পথিক কি আসলেই পথ হারাইয়াছিল? নাকি ইহাও তাহার একটি চালবাজী...:-?
অবশ্য হইলেও হইতে পারে...আজকাল্কার পথিকেরা বড়ই বেশরম, উহারা আজকাল 'তু চীজ বড়ি হ্যায় মাস্ত মাস্ত'ও গায়না, 'u're beautyful' কইয়া চেচাইতে চেচাইতে কাপড়জামা খুলিয়া নগ্নগাত্রে পানিতে ঝুব্বুস করিয়া ফাল পাড়ে। প্যান্ট যেইখানে পড়ে আর সেইখান থেকে যা উঁকি দেয় উহা যে সকলেরই আছে আর নতুন করিয়া কারও দেখিবার প্রয়োজন নাই উহা তারা যেন বুঝিয়াও বুঝিতে চায়না... ভয় হয় উহাদের এই নিয়ে ধমকাইলে ঐ ধমকের চোটেই আর নিজের ভারেই জিন্সখানা মাটিতে লুটাইবে। এইসব পথিক পথ হারাইবেনাই বা কেন?...ইহাদের না আছে শুনিবার কান [উহাতে ঢুকানো আইপডের তার কি চোখে পড়ে?] না আছে দেখিবার চোখ [নিকষ কালো, লাল, নীল, গুলাবী বহুবিধ রঙের রোদচশমায় যে চোখ আবৃত।]
দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে [ডিজিটাল বাংলাদেশ এই হইল বলে!] উহারা তাই পথ হারায়[ সক্কলের কাছে কি আর জিপিএস থাকে, সকলেইতো আর বাংলালিঙ্ক ব্যাবহারকারী নয়, বা সকলের ফোনেইতো আর নেভিগেটর থাকেনা]।
থাক, উহারা বরং উহাদের পথ খুজিয়া পাওয়া নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত থাকুক, আর এইক্ষণে বালিকা তাহার পথ হারাইবার হাজারো সম্ভাবনার কথা বলিতে থাকুক।
যেহেতু বড় হইবার আগেই বালিকার জন্মানোর কথাটা বলিয়া নেওয়া প্রয়োজন, সেহেতু জন্ম হইতেই 'আল্লাহু আকবার' বলিয়া ইশটার্ট মারিলাম...
জন্ম ও জন্ম পরবর্তী ঈশ্বরের রসিকতা...:
৮৫-র নভেম্বরে বালিকা যখন জন্মাইয়াছিল তখন বালিকার গুল্টু গাল্টু চেহারা দেখিয়া যতদূর মনে হয় কেউই তাহার জন্ম পরবর্তী কোনও জটিলতার আশঙ্কা করেনাই। কিন্তু মানুষ যা চায় তা কি কখনও কাহারও পছন্দ হয়? তাই সেই কাহারও অপছন্দের কারনেই আড়াই মাস বয়েসেই বালিকার দেখা দিল শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ জনিত সমস্যার কারনে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট। ভয়াবহ শ্বাসকষ্টে পৃথিবী ভরা বাতাসের মাঝেও যখন বালিকা নীল হয়ে যেতে লাগল তখন বাবা-মা হাজার হাজার টাকা দিয়ে শুধুমাত্র একটু বাতাস কিনত বালিকার জন্য, এক পলিথিন ব্যাগ ভরা বাতাস, দুই পলিথিন ব্যাগ ভরা বাতাস...
এরপরে বালিকার মা তার দুর্দান্ত চাকরীটাও ছাড়িয়া দিল। চিকিৎসক আশা দেখাইল একটাই, বছর ১৫ হলে এ রোগ আপনা আপনি সারিয়া যাইবে। বালিকা এখানে পথ হারাইতে পারত, কিন্তু খুব সতর্ক আত্মীয়স্বজনের কারনে সে সঠিক পথে থাকিয়াছে বা থাকিতে বাধ্য হইয়াছে... [আজকাল ডিপ্রেসিভ বালিকার মাঝে মাঝে মনে হয় সেইসময় পথিক পথ হারাইলে ভালই হইত... বেহেশ্তে বসিয়া হুর ও হুরাদের সহিত ফলফ্রুট খাওয়া যাইত!]
যখন বয়েস কিছুমিছু বাড়িতেছে...:
সকলে দেখিল বালিকা হাটিবার আগেই নাচিবার চায়। গান বাজিলে উৎকর্ণ হইয়া থাকে এবং ছোট্ট মাথাটি এদিক ওদিক নাড়াইয়া সুরের সহিত তাল দিবার চেষ্টায় সে সদা ব্যস্ত... বালিকা মায়ের দিকে চৌদ্দগুষ্টি ইহাতে বড়ই আমোদিত হইয়া বালিকাকে নিকটস্থ নাচের ইশকুলে ভর্তি করাইয়া আসিল। দেখা গেল নাচুনে বালিকা পায়ে ঘুঙ্গুর বাধিয়া আবোল তাবোল গানের সহিত ভালই নাচিতেছে। নাচের ইশকুলে তাহার এক জাপানীজ/চাইনীজ বান্ধবীও হইল। মাইয়ার নাম ইউয়ি [উহাকে এই প্রায় ১৮/১৯ বছর পরেও বালিকার মনে পড়ে] । মাশাল্লাহ বড়ই কিউট। বালিকার চার বছর বয়েসের বান্ধবী সে। দুজনের নাচের জুটি হইল মচৎকার। নাচুনে বুড়ি বালিকা যখনই বিবিধ পুরুস্কার এবং আমোদিত দর্শকের মন্তব্যে উৎসাহিত হইয়া ভবিষ্যতের বিখ্যাত নাচুনে বুড়ি হইবার স্বপ্নটার মাত্র বউনি করিল অম্নি উহা 'কাহারও' মনোঃপুত হইলোনা! ব্যস এক চাচাতো নব্য শিবির ভাইয়ের মুখোমুখি পড়িয়া গেল বালিকা একদিন জাতীয় জাদুঘড়ে নাচতে যাইবার সময়ে। তেলেবেগুনে জ্বলিয়া উঠিয়া সেই আল্লাহর বান্দা খিস্তি করিয়া উঠিলেন এই কহিয়া, যে 'দাদা যাহার হাফিজ, তাহার নাতিন যায় দুইন্যার মাইনষের ভরা মজলিসে খেমটা নৃত্য করিতে?'
