প্রাচীন ঐতিহ্যের দর্শনে...
১
... ইশার নামাজের অনেক্ষণ পর,ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে আমির সাহেবকে ঘিরে আমরা বসে আছি।মাঝখানে তালাভর্তি লাল টুকটুকে সুস্বাদু আম।দেখলেই জিভে জল আসে! রাজশাহী-চাঁপাইয়ের আম বলে কথা!
টুকরো-টুকরো আমের একটি একটি অংশ স্বাদে-রসে মুখ ভিজিয়ে আমাদের উদর পূর্ণ করছে।
সেই সাথে চলছে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-মুযাকারা।
আমির সাহেব মুচকি হেসে হেসে বললেন,
- সবাই আজ রাত্রে ভালো করে ঘুমাবেন।আগামীকাল অনেক লম্বা গাশত(সফর) আছে!অনেক কষ্ট করতে হবে!
-আমরাও মুচকি হাসছি।কেউ কেউ কপালে আশ্চার্যবোধক চিহ্ন তুলে তাকিয়ে আছে—'কালকে আবার লম্বা গাশত!'
আমির সাহেব হেসে হেসে প্রশ্ন করলেন,
-আপনারা হাসছেন কেন?
আমরা হেসে হেসে উত্তর দিলাম,
-আমির সাহেব,আমরা এই লম্বা গাশতের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুত।কষ্ট যত হোক,তবুও আমরা রাজি!
কারণ আমরা আগ থেকেই জেনে গিয়েছিলাম,গাশত কোথায় হবে,কীভাবে হবে! যারা জানতো না,তারাও পরে জেনে গেল।
মজলিছ শেষে সবাই নিজ নিজ বিছানায় শুয়ে গেলাম।
শুয়ে শুয়ে রাত কাটানো।এমনিতে মাহে রামাদান ।তার উপর প্রচন্ড গরম ।
সেহেরীর সময় উঠে নামাজ- সেহেরী-নামাজ সেরে কিছুক্ষণ তা'লীম-মুযাকারা-আলোচনা হল।এর পর আবার ঘুম।রাত্রের ঘুমের কাযা!!!
২
ঘড়ির কাঁটা আটটা ছোঁয়ার আগেই আমরা সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম।অপেক্ষা এখন শুধু গাড়ি এবং চালকের জন্য।
গাড়ির সময় ছিল আটটায়।কিন্তু বাঙালীর চিরায়ত অভ্যাস অনুযায়ী মিনিটের কাঁটা কয়েক ঘর অতিক্রম করার পর গাড়ি উপস্থিত।
ডিজেল চালিত দুটি গাড়ি।টেম্পোর চেয়ে ছোট,টেক্সির চেয়ে বড়।পেছনে ছয়জন সামনে দুজন বসার মত জায়গা আছে।গাড়ি দুটো আমাদেরকে এখান থেকে নিয়ে পুরো গন্তব্যস্থলগুলো দেখিয়ে আবার জায়গামত এনে দিবে।গাড়িতে উঠার পূর্বে আমির সাহেব কিছু দিক নির্দেশনা এবং উপদেশ দিলেন।এরপর আমাদের জামাত দুই কাফেলায় ভাগ হয়ে(গাইড সহ) দুই গাড়িতে আসন গ্রহণ করল।দুই গাড়িতে দুইজন যিম্মাদার। প্রথম গাড়িতে একজন,অপর গাড়িতে আমির সাহেব নিজেই আছেন।এরপর ''সুবাহানাল্লাযি সাখখারা লানা...'' পড়ে রওয়ানা শুরু...।
৩
আমরা যাচ্ছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ থানার(সীমান্তবর্তী এলাকার)কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা।অতীতেও এই স্থানের অনেক গুরূত্ব ছিল,বর্তমানেও আছে।
-আমরা জানি চাঁপাইনবাবগঞ্জ একসময় প্রাচীন বাঙলার রাজধানী গৌড়ের উল্লেখযোগ্য একটি জনপদ।
-গৌড় কি?এর উত্থান-পথন কোথায়? এগুলো আমারা স্কুল-কলেজের সমাজ বইয়ে পড়েছি।এছাড়া এর ইতিহাসের জন্য আলাদা বইও আছে।(যেমনঃগৌড় থেকে চাঁপাইঃলেখক মাজহারুল ইসলাম)এগুলো জানার জন্য এখন তো শুধু ইন্টার্নেটে একটিমাত্র সার্চের অপেক্ষা!
