্লেখ করছে। যার অর্থ দাড়ায় মহাবিশ্বে সমস্তকিছু একটি নির্ধারিত পরিমাপে। সুক্ষভাবে একটি হিসেবের অনুশাষনে বদ্ধ। যার প্রতিটি সুত্র প্রতিটি পরিমাপ অতি সুক্ষ সমতায় সৃষ্টি। আমরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এতদিন ধরে জেনে এসেছি আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য। এই মানূষ সৃষ্টি না করলে তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতেন না। ধর্মীয় ভাবে জানা এসকল তথ্যা অথবা আল কোরআনের এই সুক্ষ সমতা নির্ধারিত পরিমাপের কথাটি কিন্তু মিথ্যা নয়! ইদানিং আমাদের এই মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষনা করে পাওয়া গেছে মহাবিশ্বের যাবতীয় সুত্র থেকে, বিগবিংগের শুরু থেকে কসমিক বলের সাম্যতা, আমাদের ছায়াপথে সৌরজগতের অবস্থান, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, সৌরজগতে গতিবিধি, পৃথিবীর গতি, পৃথিবীর সাথে চাদের সম্পর্ক, সূর্য থেকে পৃথিবীতে প্রাপ্ত আলোর পরিমান, পৃথিবীর বুকে গ্যাসের আস্তরণ সহ মহাজাগতিক জটিল সকল হিসাবে নিকাশ যেনো এক সুত্রেই বাধা যার একটু এদিক ওদিক হলেই এই পৃথিবীতে প্রাণ উতপাদন সম্ভব হতো না। এরকম অসংখ্য হাজার হাজার বিষয়গুলো এক ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের বসবাসের ্উপযোগী হয়ে উঠেছে। এর একটু এদিক ওদিক হলে এই পৃথিবীতে প্রান উতপাদন হতো না। এতগুলো বিষয় এক ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে সৌভাগ্যময় অবস্থার সৃষ্টি করেছে এই পৃথিবীতে এটা কোন কাকতলীয় বা এ্যাকসিডেন্ট এর ফল হতে পারে না। মহাবিশ্ব এতটা নিয়ন্ত্রিতভাবে এক্সপ্রোসান কেমন করে হলো? কেমন করেই বা এতটা সুক্ষসমন্ময়। এখন আমাদের এই সুক্ষসমন্ময় বা ফাইন টিউনিং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
মাইকেল বিহে, উইলিয়াম ডেম্বস্কি ও জর্জ এসিলস প্রমুখ বিজ্ঞানী মিলে একটি তত্ব দাড় করালেন যার নাম দিলেন “ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন আর্গুমেন্ট”। তারা অভ’তপূর্ব কিছু চিন্তা চেতনা ছডিয়ে দিলেন বিজ্ঞানী মহলে। তাদের তত্ব মতে আমাদের এই মহাবিশ্ব এমন কিছু চলক বা ভ্যারিয়েবল সুক্ষ সমন্ময়ের সাহায্যে ফাইন টিউনিং করে তৈরী হয়েছে যে এর একচুল এদিক ওদিক হলে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরী হতো না, তৈরী হতো না কার্বনভিত্তিক নান্দনিক প্রাণের স্পন্দন। প্রান সৃষ্টি করবেন এমন চিন্তা মাথায় রেখে ঈশ্বর বিশ্বব্রক্ষান্ডকে এতটাই নিখুত এতটা সুসংবদ্ধ করে সৃষ্টি করেছেন। মহাবিশ্বটা পরিকল্পিত ভাবে ডিজাইন করেই সৃষ্টি। পরবর্তীতে প্রাণ সৃষ্টি করবেন এমন চিন্তা মাথায় রেখে ইশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি শুরু করেছিলেন। এটা কোন কাকতলীয় এর ফল নয়। ফাইন টিউনিং যে একটি ফ্যাক্ট এটা বিজ্ঞান মহল স্বীকার করে। যার অসংখ্য প্রমান ও নিদর্শন বিদ্যমান। জগতের এমন অসংখ্য সুক্ষ সমন্ময় দেখে নাসার জোতিবিদ প্রফেসর জন ও কিফ এর মতে“ আমরা মানবজাতি পরিকল্পিত ভাবে সৃষ্টি করা একটি জাতী। যদি এই মহাবিশ্ব সঠিকভাবে তৈরী না হতো তাহলে আমাদের অস্তিত্বই থাকতো না। এসব দেখে আমার মনে হয় এই মহাবিশ্¦ মানুষের সৃষ্টি ও বসবাসের লক্ষে তৈরী করা হয়েছে।” ফাইন টিউনিং এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বক্ষেত্রে সর্বসময়। এখন পযর্ন্ত এমনে কোন পেপার নাই যাতে ফাইন টিউনিং এর বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য কেউ সরবরাহ করতে পেরেছে। ফাইন টিউনিং আছে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারে নাই। ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং “The laws of science, as we know them at present, contain many fundamental numbers, like the size of the electric charge of the electron and the ratio of the masses of the proton and the electron. … The remarkable fact is that the values of these numbers seem to have been very finely adjusted to make possible the development of life.” বিট্রিশ জোর্তিবিদ পল ডেভিস বলেন “There is now broad agreement among physicists and cosmologists that the Universe is in several respects ‘fine-tuned’ for life” তিনি আরো বলেন “the laws [of physics] ... seem themselves to be the product of exceedingly ingenious design…. The universe must have a purpose." বিট্রিশ গনিতবিদ প্রফেসর রজার পেনরোজ বলেন :‘:‘There has got to be fine tuning. This is fine tuning, this is incredible precision in the organisation of the initial universe.’’ তিনি আরো বলেন - ““I would say the universe has a purpose. It's not there just somehow by chance." " ইন্টালিজেন্ট ডিজাইন এর পক্ষে অসংখ্য বিজ্ঞানীর মতামত ও যুক্তি হাইপোথিসিসটিকে আরো গ্রহণ যোগ্য করে তুলছে।
স্যার মার্টিন রীস এর লিখিত দি সিক্স নাম্বার নামের এ্কটি বই আরো বেশি আড়োলন করে তুলেছে। তিনি তার বইতে ্উল্লেখ করেছেন। এই মহাবিশ্বের কতিপয় ধ্রুবক এর মান এমন কেনো? এতটাই রহস্যময় যে এই ধ্রুবকের মান এমন হওয়ার দরকার ছিলো মানুষের আর্বিভাবের জন্য। যদি এমন না হয়ে অন্যরকম হতো তবে এই মহাবিশ্বটাকে আমরা যেভাবে দেখছি সেভাবে হয়তো দেখা হতো না। ধ্রুবক গুলোর মান এমন না হলে প্রানের নান্দনিক স্পন্দন হতো না এই পৃথিবীতে! এ্ই বিষয়বস্তুু নিয়ে ফাইন টিউনিং বিশারদদের খোলামেলা বক্তব্য। যেমন ধরুন এই পৃথিবী। যেখানে আমাদের বসবাস। যা সূর্য থেকে ১৪৭,৫৯৭,৮৭০,৭০০ মিটার অথবা ১৫ কোটে কিলোমিটার দুরে অবস্থিত থেকে সুর্যকে কেন্দ্র করে ্উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে। উপবৃত্তাকার পথে ঘুরতে গিয়ে কোনভাবেই সূর্য পৃথিবীকে কাছে টেনে নিচ্ছেনা। পৃথিবী কোনভাবেই তার কক্ষচ্যুত হচ্ছে না। বরং সূর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্¦ বরাবর একই রয়েছে। সূর্য ও পৃথিবীর জন্¥ থেকেই দুজনেই ্একই দুরত্বে অবস্থান করছে। যদি সৃষ্টির শুরুতে সূর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্ব কিছুটা কম হতো। যদি কোন কারনে সূর্য থেকে পৃথিবী ১% কাছে অবস্থান করতো তাহলে এই পৃথিবী সূর্যের অত্যাধিক তাপ ও চাপের কারনে জ্বলে পুড়ে শুক্র গ্রহের রুপ ধারণ করতো। ফলে কখনই বায়ুমন্ডল সৃষ্টি হতো না। আর বায়ুমন্ডল সৃষ্টি না হলে কোনভাবেই এই পৃথিবীতে প্রাণ উতপাদন সম্ভব হতো না। আর যদি পৃথিবী সূর্য হতে ১% দুরে অবস্থান করতো তাহলে সূযের তাপ ও চাপ এর