বালিকার নাচুনে বুড়ি হইবার সাধ আর পূরন হইলোনা। সকল সনদপত্র ছিড়িয়া কুঁচি করিয়া ১০ বছরের অভিমানী বালিকা তাহার ঘুঙ্গুর জোড়া খুলিয়া রাখিল। সেই শেষবার। পরদিন হইতে উহা আর খুঁজিয়া পাওয়া গেলোনা। বালিকা পথ হারাইতে পারতো, কিন্তু হারায়নি... দাঁতে দাঁত চাপিয়া পথেই রইয়াছে...
এরপরে নিরানন্দ বালিকাকে দেয়া হইল ছবি আঁকার ইশকুলে। দেখা গেল ইহাতেও বালিকার সেই রকম উৎসাহ... রঙের সাথে রঙ মিশাইয়া কাগজে লেপ্টাইতে তাহার আগ্রহের সীমা নাই... তাহার শুধু আফসোস একটাই... উহা দেখিবার কেহ নাই... তাহার মা ব্যস্ত সাংসারিক নানা কাজে, বাসাভরা গ্রামের আত্মীয়স্বজন, খিটখিটে নানা, সক্কলকে সামলিয়ে বালিকার গুলাবী রঙের বৃক্ষ আর ম্যাজেন্টা রঙের আকাশ দেখিবার সময় কাহারও নাই... বালিকা কাহাকেও আর বিরক্ত করিলোনা, নিজেই আঁকিতো আর আকডম বাগডম কহিয়া নিজেকেই উহা বুঝাইতো।
বালিকাদের নানাবাসাটা সবসময় গম গম করিত আত্মীয়স্বজনে। এই দেশ হইতে বালিকার মায়ের চাচাতো-মামাতো-খালাতো-ফুপাতো ভাই বোনেরা আসিতেছে, আর হই হই কান্ড-রই রই ব্যাপার ঘটাইতেছে...
এদের একজনের হাতেই একদিন বালিকা আক্রান্ত হইল, হতভম্ব হতচকিত বালিকা কোনওক্রমে নিজেকে ছাড়াইয়া এক দৌড়ে সদরের বাইরে... হায়! কে তাহাকে বুঝাইবে যে ইহা তাহার নিজেরই দোষ নহে? মানসিক বিকৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ বারো বছরের বালিকা কাহাকেও কিছু বলিতে পারিলোনা, কিকরে বলিবে? অসফল সেই পশুযে তাহাকে ভয় দেখাইয়াছিল! ...ভীত বালিকা আশ্রয় খুজলো নিজের মাঝেই... ফেলুদা, ব্যোমকেশ, ইকথিয়ান্ডার আর অপুকে সে নিযুক্ত করিল নিজের পাহারাদারের পদে। চারদিকে এই চারজনকে রাখিয়া একেকদিন দুপুরে একেক জায়গায় লুকাইয়া বালিকা নিজেকে রক্ষা করিতে শিখিল... বালিকা হারেনাই... পথও হারায়নাই... নিজেই নিজের পথের সৃষ্টি করিয়াছে... বালিকা মানসিক বিকারগ্রস্থও হইতে পারিত, কিন্তু হয়নাই। নিজেকে বুঝাইয়াছে, এই জগৎটা মিথ্যা, এই মানুষগুলোও আসলে সত্য নহে, এই ঘটনা গুলোও আদতে ঘটেনাই। বালিকার চারপাশের এই গল্পমানবের কল্পজগৎটা উহাকে রক্ষা করিয়াছে বহু বছর... এমনকি এখনও এদের সাহায্যে বালিকা নিজের নতুন পথ তৈরী করিতে পারে...
পথ ও পথিক লইয়া আবার আসিব... উহাদের প্রেম কাহিনি বলিতেতো হইবেই... আপাতত যাইগা!
[দুঃখিত ভাষার তীব্রতাটা কমানোর জন্য আসলে এটা আধা সাধু ভাষার একটা জগাখিচুড়ি, পুরো সাধু ভাষায় লেখার ক্ষমতা নাই... মনের মাঝে নানান চাপান-উতোর ... ভাষার ব্যাবহারে যদি তা একটু মিনিমাইজ হয়... এই আরকি... আবারও দুঃখিত!]