-তাই আমারা চাঁপাই-ইতিহাসের পেছনে যাচ্ছি না।
শুধু গৌড়ের রাজধানী; এতটুকুতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ইতিহাস সীমাবদ্ধ নয়;বরং এর রয়েছে আরো লম্বা ইতিহাস,লম্বা বৈশিষ্ট্য।
-যুগ যুগ ধরে ইসলামি স্থাপত্যকলার অজস্র নিদর্শন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুকে ঠায় নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
এছাড়া আম,রেশম, নকশী কাঁথা ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত প্রাচীন এবং বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
বর্তমানে তো বাঙলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আমাদানী বন্দর হচ্ছে এই চাঁপাই এর সোনা মসজিদ বন্দর।
১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্পট ছিল।
সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবেও বর্তমানে এই এলাকার অনেক আলোচনা-সমালোচনা এবং রক্তাক্ত ইতিহাস আছে।
চাঁপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জ(পৌরসভা) থানায় এসেছি আমরা প্রায় চল্লিশ দিন হয়ে যাচ্ছে।এতদিনে এই এলাকার মানুষগুলোর সাথে আমাদের একটা বন্ধন তৈরি হয়ে গেল।তাঁদের আচার-ব্যবহার আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।তাদের সাথে আমাদের মাঝে "আল-হুব্বু ফি ল্লাহ' তৈরি হয়ে গেল।
৪
শিবগঞ্জ পৌরসভায় অবস্থিত 'হামিউস সুন্নাহ মাদ্রাসা' থেকে আমাদের কাফেলা রওয়ানা হল।আম বাগানের মাঝে, পৌরসভার সংযুক্ত সড়ক হয়ে গাড়ি বিশ্ব রোডে উঠল।গাড়িগুলো খুব দ্রুত গন্তব্যপানে ছুটে চললো।রাস্তার দুপাশে চারিদিকে শুধু আম বাগান আর আম বাগান।গাছের ডালে ডালে আমের থোকা ঝুলে আছে।আমের ভারে ডাল সহ মাঠিতে ঝুলে পড়ার মত অবস্থা!
বাঁশ দিয়ে অনেক 'ঝুঁকিপূর্ণ' ডালের পতন ঠেকানো হয়েছে!!! এতগুলো আম!!! -সুবাহানাল্লাহ!!!
(অথচ এলাকাবাসী এবং সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী এ বছর[গত বছর[আমের ফলন অনেক কম হয়েছে!—আমরা দেখেছি,যেখানে আমের ভারে গাছের ডাল ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম,তাও নাকি এবছর আমের ফলন অনেক কম!!
যদি তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমের উৎপাদন 'বেশি' হতো,তাহলে গাছের
কী অবস্থা হতো আল্লাহ মা'লুম!!
এখানকার আমগাছগুলো আমাদের এলাকার আমগাছের মত উঁচা-লম্বা নয়।মাঝারী সাইজের গাছ।কিন্তু প্রতিটি গাছে আমের এত ফলন! যা দেখে আবাক না হওয়াটা অসম্ভব!
প্রতিটি গাছ সমান সমান।প্রতিটি গাছে একই পরিমাণের আম।মনে হচ্ছে কেউ যেন তাঁর নিপুণ হাতে পরিপাটি গাছে আমগুলোকে সাজিয়ে রেখেছেন!
-আপনি যদি কোন বাগানের মাঝ দিয়ে হেঁটে যান; কিংবা রাস্তার পাশ দিয়ে যান,তাহলে আমগুলো আপনার মাথা স্পর্শ করবে! আর কতগুলো তো আপনার মুখ পর্যন্ত ছুঁবে!কিন্তু আপনি খেতে পারবেন না*।
মনে হয় আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতি হাত দিয়ে সব আম এখানে ঢেলে দিয়েছেন!
-সুবাহানাল্লাহ!
-কুর'আনুল কারিমে বর্ণিত সেই 'বালদাতুন তাইয়িবাহ'(পবিত্র শহর)এর কথা স্মরণ আছে!?
ঐতিহাসিকগণের(কেউ কেউ) কাছে যে শহর 'সাবা' নামে পরিচিত।সেই শহরে মা'আরিব থেকে শাম পর্যন্ত সম্পূর্ণ এলাকাটা আবাদি ছিল।সেখানে এতই ফলমূলের বাগান ছিল যা পৃথিবীর অন্য কোন ভূ-খন্ডে ছিল না।
সে শহরের আবহাওয়া অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তুলতো।আল্লাহ তা'আলা সেই শহরের বাসিন্দাদেরকে এমন প্রাচুর্য আর ঐশ্বর্য দান করেছিলেন,যা তারা হিসাব করে শেষ করতে পারতো না।
-সেই শহরের বৃক্ষগুলি এমন ফলদার ছিল যে,কোন মুসাফির যদি মাথায় খালি টুকরি নিয়ে রাস্তার পাশে গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যায়,তাহলে গাছের পাকা ফল নিজে নিজে পড়তে পড়তে অল্পক্ষণেই টুকরি ভরপুর হয়ে যেত!-(তারিখে ইসলামঃ১/১৪৩)
চাঁপাইনবাগঞ্জ যদিও সেই পবিত্র শহরের মত নয়;কিন্তু আমগাছের অবস্থা সেই শহরের বৃক্ষগুলোর মত ই মনে হচ্ছে!!!