অভাবে পৃথিবী হিম শীতল হয়ে মঙ্গল গ্রহের মতো তুষারাচ্ছন্ন হয়ে পড়তো। ফলে প্রাণ উতপাদনের প্রতিটি শর্ত্ই ভঙ্গ হতো। পৃথিবীর নির্ধারিত অবস্থান প্রান উতপাদন ও জীবনের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থানের কারনে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে। টিকিয়ে রেখেছে বৃক্ষমন্ডলী এবং প্রানীকুল। এ যেনো সুক্ষ এক সমন্ময় আর মহাপরিকল্পনার ফসল। নির্ধারিত একটি অবস্থান যে অবস্থানের কারনে পৃথিবী আজ প্রাণময়।পৃথিবীর অবস্থান যেমন প্রাণীকুলের অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি পৃথিবীর আয়তন এর উপরও ডিপেন্ড করে মহাজাগতিক এবং প্রাণময় হিসেব নিকেশ। যেমন ধরি পৃথিবী ও তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি। এই মধ্যাকর্ষন শক্তির পরিমান নির্ধারিত হয়েছে পৃথিবীর আয়তন এর উপর। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি যদি নির্ধারিত ধ্রুবকের চেয়ে ০.১% বেশি হতো তবে অত্যাধিক মধ্যাকর্ষন ্এর চাপের কারনে পৃথিবীর বুকে কোন ভাবেই বায়ুমন্ডল সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হতো না আবার যদি পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি যদি নির্ধারিত ধ্রুবকের চেয়ে ০.১% কম হতো তবে পৃথিবীকে ঘিরে বায়ুমন্ডলের বলয় তৈরী না হয়ে বরং তা মহাশুন্যে উড়ে হারিয়ে যেতো। ফলে বায়ুমন্ডলের এই অভাবে পৃথিবীর বুকে কখনই ঘটতো না কার্বন ভিত্তিক নান্দনিক প্রাণের মহাযাত্রা। আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ ফ্রাংক প্রেস এবং সিলভার তাদের গবেষনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ডাটার উপর ভিত্তি করে বলেন “পৃথিবীর আয়তন একে জীবনধারনের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদি পৃথিবীর আয়তন কিছুটা কম হতো তবে এটি এর বর্তমাান বাযূমন্ডল ধরে রাখতে পারত না। কারন এর অভিকষিয় শক্তি গ্যাস সমূহকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হতো নাা। আবার যদি এর ভর কিছুটা বেশি হতো তবে এর শক্তিশালী অভিকর্ষীয় আকর্ষন শক্তির দ্বারা এটি বেশি পরিমান গ্যাস (ক্ষতিকর গ্যাস সমূহ) বায়ুমন্ডলে ধারণ করত। পৃথিবীর আকৃতি এবং অভ্যন্তরের পদার্থ সমহের উপরও প্রাণীকুলের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এইগুলো যদি এক বিন্দু এদিক ওদিক হতো তাহলে কোনভাবেই এ পৃথিবীতেই প্রানিকুলের আবির্ভাব ঘটতো না।
“আর আমি আসমানকে সৃষ্টি করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদরূপে, কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে । (সুরা আম্বিয়া- ২১ ঃ ৩২-আল কোরআন) । পৃথিবীতে জীবণ বাঁচিয়ে রাখার জন্য এর চারপাশের বায়ুমন্ডলের পরিবেশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীর চারিপাশের বায়ুমন্ডল ঐ সমস্ত অক্ষতিকারক এবং প্রয়োজনীয় রশ্মি, দৃশ্যমান আলো, অতি বেগুনী রশ্মি এবং বেতার তরঙ্গ সমুহকেই শুধুমাত্র পৃথিবীতে প্রবেশ করতে দেয় । উল্লেখ্য পৃথিবীতে জীবণ বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই সমস্ত দ্রব্যগুলির বিকীরণের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। অতি বেগুনী রশ্মি যার আংশিক পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে পারে, এর উপস্থিতি উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষন এবং অন্যান্য জীবণ বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুর্য্য থেকে বিকীরিত অতি বেগুনী রশ্মির অধিকাংশ অংশই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওজন স্তরের মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে শুধুমাত্র সীমিত এবং জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অতি বেগুনী রশ্মির আংশিক বর্ণচ্ছটা পৃথিবীতে এসে পৌঁছে । এই বায়ুমন্ডলের সাথে (ভ্যান এ্যালেন বেল্ট) The Van Allan Belt নামে একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে । যেটা একই ভাবে সমস্ত ক্ষতিকারক বিকীরণের বিপরীতে রক্ষাকবচ বা ঢাল হিসাবে কাজ করে । বিশেষ করে যে সমস্ত বিকীরণ পৃথিবীর জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকী স্বরুপ । The Van Allan Belt পৃথিবী রক্ষাকারী দূর্গ হিসেবে কাজ করে। এই বুহ্য মহাবিশ্ব থেকে আসা সূর্য এবং অন্যাান্য নক্ষত্র থেকে আসা ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে। এই The Van Allan Belt মহাবিশ্ব থেকে আসা মাত্র ০.১ % রেডিয়েশন পৃথিবীতে প্রবেশ করতে দেয় এবং বাকী অংশ রেডিয়েশন তা মহাশুল্যে ফেরত পাঠায়। গামা রে, এক্স রে সহ এমন ভয়াবহ ক্ষতিকর রেডিয়েশন যদি ফেরত না পাঠাতো তবে এই পৃথিবীতে প্রাণীকুল এর আর্বিভাব কোনভাবেই সম্ভব হতো না। প্রধানত সুর্য্য এবং বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে ক্রমাগত বিকীরিত হচ্ছে তা পৃথিবীর জীবনের জন্য মৃত্যুকুপ স¦রূপ । যদি পৃথিবীর চারপাশে ভ্যান এ্যালেন বেল্ট না থাকত তবে সুর্য্যরে মধ্যে প্রতি মুহুর্তে যে বিভিন্ন রাসায়নিক গ্যাসের মহাবিস্ফোরণ ক্রমাগত ঘটে চলেছে এবং বিভিন্ন শক্তি নির্গত হচ্ছে, তা মূহুর্তেই পৃথিবীর জীবন ধ্বংস করে দিতে পারতো । ডঃ হাগরস্ ভ্যান এ্যালেন বেল্ট সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে বলেছেন যে ‘প্রকৃতপক্ষে আমাদের পৃথিবীর ঘনত্ব পৃথিবীর সৌরমন্ডলে যে কোন গ্রহ উপগ্রহগুলোর চেয়ে সব থেকে বেশী । পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের বৃহত নিকেল ও লৌহ স্তর এই চু¤¦কীয় ক্ষেত্রের জন্যই সৃষ্টি হয় বা হচ্ছে । এই চুম্বকীয় ক্ষেত্রই ভ্যান এ্যালেন বিকীরণ ঢাল বা রক্ষাকবচ তৈরী করে । যা পৃথিবীকে সমস্ত ধরনের বিস্ফোরনের ক্ষতিকারক বিকীরণের হাত থেকে রক্ষা করে বা করছে । The Van Allan Belt নামক এই প্রানীকূল রক্ষাকারী বুহ্যটি পৃথিবী হতে ১০০০ কি:মি: পযর্ন্ত বিস্তৃত যা পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ চুম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত। পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ ভাগ বা এর কেন্দ্রের Iron Core (আইরন কোর) চুম্¦ক ক্ষেত্র তৈরীতে গুরুত্বর্র্পূণ ভূমীকা রাখে। এই চুম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর কেন্দ্রের চুম্বকীয় ধাতু লোহা নিকেল দ্বারা সৃষ্টি হয়। এই Iron Core টির দুটি অংশ আছে Outer Core এবং Inner Core। Inner Core কঠিন পর্দাথ দ্বারা তৈরী এবং Outer Core তরল পদার্থ। এ দুটি লেয়ার পরস্পর বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে এবং তাদের এই ঘুর্ননের কারনে ভূচুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরী হয়। এই চুম্বকীয় ক্ষেত্র বায়ুমন্ডলের স্তরকে ধরে রাখে এবং মহাজাগতিক কসমিক রেডিয়েশন হতে পৃথিবীকে প্রাণীকুল এবং বৃক্ষজগতকে রক্ষা করে। পৃথিবীর অভ্যন্Íর ভাগ সুষম তাপীয় ইঞ্জিন ব্যবস্থা জধফরড়ধপঃরারঃু দ্বারা পরিচালিত। যদি এই তাপীয় ব্যবস্থা কিছুটা ধীর গতিতে চলতো তবে কোনভাব্ইে ওৎড়হ ঈড়ৎব সৃষ্টি হতো না। আর যদি এই তাপীয় ব্যবস্থা কিছুটা দ্রুতগতিতে হতো তবে এই পৃথিবীতে প্রতিদিন ভূমীকম্প ও অগ্নুপাত হতো। এবং প্রতিদিনের ভূমীকম্পের ফলে পৃথিবীতে প্রাণীকুলের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠতো। প্রাণীকূলের বিনাশ ঘটতো।
পাঠক একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখুন এই পৃথিবীটা একটু সুক্ষসমন্ময়ের উপর দাাড়িয়ে। যার একচূল এদিক ওদিক হলে এই পৃথিবীর উপর কোনভাবেই প্রানের আর্বিভাব ঘটতো না। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ ও পৃথিবীর সর্ম্পক টি জটিল এবং একটি গানিতিক হিসাবের নিয়ন্ত্রনে। আমরা জানি পৃথিবী ও চাঁদ একে অন্যকে আর্কষণ করে। এবং এই আর্কষনের কারনে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা ঘটে। |পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩,৮৪,৪০১ কি.মি. সর্বনিম্ম দূরত্ব ৩,৬৩,২৯৭ কি.মি. সর্বোচ্চ দূরত্ব ৪,০৫,৫০৫ কি.মি. ) এতটা দুরে থেকে আর্কষন এবং প্রভাবিত করে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ যদি তার অবস্থান থেকে কিছুটা নিকটবর্তী হতো তবে নদী-সমুদ্রের পানি নিমজ্জিত করে রাখতো। আর সমগ্র পৃথিবীজুড়ে যদি পানি আর পানি এর অথই নিমজ্জিত থাকতো তবে কি পৃথিবীতে প্রানের আর্বিভাব ঘটতো ? ঘটতো না। প্রানের এই নান্দনিক আয়োজন অকালেই ভ্রম বলে পরিগনিত হতো। আর যদি চাঁদ কিছুটা দুরে সরে যেতো তবে এই পৃথিবীটা মরুভূমীতে পরিনত হতো। মেঘচক্র বৃষ্টিচক্র বাধাগ্রস্ত হবার কারনে পৃথিবীর মাাটির পূর্ণবিকাশ ঘটতো না ফলে পাথরময় বালুকাময় একটি প্রাাণসৃষ্টির অনুপযুক্ত একটি গ্রহ বলেই পৃথিবী বিবেচিত হতো। আর তা যখন হয় নাই তাহলে আমাদের এটা মেনে নিতে হবে এই চাঁদের অবস্থানটিও মহাপরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনার গানিতিক রুপায়নেরই ফসল। আর এ্ই কারনেই সম্ভবত আল কোরানে বলে “নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃজন ক্রিয়ার এবং দিন রাতের অনুবর্তনে অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন জনদের জন্য বার্তা রয়েছে। যারা দাড়িয়ে বসে ও শুয়ে আল্লাহ সমন্ধে ভাবে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃজন সম্বন্ধে চিন্তা করে। তাদের কথা হলো; হে আমাদের প্রতিপালক তুমি এর কোনোকিছুই অর্থবর্জিতভাবে সৃষ্টি করনি। তুমি তো সকল ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত! তুমি আমাদেরকে আগুনের যন্ত্রনা থেকে রক্ষা কর!” (২১:১৬-১৭)
পর্ব - ১
আগামীতে ২য় পর্ব প্রকাশিত হবে....।
সুত্র:
‘মেহেদী আনোয়ার’ এর সকল ব্লগ - “মহাবিশ্ব এবং মানুষ”
হারুন ইয়াহিয়া “A chain of miracles by Harun Yahya.
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