গাড়ি চলছে। আমি চারিদিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি,আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিজগৎ-সবকিছু কতই না সুন্দর!!!
আকাশ একদম পরিষ্কার, সচ্ছ এবং নীল।মাঝে মাঝে সাদা মেঘ খন্ডে-খন্ডে উড়ে যাচ্ছে।যা আকাশের সৌন্দর্যকে আরো দ্বি-গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।প্রচুর বাতাস বইতেছে।বাতাসের বেগে আমের থোকাগুলো দোলা খাচ্ছে।এ যেন তারা একে অপরের সাথে খেলা করছে।
সব মিলিয়ে মনমাতানো নয়নাভিরাম আকর্ষণীয় এক দৃশ্য!!!
(আল-হামদুলিল্লাহ!)
৫
রাস্তার দুপাশে একটু পর পর মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।সবাই আম নিয়ে বাজারে যাচ্ছে।বেচার জন্যে।
কেউ ভ্যানে,কেউ সাইকেলে,কেউ মাথায়।
যে যার সুবিধা-সামর্থ অনুযায়ী নিয়ে যাচ্ছে।
একটা বিষয় দেখে অবাক হলাম,
দুই চাকার সাইকেলের দুই পাশে বড় বড় টুকরি করে আম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।এক টুকরি কমে হলেও মনের নিচে হবে না।তার উপর সামান্য সাইকেলে দুই টুকরি আম!সাইকেল তো ভেঙে যাওয়ার কথা!!কিন্তু সাইকেল নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলছে,কিছু হচ্ছে না!
সামনে আমের বাজার।বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আমের বাজার।নাম 'কানসাট' বাজার।পুরো শিবগঞ্জের আম এখানে নিয়ে আসা হয়।এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে আম নিয়ে যায়।আমও রয়েছে নানা পদের, ভিন্ন ভিন্ন কিসিমের। ফজলি,ল্যাংড়া, আশ্বিন,রূপালী ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক!
এখানে(শিবগঞ্জে)এসে ফজলি আমের একটা কাহিনী শুনেছিলাম।
কাহিনীটা হলো,
একদিন আমরা গ্রামের এক মসজিদে ফজরের নামায আদায় করতে গেলাম।নামাজের পর বয়ান হল।বয়ানের পর দুজন বৃদ্ধের সাথে আমাদের সাক্ষাত হল।একজনের বয়স একশত বছর, আরেকজনের পঁচানব্বই। দুজনই এখনো শক্ত আছেন।হাঁটা-চলা করতে পারেন।
তারা আমাদেরকে পেয়ে খুব খুশি হলেন।
আমরাও তাঁদের সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলাম।বৃদ্ধ দুজন আমাদেরকে তাঁদের জীবনের ইতিহাস শুনাতে লাগলেন।আমরা আগ্রহভরে শুনতে লাগলাম।একপর্যায়ে একজন ফজলি আমের ইতিহাস শোনালেন।ইতিহাসটা হল,
-অনেক আগে শিবগঞ্জে ফজলি বিবি নামের এক মহিলা ছিলেন।তিনি হিন্দুস্থান থেকে দুটি আমগাছ নিয়ে এসে এ অঞ্চলে লাগান।এই দুই গাছে যেসব আম ধরতো সেগুলোকে মানুষ 'ফজলি বিবির গাছের আম' বলত।এরপর একটু সংক্ষিপ্ত করে বলা হয় 'ফজলি বিবির আম'।এর পর আরো সংক্ষিপ্ত করে বলা হয় "ফজলি আম"।যা এ যাবৎ পর্যন্ত বলবৎ আছে।এটাই ফজলি আমের ইতিহাস এবং নামের বয়ান।
কথা প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় এসে যাক।
আমাদের দেশে আম রাজশাহীর হিসেবে প্রসিদ্ধ-বিখ্যাত।এটা পরিপূর্ণভাবে ঠিক না।বরং সবচেয়ে বেশী আম উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাগঞ্জে আম সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ থানায়।শিবগঞ্জে সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয় একটা গ্রামে(নাম এ মূহুর্তে মনে নেই)।
এখানে অধিকাংশ মানুষের জীবীকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম 'আমচাষ'।বছরে এক বার আম হয়।যেমন মদিনাতে অনেক সাহাবিদের একমাত্র উপার্জন ছিল 'খেজুর'।
- তারা সারা বছর আমগাছ এবং আম নিয়ে অনেক মেহনত করে।গাছের পরিচর্যা,রক্ষণাবেক্ষণ।আম পাহারা দেয়া,পোকা মাকড় থেকে আমকে নিরাপদে রাখা ইত্যাদি অনেক মেহনত।কঠিন মেহনতের পর আমের মৌসুমে বড় বড় সু-স্বাদু আম তাদের মুখে হাসি ফোটায়।
-এখানে একটা জিনিস জেনে খুব দুঃখিত হলাম।তা হল,
-বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যবসায়ীরা এসে
গাছে আমের মুকুল ফোটার আগে;কিংবা মুকুল ফোটার পর আমের শরীর গঠন হওয়ার আগেই তাদের কাছ থেকে 'আম' কিনে নেয়।ফিকহে ইসলামির দৃষ্টিতে যা অবৈধ(না-জায়েয)।এটা খুব দুঃখজনক!!!
-অবশ্য এখানে কিছু বৈধ পদ্ধতিও আছে,কিন্তু তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের বিক্রির পদ্ধিতিটা না-জায়েয।
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।
প্রিয় বন্ধু! আমের বর্ণনা আমাকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে।আল্লাহ তা'আলা উত্তরবঙ্গবাসীকে আমের যে নে'মত দান করেছেন,তা দেখলে মুখ দিয়ে এমনিতেই বেরিয়ে আসবে," সকল প্রসংশা,সকল শোকর তোমারই জন্য হে আল্লাহ!!!"
-আল্লাহ তা'আলা একেক স্থানে একেক জিনিসের বরকত দান করেছেন।কোথাও আম,কোথাও লিচু,কোথাও কাঁঠাল,কোথাও আনারস ইত্যাদি ইত্যাদি...।
-তোমরা আল্লাহর কোন নে'আমত কে অস্বীকার করবে!?
৬
রাস্তার দুপাশে চোখ-মন জুড়ানো আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টিকুল দেখে দেখে উপভোগ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
আগে বলা হয়েছিল,
আমরা যেখানে যাচ্ছি সেটা বর্তমানে পর্যটন এলাকা হলেও,সেখানে রয়েছে আমাদের অতীতের কিছু ঐতিহ্য।যা এখন যমিনের প্রচ্ছদে ইতিহাস হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমরা কোন পর্যটনকেন্দ্রে যাচ্ছি না,আমরা যাচ্ছি আমদের ইতিহাসের খোঁজে,অতীতের খোঁজে। যেখানে আছে সোনা মসজিদ সহ আরো অনেক পুরনো মসজিদ,দরসবাড়ি মাদ্রাসা,নে'আমতুল্লাহ শাহ এর মাজার ইত্যাদি।
এসব কল্পনা-জল্পনা করতে করতে আমরা গন্তব্যস্থলে এসে পৌঁছলাম।....
= = =
((((* প্রশ্ন হতে পারে,
- আমগুলো কি চুরি হয় না?
উত্তরঃ তারা রাত্রে নিজেরা বাগান পাহারা দেয়।দিনেও চুরি হয় না।
কারণ আমের ক্ষেত্রে তাদের গ্রাম্য নীতি মারাত্নক কঠিন! কেউ একটা চুরি করেছে এটা যদি ধরা পড়ে,তাহলে ঐ একটা আমারে জন্য চোরের তো বারোটা বাজবে!সাথে সাথে তার চৌদ্দগোষ্ঠিরও অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।একটা আমের জন্য সালিশ-বিচার থেকে নিয়ে মেম্বার-চেয়ারম্যান পর্যন্ত তুল-কালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলা হয়।এর পর চোরের শাস্তি তো আছেই...।
হ্যাঁ! ঝড়-বৃষ্টি তুফানে যদি গাছ থেকে আম পড়ে যায়,তাহলে তা সবার জন্য উম্মুক্ত।যে কেউ এসে আম কুড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে।গরিব-দুঃখিরা তখন ল্যাংড়া-রূপালী আমের স্বাদ নেয়।))))
৭
অনেক্ষণ গাড়িতে চড়ার পর আমরা গাড়ি
থেকে নামলাম।ততক্ষণে সূর্য তার পূর্ণ তেয নিয়ে অনেক উপরে উঠে গেল।
প্রচন্ড গরম পড়ছে।গরমের মৌসুম এখন তার পূর্ণ যৌবনে।আর উত্তরবঙ্গের গরম তো অনেক প্রসিদ্ধ! এখানে প্রায় সময় গরমের মাত্রা চল্লিশ ডিগ্রির উপরে থাকে।আর মাঝে মাঝে তো আরো বেশী!!!
কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তার রোজাদার সকল বান্দাদের জন্য বাতাসের ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।প্রচন্ড গরম পড়লেও,প্রচুর বেগে ঠান্ডা বাতাস বইতেছে।যা গরমের তাপকে সহযে মুছে ফেলছে।
সাধারণত গরম বেশী পড়লে বাতাসও 'লু হাওয়ার' আকার ধারণ করে।কিন্তু এখানে চারদিকে প্রচুর গাছ-গাছালি(বিশেষ করে আম গাছ)হওয়ার কারণে বাতাস ঠান্ডা।
সাঁ সাঁ... করে বাতাস বইতেছে।বাতাসগুলো গাছের পাতার সাথে ধাক্কা খেয়ে এক ধরণের মনমাতানো সুর তৈরি করছে।যা শুনতে খুব ভালো লাগে।
যাইহোক প্রথমে আমরা গেলাম তোহাখানা,তোহাখানা মসজিদ এবং শাহ নি'আমতুল্লাহ রহ. এর মাজারে।এগুলো সব এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগের অধিনে সংরক্ষিত।
-তোহাখানার দক্ষিণে শাহ নি'আমতুল্লাহ রহ. এর মাজার।পশ্চিমে তোহাখানা মসজিদ।
-শাহ নে'আমতুল্লাহ রহ. সম্পর্কে এতটুকু জানা যায় যে, তিনি সুলতান শাহ সুজার আমলে(১৬৩৯-১৬৬০ঈঃ)দিল্লী প্রদেশের করোনিয়ার নামক স্থান থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নানা স্থান ভ্রমন করে রাজমহলে এসে উপস্থিত হন।তাঁর আগমনবার্তা জানতে পেরে সুলতান সুজা তাঁকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁর হাতে বায়'আত হন।এর পর তিনি গৌড়ের উপকন্ঠে(শিবগঞ্জ উপজেলার)ফিরোজপুরে স্থায়ীভাবে বসাবাস করেন।এবং সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়।-(গৌড় থেকে চাঁপাইঃ৪৭)
- বাংলাদেশের অন্যান্য মাজারগুলোর মতই এই মাজরটি।মসজিদের মত ঘর।চারপাশে বাগান,গেইট ইত্যাদি রয়েছে।
মাজের বাহিরে সামনের দিকে আরো অনেকগুলো অখ্যাত মানুষের কবর আছে।
-(শুনেছি)শাহ নে'আমতুল্লাহ রহ. এর হাতে লিখিত এক কপি কুর'আন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
তাঁর কবরটি মাঝখানে অবস্থিত।এর আশেপাশে ছোট ছোট কিছু কামরা আছে।
-দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য পীর-আউলিয়াদের মাজারের মত এখানেও উরশ ইত্যাদি চলে।তাও আবার ভাদ্র মাসে।
-আচ্ছা! বংলাদেশের সব পীরের জন্ম-মৃত্যু কি ভাদ্র মাসে হয়েছে? না হলে সবার জন্ম-মৃত্যু উরশ ভাদ্রমাসে কেন পালন করা হয়??
- মা'আযাল্লাহ(আল্লাহর পানাহ!)
- মাজার থেকে বের হওয়ার পর গেইটের সামনে(আশেপাশে) কয়েকটা বড় বড় পাথর দেখলাম।লোকেমুখে প্রসিদ্ধ এগুলো নাকি জিন্দা পাথর।এগুলো নাকি বড় হয়!
-আল্লাহু আ'লামু- আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
মাজারের উত্তর-পশ্চিমে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ অবস্থিত।
-এই মসজিদটি অনেক পুরনো।মুঘল যুগের একটি বিশেষ কীর্তি এই মসজিদ।
- মসজিদে তিনটি প্রবেশ পথ এবং তিনটি মেহরাব আছে।এখানে নিয়মিত নামাজ(জুমাসহ)আদায় হয়।
-মসজিদে উল্লেখযোগ্য কোন কারু-কাজ না থাকলেও মসজিদটির নির্মাণ শৈলী অনেক সুন্দর!
-এ মসজিদে আমরা দুই রাক'আত নামাজ আদায় করলাম।
এরপর তোহাখানায় প্রবেশের পালা।কিন্তু তোহাখানার দরজায় তখনো তালা লাগানো।এগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব পাশে গ্রামের একজনের উপর অর্পিত।তাকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠানো হল।
সে আসতে আসতে ততক্ষণে আমরা তোহাখানার চারিদিকে চষে বেড়ালাম।
তোহাখানার পেছনে রয়েছে বড় একটা দীঘি। দীঘির চারপাশে আমের বাগান।দীঘির পারগুলোকে গোরস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।তোহাখানার সাথে লাগানো দীঘীতে একটা অনেক পুরনো বড় ঘাটও রয়েছে।সেখানে নেমে আমরা অজু করলাম।
তোহাখানার দরোজা খোলার পর আমরা সবাই একসাথে ভেতরে প্রবেশ করলাম।
-সুলতান শাহ সুজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভবনটি মোঘল যুগের বিশেষ কীর্তি।
-ইট দিয়ে নির্মিত এই ভবনটির নাম ই 'তোহাখানা'।অনেক পুরনো হওয়াতে বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গিয়েছে।তারপরো এই ভবনটির যে রূপ এবং সৌন্দর্য এখনো বাকি আছে,তা দেখলে এটাকে অনেক মযবুত এবং আধুনিক মনে হয়।
ঘরটিতে প্যাঁচানো অনেকগুলো রুম আছে।কিছু বড়, কিছু ছোট।নামাজের জন্য আলাদা রুমও আছে।এছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ড এ রয়েছে গোসলখানা। সেখানে পৌঁছতে হলে প্যাঁচানো সিড়ি ব্যবহার করতে হয়।গোসলখানা অনেক প্রশস্ত।এর সাথেই ঘাট সংযুক্ত বিশাল দীঘি। পাশে আবার একটা কূপও রয়েছে।ভবনটিতে পাহারাদারদের জন্য বিশেষ জায়গাও আছে।আছে বিপদ-মুহূর্তে গা ঢাকা দেয়ার জন্য দূর্গম পথও।ভবনটি খুব সুন্দর এবং চমৎকার লাগলো। দেখে খুব অবাক হলাম।
ভাবলাম, -সে যুগের নির্মান-শিল্প'র সামনে আজকের আধুনিক-শিল্প এবং শিল্পীরা কত অসহায়!!!
-এই ভবনটি সুলতান শাহ সুজা তার মুরশিদ শাহ নে'আমতুল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য নির্মাণ করেছিলেন।সময়ে সময়ে শাহ সুজা খানও এখানে এসে বাস করতেন।
এগুলো পরিদর্শন শেষে আমরা আবারো গাড়িতে চেপে বসলাম।এরপর সোজা গেলাম সীমান্তের পাশে আরেক পুরনো মসজিদে।
- মসজিদটির নাম ' খঞ্জনদীঘির মসজিদ'।
এটি আম বাগানের ভেতরে একটি দীঘির পাশে অবস্থিত।
-বহুকাল আগে এই মসজিদটি জঙ্গলের ভেতর অজানাভাবে পড়ে ছিল।কিছুকাল আগে জঙ্গল কমে গেলে মসজিদটি মানুষের নযরে পড়ে।কিন্তু ইতোমধ্যে মসজিদটি প্রায় শেষ অবস্থায় এসে পৌঁছেছিল।বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ এখন এটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।-(গৌড় থেকে চাঁপাইঃ৫২)
-দেখলে বুঝা যায়,এই মসজিদটি অন্যগুলোর তুলনায় অনেক পুরনো।জঙ্গলে পড়ে থাকা,পরিচর্যা এবং সুরক্ষার অভাবে এমনিই হয়েছে।এই মসজিদে নামাজ আদায় হয়।এখানেও আমরা দুই রাক'আত নামাজ আদায় করলাম।
অন্যগুলোর তুলনায় এটি অনেক পুরনো মসজিদ।এর দেয়ালে কারুকার্যের কিছুটা আলামত এখনো বাকি আছে।
মসজিদটি পরিদর্শন শেষে আমরা চলে এলাম বাংলাদেশের সীমান্তে।
ঐ যে...! দাদাদের দেশ দেখা যাচ্ছে!!! আমাদের হিন্দুস্তান,তাদের 'ভারত',ওদের ইন্ডিয়া।
আগে এক সময় সবগুলোকে একত্রে(ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশ,নেপাল,ভূটান,আরাকান,তিব্বত ইত্যাদি) হিন্দুস্থান বলা হতো।
কিন্তু কালের পরিক্রমায়,ইতিহাদের নির্মম বাস্তবতায় খন্ড-বিখন্ড এবং ক্ষত-বিক্ষত হয়ে একসময় পাকিস্থান,এরপর বর্তমানে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের পরাধীন নাগরিক।
জীবনের প্রথম সীমান্ত দেখা...!!!
সীমান্ত এটা 'খায় না মাথায়' দেয় তা দেখার জন্যে আমরা সামনে এগুতে লাগলাম।
ওহ!! এখানে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় আমদনী বন্দর।দেয়াল দিয়ে ঘেরা বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত এ বন্দর।নাম সোনা মসজিদ বন্দর।
দাদাদের দেশ থেকে লাইনে লাইনে ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করছে।ট্রাকগুলো বড় বড়।একটার পরে একটা আসছেই! এক ইঞ্চি পরিমাণেরও ফাঁক নেই।ইয়া বড় বড় গোঁফওয়ালা দাদাবাবু-চালকগুলোকে দেখে ভয় লেগে গেল(!) কারো কারো চেহেরা-সুরত দেখে মুসলমান মুসলমান মনে হচ্ছে।আর কারো মাথায় বড় বড় শিখ প্রতীক!
যাইহোক আমরা সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলে বিজিবি এসে বাধা দিল।তারপরো ইনিয়ে বিনিয়ে বিজিবিকে বলে-কয়ে মূল সীমানা পেরিয়ে আরো একটু সামনে গেলাম।
কড়া হুঁশিয়ার! আর একটু সামনে গেলেই বিএস এফের রাইফেল হিংস্র ক্ষুদার্ত পশুর ন্যায় কেঁপে উঠবে!
-বাংলাদেশের এই সীমান্ত এলাকায়(অন্য সীমান্তগুলোও)প্রতিদিন বিএস এফের গুলিতে কত বাংলাদেশী মানুষের রক্ত ঝরছে!!!
-এইতো.... এর মাধ্যমে আজ(৮/১০/২০১৫ঈঃ) সংবাদ পেলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফতেহপুর সীমান্তে বিএস এফের গুলিতে এক বাংলাদেশী নিহত হয়।
-এসবে সরকারের কী দায় পড়ে!!
মরছে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষ।বয়োনেট খুঁচিয়ে বিএস এফ রক্ত-উল্লাসে মেতে উঠছে।আর বিজিবি অস্ত্র চুষে চুষে বিড়ালিয় ভূমিকায় বসে আছে।অন্যদিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীর কন্যা দাদার খেদমতে(পা চাটতে) ব্যাস্ত।
-দাদা বাবুরা দেবীর চরণে 'বাংলাদেশ'কে বলি দিয়ে মা'র সন্তুষ্টি আদায় করছে।
-এগুলো দেখার সময় আছে!!!!
এ যেন তাদের হুমকি,
-তিস্থার পানি চাইবি এমন করে গুলি খাইবি...।
যাইহোক আমরা আমাদের হিন্দুস্থান গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম।অতীতকে খুঁজতে লাগলাম....।
সীমান্তের নিকটে(ভারতের অংশে) একটা বড় প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ আমাদের নযরে পড়লো।জানতে পারলাম এটা সুলতান শাহ সুজা র আমলে নির্মিত দূর্গের প্রাচীর।
এরপর আমরা ফিরতি পথে আরেকটি ঐতিহাসিক জায়গা দেখার জন্য নামলাম।
জায়গার নাম "দরসবাড়ি"।সেখানে একটি প্রাচীন মাদ্রাসা এবং মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আছে।মাদ্রাসার নাম দরসবাড়ি মাদ্রাসা এবং মসজিদ।
এটি ছোট সোনামসজিদ এবং কোতোয়ালী দরজার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।বিশ্বরোড থেকে একটু দুরে আম বাগানের পরে খোলা ময়দানে অবস্থিত।
দরসবাড়ির যে অংশকে মাদ্রাসা বলা হয়,এটি অনেক বড় এলাকা নিয়ে অবস্থিত।এখানে একসাথে লাগানো অনেকগুলো ঘরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।এটা তৎকালীন সময়ের একটি দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে লোকেমুখে প্রসিদ্ধ।
মাদ্রাসার একটু পাশেই মসজিদ অবস্থিত।
ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের সময় মুনশী এলাহি বখশ কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি আরবী শিলালিপি অনুযায়ী ৮৮৪হিঃ(১৪৭৯ঈঃ)তে সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহের আমলে তাঁরই নির্দেশে এই মসজিদ নির্মিত হয়।
এই মসজিদটিও বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের একটি নিদর্শন।মসজিদটি খুব সুন্দর।এতে নয়'টি মেহরাব এবং অনেকগুলো দরজা রয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে এটি ছাদ বিহীন, বিরাণ।
এই এলাকাটিও এখন জনবসতি শূন্য।
এরপর আমাদের সর্বশেষ দেখা ঐতিহাসিক ছোট সোনামসজিদ।পুরাতন টাকার নোটেও এই মসজিদের চিত্র পাওয়া যায়।
চাঁপাইনবাগঞ্জে এটিই সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ এবং ঐতিহাসিক মসজিদ।
বড় সোনামসজিদ বর্তমান ভারতে অবস্থিত।আর ছোট সোনামসজিদ বংলাদেশে।এটি খুব সুন্দর এবং দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।এটি সুলতানি আমলের নির্মাণ শিল্পের অনন্য এক কীর্তি।
এর অনেকগুলো ছোট-বড় গম্বুজ আছে।অনেকগুলো দরজা জানালাও আছে।মসজিদটি কারুকার্য সম্বলিত বাহিরে মসজিদের পাশে একটি উঁচু আজানখানাও আছে।
এই মসজিদটি ৮৯৯ থেকে ৯২৫ হিজরীর মধ্যে নির্মিত হয়।
এই মসজিদের গম্বুজগুলো সোনালি রঙয়ের গ্লিট করা ছিল।ভেতরে অনেক মূল্যবান-দুষ্প্রাপ্য জিনিস ছিল।যা ইংরেজরা চুরি করে বিলেতে নিয়ে যায়।
মসজিদের সামনে দুজন প্রসিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে।নাম ভুলে গেছি।তবে একজনের বাড়ি আমাদের চট্টগ্রামে,এটা জানি।
এমনিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও প্রসিদ্ধ।এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরও আছে।
=সম্পূর্ণ ইতিহাস বিস্তারিত জানার জন্য দেখা যেতে পারে,(গৌড় থেকে চাঁপায়)লেখক ড.মাজহারুল ইসলাম তরু।
এরপর আমরা ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে আগের জায়গায় ফিরে এলাম।
৮
পরদিন সকালে শিবগঞ্জবাসীকে অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
ঢাকায় এসে শহিদি চত্বর(শাপলা চত্বর),বাইতুল মুকাররম,পল্টন ইত্যাদিতে গেলাম।
পরদিন আমার শ্রদ্ধেয়,প্রিয়,বড় ভাই, উস্তাদ,বন্ধু মুফতি.... আমাকে দেখার জন্য এলেন।
বেচারাকে তখন অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম তখন।
তাঁর সাথে মাত্র নতুন পরিচয়।ফেসবুক+মোবাইলে একটু আধটুকু যোগাযোগ হয়েছে মাত্র।
এরপরো তিনি ঢাকার যানজট হজম করে আমার মত অধমকে দেখার জন্য চলে এসেছিলেন।
সত্যিই এটা তাঁর 'তাওয়াযু' এর বিরল পরিচয়!!!
ব্যস্ততার কারণে তাঁর সাথে বেশিক্ষণ সময়ও দিতে পারিনি।রমজান হওয়াতে ভেজা মুখ করাও সম্ভব হয়নি।
তিনি শুধু একাই আসেননি! সাথে দুটি 'বই'ও ঈদ উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছে।
আগে তাঁর সাথে কখনো দেখা হয়নি।কিন্তু এখানে এসে প্রথম দেখাতেই তাঁকে চিনে ফেললাম।
তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
- আমাকে কীভাবে চিনেছ!??
আমিঃ...... :-D
এসব গুণে পরিচিত মুফতি... সাথে তখনো পরিচয় হয়নি।যদি হতো তাহলে........।
***
বিকেলের দিকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য কমলাপুর স্টেষনের দিকে রওয়ানা দিলাম।
আমাদের চল্লিশ দিনের সাথী ভাই @.... মাহফুজ ভাই অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।
(তাদের সাথে চল্লিশ দিন ছিলাম,যেন চল্লিশ যুগ ছিলাম।আমার জন্য তাঁরা আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশী ছিল।আল্লাহ তা'আলা তাঁদের সম্মানিত করুন।উত্তম প্রতিদান দান করুন।)
এরপর রেলের সিটে বসে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা শুরু করলাম।জীবনের প্রথম রেল সফর....!!!!
এ রক অন্যরকম অভিজ্ঞতা...!!! অন্য রকম রেল সফর.....!!!
~শে ষ~
এই সফরনামায় যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়,তাহলে সেটা রাব্বে কারীমের পক্ষ থেকে.....
আর যদি কিছুই না হয়,তাহলে " ফামিন নাফছি ওয়াশ শায়তান....)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৭